Articles published in this site are copyright protected.

না জ মা মো স্ত ফা 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরের লেখাটি ১৭মে ২০১৩ সালের লেখা। লেখাটি আমার দেশ অনলাইনে ছাপাও হয়েছিল, তারিখটি ছিল ১৯ মে ২০১৩ সাল। তবে কোনভাবে ব্লগে এর আগে মনে হলো দিয়েছিলাম, আজ আর খুঁজে না পেয়ে আবার নতুন করে আপলোড করে দিলাম।

সবার আগে বলছি ইলিয়াস আলীর কথা, তার অপরাধ দেশের জন্য মাথা উঁচু করেছিলেন। টিপাইমুখ বাঁধের নামে দেশে যে জাগরণ তৈরী করেছিলেন, ঐ অপরাধে তিনি গায়েব হয়ে যান। দেরীতে হলেও তার পাওনা তিনি পাবেন আশাকরি। নিউইয়র্ক থেকে আবু জাফর মাহমুদ সম্পাদকের লেখনীতে ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল এটি বিবৃত হয়েছে যে, তাকে ও তার ড্রাইভারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে ফরিদপুর গোয়ালন্দ ঘাটে। বিশাল বেশ্যা পল্লীর পেছনে নদীর দিকে নেমে যাওয়া ঢালুর ছাপরা ঘরে। ১৮ এপ্রিল ভোর সাড়ে চারটায় ঘাতকরা তাদের এ কাজ শেষ করে। পর পর বিদেশি দুটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা এ তথ্য বিলি করার পর সরেজমিনে এটি নিশ্চিত করেছে অন্য অনুসন্ধানীরা। তাদের হত্যা করতে নাইট্রিক এসিড ব্যবহার করা হয়েছে। অভিজ্ঞ ঘাতকরা সোজা পৌঁছে যায় তাদের গন্তব্য ঘাটে। ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে একজন তরতাজা উদ্দীপ্ত মানুষকে। কম সময়ে সেটি তারা সারতে পেরেছে তত্পরতার সঙ্গে। বাকি কিছু অপোড়া হাড়হাড্ডি ও কিছু দাগ-চিহ্ন ছুড়ে ফেলে দেয়া হয় পদ্মার মরা বুকে। ইলিয়াসের জন্য সিরিয়াস জাতি কিছুই করতে পারল না। একই ভাবে মারা যান হতভাগ্য ছেলে মেঘের মা-বাবা সাগর-রুনী নামের মানিকজোড়। আর এদিকে একজন সম্পাদক দ্বিতীয়বারের মতো এক মাসের বেশি সময় ধরে ধুঁকে ধুঁকে কারাগারে বন্দি। সবাই কি ওই অপেক্ষায় কাল কাটাচ্ছেন যে, ইলিয়াসের পরিণতিই হোক এক এক করে সমাজের সব সম্পাদক, রাজনীতিক ও সাংবাদিকের?


এমন না যে এসব কথার কথা। আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবরণেও তা ধরা পড়ছে। বাংলাদেশের মানবাধিকারের প্রসঙ্গে ‘অধিকার’ নামের এক সংস্থা বস্তুনিষ্ঠ কাজের ক্ষেত্রে বেশ কৃতিত্বের দাবি রাখে। ৬ মে রাতের কোরআন পোড়ানো ও সেখানে আগুন দেয়ার যে বিবরণ ভিডিও ফুটেজেও আমরা দেখেছি দাপুটেদের উল্লাস আর বর্বরতা, এক্ষেত্রেও সরকার আবার নাকি সুরে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর তার সেই স্বভাবসিদ্ধ পুরনো খেলায় বড় গলায় মেতে আছে। গোটা দেশের বেশিরভাগ মিডিয়া যেন করে চলেছে জনগণের নয়, সরকারের গোলামি। এত অনাচারের ভার সইতে না পেরে তাই প্রত্যক্ষদর্শীরা নিজের একার কম শক্তি নিয়েও সজোরে প্রতিবাদ করছে। আলজাজিরার ফুটেজে দেখি, এক বোবা আবদুল জলিল হাত-পা ঘুরিয়ে গলায় জবাইয়ের ইঙ্গিত বারবার করে দেখাচ্ছে, আর হেফাজতি সদস্যদের লাশ খোঁড়া জমিতে সদ্য পোঁতা বিশাল কবরগাহ দেখিয়ে দিচ্ছে। ধারণা ছিল, বোবা তো কাউকে কিছু বলবে না। তারপরও বোবা কথা যেটুকু বলেছে, ওতেই অনেক মৃত্যু রহস্য ঝরঝরে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিটি মানুষ যদি চিন্তা করে এ ঝড় যদি তার নিজের ওপর দিয়ে যেত, তবে কেমন হতো? কেমন করে তারা সত্যকে গোপন করে যাচ্ছে; প্রকারান্তরে তারা বিধাতার বিরোধীপক্ষ, সব সুনীতির বিরোধিতা করছে;সম্প্রতি একটি নামের মা অন্তে প্রথম রেশটি শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না, তার পুরো নাম রেশমা। তার কারণ হচ্ছে, সে বেশ প্রশ্নের পাহাড় তৈরি করতে পেরেছে। 

সবাই ধ্বংসযজ্ঞে মরছে, আর সে অমর হয়ে কাপড় পাল্টাচ্ছে, ম্যাচিং করছে; কারণ সে (ধারণা হয়) জানত যে, তাকে উদ্ধারে আসবে স্যাররাই—ভাইরা সেদিন পাত্তাও পাবে না। রেশমার চাকরির মেয়াদ একমাসও হয়নি, বিল্ডিং ধসের ১৭ দিন পর এক অবিস্মরণীয় উদগীরণ। তার আটকে পড়া ১৭ দিন ছিল মন্দের ভালো, কাটছিল শুকনো চার পিস কখনও শুনি চার প্যাক বিস্কুট আর পানিতে, কখনও শুনি শুকনো খাবারে। ম্যাচিং সালোয়ার-কামিজ যে করেই হোক, ঐ কংক্রিটের চাপা থেকেও উদ্ধারে সে সক্ষম হয়েছে। কেউ বলছে হেঁটে হেঁটে ড্রেস খুঁজে নিয়ে শুয়ে শুয়ে বড় কষ্ট করে পরেছে। তার মনোবল তারপরও মোটেও ভেঙে পড়েনি। সে ছিল ঝরঝরে ছিমছাম। কোনো অধামাস পার করা দুর্ভিক্ষের ছাপ পড়েনি তার অলৌকিক অ্যাডভেঞ্চারের ওই দেয়ালচাপা শরীরে। বারবার তাকে প্রসঙ্গ পাল্টে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিতে দেখা যায়। কখনও দালানে কখনও মসজিদ, তাতেই বাঁচে তার প্রাণ। গত শতকে রওশন এরশাদের সন্তান জন্মদানকালে বেশ চটকদার গল্পকথা শুনেছিলাম, ছিলাম ঢাকায়। মহিলারা বলেন, ‘বাবারে, রাজকীয় লোকের সন্তান মনে হয় লুকানোই থাকে। এই তো সেদিন দেখলাম কতই না বাহারি সাজে মহিলাকে মিডিয়াতে, স্কিনটাইট বডি, আজ আবার এ কী কথা শুনি মন্থরার মুখে! রেশমা তুমি কি ভাগ্যবতী না হতভাগী, জানি না। হয়তো নিকট ভবিষ্যতে তোমাকে খুন করা হবে, নয়তো বিদেশে পাড়ি দেবে তুমি, নয়তো বর্ডারে ধরা খাবে। আশা করি, এটি আগাম ধারণা করাতে দোষ হওয়ার কথা নয়।


রেশমাকে খোদ প্রধানমন্ত্রী তার গায়ের চাদর খুলে দেন; দেখা যায় রাতের চাদরে ঢাকা অন্ধকারে মানুষ মারলেও কিছু দয়ামায়া যে এখনও অবশিষ্ট আছে, তার প্রমাণ মনে হয় এসব। তবে সবার জন্য এটি নয়, শুধু সেভাবে লৌকিকতার সীমানা এড়িয়ে আসতে পারলে ওই রেশমার মতো একজনের জন্য শুধু। কীভাবে কী হলো বলতে অপারগ রেশমা। জানানো হচ্ছে গল্পের রেসের মা জ্ঞান হারিয়ে ছিল। এক লেখাতে পাই ১৭ দিন পর এক ইট কংক্রিটের ভেতর থেকে এক পোশাককন্যার আবির্ভাব। মাত্র ক’দিন আগে কাজে যোগদান করে, তার কাছে ছিল শুকনো খাবার (১৭ দিনের?)। কেউ বলছেন, মসজিদে পাওয়া গেছে, কেউ বলছেন দোতলায়। কথায় হরেক রকম—১, ২, ৩, ৪ রকমের ভার্সন পাওয়া গেছে। উদ্ধার পাওয়া রেশমা বাংলানিউজকে বলে ১৭ দিন পানি খেয়ে বেঁচেছে। নিচতলায় আটকালেও পরে নামাজঘরে চলে যায়। উপর থেকে উদ্ধারকর্মীদের পাঠানো বোতল দুটি কোনোভাবে সংগ্রহ করে। সেই থেকে প্রতিদিন অল্প অল্প পানে জীবন বাঁচে। দ্বিতীয় ভার্সন—এভাবে চলে ১৫ দিন আর বাকি থাকে মাত্র দু’দিন উপবাসে। তৃতীয় ভার্সন—মেয়েটির বরাতে মেজর মোয়াজ্জেম সাংবাদিকদের বলেন, ধসে পড়ার দিনও সে কোনো খাবার নিতে পারেনি।কেবল হাত ব্যাগে ছোট্ট চার প্যাক বিস্কুট ছিল। সেগুলোই অল্প অল্প করে খেয়েছে। উদ্ধারের পর অবাক-বিস্ময়ের শেষ ধাপে পৌঁছেন অনেকেই। কোনো ছাপই নেই তার পোশাকে অবয়বে; জামা-কাপড় অক্ষত। এ কোনো ভৌতিক ব্যাপার নয় তো? ওহ! জানা গেল উদ্ধারকর্মীর বরাতে, অনেক শুকনো খাবার পড়ে ছিল যে, তা-ও সে খেতে পারেনি। চতুর্থ ভার্সন —সবশেষে সাংবাদিকের ভাষ্যে রেশমা ২ বোতল পানিতে ও ৪ পিস বিস্কুটে এসে ঠেকেছে। ‘মায়াবিণীর একদম শেষের এক কথা, জাস্ট একটু পানি খাইছি, আর কিছু খাইনি’ দিয়ে কেটেছে ১৭ দিন। এ জটিল উদ্ভাবন কেমনে হলো? মনোয়ার নামের এক কিশোরের নজরে পড়ে প্রথম, ১৭ দিন পানি পান করা রেশমার পাইপ নাড়াচাড়া। সে বলেছিল ‘ভাই আমারে বাঁচান।’ শেষে কর্তাদের দেখে সে বলে, ‘স্যার, আমাকে বাঁচান।’ স্যারটি হচ্ছেন ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুর রাজ্জাক। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগলেও মেজর মোয়াজ্জেমরা প্রশ্নহীন। অনেকের জেগে ওঠা প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ভেতরে ধুলোবালি ছিল না, তাই কাপড়-চোপড় পরিষ্কার। বাংলাদেশের ধুলো দেশবাসী কমবেশি নিশ্চয় জানেন। সাধারণ কয়তলা উপরে সাজানো-গোছানো ঘরেও থাকে ধুলোর আস্তরণ থরে-বিথরে। এক ঝাড়ে যায় না। তাকে পরিষ্কার করতে হলে রেশমাসুদ্ধ দশ ঝাড় দিতে হবে।


পরে আরও ভিন্ন ভার্সনের সন্ধান পাওয়া যায়। তা আরও ভয়ানক। একটি হচ্ছে অন্য মৃতদেহ থেকে কাপড় খুলে পরেছে রেশমা। কী ভয়ানক তার ১৭ দিনে না খাওয়া শরীরে এত ক্ষমতাধৈর্যসাহস বা মৃতের কাপড় খুলে পরার গল্পের প্লট কে জোগালবিধাতা না সরকার? তারপর বলা হলো রানা প্লাজার দোকানের তাক থেকে কাপড় এনে অদলবদল করে পরেছে রেশমা।বেশ মাবেশ মা, তাহলে বেশ ভালোই ছিলে মা! মনে পড়ে আমার ছোটবেলায় এক ছোট বোন বড় আপামণির বিয়েতে আপুর কান্না দেখে বলেছিল, আপু কেন এত কাঁদছে? আমাকে এত কাপড়-গয়না দিলে আমি একরত্তিও কাঁদব না। রেশমার এ অবস্থায় কী বলা উচিত, বুদ্ধিতে আসছে না। তবে সে দেখি বলছে আর কখনও গার্মেন্টসে কাজ করবে না। এসব সত্যি হলে সে কাজ আর করল কোথায়করল মঞ্চ নাটক। হাঁটা-চলার কোনো সুযোগ ছিল না। সে ১৭ দিন শুয়ে ছিল ৩-৪ ফুট দেয়ালচাপা গভীর অন্ধকারে। তাহলে সে কেমন করে মসজিদে গেল আর দোকান খুঁজে পেল? তার জামা কাপড় ছিঁড়ে যায়, পরনে কোনো কাপড় ছিল না। উদ্ধারের দিন টর্চলাইট দিয়ে কাপড় খুঁজে এনে পরে তারপর উদ্ধার হয়। নাটক বেশ জমেছে মনে হচ্ছে। সে এ চিন্তাও করেছে কেমন করে বের হবে। সে তো মেয়ে, ছেলে নয়! নাটকের ডায়ালগ একদম তুঙ্গে। এক রসিকজনা কর্নেল আরশাদের বরাতে বলেনসে কাপড়ের মার্কেটে গিয়ে পড়েআর সেখান থেকে শুয়ে শুয়ে পরে নেয় পছন্দের কাপড়টি। সে নিশ্চয় পছন্দ করেই নেয়বরং সঙ্গে মাবোনদের জন্য আরও টি নিতে পারত। ১৭ দিনের আধমরার এ ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা একদম নতুন; তাই কেমন করে কী বলতে হবে, কোনটা খাপে খাপে মিলবে, তা তার জানা ছিল না। তাই অনেকের কাছে কিছু বেখাপ্পা ঠেকছে। চার পিস বিস্কুট বা শুধু পানিতে বা দুই বোতল পানিতে এত ঝরঝরে থাকা যে কেউ টেস্ট করে নিতে পারেন আর সাত্ত্বিক মুসলিমরা এ পরীক্ষা দেন প্রতি বছরে একবার। একদিন ক’ঘণ্টার না খাওয়াতেই অনেকে খেই হারিয়ে ফেলেন, আর সে তো আধা রমজানেরও বেশি কাটিয়ে দিল সাহরিইফতারবিহীনরাতের খাবারও অনুপস্থিত। তারপরও সতেজ থাকারেশমার ঈমানদারির সঙ্গে পৃথিবীর কোনো মানুষের এঁটে উঠবার কথা নয়। অলৌকিক ঈমানদারি ফুটে উঠেছে তার বিরল এ ক্যারিশম্যাটিক শরীরে। 

তার কাটা চুল নাকি সে ইট দিয়ে কেটেছে। তারপরও নাদানরা কত কিছু লক্ষ করেছে! কেউ বলছে নখও একদানা লম্বা হলো না কেমনেদাঁতও হলুদ হলো নাঝকঝকে পরিষ্কার; একই অঙ্গে এত রূপ কেমনে আটকায়? সে মাঝে মাঝে হেসেছে। মনের কাছে না হেসে তার উপায়ও নেইসবাইকে এমন বোকা বানাতে মে মাসই ধরা খেলএপ্রিলে নয়। বাংলাদেশীরা এবার মে মাসের বোকা সাজল। তার সামনে অনেক মানুষ মারাও গেল, উদ্ধারও হলো, কিন্তু সে কেন ওই সময় আওয়াজ করল না? এর কোনো উত্তর তার জানা ছিল না। ফ্যাল ফ্যাল করে চাওয়া ছাড়া অন্য জবাব ছিলমরা ১৭ দিন গত হলে পর তার আওয়াজ নিঃশেষ না হয়ে বরং সেদিনের বলিষ্ঠ আওয়াজই পৌঁছে জনতার কানে। তা-ও সাধারণ আনোয়ার-মনোয়ার নয়, একদম মেজর মোয়াজ্জেম বা হর্তাকর্তারা সেখানে কী পাহারা দিচ্ছিলেন, ইট-পাথর নাকি রড-ধুলো? জীবন্ত মানুষ তো থাকার কথাও নয়, তখন কার্যত বেশি শ্রমিকেরই থাকার কথা। এ ধরনের শত বিষয় প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পৃথিবীতে মিথ্যাকে সত্য বানানোর মতো কঠিন কাজ আর দুটি নেইবরং এক্ষেত্রে সত্যকে উদ্ঘাটন করা খুব সহজ কাজ। বাস্তবিকই সে হিসেবে বর্তমান সরকার অনেক কঠিন কাজ করছে। বিডিআরসাগর রুনীইলিয়াস আলীসুখরঞ্জন ধরনের হরেক সত্যকে মিথ্যা করে সাজানোতে যে মেধা পরিশ্রম সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছেতার তুলনা নেই। এটি প্রায় অসম্ভব কাজ সরকার করছে। সোনার পাথরবাটি আর কী! 

রেশমার চোখে কোনো মলীনতা কারও চোখে ধরা পড়েনি। সেটি সবাই দেখেছে, ছবিতে ভিডিওতে সেটি খুবই সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এটি লুকানোর সাধ্য নেই। বোঝা যাচ্ছে, মরুর লু হাওয়া বা ধসের তাণ্ডব তার ওপর দিয়ে মোটেও যায়নি, বরং বলা চলে বয়ে গেছে বেহেশতের হিমেল হাওয়া। এপ্রিল-মে’র গরমে তার সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। মেজর জেনারেল সারোয়ার্দী সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বলছেন, তার সঙ্গের তিন পোশাক শ্রমিককে আগেই উদ্ধার করা হয়—যারা ছিল মৃত। তা হলে সে কেমন করে জীবিত থেকেও উদ্ধার হতে এত সময় নিল? কোথায় ছিল সে, রানা প্লাজার দোকানে ড্রেস খুঁজতে, না অন্য কোথাও! এত তেজস্বী শক্তিধর, এত বড় ধসও তার সামনে কিছুই নয়, রেশমা কিন্তু কোথায় কাজ করত তা বলতে পারে না—আটকে যায়। স্মৃতি তার বিলুপ্ত নয় মোটেও। বাকি সবই মনে আছে—প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে যান তাকে দেখতে, শুনেছি কে জানি বলল, সে নাকি দেখতে চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে! প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কী সম্পর্ক ছিল, জানি না। সহজভাবে সব অঙ্ক মিললে কোনো কথা ছিল না। কিন্তু অঙ্ক গোঁজামেলে হওয়ায় সবকিছুই যেন ঝাপসা লাগছে। অলৌকিক রেশমা শুধু একটি কথা বলছে, আল্লাহর ইচ্ছায়। উদ্ধার কাজে থাকেন জেনারেল সরোয়ার্দী। কী অসাধারণ এ অভিযান, যেন ১৯৬৯ সালের চন্দ্রাভিযানকেও হার মানাবে! জানলাম, তার অলৌকিক অভিযানের সম্মানে আবার নারায়ে তাকবিরও দেয়া হয়। কিন্তু বিধাতা মানুষের জন্য এসব টিটকারির জবাবে কিছু কথা বলে রেখেছেন। মেজর জেনারেল হর্তাকর্তারা এটি স্মরণ রাখবেন। সে সময় মিডিয়ার কেউ ছিল না। সেনা অফিসার রাজ্জাক বলেন, তিনি মিডিয়ার লোকেদের ভবনের উপরে নিয়ে যান আর এ ফাঁকে অলৌকিক অভূতপূর্ব এ কাণ্ড ঘটে যায়। সে ১৭ দিন পানি খেয়ে বেঁচে ছিল, আর পাশের লোকরা পানি না পেয়ে অনেক আগেই মরেছে এবং উদ্ধারও হয়েছে। সবই বিবেককে আহত করছে। 
সবাই তার জন্য অতিমাত্রায় কাতর ও ব্যস্ত, কিন্তু সে হিসাবে রেশমা মোটেও ব্যস্ত বা ক্লান্ত নয়। একটি ছবিতে দেখি, সে তার নিজ হাত দিয়েই কিছু চেপে ধরেছে নাকের কাছটায়। বলা চলে, সে অনুপাতে সে বেশ উৎফুল্ল, ছিমছাম, হৃষ্টপুষ্ট। বেশ নাদুসনুদুস রেশমা, হাঁটাচলাতেও ভালো অভ্যস্ত, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দূরে ঠেলে রাখলে। কেউবা বলছে একমাত্র গাঁজাখোর এ গল্প বিশ্বাস করবে আগে-পরে, আর বিবেকবানরা প্রথমে সহজ অঙ্ক হিসেবে ধরে নিলেও পরে হোঁচটে আটকাবেন। গোলক ধাঁধা নামের চক্করে দেখবেন ‘মাথা যে ঘোরে!’ মিডিয়ার সামনে আসতে প্রস্তুতির রেশ ধরে রেশমার বেশ সময় লাগে। সাংবাদিকদের দেয়া হয় নানা বিধিনিষেধ। অর্ধশত উপস্থিত হলেও প্রশ্ন করার সুযোগ পান অতি ভাগ্যবান তিনজন সিলেক্টেড সাংবাদিক। ১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর তারা তার সুযোগ পান। হাঁটতে বসতে জাতি লাথিগুঁতো খেলেও রেশমার মর্যাদা কোথায় পৌঁছেছে বুঝতে কারও অসুবিধা হবে না! মেজররা একপায়ে দাঁড়া। মেজর মো. তৌহিদ-উজ-জামান কে কী প্রশ্ন করবেন, তার তালিকা তৈরি করেন। মেজর জামান বারবার সতর্ক করে দেন যে, একটির বেশি প্রশ্ন করা যাবে না। সাংবাদিকেদের মনেও প্রশ্ন, এত লাশের সারিতে এ মেয়েকে নিয়ে কেন এত বাড়াবাড়ি? আড়ালে-আবডালে সরিয়ে রাখার একটি প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। কত ছেঁড়া, ল্যাংড়া-লুলা পড়ে রইল সারাদেশে, আর এ সুস্থ মেয়ে দিব্যি বিস্কুট-পানি খেয়ে আছে; তার জন্য এত আদিখ্যেতা করার কী অর্থ থাকতে পারে? মেজর তৌহিদ-উজ-জামান অনেক প্রশ্নের জবাবে বলেছেনও, এসব কিছু প্রশ্নের উত্তর সংবাদ সম্মেলনে দেয়া সম্ভব নয়। এটি ছিল বিপাকে পড়া জামান সাহেবের জবাব। এটি তিনি আলাদাভাবে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের জানাবেন, এটি জানে শুধু আইএসপিআর। প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় রেশমার মা-বাবা বা অন্য কাউকে দেখা যায়নি। তার আচরণে কখনোই তাকে কাতর বা ভীত মনে হয়নি। কিন্তু সেনা কর্মকর্তা ও চিকিত্সকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তার আচরণকে সামাল দিতে পেছন থেকে নার্স আইরিনকে তার ঘাড়ে চাপা সঙ্কেত দিয়ে তাকে সামাল দিতে হচ্ছে। যাবার সময় সে হাসিখুশিভাবে সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে দেখায়।


সুখ রঞ্জনের মুখের কথা ইউটিউবে সাক্ষীর বক্তব্য হিসেবে শুনে থাকবেন দেশের ভেতরের-বাইরের সচেতনরা; কারণ বিষয়টি বিশ্ব নাড়িয়ে দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে তাকে অপহরণ করে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অপহরণ করে তাকে ভারত সীমান্তে ঠেলে দেয়। কারাগারে থেকেই তিনি তার আদ্যপান্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। ইংরেজি দৈনিক নিউএজ এক অনুসন্ধানী কাজে এটি উন্মোচন করতে সক্ষম হয়। এটি লিখে পাঠান ডেভিড বার্গম্যান। বালী ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর একজন সাক্ষী। আদালতে এসেছিলেন গত ৫ নভেম্বরে। পিরোজপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের  সাক্ষী সত্য প্রকাশেই উত্সাহী ছিলেনবিধায় সাক্ষীকে  প্রক্রিয়ায় সরকার আস্ত গিলে ফেলে। আদালত চত্বর থেকে তাকে তুলে নিয়ে পুলিশের গাড়িতে করে ডিবির অফিসে নেয়া হয়। অপহরণ করে পার হয় বিএসএফের দোরগোড়ায়। ওরা খুব সহজে বাংলাদেশী মানুষকে মেরে ধরে গুলি করে হজম করতে পারে। গত  এপ্রিল ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দেশটির ফরেনার অ্যাক্ট ১৯৪৬এর অধীনে কলকাতার একটি আদালত বালীকে ১০৫ বা ১১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়। সুখরঞ্জন বালীর ভাই বিশা বালীকে হত্যার অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর ফাঁসির রায় হয়। এটি এমন এক রায়যেটি মৃতের আপন ভাইও  মিথ্যা সায় দিতে রাজি নয়। সেটি আমরা ইউটিউবেও দেখেছি। সেখানে তার আরও সদস্যদের একই বক্তব্য। তাই যত বিভেদের ফ্যাকড়া বিঁধেছে। বালী বলেনঅফিসের লোকজন পুলিশের পোশাকে ছিলকিন্তু তাকে অপহরণ করে সাদা পোশাকের লোক। দুটি ক্ষেত্রেই ইলিয়াস  বালীর অপহরণে এক ধরনের দাগচিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে। বিচারের নামে প্রহসন আর কত হবে? বাংলাদেশে তাকে মারার হুমকিও দেয়া হয়—এভাবে যে, সাইদীকে ফাঁসি দেয়া হবে এবং তাকে হত্যা করা হবে।


দেশের আইন এমন পর্যায়ে গেছে যে বাদীআসামি দুজনাই ফাঁসিতে ঝুলবেন; শুধু বিচারক বেঁচে রইবেন তার নষ্টের প্রতাপী দলবল নিয়ে। নিউইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক প্রতিবেদনে খবরটি প্রকাশিত হয় ১৬ মে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একজন সাক্ষীকে এভাবে অপহরণ করার ঘটনা মারাত্মক উদ্বেগের বিষয়। এ পুরো বিচার প্রক্রিয়া, এর বিচারকরা এবং বাংলাদেশ সরকারের বিষয়ে আমাদের মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’ এক খবরে দেখি তাকে পুশব্যাকের চেষ্টা করা হচ্ছে, আর আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ সবাই আতঙ্কে আছে। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) ভারতীয় অফিসের সঙ্গে সুখরঞ্জন বালীর সাক্ষাৎ হওয়ার আগে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো উচিত হবে না—এ খবরেও ওই সংস্থা আতঙ্কে আছে। বিবিসির বাংলা অনলাইন ভার্সনেও ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে নিখোঁজ হওয়া সুখরঞ্জন আলোচনায় এসেছেন। বালীই উদ্যোগী হয়ে নিজেকে ওপেন করেন। এর জন্য সেখানকার একজন জেল কর্মকর্তা সহযোগিতা দেন। যার খেসারত হিসাবে শাস্তির গুরুদণ্ড এবার ওই জেল কর্মকর্তাকেও গুনতে হবে। তার ব্যাপারেও হিউম্যান রাইটসের এগিয়ে যাওয়া উচিত।

বর্তমানে শাসকপক্ষের কিছু বৈশিষ্ট্য—এরা সব হ্যাঁ-কে না করতে পারে, আবার সব না-কে হ্যাঁ করতে পারে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর বায়না বিরোধী নেত্রী তাকে গ্রেনেডে মারতে চান। কিন্তু তিনি সবসময়ই ছাত্রনেতাসহ দলে-বলে পুলিশি দেশের হুমকিতে ওই গ্রেনেড নিয়ে দেশময় কর্তৃত্ব করে বেড়াচ্ছেন। আর একটি কথা বহু আগে থেকেই শোনা যায়, সেটি হচ্ছে লাশের রাজনীতি। সম্প্রতি (২০১৩ সালে) লাশ আর লাশনীতিই শক্তিধর জীবনের এক অমোঘ নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রামুতে হিন্দুমন্দিরে হামলা—শক্তিধররা সবখানেই এ ধ্বংস নীতিতে জড়িত। সুখরঞ্জন বালী হিন্দু না মুসলিম, সেটি বড় হয়ে দেখা দেয়নি। সুখরঞ্জন বালী এক সত্যনিষ্ঠ দরিদ্র মানুষ। বড় বড় কর্তাদের কাছে তিনি কিছুই নন। কিন্তু তার অন্তরে একটি সত্ মানুষ যে ঘুমিয়ে আছে, তা তাকে কলকাতার কারাগারে রাখলেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কাল একজন বলছিলেন, সুখরঞ্জন বালী ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তারপরও তিনি সত্যের কারণে শক্ত থাকতে পেরেছেন। এটি অনেক সাহসের কথা। বিএসএফের কর্মকর্তারা তাকে নির্যাতন করে। সে হিন্দু বলে কি তাকে সেখানে পাঠানো হলো—এর যুক্তি কী? চার ব্লগারকে আমেরিকা পাঠানোর পাঁয়তারা চলছে। সরকার কেন সুখরঞ্জনকেও আমেরিকা পাঠাল না? সেটি ভাবছি। ইলিয়াস আলীর অবস্থা আরও করুণ। তাকেও আমেরিকা না পাঠিয়ে পরপারে পাঠিয়ে দেয়া হলো কেন? সরকার নিজেই বলছে আতঙ্কে আছে। তত্ত্বাবধায়ক এলে নাকি ফের কারাগারে ঢুকতে হবে। সরকারের কারাগারে ঢোকানোর অনেক রসদ এযাবৎ সরকার নিজের উদ্যোগে তৈরি করে রেখেছে। কারাগারে যাওয়ার জন্য আর তত্ত্বাবধায়কের অপেক্ষা করতে হবে না। তাকে এমনিতেই ঢোকানো যাবে। 

চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। তারপরও বলি। যারাই সত্য উন্মোচন করছেন, তারা পুণ্যের কাজ করছেন, যা তাকে ব্যতিক্রমী অর্জনধারী করে তুলবে। সুখরঞ্জন বালীরা ওই দলে ঢুকছেন। আর যারা অপরাধ ঢেকে রাখছেন, তারাও কর্মকর্তার সমান পাপের অধিকারী হয়ে থাকবেন। ঐশী নির্দেশ তাই জানান দিচ্ছে। ‘আর সত্যকে তোমরা মিথ্যার পোশাক পরিয়ো না বা সত্যকে গোপন করো না, যা তোমরা জানো’। (সুরা বাকারার ৪২ আয়াত) তাই জেনে শুনে সত্য গোপন না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ যাবৎ সাংবাদিকতার নামে বা যে কোনভাবে সত্য প্রকাশে যারা অবদান রাখছেন বা সত্য উৎঘাটনে কাজ করছেন, তারা প্রকৃতই বিধাতার একনিষ্ট সৈনিক। সুখরঞ্জন বালীও তাদের একজন।
১৭ মে ২০১৩

না জ মা মো স্ত ফা

(এ এক অনন্য উদাহরণ আজ ২০২২ সালে ডিসেম্বরের পড়ন্ত প্রহরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ মির্জা আব্বাস, রিজভীরা বিনা অপরাধের আসামী। এর কারণ কি সেটি খুঁজতে গেলে দেখা যায় বিগত ২০১৪ সালের চিত্র অনেক সত্যকে স্পষ্ট করছে। এরা মুজিবের কন্যার বদৌলতে কখন কেন ও কিভাবে দেশে রাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে তার সামান্য চাল চিত্র মাত্র। তাদের চুরি ডাকাতীকে লুকাতে তারা বড় সময় থেকেই এটি করে চলেছে।)

বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষ কি পরিমাণ সংকট সময় পার করছেন তা ভুক্তভোগীরা জানেন। মনে হয় আওয়ামীলীগে এমন মানুষ খুব একটা অবশিষ্ট নেই যারা নীতির ধারায় চলেন। কারণ নীতিবান এ জায়গায় বারে বারেই হুচট খাবে, চলতে গেলে আটকে যাবে। মানবিক সুস্থ নীতির সাথে ওদের নীতি খাপে খাপে যায় না বলে একটি কথা বহুদিন থেকেই প্রচলিত ও প্রমাণিত। প্রমান হিসাবে আজকের ১৭ তারিখের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের একটি উক্তিই যথেষ্ট। “মেধার বিবেচনা না করেই ছাত্রলীগ কর্মীদের চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হোক”, এটি একটি আকুল আবেদন একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের, যিনি দলটির আহবায়কের ভূমিকায় আছেন। তার কথাতেই সুস্পষ্ট যে তিনি এর মাঝেই তার সকল বিবেক হারিয়ে বসে আছেন। ন্যায়শাস্ত্রে ঐ অপরাধে ঐ শিক্ষকেরই চাকরি চলে যাওয়া উচিত। এরকম নীতির ধারকরা ছাত্রদের কি শিক্ষা দিতে সক্ষম, একমাত্র সংকীর্ণ রাজনীতি আর গুন্ডামী ছাড়া তাদের সামনে আর কোন আদর্শ নেই। জ্ঞান অর্জনের ও বিতরণের আগেই তারা সুশিক্ষিত, বিনা সার্টিফিকেটেই আজ এরা চাকরী দাবীর উপর আকুল আবেদন জানাচ্ছে। এর প্রধান কারণ এসব ছাত্ররা সারাবছর গুন্ডামীতে থাকার কারণে থার্ড ক্লাসের বেশী কিছু বাগাতে পারে না। তাই স্বভাবতই অপকর্মে দক্ষ শিক্ষকের হাত লম্বা করতে তাদের পক্ষ থেকে আবেদন আসছে। এদেরে বলা হচ্ছে মানুষ গড়ার কারিগর। এরা আসলেই ডাকাত গড়ার কারিগর। যাদের আদর্শ শূণ্যের কোঠাতে এদের কাছে গোটা জাতি অনিরাপদ অবস্থানে সময় পার করছে। এজন্য প্রতিটি অভিভাবকের ছাত্রদের এমনকি খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও এটি একটি আতঙ্ক সংবাদ। এদের প্রশ্রয়ে জাতি আজ আকন্ঠ ডুবে আছে গভীর তলানীতে। উপরন্তু এদের বলা হচ্ছে বুদ্ধিজীবি। এটি হচ্ছে জাতী ধ্বংসের ভূমিকম্পপূর্ব আগাম আলামত, মগজের ক্যান্সার। যেখানে একটি অসৎ সরকারের কাছে কোন সততা অবশিষ্ট নেই। মন্ত্রী এমপিদের সম্পদ বৃদ্ধির হার আকাশচুম্বী, ১০০ থেকে ৩০০ গুণে বিচরণ করছে। আলামতে প্রমাণ কোন মানুষের নয় বরং কিছু শয়তানের ইন্ধনে দেশ চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিগত নির্বাচনে কোন পর্যবেক্ষক পাঠাতে রাজী হয়নি, কারণ এ অসৎ সরকারের পর্যবেক্ষক পাঠানোর কোন যুক্তি তারা খুঁজে পায়নি। এতসব ঘটনায়ও টনক নড়ে নি ক্ষমতালোভীদের।

ওদিকে এরমাঝে চোখে মুখে বিস্ফোরণ তুলে বিদেশী কুটনৈতিকদেরকে বড়গলা বের করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলছেন, ‘আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবেন না’। চুরি চামারি করে করে দেশটির চৌদ্দটা বাজিয়ে বড়াই করছেন তিনি ‘আমরা এখন আর কারো কাছে হাত পাতি না’। চোর আর ভিক্ষুকের মাঝে পার্থক্য আছে, ভিক্ষুক হাত পাতে আর চোর পকেট কাটে। একদিনের প্রতিষ্ঠিত ভিক্ষুক যখন প্রথমটি রেখে দ্বিতীয়টি ধরে তখন এমন কথাই তার মুখে বেশী মানানসই হয়। দুটি পেশাই আত্মমর্যাদাহীন অপকর্ম। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতির মুখে এমন ভাষা শোভা পায়, একমাত্র সততার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা পাওয়া একটি সরকার এমন দাপট দেখাতে পারে। কিন্তু মতিয়া চৌধুরীর মত অসৎ সরকারের মন্ত্রীর মুখে এমন কথা তার চোরের পরিচয় আরো সুস্পষ্ট করে তোলে। বর্তমান সংসদে মনুষ্যত্বহীন বিবেকহীন কিছু কপট ছাড়া প্রকৃত কোন মানুষ সংসদে আছেন বলে মনে হচ্ছে না। ইনু এরশাদ আর মতিয়ারা প্রতিটি মানুষই নীতিহীনতার দক্ষতায় এভাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেন। এদের কথা শুনলে মনে হয় দেশটি বুঝি বুড়িগঙ্গার হাটুজলেই ডুবলো। অতীতে কেউ কেউ মনে করতো মতিয়ার মাঝে কোন মানবিক গুণ অবশিষ্ট থাকতে পারে, মনে হয় না এমন কিছু অবশিষ্ট আছে বলে। একটি হাড়ির একটি ভাত টিপলেই বুঝা যায় সবকটি ভাতের অবস্থান। জানা যায় টক শ থেকে মেনন ইনুদের আয় লাখ টাকা, সংবাদ যাযাদির। একাই ৪ শত ভোট দিলেন বাবুগঞ্জ উপজেলার ছাত্রলীগ সভাপতি। চোরির উপর বাটপারিতে একে একে সবাই অতিরিক্ত পারদশী। সম্প্রতি রাজশাহীতে আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে ককটেলে উড়ে গেল একটি শিশুর কবজি। সোনার দেশের সোনার ছেলেদের কার্যালয় বলে কথা। যুবলীগের সাথে মার আর দাঙ্গা অতপ্রেতোভাবে জড়িত ডাল আর ভাতের মত। তাই তাদের বড় চাকরিও দরকার, মারদাঙ্গায় জড়িয়ে থাকাতে সার্টিফিকেটে অর্জন করা কষ্টকর হতে পারে তাই দলদাস শিক্ষক থাকলে তিনি যে কি করবেন, উপরের খবর থেকে অবাধ অনাচারের সে সত্যকথন আমরা জানলাম। ভালো করে খোঁজ নিলে দেখা যাবে হয়তো ঐ শিক্ষকও এভাবে কোন এক ফাঁকে মুজিব বন্দনার বদৌলতে এসে ঢুকেছেন। তাই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড আজ আহত বিধ্বস্ত।

চল্লিশ পার করা দেশে একটি জিনিস প্রচন্ড নজর কাড়ে, বাংলাদেশ যতনা সামনে যাবার কথা ততই যেন পেছনে আটকা পড়ে জড়িয়ে যাচ্ছে শিকড়ের সাথে। কে বা কারা এটি খুব কৌশলে করে যাচ্ছে, জাতিকে বাঁদর নাচ নাচাচ্ছে। কারণ একটি ভৌতিক প্রেতাত্মা ও তার কুটিল জাল বিছিয়ে রোগের মতই গোটা জাতিকে আচ্ছন্ন করে আছে। স্বাধীনতা, স্বাধীনতা, স্বাধীনতা শুনতে শুনতে কানটা যেন ঝালাপালা হয়ে যাবারই জোগাড়। বছরের অর্ধেকটাই বাদর নাচানাচিতে চলে যায়। পৃথিবীর আর কোন দেশে মানুষ এভাবে পেছন হাটেনা। স্বাধীনতায় ৪২ বছর পরও আজ গুন্ডারা হামলে পড়েছে কৌশলে, মুভিতে নাটকে শুধু দেশে নয়, প্রতিবেশীর বিদেশ জোড়া অপপ্রচারেও। তখন মতিয়া চৌধুরীর মুখ দিয়ে একটি বাক্যও বের হয়না। শক্ত একটি কথাও মুখ দিয়ে বের হয়না। ভিখারীর আর চোরের আদলে মুখ নীচু করে থাকতেই দেখি। আজ প্রায় চারযুগ পরও দেশটি একাত্তরপূর্ব অবস্থানে সমান নয়, বরং বহুগুণ বেশী শংকার সময় পার করছে। আজ বাংলাদেশীরা অন্যের হাতে ভাতের কামড় খাচ্ছে, ঐ সব মাথামোটা নেতাদের অপরিনামদর্শী কাজের জন্য। পড়শিরা তাদের নিজেদের মত করে সাজিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশীদের কামড়গুলি, আর বুঝে না বুঝে তাই গোগ্রাসে গিলছে অবুঝ দেশবাসী। চল্লিশ পার করা সোমত্ত বাংলাদেশীদের জন্য এটি লজ্জার বিষয় সন্দেহ নেই। ঘরে ঘরে গিন্নীরা পাগলের মত গিলছেন হিন্দী ফিল্মের কলাকৌশল, যেন মজে অর্ধেক ভুত হয়ে গেছেন। কারণটি কি? অনেকের অনেক চিঠিপত্রও পাই এর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে, এমনও জানি অনেক সংসার ভেসে যাচ্ছে হিন্দী ফিল্মের নষ্ট জোয়ারে, উথাল পাথাল প্রেমের নষ্ট নদীতে তারা হাবুডুবু খাচ্ছে। কারণটি অনুসন্ধান জরুরী। এর প্রধান কারণটি হচ্ছে এরা এদের প্রকৃত শিকড় পরিচিতি এর মাঝে বলতে গেলে হারিয়ে ফেলেছে। হলির বর্ণিল রঙ্গে মেতে ওঠে চারুকলার শিক্ষার্থীরা। মনে পড়ে প্রায় দেড়যুগ আগে প্রথম যখন এসব আমদানী হয় তখন আমরা ঐ একই পাড়ার বাসিন্দা ছিলাম। ভয়ে আর আতঙ্কে শিক্ষকরা পর্যন্ত আকস্মিক দুর্ঘটনার শিকার হতেও শুনেছি। রঙ্গের এ উশৃংখল মহামলোতে প্রথম বারের মত চমকে উঠেছিল ঐ অঞ্চলের মানুষ। মনে পড়ে অভিযোগ উঠেছিল কিছু শিক্ষককেও রংমাখা সংএর ক্লাউন বানানো হয়েছিল। অনাচার উশৃংখলতা কোন উত্তম আচার নয়। সংস্কৃতির নামে যতই উশৃংখলাতে দেশ যতই ডুবে যাবে ততই তার মানবিক ধ্বংস ত্বরান্বিত হবে। মাদকে আসক্তি তার বড়এক পাওনা পড়শির উদার হাতের দান। গিলে গিলে ধন্য বাছাধনেরা। একটি ক্ষমতান্ধ অসৎ সরকার দেশ চালাচ্ছে এমন তালে, অনাচার করাই যেন ঐ দেশের কালচারে পরিণত হয়েছে। একজন অনাচারী প্রধানমন্ত্রী ইন্ধনে আছেন যাকে আদালত রং হেডেড আখ্যায় আখ্যায়িত করে, এটি জাতির ভুলে যাবার কথা নয়।

“চোরাই গাড়ীসহ আটক সাংসদপুত্র: ছাড়াও পেয়ে যান। সাংসদপুত্রকে ছেড়ে দিয়ে তার বন্ধু রাসেলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে” (১৩-১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩, সাপ্তাহিক সুরমা)। এ ধারা হচ্ছে বর্তমান সরকারের প্রশাসনের বিচারিক ক্ষমতা। এটি শত উদাহরণের মাঝে থেকে নেয়া একটি। এরকম শত শত খবর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পত্রিকার পাতা থেকেও বেশী মানুষের হৃদয়ে। কারণ মিডিয়াকে এসব চেপে রাখতেই নানান কৌশলে বাধ্য করা হচ্ছে। শত অনাচারেও সরকারকে বা তার দলবলকে কারাগার মাড়াতে হয়না। দৈবাৎ মাড়ালেও ছাড়ানোই নিয়ম। সরকার চায় সে ছাড়া আর তার দল ছাড়া আর কেউ ঐ দেশে থাকবে না, কেউ ভিন্ন রাজনীতি করবে না। করলে তাদের কারাগারে ঢোকানো হবে। নিজেদের সোল ডিলারশিপ টিকিয়ে রাখতে সকল সততার কবর রচনা করে মিথ্যে নির্বাচনের ভেলাতে চড়ে মসনদে আসীন হয়েছে তারা। এককালের মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীও আজ নস্যি, এবার ঋণ খেলাপী, তিনি জোর গলাতে প্রতিবাদ করে বলেছেন এদেরে কখনোই ভোট দেবেন না, এরা ভোট চোর। সরকারের বড়ই গায়ে লেগেছে। তাই তিনি নির্বাচনে কৌশলে ভোটে অযোগ্য বিবেচিত হন। ওদিকে অনেক তথ্যে পাওয়া বোতল খাওয়া জয় রংপুরের সর্দার সেজে নেচে কুদে বেড়াচ্ছেন। বড়াই করছেন তার মহামতি মা জাতিকে এক অসাধারণ নির্বাচন উপহার দিয়েছেন। আমরা দেখছি তা দেখে অবাক বিস্ময়ে গোটা বিশ্বই হতবাক হয়ে আছে। বাস্তব অবস্থানটি হচ্ছে প্রতিটি আওয়ামী নেতা নেত্রীরা অনাচারের সোল এজেন্সী নিয়েছেন। সেখানে স্পিকার থেকে রাষ্ট্রপতি একই রেসের ঘোড়াতে সওয়ার হয়েছেন। জাতির সংকটে রাষ্ট্রপতি এগিয়ে আসেননি, অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে আজকাল এখানে ওখানে তাকে দেখছি মনে হচ্ছে তারও কিছু কাজ আছে। হাত পা কেটে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন পারিবারিক গদি দখলের সহকারী সদস্য শেখ সেলিম। সরকার তার ও তার আসামীদের মামলাকে তফাতে রেখে পিলখানার ধ্বংসযজ্ঞকে পর্যন্ত দাবড়িয়ে রেখেছে।

ওদিকে জাতিকে প্রধানমন্ত্রীর রাজাকার বেয়াইএর নিরুত্তাপ ভোট জালিয়াতি গেলানোর চেষ্টাতেই এগুচ্ছে বর্তমান সরকার। স্বসার্থে রাজাকারেরও ছাড়, নইলে রক্ষা নেই মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীসহ প্রতিটি প্রতিবাদী জনতাই আজ সরকারের শত্রুতে পর্যবসিত হয়েছে। সে হিসাবে গোটা জাতিই আজ প্রতিবাদমুখর আর সরকার দাঙ্গাবাজ জঙ্গির ভূমিকা রাখছে। স্বাধীনতার শুরু থেকেই তার পরিবার ও তার নিকটসদস্যরা লুটতরাজ, মারদাঙ্গা, হত্যা গুম খুনে জড়িত। এদের থেকে শত হাত দূরে হামলা মামলা থাকলেও প্রতিটি প্রতিবাদীর গলাতে আজ কারাগারের রজ্জু লাগানো। এটিই অসৎ রাজনীতির ২০১৪ এর সরকারী ভূমিকা। গোটা জাতি আজ হুমকির মুখে। ভোটে অনিয়ম, সংঘাত এর মূলে ইসির ভুমিকা ধারণাতীত বড়সড়, সরকার আর ইসির ব্যর্থতায় নির্বাচন আজ প্রতারণায় পর্যবসিত হয়েছে। এটি সবাই জানে ইসি এক কেনা গোলাম। এভাবে কেনা গোলামেরা প্রতিটি সিট দখল করে সমগ্র জাতিকে দাসত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একবার নয়, বারে বারে গ্রেফতার করা হচ্ছে বিরোধী নেতাদেরে। এর একমাত্র কারণ এরা সরকারের অপকর্ম নিয়ে নড়েচড়ে যা বর্তমান অমানবিক সরকারের পছন্দ নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে কাছে টানতে আল-কায়দা ট্রামকার্ড তৈরী করে সরকার যে আত্মঘাতি ষড়যন্ত্রে নেমেছে তার প্রতিবাদ একমাত্র এরাই করে। এতে সরকার বারে বারে বাড়তি বেকায়দায় পড়ে যায়। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মির্জা আব্বাস ও এরকম আরো অনেককে কারাগারে নেয়া হচ্ছে এসব দমন করতে, কৌশলে বলা হচ্ছে তারা নিজ হাতে আগুন দিয়েছেন। সমগ্র জাতি জানেন এদের সাথে এমন আচরণ কেন করা হচ্ছে কারণ সরকার গদিটা লম্বা সময়ের জন্য তার দখলে রাখতে চাচ্ছে। সারাদেশে সরকার ভোট কারচুপি ও সন্ত্রাসের নামে মহাউৎসব চালিয়েছে। এ হচ্ছে সরকার ও তার রং হেডেড বিচারবোধ ক্ষমতা! অভিযোগ উঠেছে যশোহরে ভোট ডাকাতির জন্য চরমপন্থীদের জড়ো করা হয়েছে।

একটি উজ্জ্বল উদাহরণ সবার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। সমাজের একটি সচেতন বিবেককে কেন ছলবাজ সরকার বেধে রেখেছে? কেন আজ মাহমুদুর রহমান জেলে কারণ এ সৎ ব্যক্তিটি সরকারের পরিজনসহ অনেক অপকর্মের গোপন পাট খুলে পাঠকের সামনে তুলে ধরেন। সম্পাদক হিসাবে তিনি তার কর্তব্যকর্মটি সুচারুভাবে করেছেন যার জন্য তার পুরস্কৃত হবার কথা। মানুষকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, তাই তিনি জেলে। ইতমধ্যে কৃত সরকারের হাজার হাজার অপকর্ম ঢাকতে খুব কৌশলে এটি করা হয়েছে। হককথার বাহক পত্রিকা “আমারদেশ” বন্ধ রেখে সরকার প্রমাণ করেছে তারা আগাগোড়া কত বড় অনাচারি। এই একটি উদাহরণই যথেষ্ট একটি নীতিহীন সরকারের শ্রেষ্ঠ অপকর্ম হিসাবে। সাগর রুণির মত জোড়া দম্পতির হত্যার পরও অতি সম্প্রতি সঠিক সংবাদ প্রকাশ করায় আর এক সাংবাদিক সাগরকে থানার ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। বুঝেন এটি সরকার নামের এক অপশক্তি গোটা দেশের উপর রাহুর মতই চেপে বসেছে। কুকুর পাগল হলে বৃহত্তর স্বার্থে তাকে মেরে মানুষকে মুক্ত রাখা হয়। নয়তো ঐ পাগলা কুকুরের কামড়ে জীবনের সংকট জলাতংক রোগ বিপদ হয়ে দেখা দেয়। ২০১৪এর বাংলাদেশের জনতাদের মুক্তির জন্য কি প্রেসক্রিপশন দরকার সেটি প্রতিটি সচেতনকে শক্ত করেই ভাবতে হবে, এবং শক্ত করেই এ অপশক্তির হাত থেকে বাঁচার পদক্ষেপ নিতে জাতিকে একতাবদ্ধ হতে হবে। গুটি কয় পগলা কুকুরের হুমকির মুখে গোটা জাতি আজ কঠিন সময় পার করছে। মনে হচ্ছে সরকার তার মানবিক সব অবয়ব পরিত্যাগ করেছে। ভয়ানক পশুর পোশাকে আবৃত হয়ে পড়েছে। হুঙ্কার ছাড়ছে ও দলবল নিয়ে সেই তালে অদ্ভুত আকৃতি ধারণ করে আছে। এত চুরির পরও তার ও তার মন্ত্রীদের সিনাজুরি কমেনি, বরং বেড়েছে। সবযুগে এটিই ডাকাতের প্রকৃত স্বরুপ। তার অসততার নমুনা হচ্ছে দরকার হলে আমরা জামায়াতের সাথে থাকবো কিন্তু বিএনপির জামায়াতের সাথে থাকা চলবে না, এটি ছলবাজদের শর্ত। তারা তাদের চোরদের পকেট ভরার জন্য যে বিদ্যুতের কুইক লোপাটের ব্যবস্থা করেছিল তার পুরোটাই গিলতে চায়, দলবাজরা উদর পূর্তি করতে গিলেছে ও গিলবে তবে খেসারত পুরোটাই গুণতে হবে জনগণকে। দাম বাড়ালে চিৎকার দেয়া চলবে না। এরকম আগাম অজস্র হুমকি ও শর্ত প্রধানের বেধে দেয়া। তাদের মন্ত্রীরা বলছেন মানুষ দু চারটা মরতেই পারে, এটি খুব সহজ বাস্তবতা তাদের কাছে। সেদিন শুনলাম৭১ টিভিতে এক বক্তা বলছেন পুলিশ ফাঁকাগুলি ছুড়েছিল ওতে একজন মারা গিয়েছে। আমরা বিস্ময়ে বক্তার কথাটি শুনছিলাম বাংলাদেশের ফাঁকাগুলিতেও মানুষ বাঁচতে পারে না, মরে যায়। সরকারের ক্ষমতা এত উচ্চ পর্যায় পার করছে যেখানে পুলিশও সরকারী ক্যাডারের মত কাজ করছে।

খবরে প্রকাশ ভারতে বই ছাপিয়ে সরকারের ক্ষতি ৬০ কোটি টাকা। ওদিক বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে আছে ১২ লাখ ভারতীয়। মতিয়া চৌধুরীরা আপাদমস্তক বিদেশের নতজানু পলিসির শিকার হয়ে দিনগুজরান করছেন। এর উদাহরণ দেখুন। “বিশ্বকাপ উদ্বোধন: নিজদেশের শিল্পীরা অবহেলার শিকার” কারণ বিদেশীর কাছে শির বিক্রি করে দেয়া ভিখারীর দশা মতিয়া ও তার নেত্রীর এ কুদশা করে ঘুচবে জানিনা। মতিয়াদের অতি ভারত প্রেমে জাতী অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গর বিদেশি জাহাজ থেকে ৪০ লাখ টাকার হুইস্কি ও বিয়ার উদ্ধার। তানোরে তাফসিরুল কুরআন মহফিল বন্ধ করলো আওয়ামী লীগ নেতারা, প্রধান বক্তা লাঞ্ছিত। তাদের দৃষ্টিতে এটি একটি উপযুক্ত কাজ করেছে সরকারের দলনেতারা। কারণ এ দেশে হুইস্কি বিয়ার মদ গাজার ব্যবসাকেই প্রাধান্য দিতে হবে কুরআনকে নয়। এ দুটির সহঅবস্থান একসাথে হয়না। একটি থাকলে আর একটিকে বাতিল করতে হয়। সরকারের পছন্দ প্রথমটি তাই দ্বিতীয়টিকে বাতিল করতেই তাদের দলদাসরা ব্যস্ত। কলামটি লেখার সময় ১৭ই মার্চ ২০১৪ সাল।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ লেখার শুরুতে এ বছরের মার্চে আওয়ামী চাকরী প্রাপ্তির প্রস্তাব এসেছিল একজন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকের মুখ থেকে। এবার উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে বছরের শেষে ডিসেম্বরেও ২০১৪ সাল এইচ টি ইমামের একই ধারার বক্তব্য দেশে তোলপাড় চলছে। বিসিএস পরীক্ষাতে শুধু থিওরী পাশ করলেই চলবে, বাকীটা তারাই সামলাবেন। অতীতেও সব সময় সব চাকরীতে নেত্রী খুঁজেন সে আওয়ামী লীগ করে তো? এটিই বাংলাদেশের চাকরীর প্রধান যোগ্যতা। তাই দেশ অতল গহ্বরের দিকেই ধাবিত হচ্ছে।

(লেখাটি আমার দেশ ছাপে ২০১৪ সালের মার্চের ২০ তারিখে। লেখাটি আমার দেশ ছাপে ২০১৪ সালের মার্চের ২০ তারিখে)

না জ মা মো স্ত ফা

(প্রায় এক যুগ আগে প্রকাশিত লেখাটি ইঙ্গিত করছে, ”ভারতকে ভাবতে হবে” ছিল লেখার শিরোনাম। আজকে ২০২২ সাল একই পাপের আসামী ভারত আজো। লেখাটি আমার দেশ ২০১৪ সালের ১৬ই জানুয়ারীতের ছাপে।)

সবাই বলছে এটি নির্বাচন নয়, গরিব একটি দেশের ৬০০ কোটি টাকার তামাশা। ভারতের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ভারত হাসিনাকে দেবে ১০০০ কোটি টাকা। কিন্তু কেন? এ দান কোনো মহত্ দান নয়, পার্শ্ববর্তী দেশটির সর্বনাশ করতে এ টাকা দেয়া হবে। ব্যক্তি হোক বা দেশ হোক, এমন অনৈতিক স্পর্ধা কি কারও করা উচিত? নীতির প্রশ্ন কী বলে? পরের মাথা কাটার জন্য খুনের দালাল নিয়োগ দেয়ার মতো অবস্থা। বহুদিন থেকে দেশটি ভারতের অনাচারের মোকাবিলা করছে। সমাজ সভ্যতা সততার মানদণ্ডে এসব অনুমতি পাওয়ার কথা নয়। অসভ্য সমাজে অমানবিক ময়দানে এসব সচল থাকতে পারে। অনেকেই সন্দেহ করছেন দেশের ভেতরে সহিংসতায় ভারত দলেবলে অংশ নিচ্ছে। শক্তি থাকলেই আর পরিধিতে বৃহত্ হলেই কি সব অনাচার করার অধিকার জন্মে যায়? বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট বলেছে, এ নির্বাচনে হাসিনার ভিত্তি পাওয়ার কথা নয়। এটি গণতন্ত্রের পচনের নমুনা। গত ৫ জনুয়ারির একতরফা নির্বাচনের ধাপ্পাবাজি ও তার পরবর্তী বুক-চাপড়ানো বাহাদুরির সব নমুনা সারা জগত্ দেখছে অবাক বিস্ময়ে। বাংলাদেশে সাহায্য বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সাহায্যদাতা দেশ ব্রিটেন। ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ব্রিটেন রিভিউজ এইড টু বাংলাদেশ আফটার ইলেকশন ভায়োল্যান্স’ শিরোনামে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। এ নির্বাচনের রাজনৈতিক, নৈতিক এবং জনগণের ম্যান্ডেট ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শক্তভাবে। ভারতীয় আউটলুকের মন্তব্যে ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার অর্থহীন নির্বাচন নিয়ে প্রসঙ্গ এসেছে। আউটলুক পত্রিকা মনিব ভারতকে নতুন নির্বাচনের জন্য দ্রুত হাসিনাকে পরামর্শ দিতে বলছে। কোনো রাখঢাক নেই, এতদিনের চেপে রাখা সব ধাপ্পাবাজি আজ ময়দানে খোলাসা হয়ে পড়েছে। এর জের ধরে সেনাবাহিনী এলেও ভারত খুশি হবে বলে মন্তব্য আসছে। প্রতিবেশীর জন্য ভারত একটি ভালো রাষ্ট্র, এ উদাহরণের প্রমাণ রাখতে ভারত আগাগোড়াই ব্যর্থ হয়েছে সবদিন। সর্বতোভাবে ভারত এক্ষেত্রে কলঙ্কতিলক পরে বসে আছে। ‘ভারতকে ভাবতে হবে’ শিরোনামটি দেয়ার কারণ হচ্ছে মনিবকে না বলে দাসকে বলার যুক্তি কম। সাধারণত দাসের হাত-পা বেঁধে রাখে মনিব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এক্ষেত্রে মেরুদণ্ডহীন দাসটি শক্ত করে ভারতীয় পিলারের সঙ্গে বাধা। 

বাংলাদেশের মূল অর্জনের মূলে ছিল পূর্ব পাকিস্তান বনাম পরবর্তী বাংলাদেশ এবং ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় তার সেই ঐতিহাসিক ভিত্তি সরে গিয়ে বাংলাদেশের সূচনা হয়। এবার স্বাধীনতার চল্লিশ পার করে নানান প্রশ্নে বিদ্ধ হয় আগেকার আওয়ামী লীগ। তার ঘেরা দেয়া অনেক ছলবাজি খেলা অনাচার উন্মোচন হয়ে পড়ে জনতার কাছে। বন্ধুর প্রীতিডোরে বাঁধা সব অপকর্ম ধরা পড়ছে সব সচেতনের কাছে। প্রতিদিনের মতো এটিও এ সপ্তাহের তাজা খবর—‘দর্শনা সীমান্ত থেকে বাংলাদেশী কৃষককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ।’ এটি হচ্ছে বন্ধুত্বের উত্কৃষ্ট নিদর্শন। সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে চলছে সংখ্যালঘুর ওপর হামলার সে পুরনো খেলা। বিগত শতকে ভারতের কূটচালে তসলিমা দিয়ে যার শুরুটা জমেছিল বেশ। সারা দেশের বিএনপি-জামায়াতসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-মিছিল হচ্ছে সমানেই, ১১০১ জন চিকিত্সক একযোগে প্রহসনের নির্বাচনের প্রতিবাদ করেছেন। দেশকে নব্য সাম্প্রদায়িকতার ট্যাগ লাগানোর পাঁয়তারা করছে সরকার ও তার ষড়যন্ত্রী প্রতিবেশী বন্ধু। নিজের লজ্জা ঢাকতে ব্যর্থ ভারতের এটি বেশ পুরনো চাল। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্টও সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদ করছে। 

এমনই ভোট ডাকাতি যে নিজ দলের মাঝেও জেতার লড়াই হয়েছে, জাল ভোট দিয়ে, কেউ হাজার ভোটও দিয়েছে খবরে এসেছে। যেখানে গৃহপালিত ছাড়া কোনো বিরোধী দলই অংশ নেয়নি, সেখানেও জাল ভোটের ছড়াছড়ি। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেপেলেরা, ৭-৮ বছরের বাচ্চারাও দল বেঁধে ভোট দিচ্ছে। হাত উঁচিয়ে দেখাচ্ছে হাতজোড় করে মাফ চাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনার চমক, বাচ্চাদের হাতে ভোটের দাগচিহ্ন বুড়ো অঙ্গুলিতে। এরা যখন বৃদ্ধ হবে তখনও এ গল্প বলে বেড়াবে তাদের নাতিপুতিদের এ চমক রানীর গল্প। ভোট পড়েনি অর্ধশত ভোট কেন্দ্রে। বগুড়ার আওয়ামী লীগের এক বয়োজ্যেষ্ঠ হেডমাস্টার নিজ স্কুলের চেয়ার-টেবিল জড়ো করে দপ্তরির মারফতে আগুন লাগাতে অকস্মাত্ হাতেনাতে ধরা পড়েন। সবটা লীগের মাথাতে এক বুদ্ধিই সচল বা এটি তাদের অর্ডার দেয়া হয়েছে তাই সারা দেশে একই ধরনের প্রধানের আদলে সিরিজ অপকর্ম চলছে। প্রধান শিক্ষক হাতেনাতে ধরা পড়লেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে মাত্র। প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় কৃতকর্মের কোনো শাস্তি সাধারণত বরাদ্দ হয় না। পুলিশের কাছে মেসেজ আছে জানা আছে—কাকে কাকে ধরতে হবে আর কাকে কাকে শাস্তি দিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওটিই হচ্ছে। নিজের দলের হত্যাকারী তকী হত্যার নায়ক নারায়ণগঞ্জের ওসমান আওয়ামী গুণ্ডামিতে হাতপাকানো সাগরেদ, তিনিও সংখ্যালঘু নির্যাতনে হাত দাগিয়ে চলেছেন। খবরে তাকেও এ অপকর্মে পাওয়া যায়, যার জন্য সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যরা মানববন্ধন করছেন। সাতক্ষীরা ও সাতকানিয়াতে বিরোধীদের ওপর সব ধরনের গদিলাভের নারকীয় তাণ্ডব চলেছে। এসবই প্রমাণ করেছে যে বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক দাবিটি কতটা যৌক্তিক ছিল! 

ভারতের বিজেপি তার সাম্প্রদায়িক লম্বাগলা বাড়িয়ে বলছে, বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর আক্রমণ সুপরিকল্পিত। বহুদিন থেকেই অপকর্মে খোদ ভারতের স্বার্থেই হাসিনার দলদাস দলবাজরা সংখ্যালঘু নির্যাতনে বার বারই ধরা খাচ্ছে প্রকাশ্য ময়দানে। ভারতের এটি না জানার কথা নয়। তাই সংখ্যালঘুদের এ থাপ্পড়টি আসলে ভারত থেকেও চাপের কারণে সংগঠিত হচ্ছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে প্রকাশ, অনেক কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২০-৩০টি। পশ্চিমাদের কাছে এ নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। শত শত মানুষ প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছে, একজন মহিলার একগুঁয়েমির কারণে একটি জাতি ধ্বংসের খেলাতে সহযোগিতা দিতে নির্লজ্জভাবে ভারতও নানাভাবে নাম দাগিয়ে চলেছে। সভ্য দুনিয়ার একটি বড় দেশ হয়েও তাদের অর্জন কেন এত নিচে নেমে আছে? বস্তুত এতে প্রমাণ হয় ভারতের সততার কোনো মানদণ্ড নেই, কোনো নীতি নেই। আরব নিউজে বলা হয় ভোট দিতে কেউ আসেনি, বলা চলে কেউ না। পত্রিকাটির ‘বাংলাদেশ ইজ ইন ট্রাবল’ শিরোনামে মন্তব্য করা হয়—আওয়ামী লীগের এ নির্বাচনের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। ৫ শতাধিক নির্বাচনী কেন্দ্রে আগুন জ্বলে। ২০০-এরও বেশি লোক নিহত হয়। বলা হচ্ছে ৪-৫ ভাগ ভোট পড়েছে। ওবায়দুল কাদের মার্কা দলদাসরা এ নির্বাচনকে আমেরিকার নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করছেন। যুক্তি দেখাচ্ছেন আমেরিকাতে ৪০-৪৫ ভাগ ভোট পড়ে। এ সংখ্যাতত্ত্বের ব্যাখ্যা ওবায়দুল কাদেরের মতো কিছু অন্ধ ছাড়া আর পৃথিবীর কারও চোখে ধরা পড়ছে না। নিজেদের ছলের বিজয়ে চোখে আন্ধার দেখা দলদাস হয়ে বলছেন বিরোধী নেত্রী এবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন (কী বাজিমাত্ চুরিটাই না আমার নেত্রী করতে পেরেছেন!)। ব্রিটিশ মুখপাত্রসহ সবাই বলেন, ৩০০ আসনের মাঝে ১৫৩টিতে ভোট দেয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। কারণ সবেধননীলমণি প্রার্থী মাত্র একজনই। বাকি ১৪৭ আসনে হয়েছে ভোটের নামে প্রতীকী প্রতিযোগিতার নকল খেলা। 

বিরোধীকে মারা হত্যা গুম খুন কারাগারে প্রেরণ করা আইনসিদ্ধ করে ফেলেছে সরকার। জামায়াত হলে তো কথাই নেই। এভাবে যৌথ বাহিনী বিরোধীদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। সবাই একসঙ্গে বলছেন, টকশোতে দেখলাম সংবিধানের কিতাব হাতে সবাই দেখাচ্ছেন কীভাবে সাংবিধানিক আইনকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। সংবিধান সংবিধান করে আগা থেকে গোড়া সংশোধনীর নামে প্রতারণাসহ নির্বাচনের নামেও বার বার সংবিধানের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বলা চলে এর মাঝে বাংলাদেশের সংবিধান জনতার সঙ্গে লাশ হয়ে গেছে। একে আবার জীবিত করে বাঁচিয়ে তুলতে হবে জনগণকে। এসব দলদাস শুধু স্বার্থের গোলামি করতেই শিখেছে। একটি প্রতারক অপকর্মের দাগী আসামি পক্ষের একজন হয়ে ক্ষমাপ্রার্থী ভুলের শিরোমণি মিথ্যাচারী চরিত্রহীনের কাছে গোটা জাতি জিম্মি হয়ে আছে। আর পার্শ্ববর্তী একটি দেশ তার হীন কুটিল কপট উদ্দেশ্যে ওই শত অপকর্মের পেছনে টাকা খাটাচ্ছে। জাতির ঘাড় থেকে যে ৬০০ কোটি টাকা খসে গেল এর খেসারত কে দেবে? ভারতের ব্যয় করা ১,০০০ কোটি তো যাবে গোলাম দলদাস চোরদের পকেটে। ভারত কি বাংলাদেশের এ ৬০০ কোটি টাকার নবনির্বাচনের দায়ভার নেবে? হাসিনা সরকার তার জনপ্রিয়তা শূন্যের কাছে পৌঁছানোর পরও ভারতের ইন্ধনে সাহসে ভর করে নির্বাচনে যায়। হাসিনা জানতেন তার দুরবস্থা যে কত করুণ! যার জন্য স্বাভাবিক নির্বাচনের সাহস তার বহাল থাকেনি। ওটি বাইরে ভেতরে মরে যায়। বিগত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় থেকে তিনি মানুষের কলিজাতে কামড় দিয়ে চলেছেন। তাই তাকে আশ্রয় নিতে হয় প্রতারণার নির্বাচনের, মৃত সাধন সাহারা আজ শ্মশান পেরিয়েও ভোট দিয়েছেন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এসব হচ্ছে আওয়ামী দলদাসদের সততার পরিসংখ্যান। আজকের খবরে দেখলাম, অবশেষে এরশাদ শপথ নিচ্ছেন। তাকে সরকার অসুস্থ বলে হাসপাতালে নিয়ে হাসপাতালবন্দি করে রাখে। তিনি গলফ খেলে সময় কাটান আর দেশবাসীকে জানান তিনি অসুস্থ নন। সরকার তাকে বন্দি করে রেখেছে। আজ গৃহপালিত পশুর মতো বিগত অপকর্মের বহু মামলার আসামি স্বৈরশাসককে ঘাড় ধরে ময়দানে হাজির করা হয়েছে নব্য স্বৈরশাসকের সব অপকর্মে সই-স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। চোরের সাক্ষী চোর। এ হচ্ছে ভারতীয় টাকার খেলা। এ নষ্ট অর্জনের টাকাতে জাতির ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। বাটপারেরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে আর জাতি তার সর্বস্ব হারাচ্ছে। 

জামায়াতকে ভারত গিলে খেতে চায়, ওই স্বপ্নে হাসিনাকে লেলিয়ে দিয়েছে। ভারত কি তাদের বিজেপিকে গিলে খেতে পেরেছে? না, বরং তাকে আদরে-আহলাদে লাই দিয়ে রেখেছে, সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতনের জন্য। যদিও সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের খেলার যুক্তি ইসলাম ধর্মের সঙ্গে যায় না। ওটি ভারতের নিজের পরিমণ্ডলের খেলা। তাই কার্যত দেখা যায়, ইসলাম নাম নেয়া জনতা বরং সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এর প্রমাণ বার বার পাওয়া যায়। এবারও পাওয়া গেছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের মালোপাড়ার সংখ্যালঘুরা যখন আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা ও ভাংচুরের মোকাবিলা করে, তখন বিএনপি-জামায়াতের কাছেই তারা আশ্রয় পেয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা শারি ও হিউম্যানিটি ওয়াচের একটি প্রতিনিধি দল মালোপাড়া পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) নেতারা বলছেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে তীব্র জনমতকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে শাসক দল ইচ্ছাকৃতভাবে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। তাই আজ বাংলাদেশের মানচিত্রে ভারতের কর্তৃত্বে যা ঘটছে তার দায় কি ভারত নেবে, এটি জাতি জানতে চায়। সারা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে ভারতের বাড়াবাড়ি, প্রতিটি অপকর্ম যা করতে গোপন চুক্তি ও গোপন টাকাতে কেনা গোলাম সরকারকে বাধ্য করা হচ্ছে, এমনকি এই যে সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন, সে দায়ও পরোক্ষভাবে ভারতের ওপর বর্তায়। ভারত কোনো দিন নিজ দেশে সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি, উপরন্তু পার্শ্ববর্তী দেশে এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে ইন্ধন দেয়ার অনেক প্রমাণ বাংলাদেশীদের হাতে আছে। অতীতে তসলিমা ইস্যুকে কবজা করে অনেক ভানুমতির খেল দেখানো হয়েছে। এবার চলছে হাসিনার খেল। এত অনাচারের পর তার দলদাসরা অপকর্মের জবাবে বলছেন, এসব নাকি হাসিনার উদারতার নমুনা। কৌশলে মানুষ মারা যদি উদারতার নমুনা হয় তবে মানুষ হত্যা যখন তিনি সজ্ঞানে করবেন তখন তার স্বরূপ কতগুণ ভয়ঙ্কর হবে? 

ক্ষমতার আড়াই গুণ বন্দিতে কারাগার টইটুম্বুর। ওদিকে গোটা দেশকে কাঁটাতারে ঘের দিয়ে বাংলাদেশকে কি ভারত কারাগার বানিয়ে তার মনোবাসনা পূরণ করতে চায়? আর ভেতরে তাদের লেন্দুপ দর্জি গোটা দেশকে কারাগার বানিয়ে কানায় কানায় ভরেছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই সচেতনরা লক্ষ্য করছেন কীভাবে ভারত দেশটির সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে। স্বাধীন একটি বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর পরিকল্পিত লুণ্ঠনের কথা অকপটে বলে গেছেন সচেতন মুক্তিযোদ্ধারা। ভারতের সম্প্রসারণবাদী প্রতিক্রিয়াশীল শাসক গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের শেষপর্বে সব মুক্তিযোদ্ধার ভয়ে ভীত হয়েই বাঙালির স্বাধীনতার গৌরবকে জবরদখলের মধ্য দিয়ে অতীতে নিজেদের হীন স্বার্থ উদ্ধার করেছে মাত্র। দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা ১৬ ডিসেম্বরের পর মিত্র বাহিনী হিসেবে পরিচিত ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্পদ মালামাল লুণ্ঠন করতে দেখেছে। সে লুণ্ঠন ছিল পরিকল্পিত। সৈন্যদের স্বতঃস্ফূর্ত উল্লাসের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ নয়। সে লুণ্ঠনের চেহারা ছিল বীভত্স-বেপরোয়া। পাকিস্তান যেদিন সৃষ্টি হয় সেদিন আমরা জানতাম না পরবর্তী মানচিত্রের নতুন অধ্যায়ের কথা। পাকিস্তানের অনাচার যদি বাংলাদেশীদের চোখ খুলে দিতে পারে তবে আওয়ামী লীগের অনাচার থেকে দেশবাসীর চোখ অন্ধ থাকবে এটি ভাবা ঠিক নয়। তারা তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও স্বকীয়তার প্রতিফলন যে ঘটাবে না, এটি ভাবার কোনো কারণ নেই। ২০১৪-এর নির্বাচনই একটি বিশাল আওয়াজে ভারতের গুণধর পোষ্য সরকারকে একটি বড় ‘না’ বলে দিয়েছে। ভারত কি বাংলাদেশের জনগণের ভাষা বুঝে কম? বাংলাদেশীরা অতিরিক্ত ভদ্র, তাই চল্লিশ বছর অবধি ভারতের শত অনাচার নীরবে সমর্থন করে গেছে। শক্ত প্রতিবাদ জানায়নি। এবারের ভাষা যদি ভারত না বুঝে তবে বলতে হবে এতে শুধু বাংলাদেশীর ভাগ্যেই দুঃখ আসবে না, ভারতের কপালেও দুঃখ আছে। 

জাতির ইটভাঙা নারী আর হাসিনার মাঝে পার্থক্য হচ্ছে, তারাও নারী তিনিও নারী। তারা সহজ সরল, ইতিহাস জানেও না, বুঝে কম। আন্তরিক, নিজের ও দেশের মঙ্গল চায়। আর হাসিনা হচ্ছেন নিজের নষ্ট ইতিহাস ঢেকে রাখতে উদ্যমী, আন্তরিকতার অভাব আর দেশের মঙ্গলের কথা ভুলেও মনে নেই, সারাক্ষণ নিজের ও পরিবারের মোটাতাজাকরণের দিকে অতিরিক্ত নজর। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মন্তব্যে তার সাধারণ ইউনিয়ন পরিষদে দাঁড়ানোর যোগ্যতাতেও সন্দেহ আছে। তার দক্ষতার এ সন্দেহ দিন দিন বাড়ছে গুণে গুণে। বাংলাদেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারেও গৃহকাজের বুয়া নিয়োগেও কিছু যোগ্যতার দিকে নজর দেয়া হয়। যেমন এরা মিথ্যা কথা বলে কিনা? এ ঘরের কথা ও ঘরে লাগায় কিনা? ঝগড়াটে কিনা? চোর কিনা? কাজের বুয়াদেরও একটি যোগ্যতা ধরা হয়। ১৬ কোটি জনতার দেশে সবচেয়ে করাপ্ট ব্যক্তিটি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। যার আচরণের মাঝে সততার কোনো বালাই নেই বললেই চলে। প্রথম কৃত অপরাধের পর হাতজোড় করে মাফ চেয়ে যাকে পরে গদিতে শত অপরাধে মাফ দেয়ার অলিখিত শর্ত দিয়ে বসতে হয়। বিনা অপরাধে তিনি মাফ চাননি! এসব অপরাধে তার পরিবারের সবাই গোষ্ঠীবদ্ধভাবে জড়িত ছিল। বংশানুক্রমের এ অপরাধ বহুগুণিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান আচরণে। 

দেশে সঠিক বিচার থাকলে বছরের ৩৬৫ দিন যার কারাগারে থাকার কথা। সে কিনা বাইরে থেকে সব নির্দোষকে কারাগারে বন্দি করে রাখছে। বর্তমানে পুতুলের নির্বাচন খেলার পর চলছে বিরোধীদের ধড়পাকড় খেলা। ইথারে ছুড়ে দেয়া হয়েছে একটি কথা। তিনি সেরা খেলোয়াড় তাই খেলারাম খেলবে যা তা সবাইকে অবাক বিস্ময়ে দেখতে হবে, মানতে হবে। সে দেশের রাষ্ট্রপতির, নির্বাচন কমিশনারের পারতপক্ষে কোনো ক্ষমতাই নেই। এরা পুতুলের জি-হুজুরের প্রক্সিদাতা, সিটেবসা চেয়ার দখল করা গোলাম মাত্র। এরা চামচারা বলছে আল্লাহর পর প্রধানমন্ত্রী, তারপর আমরা। এরকম কথা একজন মুসলমান কীভাবে বলে জানি না, তবে আওয়ামী লীগের মতো অনাচার করা হাসিনা ও তার অনুসারীরা সব অপকর্মই করতে পারে। হুদার কার্টুনে খুব সুন্দর এসেছে বিজয়িনীর মহা বিজয়ের অঙ্গুলি সঙ্কেত আর দৌড় প্রতিযোগিতার শিরোভাগে, দুই আঙুলে বিজয় চিহ্ন ধরা। পেছনে চলেছে লেংড়া লুলা হাঁটুভাঙা পাভাঙা গুটিকয় আর পার্শ্ববর্তী গাছে বেঁধে রাখা প্রধান বিরোধী নেত্রী খালেদা ও অন্যরা। সবই আওয়ামী বিজয়ের খেলা। এ নির্বাচন জাতির জন্য এক মাইলফলক হয়ে রইবে বাংলাদেশের জীবনে। ১৬ কোটি মানুষকে কারাগারে রেখে বাইরে ট্রাইব্যুনাল আর হাসিনা। তাদের দৃষ্টিতে আল্লাহ কিছু দেখে না। তাই এমন খেলা চলছে। আল্লাহ শয়তানকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিয়েছেন অপকর্ম করার জন্য। এতে শয়তানের উত্ফুল্ল হওয়ার কিছু নেই। এটি তার শক্ত মরণের ইশারা মাত্র। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ‘ফক্স এন্ড লায়ন ইন বাংলাদেশ’ নিবন্ধে আওয়ামী লীগকে খেঁকশিয়াল কল্পনা করা হয়েছে আর বিএনপিকে ধরা হয়েছে সিংহ। এখন শেয়ালের দিকে কিন্তু সিংহ ওঁত্ পেতে আছে। ওদিকে ভারত আগাগোড়াই জড়িয়ে গেছে ওই খেঁকশিয়ালের খেয়ালি খেলাতে। দুটি উদাহরণই অর্থবহ ইঙ্গিত হয়ে এসেছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অস্থিতিশীলতার জন্য বড়দাগে দায়ী ভারত অনেকাংশে। আর খেঁকশিয়াল সবসময়ই ধূর্ততার উদাহরণ আর সিংহ প্রতীক কী নির্দেশ দেয় সেটি বলার মনে হচ্ছে আর দরকার নেই। এটি সবারই জানা। ফক্সের ভাগে এবার ৪-৫ ভাগ মানুষ হলে বাকি ৯৫-৯৬ ভাগ সিংহের ভাগে। খেঁকশিয়াল তার ধূর্তামিতে বাকিদেরে খালি চোখে দেখছে না। সঙ্গত কারণে দেশটির প্রতি জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্বের সুনজর দাবি করছি। এর মাঝে আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, জি-নিউজ, ফিনান্সিয়াল টাইমস অনলাইন, অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি), টাইমস অব ইন্ডিয়া, এএফপি, এনডিটিভি, ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, সিনহুয়া, নিউইয়র্ক টাইমস, আরব নিউজ, সৌদি গেজেট, আনন্দবাজার পত্রিকাসহ বিদেশি গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের বক্তব্যে সমালোচনার বাস্তবতা এসেছে চোখে পড়ার মতোই। বাংলাদেশ বিশ্বের একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী পরিবার। মানবিক অর্জন নিয়ে মাথা উঁচু করে মানুষের মর্যাদা নিয়ে দাঁড়ানোর অধিকার তারা বাকি গোটা বিশ্বের মতোই পায়। বিশ্ব পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বাধীন একটি দেশে এমন দুর্দিনে বিচারের ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দিকে সবার আরও বেশি সুনজর আশা করছি।

মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিল, নবম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, তার লেখা গ্রন্থ (অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা) র আলোকে এটি পয়েন্ট দিয়ে লেখা।

নাজমা মোস্তফা

আওয়ামী লীগের চার রাষ্ট্রীয় নীতির ঊৎস: 

 (১) ৭০এর নির্বাচর অনুষ্টিত হল ৬ দফার ভিত্তিতে। এই ৬ দফার মধ্যে আওয়ামী লীগ গৃহীত ৪ রাষ্ট্রীয় মূলনীতির একটিরও উল্লেখ ছিল না। তাছাড়া নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ আরো উল্লেখ করেছিল যে, তারা ইসলাম ধর্ম বিরোধী কোন আইন কানুননও পাস করবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ ৭২ সনের জানুয়ারীতে ক্ষমতাসীন হওয়ার সাথে সাথেই ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে দেয় এবং গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ নামে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি নির্ধারণ করে, যা পরবর্তীতে ’৭২এর রাষ্ট্রীয় সংবিধানেও সন্নিবেশিত করা হয়। এই চার নীতির মূল উৎস কোথায়? কেনই বা উক্ত চার নীতিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসাবে ঘোষনা করা হলো? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জনগণ আজো পায়নি। 

 (২) দেশের জনগণের কোনরুপ তোয়াক্কা না করেই রাষ্ট্রীয় মূলনীতির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব জনগণের উপর জবরদস্তিভাবেই চাপিয়ে দিল। 

(৩) ’৭০এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বোচিত সংসদ সদস্যরা জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করেছিল পাকিস্তানের অধীনে। নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের অধীনে নয়। সুতরাং ’৭২এর  আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংবিধান প্রদান নীতিগত দিক দিয়ে মোটেও বৈধ ছিল না। সমগ্র জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়। এখানে আরো উল্লেখযোগ্য যে, ’৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বপক্ষে যারা ভোট প্রদান করেনি, তারাও দেশ মাতৃকার মুক্তির লড়াইএ শরীক হয়েছেন। 

(৪) কিন্তু যুদ্ধোত্তরকালে আওয়ামী লীগ চরম সংকীর্ণতার পরিচয় দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় রুপকে দলীয় রুপ প্রদানের জন্য বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। যার ফলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী ণীগ বহির্ভুত সকল শক্তি হতোদ্যম হয়ে পড়ে এবং তারা তাদের নবতর আশা আকাংখার বাস্তবায়ন করার সুযোগ থেকে প্রায় সম্পূর্ণভাবেই বঞ্চিত হয়। 

(৫) য়ুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে যখন জাতীয় ঐক্যের সর্বাধিক প্রয়োজন ছিল, ঠিক সেই সময়েই আওয়ামী লীগ একলা চলার নীতি অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে জনমত এবং জনগণের আশা আকাঙ্খা পদদলিত করে চলতে থাকে। এসব কারণে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় রাতারাতি ভাটা দেখা দেয়। আওয়ামী লীগের যুদ্ধকালীন দুর্নীতি এবং ব্যর্থতা  এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে জনগণের উপর স্বৈরতান্ত্রিক নির্যাতন জনগণ থেকে আওয়ামী লীগকে বিচ্ছিন্ন করার  উপসর্গ সৃষ্টি করে। 

(৬) বস্তুত সেই ভয়ে ভীত আওয়ামী লীগ ’৭২ এ জনগণের ম্যান্ডেট নেয়ার চিন্তা থেকে বিরত থাকে। অথচ সংবিধান রচনার পূর্বেই জনগণের তরফ থেকে নতুন ম্যান্ডেট লাভ করা ছিল অত্যাবশ্যকীয়। অতএব, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ’৭২এ আওয়ামী লীগের এমন কোন বৈধ অধিকার ছিল না যাতে করে তারা দেশ ও জাতির উপর একটি মনগড়া সংবিধান আরোপ করতে পারে। তবুও তারা তা জবরদস্তি করেছে। দেশের জনগণের চিৎকার প্রতিবাদ কোন কাজেই আসেনি। 

(৭) এভাবেই যুদ্ধোত্তর বিধ্বস্ত বাংলাদেশের কোটি কোটি বুভুক্ষ মানুষের জন্য অন্নবস্ত্রের পূর্বেই রাষ্ট্রীয় মূলনীতি এসে মাথায় চেপে বসে। এই ৪ মূলনীতি আরোপ করার মধ্য দিয়ে দিল্লীর কর্তারা তাদের মূল লক্ষ্যই স্থির রেখেছে কেবল। 

(৮) এই হিন্দু ভারত হিন্দু ধর্মের জাত-শ্রেণীভেদের বিপরীতে ইসলামী সাম্যবাদকে যমের মতই ভয় পায়। — ইসলামের সাম্যবাদ নীতি ভারতের নির্ধারিত মানব গোষ্ঠীকে আকস্মিকভাবেই ইসলামের পতাকাতলে সমবেত করতে পারে। বাংলাদেশের ১১ কোটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০ কোটিই হচ্ছে ইসলাম ধর্মের অনুসারী। 

(৯) বাংলাদেশে বিস্ময়কর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। বাংলাদেশের মাটিতে সাম্প্রদায়িকতা নেই বলেই অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা কখনই নির্যাতিত কিম্বা সামাজিকভাবে সংকটাপন্নও হচ্ছে না। তেমন একটা কিছু হলেও না হয় আধিপত্যবাদী ভারতীয় চক্র বাংলাদেশের উপর সরাসরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার একটা সুযোগ লাভ করত। 

(১০) বাংলাদেশের উপরে সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলে সামরিক কর্তৃত্ব স্থাপনের তেমন কোন প্রয়োজন পড়বে না। — ধীরে ধীরে ধর্মীয় অনুশাসনের অনুপস্থিতি তরুণ যুবক শ্রেণীকে বেপোরোয়া আরাম আয়েশে ভোগপূর্ণ উচ্ছৃংখল জীবন পদ্ধতির দিকে ঠেলে দিলেই তারা হয়ে পড়বে শিকড়হীন পরগাছার মতন। 

(১১) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ধর্মহীনতারই লেবাস নাম। — মুসলিম তরুণ যুব গোষ্ঠী এই নাস্তিক্যবাদী তত্ত্বে প্রভাবিত হলে তারা স্বেচ্ছায়ই ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে উঠবে এবং তাহলেই ভারতীয় শাসকচক্রের গোপন স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়ে যায়। – অর্থাৎ বাংলাদেশের উপর ভারতীয় সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদই হচ্ছে ইসমলামের বিরুদ্ধে একটি সুকৌশল ঠান্ডা যুদ্ধ। 

(১২) স্বাধীন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চেতনার উৎস হচ্ছে ‘তৌহিদবাদ’, যা ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক। অপরদিকে পশ্চিম বাংলার জনগণের সাংস্কৃতিক চেতনার উৎস হচ্ছে ‘পৌত্তলিকতাবাদ’, যা হিন্দু ধর্ম ভিত্তিক। — সবকিছু জেনেশুনেই ভারতীয় শাসকচক্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ৪র্থ স্তম্ভ হিসাবে ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদকে জুড়ে দিয়েছে। উদাহরণ হিসাবে হিন্দুধর্মের লোক হওয়া সত্ত্বেও যখন উচ্চবর্ণ নিুবর্ণ হিন্দু হরিজনকে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করে, সেই উচ্চবর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে  মুসলিম বাঙালীদের গ্রহণযোগ্যতা আদৌ থাকতে পারে কি? 

(১৩) বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই সত্ত্বার সংকট এতই তীব্র রুপ ধারণ করেছে যে, আজ তারা ‘নিজ সত্ত্বা’ প্রকাশে দ্বিধাগ্রস্ত। এ ধরণের আচরণ মুক্তবুদ্ধি কিম্বা কোন বাহাদুরীর লক্ষণ মোটেও নয়, বরং এটা হচ্ছে আত্মপরিচয় দানে হীনমন্যতা এবং আত্ম প্রবঞ্চনার বহিঃপ্রকাশ। সংক্ষেপে রাষ্ট্যীয় চার নীতির ‘পোষ্ট মর্টেম’এখানেই শেষ। 

(১৪) আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রণীতি বাংলাদেশের ’৭২ এর সংবিধানকে যারা দেশ ও জাতির জন্য পবিত্র আমানত বলে মনে করেন, তাদের কাছে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমার সবিনয় আশ্বাসবাণী দেশ ও জাতির জন্য আপনারা ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতীয় শাসকচক্রের তরফ থেকে যে সকল পবিত্র আমানত ১৯৭১ সন থেকে বহন করে নিয়ে এসেছেন, তার মালিকানা নিয়ে আপনাদের সাথে বাংলাদেশের তৌহিদী জনগণের কোনদিনই প্রতিযোগিতা হবে না। 

(১৫) একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা অবুঝের মত কেবল ৪টি স্তম্ভই ধার করলাম, নিরাপদ একটি বাসগৃহ তৈরী করার প্রস্তুতি নিলাম না। দেশের কোটি কোটি নির্যাতিত মানুষ এবং তৌহিদী জনগণ আজ সেই নিরাপদ একটি বাসগৃহই কামনা করে, বিদেশী প্রভুদের কাছ থেকে পাওয়া স্তম্ভ বিশিষ্ট ইমারত নয়। 

https://www.youtube.com/watch?v=99i2DzPIypU, = যেভাবে ‘র’ এর খপ্পরে পড়েছিলেন শেখ মুজিব, দেখুন. || #eliashossain ||

না জ মা মো স্ত ফা

বি দ্রষ্টব্য: (ভাবছি আজ পুরানো কিছু কলাম সংযুক্ত করবো।এটি ছাপে দৈনিক আমার দেশ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে, আজ থেকে ১১ বছর আগে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। ইত্যবসরে বরং দেশটি আরো ধ্বংসের দিকে গিয়েছে, এ জাতি আজো পথ পায় নাই। অন্ধকারে হাতড়ে মরছে)।

সিকিম একটি বহুজাতিক অধিবাসী অঞ্চল। মূলত সেখানে প্রধান তিনটি জনগোষ্ঠীর বাস—লেপচা, ভুটিয়া ও সেরপা। লেপচারাই এখানের মূল বাসিন্দা, যার জন্য দেখা যায়, লেপচারা অন্যদের তুলনায় তাদের মৌলিক আচার ধরে রাখতে বেশি উত্সাহী। জানা যায়, লেপচা ও ভুটিয়ার বড় অংশ ৭০ শতাংশেরও বেশি জনতা নেপালি। এরাই সেখানের বড় গোষ্ঠীর জনতা। সিকিম হিমালয়ের পূর্বে অবস্থিত একটি অঞ্চল। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গের নিচে প্রাকৃতিক লীলাভূমি হিসেবে ছড়িয়ে থাকা একটি অঞ্চল। নেপাল, ভুটান ও ভারতের কাছ ঘেঁষে খনিজ সম্পদে ভরপুর প্রাণিবিদ্যা ও জীববিদ্যার উপকরণে সমৃদ্ধ অঞ্চলটি ১৯৫৮-৬০ সিকিম গেজেটের হিসাবে ৭২৯৯ স্কয়ার কিলোমিটার বিস্তৃত। সামপ্রতিক ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে একটি ভূমিকম্পের উত্পত্তিস্থল ছিল সেটি। সে কারণেও সিকিম চিন্তার দুয়ারে নাড়া দেয় নতুন করে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮। পুরো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পন্ন হতে এমনিতেই কিছু সময় লাগে এবং দেখা যায়, যতই সময় যায় ততই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। বাংলাদেশও এ কম্পনে দুলে উঠে উল্লেখযোগ্য একটি সময়, যা এ যাবত্কালীন সব ভূমিকম্পনের সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। এ একটি আগাম সতর্ক সংকেত দেশবাসীর জন্য। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সঙ্কটের সম্মুখীন হলে সবাইকে মনে মনে প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি এমন হয় তখন কী কী করতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ মানচিত্রের দেশটিও এরকম সিকিমীয় মানচিত্রিক ভূকম্পনের শিকার হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। পার্শ্ববর্তী বন্ধু রাষ্ট্রের বর্ডার ইস্যুর সঙ্গে আরও নানান আচারে একের পর এক বিদ্ধ হচ্ছে দেশটি। 

বহুদিন থেকে মনের গোপন কোণে সিকিম চিন্তার রাজ্যে সুপ্ত হয়েছিল, ভূকম্পন যেন সে মনের নাড়াকে সামনে নিয়ে আসে। অতীত থেকে, ইতিহাস থেকে মানুষ শেখে। এটি খুব সহজ শিক্ষা, অন্যের দুর্যোগ দেখে ঠেকেও মানুষ শেখে। সিকিমের মানচিত্রের কিছু জমা ইতিহাসের পাতায় জমে আছে, সচেতনরা সেখান থেকে খোরাক জমা করতে পারেন, রিখটার স্কেল ছাড়াও অনেক ভূকম্পনের মাত্রাও আঁচ করতে পারেন। বাংলার পলাশীর প্রান্তর তার অধিবাসীদের জন্য অনেক বেদনার উপাচার সংগ্রহ হিসেবে জমিয়ে রেখেছে। কেমন করে এককালে স্বাধীন এ অঞ্চলের মানুষ পরাধীনতার শিকল পরেছিল। তার সবক’টি সূত্রকথা ছলনা, মীর জাফরি প্রক্রিয়া। সেটি কী ছিল, কেমন ছিল তা জানার জন্য আছে ইতিহাস। ইতিহাস নিয়ে অনেক ধামাচাপা হয়েছে যুগে যুগে, আজও হচ্ছে। তবে প্রকৃতই ধামাচাপা দেয়ার যুগ মনে হচ্ছে আজ বাসি হয়েছে। ইন্টারনেটের বদৌলতে সাজানো সত্য-মিথ্যা সবই গবেষণা করলে মূল সত্য ধরা পড়বেই। মনে হয় একে এড়িয়ে যাওয়ার ফুরসত খুব কম। সে হিসেবে বলা চলে, এ বুঝি সত্য যুগের নমুনা।

৬ এপ্রিল ১৯৭৫, সকালবেলা। রাজা পালডেন থনযুপ নামগয়াল সবে নাশতা শেষ করেছেন, তখনই শুনলেন রাজপ্রাসাদ অঙ্গনে গোলাগুলির আওয়াজ। দৌড়ে গেলেন জানালার ধারে। যা দেখলেন তা তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ভারতীয় সেনারা তার প্রাসাদ রক্ষীদের আক্রমণ করেছে। চোখের সামনে মাত্র ৩০ মিনিটের নাটকীয় অপারেশনে তার এক উনিশ বছরের রক্ষীর জীবনের বিনিময়ে রাজা পালডেন সিংহাসন হারালেন। সেই সঙ্গে অবসান হলো ৪০০ বছরের রাজতন্ত্র এবং হারিয়ে গেল পৃথিবীর বুক থেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আর তা পরিণত হলো প্রতিবেশী ভারতের একটি প্রদেশে। জাতিসংঘে একটু গুঞ্জন হলো। বিশ্বের কেউ টুঁ শব্দও করল না। কারণ হিসাবে বলা হলো, দেশটি গণতন্ত্র পেয়েছে, যদিও তা আর একটি দেশের অঙ্গ হিসেবে। তা ছাড়া আরও যুক্তি দেখানো হলো দেশটির জনগণই স্বাধীনতা চায়নি, চেয়েছে ভারতের সঙ্গে মিশে যেতে। কিন্তু জানা যায়, লেপচা ও ভুটিয়ারা জনতার বড় অংশ, তারা চ্যাগল সাম্রাজ্যে সুখী ছিল। উল্লেখ্য, চীন আজও ইন্ডিয়ার এ আগ্রাসনকে মেনে নিতে পারেনি, তারা স্বীকৃতি দেয়নি। কোনো রাষ্ট্র প্রশ্ন না তুললেও বিশ্লেষক, গবেষক ও বিদগ্ধজনরা তখন এবং এখনও অনেক প্রশ্ন তুলেছেন, যার সঠিক জবাব কখনও মেলেনি। এসব বিশ্লেষকের মধ্যে রয়েছেন এক ভারতীয় সাংবাদিক সুধীর শর্মা। একটি জাতির হারিয়ে যাওয়ার বেদনা (পেইন অব লুজিং এ নেশন) শিরোনামে এক চমত্কার প্রতিবেদনে সিকিমের ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও হটকারিতার ইতিহাস বর্ণনা করে সিকিমের বিদায়ের কাহিনী লিখেছেন তিনি। মন্তব্য করেছেন, এমনটি যে হবে তার চেষ্টা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিদায়ের লগ্ন থেকেই। এমনকি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু এক কথোপকথনে সাংবাদিক ও কূটনীতিবিদ কুলদীপ নায়ারকে এর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিলেছিল নেপথ্যে ইন্ধনকারী একজন মীর জাফররুপী কাজী লেন্দুপ দরজি। ভারতের নেতারা ক্লাইভের ভূমিকায় ছিলেন। তবে এখানে স্লোগান ছিল গণতন্ত্রায়ণ, সংখ্যালঘুর ক্ষমতায়ন এবং রাজতন্ত্রের অবসান। তবে ফলাফল সেই একই। প্রভুর পরিবর্তন! গণতন্ত্র, ক্ষমতায়ন সবই হলো। শুধু জনগণ তার স্বাদ অনুভব করতে পারল না। আসলে সব কর্মকাণ্ডের মূলে ছিল নিয়ন্ত্রণ ও দখল। গদিচ্যুত হওয়ার তিন দিন পর রাজা পালডেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। ‘আমি বাকরুদ্ধ হয়েছি তখনই যখন ভারতীয় বাহিনী সিকিম আক্রমণ করল। (প্রাসাদের) ৩০০ এর কম গার্ডের ওপর আক্রমণ চালানো হলো। অথচ এরা ভারতীয়দ্বারা শিক্ষাপ্রাপ্ত এবং তারা ভারতীয় অস্ত্রে সজ্জিত ও ভারতীয় অফিসার দ্বারা পরিচালিত। সিকিমরা ভারতীয়দের কমরেড ভাবে। এ আক্রমণ গণতান্ত্রিক ভারতের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক দিন’ কথাটি তিনি বড় দুঃখে লিখলেন। রাজা পালডেন হয়তো এমন করুণ পরিণতিকে অন্যদিকে মোড় দেয়াতে পারতেন, যদি তিনি আর একটু স্মার্ট হতেন। লিখেছেন বি এস দাশ। তার সিকিম সাগা বইতে মি. দাশ লিখেছেন, যদি রাজা আর একটু বুদ্ধির সাহায্যে তার কার্ডটি খেলতেন তাহলে অবস্থা অন্যরকম হতো। দাশ সিকিমে ভারতীয় পলিটিক্যাল অফিসার ছিলেন যখন গ্যাংটকের পতন ঘটে। ভারতীয় পলিটিক্যাল অফিসার অর্থে তিনিই প্রকৃত ক্ষমতাধারি ব্যক্তি ছিলেন ১৯৫০ সালের সিকিম ভারত চুক্তি অনুযায়ী। দাশ লিখেছেন, ‘সিকিমকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন ভারতের প্রতিরক্ষার খাতিরে, আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছিলাম।’ 

অথচ রাজা পালডেন বুঝতেই পারেননি ভারতীয় উদ্দেশ্য। তিনি ভাবতেন, জওয়াহেরলাল নেহরু ও এম কে গান্ধীসহ সব বড় নেতা তার পরম শুভানুধ্যায়ী। পালডেনের সেক্রেটারি ক্যাপ্টেন সোনম ইয়ংডো লিখেছেন, রাজা তার ভয়ঙ্কর স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে, ভারত কখনও তার ছোট রাজ্যকে দখল করে নেবে। অথচ এমনটি হবে এবং এর জন্য একটি মাস্টার প্লান প্রস্তুত। সে কথা চীন ও নেপাল সিকিমের রাজাকে জানিয়েছিল। ১৯৭৪ সালে নেপালের রাজার অভিষেকের সময় রাজা পালডেন কাঠমান্ডুতে যান। সেখানে নেপাল, চীন ও পাকিস্তানের নেতারা রাজা পালডেনকে তিনটি হিমালয়ান রাজ্যকে নিয়ে ভারতের মাস্টার প্ল্যানের কথা বলেছিলেন। নেপাল সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক সুধীর শর্মা লিখেছেন, চীনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী রাজা পালডেনকে গ্যাংটকে না ফেরার পরামর্শ দেন এ জন্য যে, এ মাস্টার প্ল্যানের প্রথম শিকার হবে সিকিম। অন্য দুটির জন্য রয়েছে আরও জটিল পরিকল্পনা। পালডেন এ কথা বিশ্বাস করতে পারেননি। শর্মা লিখেছেন, রাজা পালডেন ভারতকে তার সবচেয়ে বড় সুহৃদ মনে করতেন। কেননা তার সেনাবাহিনী প্রাসাদরক্ষী এবং তার শাসনতন্ত্র নির্মাণ ও পরিচালনা ভারতই করত। তিনি তাদের বললেন, আমার সেনাবাহিনী কেমন করে আমার বিরুদ্ধে লড়বে? তাছাড়া রাজা পালডেনকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনারারি মেজর জেনারেলের পদমর্যাদা দেয়া হতো। নেহরুও বলেছিলেন, এমন ছোট দেশ দখল করার প্রয়োজন নেই (১৯৬০ সালে কুলদীপকে নেহরু বলেছিলেন, টেকিং এ স্মল কান্ট্রি লাইক সিকিম বাই ফোর্স উড বি লাইক শুটিং এ ফ্লাই উইথ এ রাইফেল)। অথচ তার কন্যা মাত্র ১৫ বছর পর ‘জাতীয়’ স্বার্থের কথা বলে সত্যিই সেই মাছিকে হত্যা করলেন। তবে দখলের বীজ নেহরুই বুনেছিলেন। সিকিমের রাজতন্ত্রের পতনের লক্ষ্যে সিকিম ন্যাশনেল কংগ্রেস (এসএনসি) গঠনে তিনিই উত্সাহ জুগিয়েছিলেন। 

এসএনসির নেতা লেন্দুপ দরজির গণতন্ত্রের সংগ্রামকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যায় প্রথমত নামগয়াল পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। আসলে কাজী ও নামগয়াল ছিল একে অন্যের শত্রু। এই বিভেদকে ভারত কাজে লাগায় তার মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে। ক্যাপ্টেন ইয়ংজু লিখেছেন—‘ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বেসামরিক পোশাকে রাজার বিরুদ্ধে গ্যাংটেকের রাস্তায় মিছিল, আন্দোলন ও সন্ত্রাস করত।’ এমনকি লেন্দুপ দরজি নিজেই শর্মাকে বলেছেন, ‘ভারতের ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর লোকেরা বছরে দু-তিনবার আমার সঙ্গে দেখা করত কীভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা যাবে—সেসব বিষয় জানার জন্য। তাদের একজন এজেন্ট তেজপাল সেন ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অর্থ দিয়ে যেত এ আন্দোলন পরিচালনার জন্য। এ অর্থ দিয়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাস পরিচালিত হতো। শর্মা লিখেছেন, এই সিকিম মিশনের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ভারতের ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (সংক্ষেপের)। এর ডাইরেক্টর অশোক রায়না, তার বই ইনসাইড র : দ্য স্টোরি অব ইন্ডিয়ান সিক্রেট সার্ভিস—এ বাংলাদেশ অধ্যায়সহ সিকিমের বিষয় বিস্তারিত জানিয়েছেন। রায়না লিখেছেন, ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৯৭১ সালেই সিকিম দখল করে নেয়া হবে। সে লক্ষ্যে সিকিমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য আন্দোলন, হত্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি ইত্যাদি করা হচ্ছিল। এখানে হিন্দু নেপালি ইস্যুকে বড় করে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টায় সফলতা আসে। দরজির সঙ্গে এসব সাক্ষাত্কার রেকর্ড হয়ে আছে। ভারতের ‘র’ নামের এই সংস্থাই মূলত মিশন সিকিমের মূল হোতা। এটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা পায় এবং মাত্র তিন বছরে পাকিস্তান নামের একটি দেশকে ভেঙ্গে টুকরো করে দেয় এবং একটি নতুন দেশ বাংলাদেশের সৃষ্টি করে। আগ্রাসনের মাঝে সিকিম দখল করা তাদের এরকম আর একটি সার্থক প্রচেষ্টা ছিল। প্রতিবেশী দুটি দেশে এ রকম চাল চেলে দুটি ক্ষেত্রেই তারা চরমভাবে সফল হয়েছে। 

গ্যাংটক পোস্টের সম্পাদক সিডি রাই বলেছেন, ‘সিকিমের নেপালি বংশোদ্ভূত সমপ্রদায়ের মধ্যে দৃঢ়ভাবে ছড়ানো গেল যে, সিকিমের বৌদ্ধ রাজা তাদের নির্যাতন, নিষ্পেষণ করছেন। সুশীল ও এলিটরা এক হয়ে ভাবতে শুরু করল, বৌদ্ধ রাজার নির্যাতনের চেয়ে আমাদের ভারতীয় হয়ে যাওয়াই ভালো।’ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা অনেকে ধারণা রাখেন, এরা মানবতাবাদী। অহিংসা পরম ধর্ম। কিন্তু তারপরও সেখানে তিনি বৌদ্ধ হলেও ছিলেন রাজা এবং সে রাজত্ব থেকে তাকে মুছে দেয়ার ভালো যুক্তি হয়ে ভারতের চাণক্যনীতি এখানে কাজ করেছিল। ক্যাপ্টেন সেনাম ইয়ংডো দাবি করেছেন, সিকিমে রাজার বিরুদ্ধে লেন্দুপের আন্দোলন ছোট ছিল এবং তা হয়েছে সম্পূর্ণভাবে ভারতের অর্থানুকূল্যে। তার মতে, ভারত ‘ডাবল গেম’ খেলছিল। একদিকে রাজাকে আশ্বস্ত করছিল যে তার সিংহাসন নিরাপদ এবং তিনি সঠিক পথে আছেন। অন্যদিকে লেন্দুপকে অর্থ ও লোকবল দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলা হয়, যাতে দেশের অধিকাংশ লোককে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে এক সারিতে আনা যায়। এর ফলে ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে লেন্দুপের এসএনসি পার্টি ৩২ সিটের ৩১টিই লাভ করেছিল। এর আগে দিল্লির চাপে রাজা ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় একটি সমঝোতায় আসতে বাধ্য হন। ৮ মে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত এ মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব কেওয়াল সিংহ এবং ভারত সমর্থিত তিনটি পার্টি সিকিম ন্যাশনাল পার্টি, সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস ও জনতা কংগ্রেস। রাজা এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। এর আগের মাসে এক নাগাড়ে ১০ দিন আন্দোলন চলে গণতন্ত্রের সপক্ষে। 

মজার কথা, এই হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে গ্যাংটকের পালজোর স্টেডিয়ামে আটকে রেখে ইন্দিরা গান্ধী জিন্দাবাদ স্লোগান উঠাতে বাধ্য করা হয়। এ আন্দোলনের শেষ দিন ভারত বি এস দাশকে পলিটিক্যাল অফিসার হিসেবে নিযুক্তি দিলে সিকিমের তিন পার্টি আন্দোলন উঠিয়ে নেয়। এর কয়েক দিন আগে রাজার কাছে খবর এসেছিল এ তিন পার্টির জয়েন্ট অ্যাকশন (জেএসি) কমিটি ১৫ হাজার মানুষের এক কর্মী বাহিনী নিয়ে সংখোলা থেকে গ্যাংটকের দিকে এগোচ্ছে। ভীত রাজা ভারতের সাহায্য চাইলেও এদিকে জেএসিও ইন্দিরা গান্ধীর কাছে টেলিগ্রাম পাঠাল তাদের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দিয়ে এবং এর সঙ্গে সিকিমে হস্তক্ষেপের আবেদন জানালো। এরপর ভারতের জন্য সিকিমে হস্তক্ষেপ করার বিরুদ্ধে আর কোনো বাধাই রইল না। অর্থাত্ ভারতের তিন দশকের পরিকল্পনা, অর্থ ব্যয় এবং আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড সার্থক হলো। বিশ্লেষকরা তাদের লেখনীতে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন। 
নির্বাচনে জিতে ২৭ মার্চ, ১৯৭৫ প্রথম কেবিনেট মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী লেন্দুপ দরজি রাজতন্ত্র বিলোপের এবং রেফারেন্ডামের সিদ্ধান্ত নিলেন। চারদিন পর সারা দেশের ৫৭টি স্থান থেকে ফলাফল এলো। জনগণ রাজতন্ত্র বিলোপের পক্ষে। কৃষিমন্ত্রী কেসি প্রধান অবশ্য বলেছেন, পুরো ব্যাপারটাই সাজানো। ভারতীয় সেনাবাহিনী বন্দুকের মুখে ভোটারদের `হ্যাঁÕ ভোট দিতে বাধ্য করেছিল। অনেক লেখক বলেছেন, রাজা পালডেন তার রাজত্বের প্রথমদিকে নেহরুর নির্দেশে রাজতন্ত্র বিলোপের লক্ষ্যে তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধাক্কা দিল্লির সহায়তায় উের গেলেন। তখন দিল্লিকে পরম সুহৃদ ভাবতে থাকলেন। তাই চীন বলল, ‘যদি ভারতীয় বাহিনী তাকে আক্রমণ করে, তাদের সাহায্য চাইলে ভারত সীমান্তে চীন ও পাকিস্তানের সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ করা যাবে। সুধীর শর্মা লিখেছেন, রাজা পালডেন যখন বুঝতে পারলেন তখন আর কিছুই করার ছিল না। অবশ্য অনেকেই সিকিমের এ বিপর্যয়ের জন্য রানী এবং লেন্দুপের স্ত্রীকে খানিকাংশে দায়ী করে থাকে। তবে বিশ্লেষকরা এ মতকে আমলে নেননি। 

হিমালয়ের পাদদেশের তিনটি রাজ্যের ‘প্রটেক্টরেট’ অবস্থানকে সে দেশের ক্ষমতাবানরা মেনে নিয়েছিল। তবে ভারতের ক্রমবর্ধমান চাপ তিনটি দেশকে ক্রমেই একে অন্যের কাছে নিয়ে আসতে থাকলে ইন্দিরা গান্ধী প্রমাদ গোনেন। তাই পরিকল্পনাকে একটু পরিবর্তন করেন। কাঠমান্ডু পোস্টে ৩ জুন ১৯৯৭ ‘ভুটানিজ সিন্ড্রোম’ নামে এক নিবন্ধে প্রচলিত ধারণা যে, সিকিমে নেপালি ভারতীয়রা সব ঘটনার জন্য দায়ী। তা সত্য নয় বলতে গিয়ে দাবি করা হয়, তিনটি দেশের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এবং তাদের অর্থ ও তাদের কিছু বশংবদ দায়ী। কাজী লেন্দুপ দরজির নেতৃত্বে এ বশংবদরা পরবর্তীকালে ঘটনা বিপরীতমুখী করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। লেন্দুপ দরজি ও তার বিদেশি স্ত্রীকে কালিমপং—এ অবশিষ্ট জীবনের তিন দশক দেশবাসীর নিন্দা, ঘৃণা এবং ভারতের অবহেলার বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়। কাজী লেন্দুপ এক সাক্ষাত্কারে সুধীর শর্মাকে বলেন, আমি ভারতের জন্য এত করলাম, এমনকি দেশটিও দিয়ে দিলাম। তার প্রতিদানে তারা আমায় এত অবহেলা করল। কাজ হয়ে গেলে পর ভারত কীভাবে তাকে ছুড়ে দেয়, সে বেদনার কথা লেন্দুপ শর্মাকে জানান। প্রথমে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হতো। কিন্তু কাজ ফুরালে দেখা যায় লেন্দুপকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতো একটি সাক্ষাত্কারের জন্য, যেন দ্বিতীয় শ্রেণীর নেতা। এ যেন কাজের সময় কাজি আর কাজ ফুরালে পাঁজি। 

অনেকেই বলেছেন, সিকিমের ব্যাপারে ভারত ১৯৭১ সালের লক্ষ্য পরিবর্তনের কারণ বিশ্বপরিস্থিতি এবং প্রতিবেশী দেশের চলমান ঘটনাবলী। তাই এ সময় সিকিমে আন্দোলনের ধারাকে বেগবান রাখতে হয়েছে শুধু। সুধীর শর্মার মতে, বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের অভ্যুদয় এবং ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রের সাফল্যের কারণে দিল্লিকে আর তার ইমেজের ব্যাপার নিয়ে ভাবতে হয়নি। সে সিকিম দখল করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। বিশেষ করে ভুটানের জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তি এই সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। ভুটানের জাতিসংঘের সদস্য প্রাপ্তিকে ভারতের সহজভাবে না নিয়ে উপায় ছিল না। স্বাধীন বিশ্বে বিশেষ করে নিরপেক্ষ বলয়ের নেতৃত্বে এমনকি তার গণতান্ত্রিকতার দাবিতে চিড় ধরত। বাংলাদেশকেও তাকে সাহায্য করতে হয় স্বাধীনতাকামী হিসেবে। তার একটিই ভয় ছিল, বাংলাদেশ ও ভুটানকে অনুসরণ করে যদি সিকিম জাতিসংঘের সদস্যপদ দাবি করে। ইন্ডিয়ার এ আগ্রাসনকে চীন মেনে নেয়নি। তবে দেখা যায়, বিবিসির বরাতে একটি শর্তে তারা তা মেনে নেয়ার অঙ্গীকার করে। ২৪ জুন ২০০৩ বিবিসি নিউজে বলা হয়, ইন্ডিয়া যদি তিব্বতের ওপর চীনের কর্তৃত্ব স্বীকার করে, তবে তারা সিকিমকে মানতে পারে। নয়তো কোনো অবস্থাতে এ আগ্রাসনকে তারা মেনে নেবে না।

মালয় কৃষ্ণধর ছিলেন ভারতের সাবেক ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর একজন জয়েন্ট ডাইরেক্টর। তার একটি সুস্পষ্ট অভিমত ছিল সে (লেন্দুপ দরজি) না থাকলে সিকিম কখনোই ভারতের অংশ হতে পারত না|কাজি লেন্দুপ ছিলেন একজন নেপালি বংশোদ্ভূত। কৃষ্ণধর দিল্লির চাতুর্যের প্রামাণ্যতা বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, তার যুবক বয়স থেকেই তিনি লক্ষ্য করে আসছেন বলে মন্তব্য করেন। ১৯৭৫ সালে অন্যায়ভাবে কংগ্রেস বিশেষ করে সঞ্জয় গান্ধী দরজিকে বাধ্য করে তার পার্টিকে ইন্ডিয়ার জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে। কাজী প্রথমে কিছু ইতস্তত করলেও সরকার ও তার সহযোগীরা তাকে এ কাজে বাধ্য করে, যার জন্য জনতা পার্টির সঙ্গে তাকে মিশে যেতে হয়। খুব অল্প সময়ের মাঝে তার আধিপত্য শূন্যতে নেমে আসে। ১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধীর ক্ষমতা দখলের পর তিনি আক্ষেপ করছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্কারের। কিন্তু তাকে একটি ডাস্টবিনের ময়লা কাগজের মতো ছুড়ে ফেলা হয়। ওই সময়ের চিত্র মালয় কৃষ্ণধর তার লেখনীতে তুলে ধরেন। তার কথাতে এই সেই লেন্দুপ দরজি যিনি কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো এরকম একটি মূল্যবান রত্ন তার পরবর্তী পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে ওদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য ছিলেন। মালয় কৃষ্ণধর দরজিকে ওপরে তুলে ধরতে চেয়েছেন এবং ভারত সরকারকে তার মর্যাদা দিতে উত্সাহ দিয়ে গেছেন তার লেখনীতে। 

এদিকে নেপালেও রাজতন্ত্রের অবসান ঘটেছে ঠিক একই পদ্ধতিতে। যদিও দেশটি টেকনিক্যালি এখনও স্বাধীন। তবে এখানে সাত পার্টির জোট ও মাওবাদীরা সর্বতোভাবে দিল্লির ওপর নির্ভরশীল। ইংরেজি আদ্যাক্ষর হিসেবে অনেকে এর নাম দিয়েছে ‘স্প্যাম’ (সেভেন পার্টি অ্যালায়েন্স অ্যান্ড মাওইন্ট) গত নির্বাচনের আগে গিরিজা প্রসাদ কৈরালার নেপাল কংগ্রেস ও সিপিএম ইউএমএল দিল্লিতে গিয়ে তাদের কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করলে বিশ্লেষকরা বলেন, এটা আর একটি সিকিম সিনড্রোম, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মপদ্ধতির সিদ্ধান্ত নিতে স্বদেশ ভূমিকে ব্যবহার করে না। তারা বলেন, এই ‘স্প্যাম’ পলিটিক্যাল অলিগার্কি বা রাজনৈতিক অভিজাততন্ত্র পছন্দ করে, জনগণের গণতন্ত্র নয়। ঠিক একই লক্ষ্য দিল্লিরও। তারা জনগণ নয়, রাজনৈতিক দলের আনুগত্য কামনা করে। তারা প্রতিটি রাজনৈতিক দলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় লাইন অব ইনহেরিটেন্স রাখে। একটির পতন হলে অন্যটি সে স্থান পূরণ করে। একজন ভুটানি বিশ্লেষক কাঠমান্ডু পোস্টে সমপ্রতি এক নিবন্ধে সতর্ক করেছেন এই বলে যে, বর্তমানের ভুটান নেপালের রাজনৈতিক গোলযোগ যদি ঠাণ্ডা মাথায় সমাধানের চেষ্টা না করে, তাহলে এটি ভুটানিজ সিনড্রোম হবে এবং এর পরিণতি হবে সিকিমের মতো। লেখক আরও বলেছেন, গত ছয় দশকের নানা কর্মপন্থায় আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক, দেশীয় ষড়যন্ত্র ও হটকারিতায় যে কর্মকাণ্ড চলছে, তা বিরতিহীন। এসব কর্মকাণ্ড সমগ্র অঞ্চলকেই এক কাতারে আনবে, যদি এখনই এসব কর্মপন্থায় সংযুক্ত নটনটীরা সতর্ক না হয়। পরিণামে সবাই হবে কাজী লেন্দুপ দরজি, যার পার্টি ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে একটি সিটও পায়নি। যদিও মাত্র ৫ বছর আগে তারা পার্লামেন্টে ৩২ সিটের ৩১টি সিট দখল করেছিল। ইতিহাস তাকে আঁস্তাকুড়ে ফেলে দিলে, ভুটানিজ সিনড্রোমের লেখক সতর্ক করে দিলেন। ৪০০ বছরের পুরনো একটি ইতিহাসের সমাপ্তি এভাবেই ঘটে। এভাবেই লেন্দুপ দরজি তার মাতৃভূমিকে ভারতের কাছে তুলে দেন। 

বিশাল মানচিত্রের দেশ ভারত প্রতিবেশীর প্রতি কী করছে বা করতে পারছে, এ তার উত্তম উদাহরণ মাত্র। 
সামন্ততন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্রের ছায়াতলে ঢুকতে পারলে সেটি প্রগতির কথাই বলত। লেন্দুপ সেটি করতে পারতেন। কিন্তু যখন ব্যক্তির লোভ, পদের লোভ বড় হয়ে দেখা দেয়, তখন আর কোনো ফয়সালাই মুক্তির পথ বাতলে দিতে পারে না। ‘দি ইল্লিগ্যাল অকুপেশন অব সিকিম বাই ইন্ডিয়া—থার্টিফাইভ ইয়ার্স অব অপ্রেশন’ অর্থাত্ ‘সিকিমে ভারতের অন্যায় আগ্রাসন—৩৫ বছরের নির্যাতন’ কলামটি ছাপে ২০০৯ সালের অক্টোবরের ১৭ তারিখে মইন আনসারী। ৩৪ বছর আগে যখন ভারতীয় সেনারা সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে তাদের কর্তৃত্ব চালায় তখন গোটা বিশ্বের সচেতন অংশ ঘুমিয়ে ছিল এবং সে দিন থেকে সবাই ঘুমিয়ে আছে। যেখানে তিব্বতের কারণে দেখা যায় পশ্চিমের অনেক বিবেচনা কাজ করে, সেখানে এই নিরীহ জাতি গোষ্ঠীর মানুষের জন্য কারও কোনো চেতনা নেই, কোনো বিতণ্ডা নেই, যার ফলাফল ভারত তার উদরে ঢুকিয়ে নিল। বারিস্টার মুনশি তার বইয়ে এ বিষয়টি অনেক আগেই আলোচনা করে সুস্পষ্ট করে বলেছেন যে, এটি ‘র’ এর কাণ্ড। গোটা বিশ্ব ভুলে গেছে সিকিমের কথা। দক্ষিণ তিব্বতের কিছু অংশ কেমন করে দিল্লি দখল করে নিল তার ব্যাপারেও বিশ্বের কারও দায় নেই। ভুটানের ভাগ্যেও হয়তো তাই অপেক্ষা করছে। ভারতের এ ক্ষুধার যেন নিবৃত্তি নেই। প্রতিবেশীর প্রতি ভারতের এরকম নীতির একটি ফয়সালা হওয়া উচিত। দিল্লির এটা শেখা উচিত যে আগ্রাসনের কোনো শোধ নেই। একটি নিরীহ শান্তিপ্রিয় জাতিকে এভাবে তারা কুক্ষিগত করে রেখেছে। ভারত তার ৪৫০ মিলিয়ন দলিতকে এবং নিম্ন বংশোদ্ভূত মানুষকে অস্পৃশ্য বলে দূরে ঠেলে রেখেছে। বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক বন্ধনে তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে। সিকিম তার মূল পরিচিতি ও তার স্বকীয় স্বাধীনতা হারিয়েছে। কঠোর ব্রাহ্মণ্যবাদের যাঁতাকলে বৌদ্ধ অনুসারীরা আজ বেয়নেটের মুখে নির্বাক।

ভারত সরকার অবশ্য সিকিম দিয়ে দেয়ার ২৭ বছর পর লেন্দুপ দরজিকে ‘পদ্মভূষণ’ পদবি দেয় এক অনাড়ম্বর পরিবেশে সান্ত্বনা হিসেবে ২০০২ সালে এবং ১৯৭৪ সালে সিকিম সরকার তাকে ‘সিকিম রত্ন’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এরকম প্রাপ্তির পরও লেন্দুপ ও তার স্ত্রী এলিসা কালিংপনে তাদের জীবনের শেষ সময় কাটান চরম গ্লানিময় অনুতাপের মাঝে। ১৯৯০ সালে তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর লেন্দুপ একাকী বসবাস করতে বাধ্য হন। তার কোনো ছেলেপেলে বা কোনো আত্মীয়স্বজন তার দায়-দায়িত্ব নেয়নি। জনতার ঘৃণা, ক্ষোভ ও বেদনার ঘোর কাটাতে তিনি তার নিজেকে লজ্জাজনক মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দেন। অতঃপর পরিপূর্ণ ১০৩ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। বলা হয়ে থাকে এ মূল নাটক মঞ্চস্থ করতে লেন্দুপের দুই স্ত্রী কম-বেশি জড়িত ছিলেন। ফার্স্ট লেডি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এ নারীরা ক্ষমতাকেই বড় করে দেখেছেন। এ লড়াইয়ে চ্যাগল রাজা ও কাজী লেন্দুপের লড়াইই মুখ্য ছিল না। এর মাঝে ইতিহাসের আরেক উল্লেখযোগ্য নারী এসে হাজির হন তিনি হলেন ভারতের ইন্দিরা গান্ধী। এই তিন নারীর কোপে পড়ে সিকিম আজ এক অনন্য উদাহরণ হয়ে ইতিহাসের সাক্ষী গোপাল হয়ে আছে। এ ইতিহাস থেকে শেখার অনেক কিছুই আছে, তবে যদি সচেতন জাতিরা বাঁচতে চায় এবং মিথ্যা ছলনার সাজানো ভেড়ার ঘরে ঢুকতে না চায়, চোখ-কান খোলা রেখে পর্যালোচনা করলে সিকিমের ভূমিকম্পসহ ‘পেইন অব লুজিং এ নেশন’ মানচিত্রের অনেক লুকানো বেদনা উন্মোচন করতে সক্ষম হবেন। এতে সত্যও উন্মোচিত হবে এবং নিজের অস্তিত্বও বিপন্ন-দশা থেকে মুক্তি পাবে। 

না জ মা মো স্ত ফা

(যা প্রচারিত হয়েছে আজ থেকে ৯ বছর আগে)। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। ইত্যবসরে বরং আরো ধ্বংসের দিকে গিয়েছে এই চাওয়া পাওয়া।

এটি বার্ন ইউনিটের জ্বলে-পুড়ে যাওয়া এক গীতা রানীর কথাই নয়, যেন গোটা বাংলাদেশ সেটিই বলতে চাচ্ছে। বোবা কালা সরকার সেটি শুনতে পাচ্ছে না ঠিক নয়, না শোনার ভান করে পড়ে আছে। মাত্র ডিসেম্বরের ৩ তারিখে আমার একটি কলাম ছিল ‘টক শো’র সরকারি দাসদের উদ্দেশে সামান্য ‘টক কথা’-সেখানে আমি হাসিনার ভণ্ডামির রাজনীতির অনেক উপাখ্যান তুলে ধরি। যা জাতির চোখে ধুলোপড়া দিয়ে হিং চিং ছট মন্ত্রে জাতিকে আন্ধার করে রেখেছেন তিনি। তিনি ভালো করেই জানেন আজ হোক কাল হোক, জাতি এসব জানবে, তখন আর জাতির মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে তিনি পারবেন না। এখনি কাঁঠালে আর আঠাতে তিনি লেপ্টে আছেন, একটি ছাড়াতে গেলে আর একটি তাকে জাপটে ধরছে। গত লেখার শেষ প্যারা থেকে একটি লাইন নিচ্ছি, ‘এখানে যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করা গোলাম আযম, হিন্দু-মুসলিম রায়ট, শত্রুপক্ষ জাহানারা ইমাম, সূক্ষ্ম ও স্থূল কারচুপির খেল, লাশের রাজনীতি, রুমালে ঢাকা প্রতারণার কান্না, ইয়াসমীন নাটক, দিগম্বর কাহিনী, হজ্ব ও ওমরাহ নাটক—এসব হচ্ছে সদ্যগত সরকারের ছলচাতুরির ব্যতিক্রমী খেলা। বিলবোর্ডে আবার নৌকায় ভোট প্রার্থনা শুরু হয়েছে আর মতিয়া চৌধুরীও নীতি-নৈতিকতার সবটুকু বিসর্জন দিয়ে বলছেন, এটি নাকি হচ্ছে মিথ্যার সঙ্গে সত্যের লড়াই। তিনি বলতে চাচ্ছেন অপকর্মী গণতন্ত্র খাদক হাসিনা এক সত্যের নায়িকা। এতে মতিয়া চৌধুরীও নিজেকে ভালো মাপে খোলাসা করে তুলে ধরেন। মন্দের সঙ্গে মন্দই ছুটে যায়, ভালো কখনোই যেতে পারে না, সে কুণ্ঠিত থাকে। 

তারপরও বাংলাদেশের মিডিয়া এসব ছল ওপেন করে দেখায় কম। সারাক্ষণ সরকারের বদহজম ঢাকতেই ব্যস্ত। বাংলাদেশ টেলিভিশন চ্যানেলসহ পাঁচটি বেসরকারি টিভি স্টেশন তাদের আচরণে রাজনৈতিক গোলামির নিদর্শন রেখে চলেছে বলে জানিয়েছে ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল। বাকি অনেক পত্রিকার খবরের শিরোনাম পড়লেই বুঝবেন, এসব যেন বাংলাদেশের মানচিত্রের বাইরের কোনো দেশের পত্রিকা। আর তারা সেটি করছে বলেই আপনারা পাঁচ বছরেও কিছুই টের পাননি। আপনারা ভুল পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাচ্ছেন, পত্রিকা পড়ার ব্যাপারেও আপনারা সচেতন হোন। এর বেশিরভাগ পত্রিকা দেশের মূল থেকে বিচ্ছিন্ন, এরা শুধু ভাঁওতাবাজির সংবাদ নিয়েই নাড়াচাড়া করে। জনগণকে দেখায় যে আজ সকাল হয়েছে নির্ঘাত্ ফের রাত হবে, আবার ভোরও হবে। এবার ঘুমাও জনগণ, নাক ডাকিয়ে ঘুমাও। আমরা পাহারাদার ডাকাতের স্বার্থেই বেঁচেবর্তে আছি, তাই গোলামির দাসখত চোখে মুখে খবরে একাকার। আপনারা সবাই জানেন রেশমা নাটক নিয়ে কী নাটক করা হয়েছিল? যেন মনে হয়েছিল বিরল গৌরবের নেত্রীর দেশে বিরল অর্জন যার জন্য তিনি হাসিনা একদম ‘আমি আসছি’ বলে হেলিকপ্টারে করে নাটকের মঞ্চে চলে যান। এসব দেখে হাসব না কাঁদব, বুঝি না। একই খেল আবার শুরু হয়েছে সম্প্রতি বাসের আগুনে নিহত ১৯ সদস্যের ঘটনাকে ঘিরে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে সম্প্রতি ভর্তি হওয়া ৫১ জনের মধ্যে ৯ জন মারা গেছেন বেশ আগের খবরে আর ৫ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এ ৫ জনসহ বাকি ৩৭ জনই আশঙ্কাজনক অবস্থান পার করছেন। আর ওদিকে চলছে সরকারের নাটক ও ভিআইপিদের চাপে বিপর্যস্তকর অবস্থান। একজন একজন করে লাইন বাঁধা মন্ত্রীরা যাচ্ছেন নাকিসুরে ম্যাগাসিরিজ নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটাতে। ওবায়দুল, শাহজাহান, রাশেদ খান, রওশন এরশাদ ও বড় রানী হাসিনা। সবাই জড়ো হয়েছেন বার্ন ইউনিটের পুরনো ময়লা ব্যান্ডেজের ওপর সেটে দিচ্ছেন লোকদেখানো নতুন ব্যান্ডেজ। ময়লা বিছানার চাদরের ওপর প্রলেপ পড়ছে ঝকঝকে সাদা চাদর। মন্ত্রীদের আত্মীয়রা কেউ কেউ মলম লাগাচ্ছেন, নিজেদের কৃত অপরাধে ঝলসে যাওয়া রোগীদের পোড়াদাগে। 

হাসপাতালে তুমুল শোরগোল ঝাড়ু দাও আর পরিষ্কার চাদরে বিছানা ঢাকো, নকল ফটোসেশনের ধান্ধায় সবাই ব্যতিব্যস্ত। এদের সংক্রমণের চিন্তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও নেই, ওদিকে সরকারের মাথা পেট্রোল বোমাতে ঠাসা। আমি গত লেখাতে টক কথাতে এসব বলেছি বেশ কথা। রাজনেতাদের মাথায় নেই। তাদের মাথায় শুধু জটিল রাজনীতি যার জন্য এত আয়োজন। বিশ্বজিতের খবরে কি তারা ছুটে গিয়েছিলেন? সবার শেষে টেলিমন্ত্রীর ঠেলাতে পোড়া রোগীদের ১১টার ড্রেসিংটুকুও করা যায়নি। এসব খবরের শিরোনাম। ফটোসেশনের ছবিগুলো দেখছিলাম পত্রিকাতে। বার্ন ইউনিটের ফটোসেশনে এসেছে সান্ত্বনা দিতে দিতে মূল জঙ্গি সন্ত্রাসের বিগত সরকারি নেত্রী বলেন, এটা সহিংসতা, এটা গণহত্যা, এটিও সুস্পষ্ট করেন এরা একাত্তরের দোসরদের দিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে। মুহূর্তে তিনি তার টার্গেটে পৌঁছে যান। জাহানারা ইমামের শত্রুদের কাছে মুহূর্তে পৌঁছে যান, তার রাজাকার বেয়াইকে ডিঙিয়ে। নাটকের এখানেই শেষ নয়, ফটোসেশনের নেত্রী বলেন, এসব ছবি তুলে রাখেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তার গুণ্ডারা কী করে, পুলিশরা এসব ছবির ভিডিও ফুটেজ কেন রাখতে সক্ষম হয় না? তারা সব গুণ্ডামিরই সেরা। এটি কেন করতে পারে না! কারণ এতে তাদের নিজেদের চেহারা ছাড়া রামুতে আর সাঁথিয়ায় আর কেউ ধরা খায়নি। তাই তারা ওটি করতে পারে না। অর্ধশত মানুষকে পুড়িয়ে যে বিরল উদাহরণ প্রধানমন্ত্রী তৈরি করলেন তার সহজ সমাধান তার হাতেই ছিল। তিনি নাটক করতে পারেন কিন্তু জীবনের বাস্তবতাকে মানতে ইচ্ছুক নন। তারপরও তার গদির আঠায় তাকে সেঁটে থাকতেই হবে। এমনই মায়াবিনীর ছলের জীবন। অতীতের হত্যা, লাশ, সংখ্যালঘু নির্যাতন ফটোসেশন এসব জনতা উদারচিত্তে বিশ্বসভায় সুস্পষ্ট করে চিত্রিত করে বাস্তব উদাহরণসহ প্রকাশ করেছে দিবালোকের মতো স্বচ্ছতা দিয়ে। তার অনেক অপকর্মে ঠাসা এসব বক্তব্যের উদাহরণীয় ইংরেজি বাংলা ভারশন আজ সবার নাগালের মধ্যে। বার্ন হওয়া ভুক্তভোগী গীতা রানী জোর গলায় বলেন, ‘আমরা কোনো অসুস্থ সরকার চাই না।’ তার মুখে শোনা যায় কিছু প্রতিবাদী কণ্ঠ। গীতা রানী কি জানেন তাকে পরপারে পাঠাতে তার দিদিমণির প্রাণে এক দানাও করুণার উদ্রেক করবে না। গীতা রানী তো গীতা রানী, অতীতের সেলিম দেলাওয়াররা তার নিজ দলের যুদ্ধবাজ লীগসদস্য তারপরও জানে-বাঁচার আশা করতে পারেনি। তারপরও মনে হচ্ছে হয়তো গীতা রানী এবার কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছেন, করতে পারলে ভালো আর না পারলে গীতা রানীর ভাগ্যে অতীতের মতো একরাশ শূন্যতা জমবে আর ভবিষ্যতের জন্য জমবে বিশাল শূন্যতা। 
এবার আর একটি নাম পঙ্কজ দেবনাথের নাম আসছে, তিনি হচ্ছেন বারে বারে আক্রান্ত পুড়িয়ে দেয়া ‘বিহঙ্গ’ পরিবহনের মালিক। এবং প্রেস ক্লাব থেকে শিশুপার্ক পর্যন্ত দন্ডের পুলিশ বাহিনী নিয়োজিত ছিল, প্রেস ক্লাব, ঈদগাহ মাঠের সামনে, মত্স্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউট, শিশুপার্ক, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, শাহবাগ মোড় ও শাহবাগ থানায় সর্বমোট নয়টি পয়েন্টে প্রহরাতে এরা দলেবলে বহাল ছিল। জানা যায় ওই সময় টহল গাড়িও দাঁড়িয়ে ছিল কয়েকটি পয়েন্টে, যেখান থেকে মূল জায়গায় পৌঁছাতে আধা মিনিটেরও কম সময় লাগে। থাকছে না এর কোনো ভিডিও ফুটেজ, থাকছে না কোনো টিভি ক্যামেরা। ক্ষমতার শক্ত হাতে সব কন্ট্রোল রুমের গাইডেন্সে এসব হচ্ছে, এসব হচ্ছে শাহবাগের আগুর নাচন খেল। পরিবহন খাতটিই তাদের শক্ত হাতে জিম্মি হয়ে ক্ষমতার দাপটে আওয়ামী নেতারাই পরিবহনের মূল কর্নধার। মূল পরিবহন ব্যবসায়ীরা আজ ঠুনকো চুনোপুঠি, ক্যাডারদের তালে পড়ে তারা পেছন সারির ব্যবসায়ী, সামনে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী। বাংলাদেশে বিরোধী নেত্রীর গাড়িতে ধাক্কা দিলে ভেঙে যায় খালেদা জিয়ার গাড়ির লাইট, ওটিও পঙ্কজ পরিবহনের কাজ। লীগ নেতারা তখন গাড়িটি আটক করে চালকের সঙ্গে অশোভন রাজনীতির আচরণ করেন। বাংলানিউজের প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এসব জানা যায়। আমেরিকাতে হাজার-লক্ষ গাড়ির ধাক্কা লাগছে। কিন্তু সেখানে কোনো রাজনীতির বাবার ডাকে এসব হয় না। এখানের ওবামার কোনো চেলারাও এসব ছোট কাজের জন্য বরাদ্দ নন। পুলিশই তার লাইনে এখানের সেরা বাবা। তাদের পকেটে টাকা গুজে দেবে এমন সাহস এ যাবত ধারে-কাছে কারও হয়েছে বলে শুনিনি। জেনেছি ও নেটে দেখেছি খোদ বোতল খাওয়া জয় বাবাও এলকোহলে মাতাল হয়ে পুলিশের খাতায় নাম উঠিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্যাডার লীগ রাজনীতির এ ধারা এদেশে অচল। তাই মনে হয় জয় বাংলাদেশে ছুটে যান বারে বারে, সেখানে বোতল খাওয়া আসামিকে এখনও কেউ এভাবে ধরছে না, তাছাড়া ববং এদেরকে বাড়তি সুযোগ করে দেয়, অপরাধ করতে পুলিশই সহযোগিতা দেয়। 

১৯৮১ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত হাসিনার অলিখিত কনসালট্যান্ট মতিউর রহমান রেন্টুর স্বরচিত গ্রন্থ ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইতে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার নিজের ফাঁসি চেয়েছেন। সুদীর্ঘ ১৬টি বছর অবিরামভাবে তার অনেক অনাচারকে দেখেও নীরব থাকার অপরাধে তিনি প্রথমে তার নিজের ফাঁসি দাবি করেন। তারপর বাকিদের, বিশেষ করে হাসিনার ফাঁসি দাবি করেন। এমনকি তার পিতারও মরণোত্তর ফাঁসি দাবি করেন। কারণ তার দৃষ্টিতে তারা একই রকম কৃত অপরাধী ছিলেন। চারপাশের শত অপরাধ ও এসব ভুক্তভোগীদের কৃত বাস্তবতা দর্শনে ধারণা হয় হাসিনার অপরাধ এত ব্যাপক ও বিস্তৃত যে মনে হয় একশ’ বার ফাঁসিতেও জাতির বেদনা ঘুচে যাওয়ার নয়। সম্প্রতি বার্ন ইউনিটের একজন ভুক্তভোগীর লেখাতে জানলাম তার বন্ধুর খালাতো ভাই শাহবাগে আগুনের শিকার ছিলেন। লাফিয়ে উদ্ধার পেলেও তাকে বাধ্য করা হয় বার্ন ইউনিটে যেতে এবং কালে তাকে মৃত্যুর কোলে হারিয়ে যেতে হয়। কোনোভাবেই তার স্বজনদের ধারে-কাছেও রাখতে দেয়া হলো না। সে লেখাতে দেখি প্রধান চিকিত্সক মৃণাল কান্তি মনে হচ্ছিল ভিনদেশি কোনো এজেন্ট। কারণ তার ব্যবহার এরকমই ছিল। শিগগিরই ওই খালাতো ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ এলো। এর সুবাদে বিরোধী সব নেতাকে আসামি করে বাসে আগুন দেয়ার জন্য মামলা করা হয়। সবচেয়ে বড় কথা, এসব ঘটছে সবকিছু পুলিশের নাকের আগায় চোখের সামনে। সন্ত্রাসীরা সব সময় পুলিশের সামনেই এসব অপকর্ম করে বুকের সিনা মেলে ধরে। এদের আবার সময় সময় পুলিশ সহযোগিতাও দেয়। সামান্য আহত মানুষ মরলেও তাদের লাভ, কারণ তারা চায় লাশ আর কিছু নয়। তাই অল্প আঘাতের পরও এরা মরে গেলে মন্ত্রীদের পোয়াবারো, তাই তারা দলেবলে ছুটে যায় ফটোসেশনে রাজনীতির নাটক করতে। বর্তমান সময়ে পুলিশই লাশের ওজন বাড়িয়ে চলেছে। কখনও লীগের গুন্ডারা বিরোধীকে বাগাতে ছুড়ে দিচ্ছে পেট্রোল বোমা। এসব হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মোটামাথার হাসিনা সরকারের অতীত নাটকের আদলে কৃত ২০১৩ এর ডিজিটাল গদিরাখা কর্ম। বুদ্ধিমতী মনে করছেন হাবলা দেশের মানুষ অতীতের মতো তার অপকর্ম ও ছলাবাজির ছাইভস্ম গোগ্রাসে গিলবে। জেনে রাখবেন এটি একবিংশ শতকের আলোর শতাব্দী, এখানে ডিজিটাল ফটকাবাজিকে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা হবে। সে ক্ষমতা বর্তমানের ১৬ কোটি জনতার হাতের মুঠোয়। গত সরকার কোনো সময়ই এসবে কোনো সুষ্ঠু তদন্ত করে না, শুধু আন্দোলন সাজায়। মনের সাজানো ছলের অনুকরণে ঘটনা ঘটিয়েই ছুটে যাওয়া হয় ফটোসেশনে আর প্রচার করা হয় এসব বিরোধীর কাজ, তাদের চোখে নষ্টের শিরোমনি জামায়াতের প্রধান সঙ্গী। একজন বিএনপি নেতার গুলিবিদ্ধ পিঠের ছবি চোখ মেলে দেখি, সেখানে কম করে হলেও ৫০টি গুলি বিঁধে ছিল এবং তা গোনা যাচ্ছিল। এভাবে পুলিশ দিয়ে সরাসরি গুলি করা, আসামিকে নির্যাতনে মারা, এমন লাশের আওয়ামী রাজনীতি আর কতকাল চলবে এদেশে?

এটিও ছাপে আমার দেশ২০১৩ সাল। যা প্রচারিত হয়েছে আজ থেকে ৯ বছর আগে)।


না জ মা মো স্ত ফা

(ভাবছি আজ পুরানো কিছু কলাম সংযুক্ত করবো। যা প্রচারিত হয়েছে আজ থেকে ৯ বছর আগে)।

২০০১ সালের ২৬ জুন তারিখে ‘নিরাপত্তার ব্যর্থ বেষ্টনী’ নামের একটি কলামের কথা মনে পড়ছে। ওই দিন এ নামে আমার এ কলামটি ছেপেছিল দৈনিক ইনকিলাব। বিষয়টিতে এসেছিল ‘মৃত্যু রোধ করার কোনো কৌশল আজ অবধি আবিষ্কৃত হয়নি, তবে আকস্মিক মৃত্যু, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু রোধকল্পে একটি সরকার গোটা জাতির জন্য অনেক ব্যবস্থাই করতে পারে, যদি সে সরকার জনগণের সরকার হয়ে থাকে। আর তখন সেই জনগণই হবে তার প্রধান নিরাপত্তার আশ্রয়।’ এক যুগ আগের খবর হলেও এটি বোঝা যায় অতীতেও এ সরকার যখনই দণ্ড হাতে পেয়েছে তখনই নিজের নিরাপত্তার চিন্তাই মগজে রেখেছে। সরকার তার নিরাপত্তার স্বার্থে সেদিনও অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আইন তৈরি করে রেখেছিল। সবদিনই তার আচরণে এটিও লক্ষণীয়, অনাচার করেছে মনের সুখে তাই স্বভাব গতিতেই নিরাপত্তার বিষয়টি বারে বারে নাড়া তৈরি করছে। এর ধারাবাহিকতায় আজ ২০১৩ সালে আবার সেই পুরনো নাটকের ঝালাই চলছে। সরকারের চিন্তা আর কারও জন্য নয়, শুধু আপন পরিবারকে নিয়ে সবদিনই এক বড় দুশ্চিন্তা। 

উচিত ছিল বিধাতার কাছে কায়মনোবাক্যে সেটি চাওয়া, ওটি চাইতে পারলেই তিনি সবচাইতে বেশি নিরাপদ থাকতেন। তা না করে তিনি সমানেই গরিব একটি দেশের ওপর তার অপকর্মের সব দায় কৌশলে তুলে দিতে চান। এরা হচ্ছেন শেখ হাসিনা নিজে ও তার বোন রেহানা, তাদের সন্তান জয়, পুতুল, ববি টিউলিপ। এটি স্বাধীনতার সনদে বা ৭ মার্চের বক্তৃতাতে জাতির কোনো লিখিত বা অলিখিত শর্ত ছিল কি, যদিও তা বলা হচ্ছে না। যে জাতি প্রতাপী পিতারই তোয়াক্কা করল না, সে জাতি কেমন করে বাকি নাতিপুতিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, আল্লাহই মালুম। এটি কি ৭ মার্চের ভাষণের মূল্য বাবত জমা অর্জন? নয়তো স্বাধীনতার যুদ্ধে পিতা, মাতা, পুত্রী, জামাই, ছেলেপেলে কেউ কি ছিল? বরং জানা যায় সবাই জামাই আদরে মিলিটারিদের স্যালুটের অলিখিত বা লিখিত(?) সন্ধির হেফাজতেই ছিল। আর যুদ্ধ পরবর্তী সবাই পরিবার শুদ্ধ দলবেঁধে দেশ উদ্ধারে হরিলুটের অংশে শরিক হন। সেদিন থেকে দলেবলে এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চেতনা করে পক্ষের শক্তি সাজে। এটি সত্য, সেদিন ওই পাক হানাদার বাহিনীর সময়ও তারা অন্য রকম এক নিরাপত্তায় ঘেরা ছিলেন। পুত্র জয়ের জন্ম সংক্রান্ত মিলিটারি নিয়ন্ত্রণে সব হেফাজতের খবরই জাতির জানা। একদল প্রহরারত বাহিনী সার্বক্ষণিক হেফাজতে নিয়োজিত ছিল। ওই হেফাজতটি এবারও তিনি আজীবন দলেবলে চাচ্ছেন। তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী অসভ্য। এদের ধ্বংসই উনার অন্তরের কামনা, এটি ছিল তার মুখনিসৃত বাণী। বিডিআর বিদ্রোহে ওই বাণী বেশ বড়মাপেই ধ্বংস সফলতা এনেছে। প্রথম কিস্তি গেলার পর দ্বিতীয় কিস্তির প্রাপ্য ছিল মাত্র পনেরো কোটি টাকা, সেটি উদরস্থ করে হাসিনা এক সময় এরশাদের পুরো বিরোধী নেত্রী সাজেন। এসব হচ্ছে হাসিনার ল্যাং-মারা রাজনীতি। তাই এরশাদ হটানোর মূল নেত্রী সবদিনই খালেদা, আপসহীন নেত্রী আর উনি হচ্ছেন বহু পরে খালেদার পেছনে হাঁটা বিক্রি হওয়া ছলবাজ নেত্রী। শেষ মুহূর্তে এসে এরশাদ হটানোতে তিনি নামেমাত্র সই করা আন্দোলন আন্দোলন খেলার একজন। 

জানা যায়, ২০০৯ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের ফের বৈঠক হয় নভেম্বরের ২০১৩ সালে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদে ‘জাতির পিতার পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন করে। এ আইনে এরা সদস্যরা হলেন কন্যারা ও তাদের সন্তানাদি। আইন অনুযায়ী ১৯৮৬’র অধীনে সিকিউরিটি ফোর্স ভিআইপিদের জন্য যেরূপ নিরাপত্তা রয়েছে সেরূপ নিরাপত্তা বাংলাদেশ সরকার আজীবন জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে যাবে। এবং সেটি দিবে সবস্থানে। ধারণা হয় সেটি দেশে-বিদেশে জলে-স্থলে গহীন অরণ্যে সর্বত্র। এখানের প্রত্যেক সদস্যের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত আবাসনের ব্যবস্থা করবে এবং এ বিবেচনাতে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধাও তাদের দেবে। ওদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচারকালে জয়ের ওপর হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট পাঠায়। দেশের যে কোনো জায়গাতে তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার স্বার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। যে দেশের গোয়েন্দারা বিডিআর বিদ্রোহের মতো এতবড় একটি ভূমিকম্পের কোনো ইশারাও আঁচ করতে পারে না, তারা কোন ভরসায় এসব অলৌকিক খবর সংগ্রহ করেন তাতে সচেতনের অতিরিক্ত সন্দেহ না হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। 

বাংলাদেশে কি ঠেকে আছে জয়ের অভাবনীয় সম্ভাবনার নির্বাচনী প্রচারের জট-জটিলতাতে? তাকে কী কারণে এই গরিব দেশের ভাণ্ডার লুটের জন্য বারে বারে আমেরিকা থেকে ছুটে যেতে হচ্ছে? সে না গেলে বরং দেশ অনেক উপকৃত হয়, অনেক সাশ্রয় হয়। বলা হচ্ছে জীবনের শঙ্কার মাঝে জয়ের জীবন অন্যতম। বর্তমানের যা নিরাপত্তা আছে পরিস্থিতিগত কারণে এটি আরও জোরদার করা প্রয়োজন। সারা জাতি আজ তার দিকে চেয়ে আছে, এমন অবস্থানে প্রতিটি খুটিনাটি অবস্থানের নিরাপত্তার স্বার্থে ডিসি, এসপি, ও ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, যারা সারা জাতিকে ত্রাসের মাঝে রেখেছে তারাই শুধু তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত অতীতে এবং আজও। শত শত হাজার হাজার মানুষের জীবন এখানে অনিরাপদ অবস্থানে আছে, সেখানে শুধু যাদের কারণে এত অস্থিতিশীল অবস্থা তাদেরই নিরাপত্তা চাই কেন? এর কি কোনো যুত্সই উত্তর কারও কাছে আছে? না থাকলে প্রত্যেকেরই উচিত সে উত্তর খুঁজে বের করা! 

তার নিরাপত্তার আরও বহু বেশি দরকার। পাঠকদের কিছু ইতিহাসের পেছনে নিয়ে যাচ্ছি। ১৯৯৪ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর অনিশ্চয়তার পথে চলছে বাংলাদেশের রেলের অনিশ্চিত ট্রেন, পথে পথে থামিয়ে বিরোধী নেত্রী হাসিনার সভা হচ্ছে। প্রতিটি স্টেশনে এভাবে কম করেও ১ ঘণ্টা নিয়ে চলছে বক্তৃতার ট্রেন, পেছনের বগিতে আছেন বিরোধী নেত্রী ও তার লোকলস্কর। সঙ্গে এসেছে ডজন ডজন নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকরা। রাত ঘনিয়ে এলে একই বক্তৃতা শুনে কাতর সাংবাদিকরা কিছু একঘেয়েমিতে ঝিমিয়ে পড়লে দলবাজের একজনের নির্দেশে কয় রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে ওই গুলির আওয়াজ লক্ষ্য করে নেত্রী নির্দেশ দেন চারদিকে সাংবাদিকদের মাঝে খবর ছড়িয়ে দাও যে আমাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল। একটু পর ট্রেন ঈশ্বরদিতে থামলে আওয়ামী নেতা আমীর হোসেন আমু মাইক দিয়ে প্রচার করেন যে জননেত্রীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর এ খবর সব পত্রিকার শিরোনাম দখল করল। গুলির মূল নায়ক বন্ধুরা এসব নিয়ে হাসাহাসির এক পর্যায়ে এটিও স্থির হয়ে যায় যে এর ওপর হরতাল আসতে হবে ঠিক পরদিন। যার খেসারত দিতে একদিন হরতাল হয়। এসবের বিচার কি এ জাতি কোনোদিনও করবে না? তার এসব অপকর্মের অনেক শরিকজনরা নামে পরিচয়ে আজও সারাদেশ ঘিরে আছে। 

দিনে দিনে আরও উদ্বেগ সৃষ্টির চটকদার খবর আসছে। আজ ২৫ নভেম্বরের খবরে এবার জয় বলছেন, বর্তমানে এমন কোনো জেনারেল বাংলাদেশে নেই যে দেশ উদ্ধার করবেন। তাছাড়া যারা আছেন এরা এতই কেনা গোলাম যে এরা গোলামি ছাড়া কিছু জানে না। তার কথায় এটিও সুস্পষ্ট করে ব্যাখ্যা দেয়া হয় যে, তাদের লাশের ওপর দিয়ে যাওয়া ছাড়া শাসন ক্ষমতা অন্যেরা হাতে পাওয়ার আর কোনো উপায় খোলা নেই। বাংলাদেশ মুজিব পরিবারের কাছে কি বর্গা দেয়া হয়েছে? দেখা যাচ্ছে জয় আর ভূঁইফোঁড় রেহানা দু’জনই ভারতীয় হাইকমিশনে একের পর এক লাইন দিচ্ছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী শুরুর দিন থেকেই এ পরিবার দেশের জন্য এক ভয়ানক সুনামি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোষ্ঠীশুদ্ধ জাতির ঘাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, জাতিকে খুবলে খুবলে শেষ করতে চায়। তারপরও প্রকৃত বিচার না করে এদের নিরাপত্তাই বা কেন দিতে হবে? তাহলে আইন করে কি মীর জাফরের জন্য ইতিহাসের ঘসেটি বেগমদের জন্যও আজ নতুন কিছু করা হবে? উত্ফুল্ল পঙ্কজ সরেনের সঙ্গে জয় গোপন বৈঠক করছেন। বিষয়বস্তু জাতির অজানা। সরেন বলেন, পরিস্থিতি অবগত করতে জয় এসেছিলেন। যেন এরা গোটা দেশকে কয়েক প্রস্ত কাঁটাতারের খাঁচায় পুরে ফেলেছে। সব দ্বার রুদ্ধ করে তারা রেখেছেন। জয় আরও বলেন, গণভবনও যারা পাহারা দিচ্ছে তারাও তার মায়ের আজ্ঞাবহ গোলাম। বলছেন একমাত্র অলৌকিক উপায় ছাড়া কোনো রাস্তা খোলা নেই। বিডিআর বিদ্রোহের দলবাঁধা সব কর্মকর্তার অন্তর্ধানের সব জটিল কথা এবার পানিজলের মতো স্পষ্ট হচ্ছে। এসব হচ্ছে বিগত পাঁচ বছরের ভূমিকম্পের সাম্প্রতিক সংবাদ। তাদের ভাষাতে অলৌকিকের রাস্তাটি মাত্র খোলা আছে। সব যুগেই অলৌকিকের নাড়াতেই ফেরাউনরা গদি ছেড়ে পালায়, এটি ঐতিহাসিক সত্য কথা। ইলিয়াস আলীর দেশ সিলেটে সত্যের তেজে বলিয়ান ইয়েমেন থেকে আগত ফকির শাহজালালের হুমকিতে গৌড় গোবিন্দের রাজার ধ্বংস ও পলায়ন ইতিহাসের জ্বলজ্যান্ত বাস্তব উদাহরণ। 
গাজীপুরে শ্রমিকদের আগুনে পুড়ল গার্মেস্ট কারখানা। খবরটি দেখে মন বিচলিত হয়। এসব কারা করছে? এমন একটি সময় এটি হচ্ছে যখন কারখানা বন্ধ ছিল। জানা যাচ্ছে বহিরাগতরা এসে আগুন দিয়েছে প্রতিটি ফ্লোরে ফ্লোরে, দেখে মনে হয় এটি পরিকল্পিত অগ্নিসংযোজন। এটি এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত করার দিকেই কর্মকর্তাদের নজর বেশি ছিল। রাত ১২টার পরে কারখানার গেট ভেঙে একদল বহিরাগত এ কাজটি করে। আপনাদের যাদের মগজ আছে তারা এটি গুনে দেখেন, অঙ্ক করেন, এসব কে বা কারা করছে, এটি এদেশের মানুষ করেনি। প্রতিবেশী দেশের ইন্ধনে এসব হচ্ছে বলেই ধারণা হয়। এদেশ থেকে এ ব্যবসা ধ্বংস করতে এসব করা হচ্ছে। আপনারা সারা জাতি এক হোন আর নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নির্ধারণ করেন। আর দেশের প্রতিটি ছলবাজ শয়তানকে দেশ থেকে বিতাড়িত করুন। যারা আপনাদের জীবন অনিরাপদ করে তুলেছে, ওদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে, এটি যে কোনো বোকায়ও বুঝে। জানা যায়, এখানে কোনো বড় রকমের শ্রমিক অসন্তোষ বা বেতনভাতার অসন্তোষও ছিল না। এটি ওই একই বিডিআরের আদলে সাজানো হয়েছে। এ নাশকতায় ভেঙে পড়ে হতভাগ্য দরিদ্র দেশের ১৬ হাজার শ্রমিকের ভাগ্য। কমপক্ষে হাজার-কোটি টাকার, আবার কেউ বলছে শত-কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে আগুনে পুড়ে। পুলিশ বলছে আগুন ধরিয়েছে বহিরাগত লোকজন। ওই সময় কারখানা ছুটি ছিল। শ’ শ’ বহিরাগত লোক ঢুকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমান? এসব খবর আঁচ না করে চোখের সামনে ঘটতে দেখেও, দশ-বিশ গুণ্ডাকে ধরতে না পেরেও খালি পদ ধরে আছেন! অন্ধকার মাপায় দক্ষ, এদের কি জয় আর তার পরিবারের চিন্তা ছাড়া মাথায় আর কোনো সেক্টরই কাজ করে না? এই অপকর্মী সরকারের সব পাট খুলে ধরার দায়িত্ব জাতির প্রতিটি জনতার। যারা এ দায়িত্বে অবহেলা করবেন তারাই জাতির চিরস্থায়ী বেইমান হয়ে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন আর শীর্ষ গোয়েন্দারা সেখানের শীর্ষে অবস্থান করবেন। 

চারপাশের জটিলতায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে লিড দেয়া একজন মেজর জলিলের কটি কথা আনছি। ‘ওরা যশোর সেনানিবাসের প্রত্যেকটি অফিস এবং কোয়ার্টার তন্ন তন্ন করে লুট করেছে। বাথরুমের মিরর এবং অন্যান্য ফিটিংসগুলো পর্যন্ত সেই লুটতরাজ থেকে রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি নিরীহ পথযাত্রীরা। কথিত মিত্র বাহিনীর এই ধরনের আচরণ জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল।… আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এবং ভারতীয় চক্রের মধ্যকার ষড়যন্ত্র সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের জানারও কথা ছিল না। তারা হানাদার বাহিনীকে অত্যাচার করতে দেখেছে, অত্যাচারিত হয়েছে বলে আত্মরক্ষার্থে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ-উত্তরকালে আওয়ামী লীগ চরম সঙ্কীর্ণতার পরিচয় দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় রূপকে দলীয় রূপ প্রদানের জন্য বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়।…’৭২-এ আওয়ামী লীগের এমন কোনো বৈধ অধিকার ছিল না যাতে করে তারা দেশ ও জাতির ওপর একটি মনগড়া সংবিধান আরোপ করতে পারে। তবুও তারা তা জবরদস্তি করেছে। দেশের জনগণের চিত্কার প্রতিবাদ কোনো কাজেই আসেনি। এভাবেই যুদ্ধ-উত্তর বিধ্বস্ত বাংলাদেশের কোটি কোটি বুভুক্ষু মানুষের জন্য অন্নবস্ত্রের আগেই রাষ্ট্রীয় মূলনীতি এসে মাথায় চেপে বসে। এই ৪ মূলনীতি আরোপ করার মধ্য দিয়ে দিল্লির কর্তারা তাদের মূল লক্ষ্যই স্থির রেখেছে কেবল।...দেশের জনগণের কোনোরূপ তোয়াক্কা না করেই রাষ্ট্রীয় মূলনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব জনগণের ওপর জবরদস্তিভাবেই চাপিয়ে দিল। একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা অবুঝের মতো কেবল ৪টি স্তম্ভই ধার করলাম, নিরাপদ একটি বাসগৃহ তৈরি করার প্রস্তুতি নিলাম না। দেশের কোটি কোটি নির্যাতিত মানুষ এবং তৌহিদি জনগণ আজ সেই নিরাপদ একটি বাসগৃহই কামনা করে, বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে পাওয়া স্তম্ভবিশিষ্ট ইমারত নয়। সুতরাং সেই বঞ্চনাকারীদের কবল থেকে বঞ্চিতদের ন্যায্য পাওনা আদায় করার লক্ষ্যে আর এ্কটি প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন কি এখনও রয়ে যায় নি?’ প্রশ্নটি করে গেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। আজ আমাদের মনেও হাজারো প্রশ্ন। আমরাও এসব প্রশ্নের উত্তর চাই। গোটা জাতির নিরাপত্তা চাই, প্রতিটি মৃত্যুর প্রকৃত ফয়সালা চাই। আর যাদের জন্য গোটা জাতি আজ হুমকির মুখে তাদের শুধু নিরাপত্তা নয়, সঠিক বিচারও চাই। যারা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ের খেলা খেলে এতকাল পার পেয়েছেন এবার তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চাই। 
রচনাকাল ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

বি দ্র: আমার দেশ অনলাইন এ কলামটি ২০১৩ তে উপরের নির্দেশিত তারিখে ছাপে।রচনাকাল ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

না জ মা মো স্ত ফা

আমার চিরচেনা দেশটিকে অন্য অনেকের মতোই আজ বড়ই অচেনা লাগছে। পৃথিবীর মানচিত্রে এটি চতুর্থ মুসলিম দেশ। উইকিপিডিয়ার তথ্যে পাওয়া ২০১০ সালের হিসাবে এর ৯০.৪ ভাগ হচ্ছে মুসলমান আর এ ধর্মই এখানের জনসাধারণের মূল পরিচিতি। যেখানে নাস্তিকদের বলতে গেলে প্রায় কোনো অস্তিত্বই নেই। জাতিসংঘের হিসাবেও দেশটি গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনায় খুবই সহনশীল এবং অসাম্প্রদায়িক। এখানে ইসলামের আগমন ঘটে ১০ শতাব্দীতে। মূলত আরব বণিকদের এবং পারসিয়ান সাধকদের আগমনে ইসলাম প্রসারিত হয়। কোনো কোনো সূত্রে এর আগেও এতদঅঞ্চলে ইসলামের আগমন লক্ষ্য করা গেছে। অর্থনীতির জন্য ব্যবসা আর আদর্শের জন্য ধর্ম ছিল তাদের জীবনের অবলম্বন। শাহজালাল (রহ.) এ রকম এক সাধকের নাম। যিনি ১৩০৩ সালে ৩৬০ আউলিয়া নিয়ে সিলেটে এসে বসতি গড়েন। এটি বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মের গোড়ার কথা। অষ্টম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধরা পাল রাজবংশ নামে এতদঅঞ্চল শাসন করত। সে হিসেবে এতদঅঞ্চলের বড় অংশের মানুষ মূলত বৌদ্ধ ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিক হওয়া মুসলমান। বৌদ্ধ ধর্ম-পরবর্তী যখন সেন বংশ ক্ষমতায় এলো, তখনই বড় অংশের মানুষ ইসলামের ছায়াতলে শান্তির ছায়া দেখে আশ্রয় নেয় এবং এটি চলে প্রায় ১০০ বছর অবধি। উল্লেখ্য, এখানে শুধু বৌদ্ধরাই এসে ভিড় করেনি, নিম্নবর্ণের অনেক হিন্দুও এসে আশ্রয় নেয়। কারণটি কি? ধর্মে জোর-জবরদস্তি? না, মোটেও তা নয়। এ ধর্মে এটি নিষিদ্ধ শাস্ত্রবাণী। যদিও প্রতিপক্ষের মিথ্যা সাজানো ইতিহাস আর কৌশলী মিডিয়া সেটির প্রচারে তত্পর থেকেছে। বিরুদ্ধবাদীরা তো চালিয়েছেই, কখনও কখনও দেখা গেছে এক শ্রেণীর মুসলমানকেও তারা কৌশলে কিনে নিয়েছে এ কাজটি করার জন্য। এরা হতে পারে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ছাত্র, ডাক্তার, প্রকৌশলী সর্বস্তরে এরা ঢুকে পড়েছে।

যার কিছু নমুনা হিসেবে কিছুদিন আগে তারা বাংলাদেশের কলিজাতে একদম শাহবাগের চত্বরেও ঢুকে জয়ধ্বনি দিয়েছে। এরা অনেকেই নামে মুসলমান, ধর্মেও মুসলিম। চিন্তাশীলদের জন্য কিছু চিন্তার খোরাক, যারা নিজের পরিচিতি এরই মধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন বা খুঁজে পাচ্ছেন না। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক নয়। এটি জোর গলায় বলার দরকার আছে। আমরা নিজেদের প্রশংসা থাকলেও করতে কুণ্ঠিত থাকি। আমরা মনে করি বৌদ্ধরা অহিংস নীতির ধারক, যদিও সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা তাদের সমূহ অর্জন খুইয়েছে বলেই ধারণা হয়। দেখা গেছে ইসলাম হচ্ছে ফজলি আম, যে কারণে তসলিমার মতো একজন মহিলাকেও সেখানে (অন্যের দালাল হিসেবে) ঢিল ছুঁড়তে দেখা গেছে। ইসলামের সর্বনাশ করতে অনেক কিছুই করা হচ্ছে; কিন্তু সবসময়ই সর্বনাশ না হয়ে বরং ওটি কখনও কখনও বুমেরাং হচ্ছে। টুইন টাওয়ার কে ধসালো আজ পর্যন্ত কোনো বিচারে সেটি সাব্যস্ত হয়নি। কে ওটি ঘটিয়েছে? কিন্তু অবশ্যই কেউ এটি সাজিয়েছিল, নয়তো ওই বিল্ডিংগুলো এমনি-এমনি ধসে পড়েনি। বিশাল শক্তিধর আমেরিকাও এখানে নানা প্রশ্নের জমা বাড়িয়ে চলেছে।

কথা হচ্ছে ইসলাম কোনো জুয়াখেলার নাম নয়। এটি একটি শক্তিশালী সত্য ধর্মের নাম। কী কারণে বাংলাদেশকে আজ অচেনা লাগছে? কারণ পরবর্তী প্রজন্মেরা ইতিহাস ঠিক করে পড়েনি, জানেনি। তাদের উচিত ছিল পাকিস্তান কেন হলো, বাংলাদেশ কীভাবে হলো এসব পড়ে জেনে নেয়া। বস্তুত দেখা গেছে, অনেকেই যারা পাকিস্তান গড়েছেন তারাই আবার পাকিস্তান ভাঙার কাজ করেছেন। ইসলাম ধর্মের হিসাবে ৯০.৪ ভাগ অধ্যুষিত মুসলমান ছেলেমেয়ের ওপর ধর্মের নির্দেশ হচ্ছে ‘পড়ো’। চারপাশের মঙ্গলের চিন্তায় যখন নবী মুহাম্মদ (সা.) একাগ্রচিত্তে ধ্যানরত ছিলেন হেরার গুহাতে, ঠিক তখন জিবরাঈল ফেরেশতা প্রথম যে বাণীটি নিয়ে আসেন সেটি হচ্ছে ‘ইকরা’ অর্থাত্ ‘পড়ো’। এভাবে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে পুরো ধর্ম গ্রন্থটি ধাপে ধাপে নাজিল হয় বিভিন্ন জটিলতার জবাবে সমাধান হিসেবে। এমন একটি গ্রন্থের পাঠ পৃথিবীর সবারই পড়া দরকার। কারণ এটি স্বয়ং আল্লাহর প্রেরিত। এটিও দাবি করা হয়, হযরত মুহাম্মদ (সা.) শুধু মুসলমানের নবীই নন, তিনি বিশ্বনবী (সা.)। যুগে যুগে স্রষ্টা এ সত্য ধর্মের সূত্রে পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করেছেন। এটি সব ধর্মের সার কথা। 

সে কারণে এটি অবশ্যই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি মুসলমানের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য এ পড়ার নির্দেশ মেনে চলা। ইসলাম ধর্ম নিয়ে আজ ব্লগাররা খুব মজা লুটছে, এর একমাত্র কারণ তারা প্রথম শব্দটির কোনো মর্যাদা দিতে শেখেনি। যদি শিখতো তবে এই ৯০.৪ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে বাড়তি কাউকে আর জ্ঞানদান করতে হতো না। তারা নিজেরাই সচেতন বিবেকসম্পন্ন মানুষ হতো এবং অন্যকেও সে জ্ঞান বিলাতে সক্ষম হতো। এমনকি ধারণা হয়, তারাই গোটা বিশ্বকে আলো বিলাতে পারতো। সপ্তম শতাব্দীতে যে আলোটুকু আরব ময়দানে জ্বলেছিল এবং পরে ওই বণিকরা গোটা বিশ্বে এটি নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। সেটি আজও আমাদের হাতে আছে কিন্তু আমরা একে অনেক বিবর্ণ করে ফেলেছি, যার জন্য এটি আগের মতো আর মানুষকে কাছে টানতে পারছে না। পড়া ছাড়া, জ্ঞান অর্জন ছাড়া একটি জাতির মুক্তি নেই। এ পড়া শুধু স্কুলে পাশ করার জন্য নয়, চাকরি করাটাই মুখ্য নয় আর শুধু ধর্মীয় জ্ঞানই নয়। সার্বিক জ্ঞানের অর্জন দ্বারা মানুষ যে পড়ায় নিজেকে চিনতে পারে। প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ নিজের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত্ মাপতে পারার দক্ষতা অর্জন করে। এটিই ছিল ইসলামের প্রথম নির্দেশ, যেটি এসেছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ’ বছর আগে। এ বাণী এসেছে নবীর পরবর্তীদের জন্য। এটি ছিল আমাদের সিলেবাস, বাঁচার অবলম্বন। মানুষ হওয়ার ফরমুলা বা সূত্রকথা। 

মাস তিনেক আগের এক পত্রিকায় শাহবাগের ঘটনায় নাগরিকদের বিশাল প্রতিক্রিয়া পড়েছিলাম। এখানে সেখান থেকে মাত্র কয়টি নিলাম। ১. একজন মন্ত্রী বলছেন, আমরা দেখবো কি করে রায় পাল্টে ফাঁসি দেয়া যায়। ২. যেখানে ৮০ ভাগ(?) মানুষ মুসলমান সেখানে তাদের ধর্মের রাজনীতি বন্ধের আহ্বান কেমন করে আসে? ৩. শাহবাগকে মদ-গাঁজা আর ধর্ষণের চত্বর বানানো হয়েছে। ৪. এটি হচ্ছে আওয়ামী, বাম ও মিডিয়ার ক্যু। ৫. শাহবাগে ছিটানো কেক, বিস্কুট, বিরিয়ানি, সিগারেট সব ফ্রি। কেউ ফাঁসির দাবিতে নয়, এসেছে সব ফ্রি খাওয়ার জন্য, সরকার লাখ লাখ টাকা খরচ করছে। ৬. যদি কাদের মোল্লা দোষী হয় তার ফাঁসি হবে। আর যদি নির্দোষ হয় সে বেকসুর খালাস পাবে, যাবজ্জীবন কেন? মন্তব্যগুলো বিবেককে নাড়া দিয়েছে। একের প্রতি অন্যের এত হিংসা কেন? বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের দৃষ্টিতেও সাম্প্রদায়িক নয়। এ তাদের রক্তে নেই। তারা প্রকৃত জ্ঞান অর্জন না করে মিথ্যা আবেগে ভেসে চলেছে এটি কোনো নীতির কথা নয়। তারুণ্যের দায়িত্ব অনেক বেশি। তারাই একটি জাতির মেরুদণ্ড, সেটি যদি ত্রুটিযুক্ত হয় তবে জাতি কুঁজো হতে বাধ্য। মুক্তিযুদ্ধের কাজে তরুণরাই এগিয়ে গিয়েছে। বিগত শতকের পরিস্থিতি তাদের সামনে একটি যুদ্ধ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তারা তার মোকাবিলা করেছে।

তোমাদের সামনে কি উদ্দীপ্ত হওয়ার মতো, তোমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি? তোমরা তো পড়ো না, তোমরা তাহলে চোখ থাকতে অন্ধ। তোমাদের বিবেক অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেছে। কারণ তোমরা সুপাঠক নও। তাই আজকের তরুণকে পড়তে হবে, ভালো পাঠক হতে হবে। সব খানা-খন্দকের খবর জানতে হবে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ এই ধর্মের কাছে ঋণী, যাকে তোমরা কিছু আনাড়ি ব্লগার গালাগাল করছ। ইহুদি, খ্রিস্টান আর মুসলমান এরা তিন দল সদস্যই একগুচ্ছ সারিবাঁধা নবী দ্বারা পরিচালিত। কোরআনে ২৪ জন নবীর কথা বলা আছে। নবী ঈসা (আ.) আর মুহাম্মদ (সা.) খ্রিস্টান ও ইসলাম নামের দুটি ধর্মের নামে দাগ দিয়ে রাখা। দাগটি আল্লাহও দেননি. নবীরাও দেননি। বাকিরা দিয়েছে। না বুঝে দাগ দিয়ে রেখেছে বোকারা, যারা ঠিকমত পড়েনি, তারাই এ কাজটি করেছে। সে হিসেবে এরা সবাই ইসলামের নবী। পৃথিবীর মানুষ এ জ্ঞান অর্জনে পিছিয়ে আছে বলেই এই একত্বটি ধরতে পারছে না, বস্তুত এরা একঘরের মানুষ। এবার পুরো বিশ্ব থেকে যদি এই তিন দল মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা যায় তবে আর কতভাগ মানুষ বাকি থাকে, বলো? তারপরও ভালো করে চোখ মেলে দেখ, বাকিরাও কম-বেশি ইসলামের কাছে ঋণভারে জর্জরিত। ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক হিংসার বশবর্তী হয়ে আজ অবধি ইসলামের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে চলেছে। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাজ করেছে এই পরবর্তী অর্জনকে খেলো করে দিতে। তাই বলে সে সমাজেও এত চাপাচাপির পর পণ্ডিতরা ফাঁকে ফাঁকে সত্য কথা বলছেন।

আর সত্য কথা মানেই যুক্তির কথা, স্রষ্টার কথা যা আল্লাহর বাণী হয়ে এসেছে। দেখা যায় ওরাই আজ ইসলামের প্রকৃত সেবক হয়ে কাজ করছে। যার জন্য প্রতিপক্ষ আরও বেশি করে ক্ষেপে উঠেছে এ ধর্মটির ওপর। তবে এই জ্ঞানের দৈন্যতা আজকের যুগে আমাদের মুসলমানেরই বেশি, কারণ নকল সৃষ্ট জটিলতা সুস্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়ার দায়িত্বও ছিল আমাদেরই। আমাদের প্রাথমিক যুগের মুসলমান আজকের মুসলিমের মতো ছিলেন না। ওদের বাঁধভাঙা দক্ষতাই ইউরোপের জাগরণের সূচনা করে, যা পাশ্চাত্যের পণ্ডিতরা আজও স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না। কিন্তু পরবর্তীরা হয়ে পড়ে অনেক গাফেল, সত্য ধর্মের শেকড় তারা হারিয়ে ফেলে। কারণ আল্লাহর সেই প্রথম বাক্যের উপযুক্ত সমাদর করতে পারেনি পরবর্তীরা। আর তাই ওই সূত্রে আজও আমরা পথহারা, দিশাহারা জনতার একাংশমাত্র। 

সেই দিশাহারা যাত্রীকে পথ দেখাতে এগিয়ে আসতে হবে আজকের প্রকৃত সত্য সাধককে। মদ আর গাঁজার ছিলিম নিয়ে সে সাধ্য-সাধন হবে না। এখানের সৈনিকদের হতে হবে আদর্শবান, সত্যসাধক। ন্যায়নীতি আদর্শই একটি জাতির প্রকৃত বিজয়ের ঠিকানা। মিথ্যার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকবে না। একমাত্র তখনই আল্লাহর সত্য সৈনিক আমরা হতে পারবো। আল্লাহর সাহায্যও অবধারিত নেমে আসবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমিও তোমাদের স্মরণ করবো, আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও আর আমাকে অস্বীকার করো না।’ (আল বাক্কারাহ, ১৫২ আয়াত)। নাস্তিকরা মনে করতে পারে আল্লাহ মনে হয় অনেক লাভবান হবেন আমাদের কাছ থেকে, তাই বলে এরকম কথা বলছেন। বস্তুত এটি বলা হচ্ছে যাতে জনতারা সত্যকে স্বীকার করতে শিখবে। যার জন্য অনেকেই আজ পথহারা। এ লাভ প্রকৃতই জনতার ঘরে এসে জমবে, আল্লাহর ঘরে নয়। জগত্স্রষ্টা কখনও কোনো মানুষের মুখাপেক্ষী নন। হয়তোবা মনের সঙ্গোপনে ইচ্ছা থাকলেও পথ হারিয়ে, তাই আজ আমাদের নিজের ভাই, নিজের সন্তান ধর্মে বিদ্রোহী হচ্ছে আর বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছে। আমাদের মন্ত্রীরা পড়েননি বলে এমন নীতিহীন কথা বলতে পারেন। নাহলে একজন মুসলমান নামধারী মন্ত্রী এ রকম অন্যায় কথা বলতে পারেন না। তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে ইচ্ছেমত আদালতের রায়কে ফাঁসির রায়ে পরিণত করাকেই শক্তির বড়াই মনে করছেন। তাই তারা মন্ত্রী হলেও মানুষ হতে পারেননি। একজন মানুষ যখন সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করবে ঠিক তখনই সে সার্থক মানুষ, সুশিক্ষিত মানুষ বলা যাবে। নয়তো সে কুশিক্ষিত মানুষ, সে মানুষ নামের কলঙ্ক।

 Published in Amardesh online, June 10, 2013

2 


নাজমা মোস্তফা

আমরা জানি বহুদিন থেকে ডঃ ইউনুসকে ঐ গ্রামীন ব্যাঙ্কের চৌহদ্দি থেকে সরিয়ে দেবার পায়তারা হয়েছে। এর মাঝে সরকারের সাধ আহ্লাদ বেড়ে আরো তাগড়া হয়েছে, এবার গ্রামীন ব্যাঙ্কের পুরোটাই গ্রাস করতে চায়। বাংলাদেশ নামের দেশটি একের পর এক বিপর্যয় পার হচ্ছে। দেশ বর্তমানে যে পর্যায় পার করে যেটুকুওবা টিকে আছে মনে হচ্ছে তা তার কর্মী জনতার দক্ষতার কারণেই। যেভাবে গোটা মানচিত্রে হামলা হচ্ছে ভিতরে বাইরে থেকে। বর্ডারে বিএসএফ সমানেই মানুষ মারছে, ভুমির উপরে হামলা হচ্ছে মানুষের উপর হামলা হচ্ছে। স্বাধীনতা বলতে আজ বড়ই নাজুক অবস্থানে দেশটি। গোটা দেশসহ জনতারা এমনকি মেধাবীরাও হুমকির সম্মুক্ষিণ। দেশে উচ্চ নীচ মাঝারি কোন মেধার নাম গন্ধ পেলেই সরকার তাদের উপর হামলে পড়ছে। এবার বড় মেধার উপর হামলা শুরু হয়েছে প্রকাশ্যে। গুম করে ছোট বড় মাঝারি মেধাকে ময়দান থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। হতভাগ্য দেশটিতে কোন মানুষেরই আজ সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা দায়। সরকার নিজের বাহাদুরিতে নিজেই নিজের ঢাক পিটিয়ে চারপাশ গরম করে রেখেছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনে গো-হারার পর প্রধানমন্ত্রীর সামান্যতম পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বরং তিনি উল্টো সারা জাতিকে জঙ্গি আখ্যা দিচ্ছেন, তারা এবার মজা বুঝবে উনার সোনার ছেলেদের অভাবে কেঁদে নাকি বুক ভাসাবে। জানিনা এর মাঝে কি সরকারের মাথা বিগড়ে গেছে নাকি প্রলাপের আদলে এটি অতিরিক্ত কাজ করছে। এরকম প্রলাপ হজম করতে হচ্ছে দেশবাসীকে। এত ধ্বসের পরও নিজেদের বাহাদুরি প্রকাশ হচ্ছে সংসদের ভিতরে বাইরে।

এদেশের মঙ্গলে রাজনেতারা নেই, অন্তত বর্তমানের সময়ে এটি মনে হয় পাগলেও জানে তাই সেদিন দেখি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এক পাগল পাজাকোলা করে ধরে, শেষে পুলিশের সাহায্যে নিস্তার মিলে। নিজেদের আখের গোছানো ছাড়া এইসব রাজনেতারা শুধু ধ্বস নামাতেই তৎপর। খেয়ে না খেয়ে কর্মীরা যা ইতিবাচক জমাচ্ছেন আর বিদেশীরা যে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন ওসব ক্রেডিট ছাড়া সরকারের নিজেদের জমা বলা চলে মাইনাস। তারপরও সরকার চায় নিজে সুকর্ম না করেও সব কৃতিত্ব তার গোলাতে উঠিয়ে দেখাতে। যেখানে সব সংস্থাই সুচারুরুপে সরকার চালাতে ব্যর্থ হচ্ছে সেখানে কেন গ্রামীন ব্যাঙ্কএর উপর তাদের এত লোভ! এর উপর তাদের আচরণ আতংকজনক ও হিংসাত্মক। যেখানে সারা বিশ্বে এ গ্রামীন ব্যাঙ্কের মডেল সমাদৃত হচ্ছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা কেন ডঃ ইউনুসের সাথে প্রতিদ্বন্ধির লড়াই লড়তে যান, এটি কোন সুবিবেচকের বুদ্ধিতে কুলাবার কথা নয়। এমন না যে ডঃ ইউনুসের কৃতিত্ব নিয়ে কোন অপব্যাখ্যার অবকাশ আছে, যে তাকে নিয়ে মুখরোচক চুটকি মন্তব্য করা চলে। এসবের কোনই সুযোগ নেই তারপরও তাকে “রক্তচোষা” বলে গালি দিতে প্রধানমন্ত্রী কার্পন্য করেন নাই। তার মুখ থেকে রক্ষা পেয়েছেন এমন সুজন দেশে খুঁজলে পাওয়াই যাবে না। এটি কোন আভিজাত্যের পরিচয় বহন করে না। যেখানে তার স্বদলীয়রা চড়া গলাতে খালি বিরোধী দলের আভিজাত্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন কিন্তু বৃক্ষ বাস্তবিকই ফলে পরিচয়। তিনি কেমন করে এরকম একজনের অর্জনকেও খেলো করে দেখছেন। অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী আর ডঃ ইউনুসের ক্রেডিট কখনোই এক পাল্লাতে মাপা যায় না। দুজনার দুই মর্যাদা, কিন্তু তুলনা করতে গেলেই এক পক্ষ চুপষে যান, তার আচরণই তাকে ধ্বসিয়ে দেয়। তাকে প্রতিদ্বন্ধী মনে করলেও তিনি এসবের অনেক উপরে, এটি যে কোন বোকাতেও বোঝে। দেখা যায় তার ছেলে যে বিদেশেও নানান অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে, সেই ছেলেও ডঃ ইউনুসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যার প্রেক্ষিতে এর বিরুদ্ধে সঠিক প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত হয়েছে যে, “ডঃ ইউনুস গ্রামীন নামের কোন প্রতিষ্ঠানের একটি শেয়ারেরও মালিক নন”। ঢাকা ১০ মার্চ ব্যাঙ্কের মুখপাত্র সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। খবরটি চোখে পড়েছে (১৮ই-২৪ মার্চ ২০১১, লন্ডন থেকে প্রকাশিত সুরমা), তাই দিলাম।

এবার সরকার কেন গ্রামীন ব্যাঙ্ককে গরীব মহিলাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চায়? সঙ্গত কারণেই ডঃ ইউনুস এর স্বপক্ষে তুমুল আন্দোলন দাঁড় করতে পারেন। আর দেশের সচেতনরা এর স্বপক্ষে সরকারের এই একপেশে সব আস্ফালনের উচিত জবাব দিতে পারেন। সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি করাপ্ট দেশ হিসাবে তার অর্জন জমা করছে। এখানে নিজের দলের ব্যতিরেকে আর কারো চিন্তা ভাবনা হয় না। এর হাজারো প্রমাণ দেশবাসীর সামনে আছেই। এমন অবস্থাতে এটি যে কুটিল উদ্দেশ্যে এই ছিনিয়ে নেবার কাজ করা হচ্ছে, এতে কারো কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। ইতমধ্যে সুজনেরা এর উপর মন্তব্য প্রতিবেদনও দিয়ে যাচ্ছেন। যদিও ডঃ ইউনুস এখান থেকে কোন শেয়ার বানিজ্যেও জড়িত নন। কিন্তু তার গড়া প্রতিষ্ঠান হিসাবে অবশ্যই তার একটি শক্ত অর্জন সেখানে প্রোথিত আছেই। এটি যে অস্বীকার করবে এতে তার নীচতা আর অপরিণামদর্শীতা ছাড়া আর কিছুই প্রকাশিত হয় না। ব্যাংকিং খাতে সরকার যেভাবে লুটপাটের রাজত্ব চালিয়েছে এবার ঐ প্রতিষ্ঠানটিকে লাভেমূলে ধ্বংস করে দেবার জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। গরীর নারীদের এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কেন সরকার হামলে পড়েছে? দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতেই হবে। একজনের অন্যায় আবদার মেটাতে কেন লক্ষ নিরীহ মেয়ের দাবীকে অবজ্ঞা করা হবে, এটি কোন ধরণের সুবিচার? সবাই জানে ডাকাত মাদকাসক্ত স্বামী সবদিন নিরীহ স্ত্রীর সব গোপন আস্তানাতেই হামলে পড়ে। স্ত্রী যদি মুরগী বিক্রি করে হাসের ডিম বিক্রি করেও পয়সা লুকিয়ে রাখে, মেরে ধরে হলেও দুর্মুখ স্বামী তা ছিনিয়ে নিতে তৎপর থাকে। বাংলাদেশ আজ ঐ ডাকাত স্বামীর রুপ ধারণ করেছে। বর্তমানে সরকারের বারোটা বাজার এমন পর্যায় পার করছে, সব খাতেই এটি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সাম্প্রতিক বাজেটকে সবাই বলছেন এটি চোরদের জন্য একটি বাড়তি সুযোগ তৈরী করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশাল বপু নিয়ে বিরাট অংকের বাজেট করা হয়েছে কপট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। বড় অংকের বাজেটের কারণে সবাই টু পাইস বানাতে পারার সুযোগ পাবে। এটি সবদিনই আওয়ামী লীগ সরকার চায়, এটি আজ নতুন নয়। গ্রামীন ব্যাংক ইস্যুর উপর দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বিরুপ মন্তব্য করেন। তারা এটিকে সরকারের কুটিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া আর কোন দ্বিতীয় উদ্দেশ্য দেখছেন না। তারা একে আত্মঘাতি ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বলেই মন্তব্য করছেন। যেখানে সরকার নিজেই চলতে হিমসিম খাচ্ছে প্রতিটি সেক্টরেই ব্যর্থতার ধ্বস নামছে সেখানে যে সংস্থা সুন্দরভাবে চলছে তাতে কেন সরকার বাগড়া দিতে চাচ্ছে, সরকারের এ দ্বৈত ভূমিকার কপট অত্যাচার থেকে একে বাঁচাতে হবে, এ তাদের মতামত। সরকারের প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ব্যাপক এবং এটি একটি ওপেন সিক্রেট অন্তত বর্তমানের প্রেক্ষিতে।

তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্ঠা ডঃ আকবর আলী খান সরাসরি একে রাজনৈতিক বলেই ব্যাখ্যা করেন। গ্রাহক ঠিকই ঋণ পাচ্ছে আবার ঋণ দিচ্ছেও, তাদের কোন অসুবিধা নেই। এখানে সরকারের কর্তৃত্বের কোন দরকার নেই। গত ৪০ বছরের সরকারের প্রতিষ্ঠানের রেকর্ড ভালো নেই বরং লজ্জাজনক। যেসব প্রতিষ্টান তার মালিকানাতে আছে সরকার ওসবই চালাতে পারছে না, গোজামেলে অবস্থান লক্ষনীয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডঃ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সরকার যে ভাঙ্গার কথা বলছে এটি হবে গায়ের জোরে করা একটি কাজ। এমন না যে গ্রামীন ব্যাঙ্ক কোন কাজ করছে না। শিল্প ব্যাঙ্কের আদলে নিয়ে এর ৫১ শতাংশ সরকারী শেয়ারে উন্নীত করার যে প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে তা সুবিবেচনার বিষয় বলে মনে হচ্ছে না। অতীতেও দেখা গেছে যেসব প্রতিষ্টান সরকারের আন্ডারে আসে তাতে দুর্নীতি আর জালিয়াতির আখড়াতে পরিণত হয়। তাই জনতার কথা মাথায় রেখে এসব সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে দূরে থাকার পরামর্শই তারা বিলি করেন। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের সাবেক গভর্নর ডঃ সালেহ উদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারের এ ধরণের উদ্যোগ পুরোপুরিভাবে অযৌক্তিক। দেশের সরকারী ব্যাঙ্কগুলোই সবচেয়ে করুণ অবস্থার শিকার। এখানে দূর্নীতি প্রবল ভূমিকা রাখে। এ অবস্থায় এটিকে এভাবে স্থানান্তরের চিন্তা করলে এটি অব্যশই শংকার মাঝে পড়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুৃ আহমেদ বলেন, কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটি সম্পূর্ণ তার নিজস্ব মতামত। কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক এটি ভাঙ্গা সরকারের উচিত হবে না। তিনি এটি যেভাবে আছে সেভাবে থাকতেই ইচ্ছা ব্যক্ত করেন, উল্টো তিনি প্রশ্ন করেন এটি যদি সরকারের আওতাতে থাকতো তাহলে কি কখনো নোবেল পুরষ্কার পেতো? সরকারের কোন প্রতিষ্ঠানতো নোবেল পুরস্কার পায়নি। এর উপর সরকারের এত নজর কেন? সমাজের একজন সচেতন হয়ে তিনিও তার অভিমত ব্যক্ত করেন যে, একে ভেঙ্গে টুকরো করা সরকারের উচিত হবে না।

সম্প্রতি চট্টগ্রামে সংবর্ধনায় ডঃ ইউনুস বলেন, “গ্রামীন ব্যাংক ছিনতাইয়ের চেষ্ঠা করছে সরকার” গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তিনি আহবান জানান। কিছুদিন আগে আর একটি মেসেজে দেখি তিনি বলছেন, ‘কৃতদাস নয়, মানুষ হিসাবে বাঁচতে চাই’। এরকম একটি কথাতেই বুঝা যায় তাকে কি রকম বিপর্যয়ের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। একজন নোবেল বিজয়ীকে আজ মানুষের মর্যাদাটুকুও দেয়া হচ্ছে না এটি তার বক্তব্যে সুস্পষ্ট। এটি অনেকটা দিন দুপুরে ডাকাতীর পর্যায়েই পড়ে। সরকার বর্তমানে গ্রামীন ব্যাঙ্কের মাত্র তিন শতাংশ মালিক। কিন্তু লোভী সরকার গ্রামীনের উপর তার কপট শ্যেনদৃষ্টি নিক্ষেপ করছে, উদ্দেশ্য নিয়ে সবাই সন্দীহান। এর বাকী ৯৭ শতাংশ মালিক দেশের গরীব জনগণ। হঠাৎ করেই সরকারের মাথাতে ভুত ঢুকেছে যে সে এটি সরকারী করণ করবে। বলা হয়েছে ৫১ শতাংশ তাদেরে ছেড়ে দিতে হবে, ডঃ ইউনুস বলছেন এটি ছিনতাইয়ের কথা হলো, এটি কোন আইনের কথা নয়। অতি সামান্য মালিকানা নিয়ে সরকার এর সিংহভাগে অধিকার অর্জন করতে পারে না। অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়া ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন পথ সরকারের নেই ওটি ছিনিয়ে নেয়ার। তিনি প্রশ্ন ছুড়েন সরকারের দিকে কেন আপনি এরকম একটি প্রতিষ্ঠানকে ভেঙ্গে দিবেন যে প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বে অসাধারণ সম্মান অর্জন করে চলেছে। জনগণের ভরসাতেই তিনি আশায় বুক বেধে আছেন। তাই প্রকাশ করছেন ‘জনতার বিজয়কে তাদের অর্জনকে কোনভাবেই নষ্ট করতে জনগণ দিবে না’, তারা প্রতিরোধ করবেই। তার কথাতে আসে তিনি শুনতে পেয়েছেন এর মাঝে কিছু জনারা ভারতে গেছেন এ ছিনতাই পরিচালনার দক্ষতা অর্জনের ট্রেনিংএর জন্য। গ্রামীনের সব কিছু বাংলাদেশের আর ভারত কেন এবার ট্রেনিং দিবে? তাহলে ওটি হয়ে যাবে বাংলাদেশ নয়, ভারতীয় গ্রামীন ব্যাঙ্ক। তিনি আহবান জানান এটি কোন রাজনৈতিক দলের সম্পদ নয়, এটি জাতীয় গৌরবের একটি প্রতিষ্ঠান। একে রক্ষা করতে হবে কারণ তার স্বপ্ন, এর নামেই ছেলেপেলেরা পরিচিতি অর্জন করবে, বড় হবে। একদিন এর গৌরবে সারা বিশ্ব থেকে মানুষ ছুটে আসবে। স্বপ্ন দেখা অনেক কঠিন জিনিস এটি সবাই দেখতে পারে না। তবে ছিনতাইয়ের স্বপ্ন দেখা খুব সোজা, ছলবাজরা ওটি দেখে কিন্তু গঠনমূলক স্বপ্ন অনেক কঠিন কাজ, এটি দেখে জাতির মেধাবীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদক কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল প্রাপ্তি উপলক্ষে ডঃ ইউনুসের সম্মানে এ সংর্বধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই মাত্র কিছুদিন আগে তিনি যে বিরল সম্মান অর্জন করেন তাতে আমাদের সবার মুখই উদ্দীপ্ত হয়েছে। তিনি বলছেন আজ আমরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে এর আবেদন ছড়িয়ে দিয়েছি। ইউরোপ আফ্রিকার দেশগুলো এ কনসেপ্ট গ্রহণ করেছে তাদের বেকারত্ব দূর করতে। অনেক উন্নত দেশই যখন এর সমূহ পজিটিভ দিক দেখতে পাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের মোটাবুদ্ধির সরকার কেন সবকিছু আন্ধার দেখছে। চট্টগ্রামের জোবরা গ্রাম থেকে এ যাত্রা শুরু হয় অনেকটা শূন্য হাতে। প্রথমে এ ব্যাঙ্কে সরকারের ৬০ শতাংশের অংশ ছিল যদিও তাদের বিনিয়োগ ছিল কম, বাদ বাকী ৪০ শতাংশ ছিল সদস্যদের। পরে অনেক কষ্ট করে সরকারের অংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। সরকার চেয়েছিল এমডি পদে তারাই নিয়োগ দেবে। ইউনুস পক্ষরা এটি মানেন নাই। তারা বলেছে সদস্যরাই এমডি নিয়োগ করবে। পরে সরকার রাজি হলে তিনি সদসদ্যদের পক্ষে এমডি হন। কিন্তু চেয়ারম্যান পদটি সরকার নিজের হাতেই রেখে দেয়। সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ হলেও সরকারের বিনিয়োগ কম হওয়াতে তা প্রায় তিন শতাংশ এসেছে।

যে সরকার সততার ক্ষেত্রে শূন্যমার্গে বিচরণ করছে, তার সবকিছুই ভয়ঙ্কর। পুলিশ নিয়োগে জেলাকরণের রেকর্ড ৩২ হাজারের মধ্যে গোপালগঞ্জের ৮,০০০ কিশোরগঞ্জের ৭,০০০। জেলাভিত্তিক কোটা থাকলেও গোপালগঞ্জসহ বৃহত্তর ফরিদপুর ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে বিপুল সংখ্যক লোক নিয়োগ করা হয়েছে। যেভাবে একদিন পশ্চিম পাকিস্তানের লোকরা পূর্ব পাকিস্তানকে অবহেলা করে রেখেছিল আজ সেটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। তাহলে কি অপরাধে পাকিস্তানের বিভাজন জরুর হয়েছিল, শুধুই কি প্রভু বদলের দরকার পড়েছিল? কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু দলীয় লোকদের বিবেচনাতে আওয়ামী লীগদেরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিরোধী দমনে এসব লোকদেরে এভাবে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে সরকার। বিরোধীদলের চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুককে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে প্রকাশ্যে অমানবিকভাবে হামলাকারী দেশজুড়ে সমালোচিত সেই ডিসি হারুণকে এবার প্রেসিডেন্ট পদকে সরকার পুর®কৃত করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ন্যাক্কারজনকভাবে হারুণের প্রশংসা করে সাংবাদিকদেরে বলেন, জয়নুল আবেদিন ফারুককে পিটিয়ে ডিসি হারুণ যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, সে কারণেই তাকে এবারই প্রেসিডেন্ট পদক (পিপিএম) প্রদান করা হয়েছে। রাজধানীর জর্জকোর্ট এলাকায় এক তরুণীকে শ্লীলতাহানি ও আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যার ঘটনায় বিতর্কিত ভূমিকা পালনের পরেও ডিসি হারুণ পুরষ্কৃত হন। এমনই লীলাখেলা চলছে সরকার আর তাদের সাঙ্গোাপাঙ্গদের।

দেশের অর্থনীতির অবস্থা এমনই যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে একশ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা লাভের জন্য সরকার শর্ত হিসাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। ঠিক একই পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়ে অস্ত্র কেনা হয়েছে সবই লুকোচুরির খেলা, প্রশ্নসাপেক্ষ এসব কান্ডকারখানা। দীপুমনিকে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তিনি মূল বিষয় এড়িয়ে যান। কমিশন খেতে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা হয়েছে বিএনপির এক নেতার এ দাবির জবাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিশন খাওয়ার সুযোগ নেই। আমার খাওয়ার অভ্যাস নেই। পথঘাটও চিনি না। তাছাড়া টেস্ট টু টেস্ট বিনিময় হবে। ওনাদের অভ্যাস আছে ওনারাই ভালো বলতে পারবেন। এই ছিল তার জবাব। জবাবের মূল্যায়ন করেন দেশবাসীরা।

ডঃ ইকবালের নেতৃত্বে আওয়ামী ক্যাডাররা যখন রাজধানী ঢাকার রাজপথে বিএনপির মিছিলে গুলি চালিয়ে চারজনকে হত্যা করেছিল, তা দেখে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিদ্রুপ করে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা কি শাড়ি পরেন? জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা কি একটার বদলে দশটা লাশ ফেলতে পারেন না? বস্তুত সাগরেদরা যে নেত্রীর কথাতে এসব অপকর্মে ঝাপিয়ে পড়েন। কর্মীরা কি মনে করেন শেষ বিচারের ময়দানে এসবের দায় শুধু নেত্রীর উপরই বর্তাবে তারা কি অপকর্মের দায় থেকে বেঁচে যেতে পারবেন? পুরোনো হলেও এসব সাধুত্বের স্বরুপ উন্মোচনের জন্য জরুরী বিধায় কিছু প্রসঙ্গ টানতেই হল। অপর পিঠে জাতির মেধাবীদের ক্রেডিট মিটিয়ে দিতে যাই করা হোক না কেন এসব মেটানো যায় না। এসব চলমান ইতিহাসে খোদাই হয়ে যায়, কারো সংকীর্ণতাতেও সেটি মিটে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই মেপে নিতে পারেন তার আচরণ মেধাবী মানুষের একজন ডঃ ইউনুসের সাথে। অনেক মেধাবীরাই প্রধানমন্ত্রীর চোখে কিছুই না। যে জাতি তার উপযুক্ত সন্তানদেরে মর্যাদা দিতে জানে না, সে এক দুর্ভাগা জাতি। জাতি হিসাবে বাংলাদেশীরা এত কৃপণ বলে মনে হচ্ছে না। তারা দরিদ্র হলেও তাদের নারীরা তার কথাতে এতবড় একটি আলোড়ন তৈরী করতে পেরেছেন, যার নাড়াতে সারা বিশ্ব আলোড়িত হচ্ছে। বলা যায় দুর্ভাগা গোটা জাতি, কারণ তাদের প্রধানের দৃষ্টিতে মেধাবীরা লাচার হয়ে আছেন। তার দৃষ্টিতে জিয়াউর রহমান “রাজাকার” ইউনুস “রক্তচোষা”, আল্লামা শফির লোকেরা ছলবাজ “রংমাখা সং”, মাহমুদুর রহমান “গাড়ী ভাঙ্গার আসামী মস্তান”, সম্মানিতজনদেরে টিটকারী মেরে বলেন “মুই কার খালুরে”, খুঁজলে এরকম অনেক পাওয়া যাবে। রাজনীতি ছেড়ে দিবেন বলেও কথা রাখতে পারেন নাই। রাজনীতি করেন আর যাই করেন সবার কথা বলার একটি ওজন সবাই আশাকরে। এটি পালন না করলে যিনি এসব বলেন তার ওজন সীমাহীনভাবেই কমে আসে। অপু উকিলের ভাষা জনতা প্রধানের কাছ থেকে শুনতে চায় না। শরীরের ওজন দিয়ে রং দিয়ে রুপ দিয়ে মানুষের মর্যাদা হয় না, কথা দিয়ে আচার আচরণ দিয়েই মানুষ মানুষকে মাপে, অন্তত মেধাবীরা এভাবেই মাপে। সমাজ হিতৈষী ডঃ ইউনুসরা এতই সংযমী যে চরম নির্য়াতনের শিকার হয়েও কত ভদ্র তার আচরণ। তার দাবী খুব বেশী নয়, ক্রিতদাস নয় মানুষ থাকার দাবীটুকু চাইছেন তিনি। দরকারে নীচুদের থেকে নয়, জাতির মেধাবীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। শেখার কোন বয়সে নেই, সব বয়সেই সেটি শেখা যায়। ছোটর কাছ থেকেও বড় শিখতে পারে।

তাই ডঃ ইউনুস প্রসঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে ঐ মূল্যায়নটুকু জরুরী মনে করছি। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেছিলেন, ‘‘It’s hard to imagine what would have happened to Bangladesh had Ziaur Rahman been assassinated in 1975 instead of 1981. A failed state on the model of Afghanistan or Liberia might well have resulted. Zia saved Bangladesh from that fate.’ – AMBASSADOR William B Milam in ‘Bangladesh And Pakistan: Flirting With Failure In South Asia’, page 69. অর্থাৎ এটি ধারণা করা খুবই কঠিন যদি জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে না মরে ১৯৭৫ সালে মারা যেতেন। তাহলে এটি একটি আফগানিস্তানের আদলে অথবা লাইবেরিয়ার মত একটি দেশ হতো। জিয়া বাংলাদেশকে ঐ দুর্ভাগ্যের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম “বাংলাদেশ এন্ড পাকিস্তাান: ফ্লিরটিং উইথ ফেইলার ইন সাউথ এশিয়া” গ্রন্থের ৬৯ পৃষ্ঠাতে কথাটি এসেছে। এরা মেধাবীরা এভাবে ইতিহাসে মূল্যায়িত হবেন। বিমান বন্দর থেকে ঐ নাম মুছে ফেললেও জনতার মনের মুকুরে খোদিত সে নাম মুছে দেবার সাধ্য কারো নেই, সুকর্মধারী ডঃ ইউনুসরা এভাবেই ইতিহাসের পাতাতে শক্ত প্রতিরোধের অলক্ষ্যেই জায়গা করে নিবেন। তার অবদানকে উঁচুতে তুলে ধরে নিজেদের ভাগ্য গড়তে যেখানে জাতির দরিদ্র নারীরা এটি করতে পেরেছেন সেখাতে উঁচু তলার নারীরা তাদের প্রতিরোধ নয়, বরং প্রতিপালন করতে সহযোগিতা দিন। তাহলে একদিন ঐ সুকর্মের দায়ও আপনাদের সবার পাওনা হবে।
২১ জুন ২০১৩ সাল।
২০১৩ সালের জুনের ২৭ তারিখে পাবলিশ হয়। From Amar Desh, Bangladesh online.

নাজমা মোস্তফা

মানুষ অনেক সত্যকে চাপা দিয়ে রাখে খুব কৌশলে, কিন্তু দেখা যায় কৌশলী কোনো এক সত্তা সেটির জট অনেক পরে হলেও খুলে দেয়। কোনো সত্যই চিরদিনের জন্য চাপা থাকে না। মাঝে কয়টি বছর হয়তো জনতা এর বাস্তবতা থেকে দূরে থাকে। ভুল খবরে সবাই বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। গোটা বিশ্বে টেররিস্টের গুঞ্জন আকাশে-বাতাসে। একবিংশ শতকে এটি বেশ মোটাতাজা খবর বলা চলে। কোণঠাসা হয়ে পড়া মুসলমান পরিচয়ের জনতা এর জরুর আসামি। কিন্তু বাস্তবের সন্ত্রাসীরা যেন আর মিডিয়াতে কোনোভাবেই জায়গা করতে পারে না। দেরিতে হলেও যখন দখিনা বাতাস কিছু ছিটেফোঁটা প্রমাণ আমাদের দুয়ারে এনে পৌঁছে দেয়, তখন তা অবশ্যই মনকে নাড়া দেয়। এটি সত্য যে, নিশ্চয় কে বা কারা এর পেছনে দিবারাত্র কাঠখড় পুড়িয়ে যাচ্ছে, ইন্ধন জোগাচ্ছে। এরা সাধারণের চোখে ধরা পড়ে না বেশিরভাগ মিডিয়ার কারসাজিতে। তবে মিডিয়াতে যেটি খুব সোচ্চার হয়ে আসে, তার সুবাস-কুবাস সবই ছড়ায় খুব দ্রুত। একটি খবর ছড়াতে আজ মুহূর্তও সময় লাগে না। গোটা বিশ্বে জঙ্গি টেররিস্ট নামের জটিল প্রচারে সবাই বেশ সিদ্ধ। মনে মনে সবার জানা, কারা আজ টেররিস্ট। কিন্তু যখন অপর পিঠে হালকা মেজাজের কিছু গভীর জটিল খবরও ধরা পড়ে, তার পরও সেটি বেশ চাপা থাকে। না হলে কোনো সত্য চাপা থাকে না, থাকতে পারে না। যদি সেটি চাপা থাকে তাহলে বুঝতে হবে, এসব ছলবাজি দুনিয়ার কৌশলমাত্র। আজ এরকম একটি চাপা দেয়া অতীত কথা আলোচনা করব, যা সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ করা হয়েছে। 

একটি মৃত্যু যার প্রায় আট বছর হতে চলছে, যিনি ছিলেন একজন সংগ্রামী মানুষ, একটি নির্যাতিত জনপদের মুক্তির জন্য নিবেদিতপ্রাণ এক সত্তা—তার নাম ইয়াসির আরাফাত। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনতার সপক্ষে আন্দোলনরত এ ব্যক্তির সংগ্রামী জীবনের কথা বর্তমান সময়কার সচেতন মানুষ কম-বেশি সবাই জানেন। ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান এবং পশ্চিম তীরের হেডকোয়ার্টার্সের কাছেই তাকে সমাহিত করা হয়। যখন তিনি মারা যান, তখন শোনা যায় লিভার সিরোসিসে তিনি মারা যান। কিন্তু অতি সমপ্রতি কিছু গবেষকের কাছে ভিন্ন খবর ঠাঁই পাচ্ছে। খবরে ধারণা করা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের এ নেতা পলোনিয়াম বিষে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আল জাজিরা টিভি চ্যানেল রিপোর্ট করে, বিজ্ঞানীরা তার ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মাঝে অব্যাখ্যাকৃত অস্বাভাবিক পলোনিয়াম ২১০-এর সন্ধান পান। কাতারের সংবাদ সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে আল জাজিরা ৪ জুলাই এটি প্রচার করে। সুইস গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত লসেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণাতে ধরা পড়ে, উচ্চমানের পলোনিয়াম তার ব্যবহার করা জিনিসপত্র, যেমন—কাপড়চোপড়, টুথব্রাশ, তার মাথার বস্ত্রাবরণ, আন্ডারওয়্যার এসবের মাঝে পাওয়া যায়। এই ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ড. ফ্রাংকইস বচোড টিভি চ্যানেলকে বলেন, আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, ব্যাখ্যা না করা উচ্চমাত্রার অসাধারণ পলোনিয়াম ২১০-এর বায়োলজিক্যাল ফ্লুইডের প্রমাণ এ গবেষণাতে ধরা পড়েছে। এই সংস্থার লসেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এখন আরাফাতের শরীর, হাড় ও তার কবরের মাটি পরীক্ষা করার কথা বলছেন। এদিকে আরাফাতের বিধবা স্ত্রী সুহা ফিলিস্তিনি সংস্থার কাছে এসব পরীক্ষার অনুমোদন চেয়েছেন। সুহা আরও বলছেন, এতে তার বুকের ওপর কিছু চাপ কমবে। অন্তত ফিলিস্তিনি জনগণ, আরব ও মুসলমানদের বোঝানো যাবে যে, এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। এটি ছিল একটি পরিকল্পিত অপরাধমূলক মৃত্যু। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ইয়াসির আরাফাতের দেহ পরীক্ষা না করার কোনো কারণ থাকতে পারে না, তার বিষক্রিয়ায় মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 


আরাফাত ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে মারা যান। সেখানে চারদিকে গুজব ছিল যে, তিনি লিভার সিরোসিসে বা ক্যানসারে বা এইডসে মারা গেছেন। ওই পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের প্রধান প্যাট্রিস ম্যানজিন বলেন, তার কোনো লিভার সিরোসিস হয়নি, কোনো ক্যানসারের লক্ষণ পাওয়া যায়নি, লিউকিউমিয়া, এইচআইভি বা এইডসও ছিল না। খবরে প্রকাশ, তিনি মারা যাওয়ার আগে ওজন হারানোর সমস্যা, ভীষণ বমিপ্রবণতা এবং ডায়রিয়ায় ভুগছিলেন। এখানকার সবক’টি লক্ষণই ওই বিষক্রিয়ার সম্ভাবনাকেই সুস্পষ্ট করছে। জানা যায়, আলেকজান্ডার লিটভিনেস্কো নামে একজন রাশিয়ান সিকিউরিটি এজেন্ট ২০০৬ সালে একই রকম জটিলতা নিয়ে মারা যান ওই পলোনিয়াম বিষক্রিয়ার কারণে। এ ঘটনাটিও ইয়াসির আরাফাত মারা যাওয়ার মাত্র দু’বছর পরের ঘটনা। এটিও আল জাজিরা টিভি চ্যানেলের খবরে উল্লেখ করা হয়। ২০০৬ সালে মারা গেলে তার ব্যবহার করা জিনিসপত্রে উচ্চমাত্রায় এ তেজস্ক্রিয় বিষের সন্ধান পাওয়া যায়। 


ব্রিটিশ সাংবাদিক জর্জ গ্যালওয়ে নীতির প্রশ্নে সত্য প্রচারের কারণে এর গভীরে ঢুকতে তত্পর থেকেছেন। তিনি একাধারে সাংবাদিক, রাজনীতিক ও গ্রন্থকার। তিনি ব্যক্তিগতভাবে তার জীবনের এক বড় অংশ এ ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন। এ বিষ পারমাণবিক বিষক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একটি বিষ। সঙ্গত কারণেই এটি যে কারও কাছেই থাকার কথা নয়। যারা পারমাণবিক অস্ত্রে সক্রিয় ক্ষমতা অর্জন করেছে, একমাত্র তারাই এটি প্রয়োগ করতে পারে। জর্জ গ্যালওয়ে এটিও সুস্পষ্ট করেন—মাত্র কিছু আগে ইসরাইলের এরিয়েল শ্যারন ও এহুদ এলমার্ট এটি প্রকাশ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইয়াসির আরাফাতের কোনো ক্ষতি করতে না পারার যে ওয়াদা ছিল, সেটি এর মাঝে শিথিল নয়, একদম বাতিল হয়েছিল। এমন কি শ্যারন এটিও সুস্পষ্ট করেন যে ইসরাইলের কোনো কর্মকাণ্ডের জবাবে ফিলিস্তিনের ওই নেতার কোনো বীমার পলিসিও কার্যকর নয়। এগুলো সবই প্রশ্ন; শুধু এটিই নয়, আরও বহু প্রশ্ন জমেছে এরই মাঝে। এগুলো হচ্ছে, ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল—বছর হিসেবে আজকের যুগে এটি খুব কম সময় নয়। কেন এতবড় একটি সময়ের কালক্ষেপণ? ফ্রান্স কেন এটি সে সময় খতিয়ে দেখার দরকার বোধ করল না? একজন স্বনামধন্য নেতার বিষয়টি কেন পোস্টমর্টেমের পর্যায় পর্যন্ত গেল না? কী কারণে ওইসব রক্তের, প্রস্রাবের, ঘামের সব রিপোর্ট ধ্বংস করা হলো? যদিও ফ্রান্সের গতানুগতিক নিয়মে তারা এসব দশ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখে—এক্ষেত্রে কেন তার ব্যতিক্রম হলো? কী কারণে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে এতই নীরব ভূমিকা পালন করছে এসব সারিবাঁধা প্রশ্ন গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের সঙ্গে আরও প্রশ্নের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। তবে ফিলিস্তিনের জনতা তাদের ৭৫ বছর বয়স্ক প্রয়াত নেতার প্রকৃত খবর জানতে চায়। আমরাও বাকি বিশ্বের জনতা সত্য উদঘাটনের অপেক্ষাতে উন্মুখ হয়ে রইলাম। 

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/07/21/155381,

বি:দ্র: এখানে লিংক এড্রেসটি কার্যকর নয়। তারপরও সত্যটি জুড়ে দেয়া হয়েছে এ লেখাটি অনলাইন আমারদেশে ছাপা হয়েছে ২০১২ সালের জুলাই মাসের ২১ তারিখে। বর্তমানে এমন এক জটিল বিষয় জাতির সামনে অপেক্ষমান। এ জাতি ভয়ের প্রহরকাল কাটাচ্ছে। তাদের ভুলো মনে অনেক কিছুই হারিয়ে যায় , যা সঠিক নয়। জাতির সচেতনতার লক্ষণ নয়। একবার নয়, বার বার ভাবুন। সঠিক কাজটি করেন। চারপাশে চাউর হয়েছে খালেদা জিয়াকে স্লোপয়জনিং করা হয়েছে। এটি সম্ভবত যা রটে তা অনেকটাই বটে। নাহলে সরকার এত ভয় পায় কেন খালেদাকে বিদেশে নিতে। এ অল্প কথায়ই সব প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট হবার কথা।

নাজমা মোস্তফা

প্রাণবন্ত করে রাখার কৌতুক নিয়ে নয় বরং গুরুগম্ভির ইস্যু নিয়ে এবার হাজির হয়েছেন আমাদের অনলাইনের এক্টিভিস্ট গনিভাই। আমার জীবনে এক ডজন সত্য গল্পের জমা আছে সেখানে কলেজে পড়াকালীন একটি লেখা আমার ব্লগেও আছে, গল্পের নাম “গণিভাই ও আমরা”। আজকের উপস্থাপনা নিয়ে হাজির হয়েছেন আজকের অনলাইনের গণিভাই; বিষয়টি হচ্ছে মেয়েদের মাসিক অবস্থানে মেয়েরা কি করছেন বা করবেন বা কোনটি কিভাবে যুক্তিযুক্ত। তিনি অনলাইনে পাওয়া একটি লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে ঐ লিংক এড্রেসসহ বিষয়টির উপর ব্যাখ্যা লেখাটিও তুলে ধরেছেন। এর জবাবে দুজন ভাই তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। আমারও ইচ্ছে দুটো কথা বলার কারণ বিষয়টি নারী বিষয়ক, এবং এতে আমার স্ব-স্বার্থ জড়িত। আল্লাহর নামেই এ লেখার বা চিন্তার শুরু, “সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি তার বান্দার কাছে এই কিতাব অবতারণ করেছেন, আর তিনি এতে কোন কুটিলতা রাখেন নি” (সুরা আল-কাহফএর ১ আয়াত)।

আমি বেশ উৎসাহ নিয়ে মূল লেখাটি পড়লাম। এর পর মনে হলো এর উপর কিছু বলা জরুরী। কারণ আমি নিজে একটি মেয়ে আর এর উপর আমার চিন্তা ভাবনা আছেই, সর্বোপরি আমি কি করছি বা করেছি সেটি অবশ্যই রাখঢাক না নিয়েই স্পষ্ট করা সততার পরিচায়ক। হয়তো অন্য কেউ এখান থেকে ইতিবাচক কিছু পেয়ে উপকৃত হতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আজীবন একজন ধার্মিক মানুষ আগাগোড়া এবং সেটি অল্প বয়স থেকেই। মায়ের শাসন না মেনে তসলিমা বেঁকে বসেছিলেন, উল্টো মাকে নিয়ে তার বিদ্যার বাহাদুরী করেছেন। হয়তো তার বাবাও সেখানে সায় দিয়ে গেছেন বেচারী মা সেদিন বেকায়দায় পড়েছিলেন। আমি আবার উল্টো তসলিমার মতই ডাক্তার বাবার মেয়ে যদিও আমি তসলিমার মত ডাক্তার নই। বাবা মায়ের উভয়ের নির্দেশণায় খুব শৃংখলার মাঝে যুক্তির মাধ্যমে সব প্রশ্নের যুৎসই উত্তর পেয়ে পেয়ে বেড়ে উঠেছি। যখনই কোন প্রশ্নে বাধাগ্রস্ত হয়েছি, যুক্তিবাদী ধর্মে অভিজ্ঞ বাবা আমাকে খুব নিঁখুত ভাবে দেখিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। এসবের উপর আমার বেশ গল্প কবিতা সবই আছে। যাক মূল কথায় আসি। রমজানে আমরা কি করেছি? ছোটকালেই সেহরীতে না উঠতে পারলে কেউ না ডাকলে খুব রাগারাগি মন খারাপ করতাম। তারপরও সবকটি নয় মাঝে মাঝে রোজা করছি, সেই ছোটকাল থেকেই বাবা মায়ের দেখাদেখি। সিলেটের মেয়ে হিসাবে ছোটকাল থকেই আমাদের ধারে কাছের প্রাপ্তবয়স্ক নিকটজনকে কখনোই রমজানে দিনের বেলা খেতে দেখিনি। এরকম এক ইসলামিক নিয়মের পরিবেশে আমার বেড়ে উঠা।

যখন বারো বছর বয়স আমি তখন ক্লাস এইটে, ঐ বছরই আমি সবকটি রোজা রাখি প্রথম বারের মত। বাবার আহলাদি মেয়ে সেই কচি মেয়ে সবকটি রোজাই করি। আমার সাথের অনেকেই আমার মত বয়সে সবকটি রাজা করেননি। আমি যখন ঢাকাতে কয়েক তলা উপরে, তখন রাতে সেহরী খেতে উঠলে চারপাশে দেখতাম প্রায় প্রতিটি বাসাতেই নিঃশব্দ নিরবতা। দুএক বাসাতে টিম টিম আলো জ¦লতো। খবর নিলে জানতাম সে বাসাতে বুয়া রোজা করে। কাছ থেকে ঢাকার দেখা রোজা আমার কাছে হতাশাজনক। এবার মূল কথায় যাই। এমনও হয়েছে আমাদের মাসিক হলে আমরা রোজাগুলি ভাংতাম আর ফের রোজার পর পরই আবার রেখে নিতাম। মা খালা ফুফুরাও তাই করতেন, আমরাও তাই করেছি। মফস্সল অঞ্চলে আমাদের সময়ে খোলামেলা পরিবেশ, আত্মীয় পরিজনরা সারাক্ষণ আসা যাওয়া করতো। সেখানে চাচা, চাচাতো ভাই ফুফা, ফুফাতো ভাইরা সমানেই আসা যাওয়া করতেন যখন তখন। তাছাড়া বাসা বাড়ীর কাজের লোকেরা, ফকির মিসকিনসহ অসংখ্য মানুষ যে কেউ আসতে পারে। আমাদের দোয়ার বা গেট খোলা থাকতো। সঙ্গত কারণেই রমজানের দিনে প্রকাশ্যে খাওয়াকে এক ধরণের বেইজ্জতি লজ্জার কাজ বলে মনে করতাম। আমি আগেই বলেছি প্রাপ্তবয়ষ্ক আমার কোন নিকটজনকে আমি জীবনেও রোজা ভাংতে দেখিনি। আমার আম্মা বলতেন রোজা যখন হবে না, তখন রোজা ভেংগে ফেলাই উত্তম। একটু পানি খেয়ে হলেও ভেংগে ফেলতাম। যাক এভাবে সারা দিন না খেয়ে রোজা করেই হয়তো একটু পানি খেয়ে রোজা ভাংতাম দিনের কোন এক সময় আবার রোজার শেষে ঐ পানি খাওয়া ভাংগা রোজাগুলি আবার রাখতাম। এভাবে চলছিল সম্ভবত সাল তারিখ মনে নেই, যখন ৩০ বছর প্রায় আমি তখন বিবাহিতা দু ছেলের মা।

আমার ডাক্তার বাবা তার রোগী ছাড়াও সমাজের সমূহ দুর্ভোগ নিয়ে প্রচন্ড ভাবতেন। ফাঁকে ফাঁকে এসব নিয়ে গবেষনাও করতেন, পড়াশুনা করতেন, লিখতেনও। তার প্রকাশিত অনেকগুলো বই আছে। সেবার আমি ঢাকা থেকে বাপের বাড়ী গিয়েছি। সেখানে মায়ের কাছেই শুনি এবং বাবাকেও বলতে শুনি। আমার বাবার যুক্তি ছিল তোমরা মেয়েরা রমজানে একদিকে খাও না, সারা মাস সবকটি রোজা করো আবার রাখো। কেন জানি আমার মনে হচ্ছে কুরআনিক বিশ্লেষনে এর উত্তর খুব সোজা। তিনি কুরআন থেকে খূঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকটি আয়াত দিয়ে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেখালেন তোমাদের রোজা দুবার রাখার কোন যুক্তি নেই। যেখানে আজ দেখছি কুরআনের আয়াত দিয়ে মেয়েদের জন্য নামাজকে মাফ করে দেয়া হয়নি। কিন্তু ছোটকাল থেকেই হাদিস জেনেছি এটি মাফ। হাদিসে রোজা মাফ এমন কথা বলা নেই। তাই সবাই ভাংগা রোজা পরে রাখার বিধান মানেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে রোজা নামাজ ভাংতে আল্লাহ কুরআনে কোথাও বলে নাই। বরং আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ঐ সময় রোজা রাখতে পারলে বেশী পূণ্য সঞ্চয় হবে। কারণ এটি মেয়েদের এক ধরণের শারীরিক অসুস্থতা ঠিক নয়, কিছু বিপর্যয় যাকে অনেকে প্রচার করেছেন তারা অপবিত্র থাকে। কুরআনে একে অপবিত্র বলে কোথাও উল্লেখ করে নাই। যদি আমরা অসুস্থতাও ধরি তাহলে রমজানের আয়াতে বলা হয়েছে অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখতে পারলে বেশী পূণ্য হবে। সেই দিন থেকে আজ অবধি আমার সবকটি রোজাই রাখা, আমার জীবনে আর কোন ভাংগা রোজা নাই। ঐদিন থেকে আমি দুবার রোজা পালনের জটিলতা থেকে মুক্ত হই। এমনকি আমার ছোট ছেলের জন্মের পর আমি পুরো একমাস রোজা পালন করি। উল্লেখ্য ঐ সময় আমি রমজানের পরপরই সবকটি ভাংগা রোজা রেখে নেই। বাবার ঐ চিন্তাশীল কুরআন বিশ্লেষনের পাওনা আমার দু ছেলের জন্মের পর পাওয়া।

http://www.islamhelpline.net/answer/358/can-woman-fast-and-pray-during-menses-period

Fasting of women during menstruation periods

গণিভাইএর লেখাটির জবাব দিতে গিয়ে উপরের এ সাইটটির সন্ধান পাই। এখানে প্রশ্ন করা হয় একজন মেয়ে তার মাসিকের সময় কিভাবে রমজান করবে? উত্তরে বলা হয় মেয়েরা অন্য সবার মতই রমজান পালন করবে। এমনকি তাদের মাসিকের সময়ও। সুরা বাক্কারাহএর ১৮৭ আয়াতের হিসাবে বলা হয় রমজানে খাওয়া পান করা ও সহবাস করা যাবে না। একমাত্র দুটি ধারার মানুষ পাওয়া যায় যারা রোজা ভাংতে পারে এবং পরে অবশ্যই এর প্রতিবিধান করতে হবে। তারা হচ্ছে অসুস্থ ও ভ্রমণরত জনতারা। মাসিকের সময় কুরআন কোথাও রোজা ভাংতে বলে নাই বা ঐ ধারার কোন অনুমতিও দেয়নি। যেসব মতামত প্রচারিত হয় তার কোন সূত্র কুরআনে নেই এমন কি এর পক্ষে নবীর কোন উদাহরণও নেই। এ ছাড়াও কিছু মেয়েরা এ সময় অনেক বেশী জটিলতার মাঝে পড়েন। তাদেরে বাড়তি ঔষধ গ্রহণ করতে হয়। এরকম অবস্থায় তাদের অসুস্থ ধরা হয়। এবং তারা ঐ ভাংগা রোজাগুলি রমজানের পরে রাখতে পারেন। আর একটি সমাধান এই সব অসুস্থ মেয়েদের জন্য তারা ব্যথানাশক ঔষধ বা ইনজেকশন নিতে পারেন। যেখানে ঐসব ইনজেকশনে কোন পুষ্টি উপাদান থাকবে না, শুধু ব্যথানাশক হবে। এভাবে সব রোজাই মহিলারা রাখতে পারেন। আল্লাহ কুরআনে স্পষ্ট করেন তিনি মানুষকে অযথা কষ্ট দিতে চাননা (সুরা মায়েদা ৬ আয়াত দ্রষ্টব্য)। নীচে অনলাইনে ঐ সূত্রের পুরো লেখাটি চাইলে যে কেউ পড়ে নিতে পারেন।

http://www.islamandquran.org/research/fasting-and-prayer-during-menstruation-and-postpartum-periods.html

কুরআন থেকে:

(১)           বলো (হে মুহাম্মদ!) আমি তোমাদের বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধনভান্ডার রয়েছে, আর অদৃশ্য সম্বন্ধেও আমি জানি না, আর আমি তোমাদের বলি না যে, আমি নিশ্চয়ই একজন ফেরেশতা, আমার কাছে যা প্রত্যাদিষ্ট হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি বলো “অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি একসমান? তোমরা কি তবু অনুধাবন করবে না?” (সুরা আল-আনআমের ৫০ আয়াত)।

(২)           আর আমরা অবশ্যই লোকদের জন্য এই কুরআনে সব রকমের দৃষ্টান্ত বিশদভাবে বর্ণনা করেছি কিন্তু অধিকাংশ মানুষই প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া আর সব কিছুতেই অসম্মত। (সুরা বনি ইসরাইলের ৮৯আয়াত)।

(৩)          ওহে যারা ঈমান এনেছ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো তবে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন, আর তিনি তোমাদের পদক্ষেপ সুদৃঢ় করবেন। (সুরা মুহাম্মদএর ৭ আয়াত)

(৪)           নিঃসন্দেহ এটি সুমীমাংসাকারী বক্তব্য। আর এটি কোন তামাশার জিনিস নয়। (সুরা আত-ত্বারিকএর ১৩, ১৪ আয়াত)।

(৫)          বস্তুত এটি হচ্ছে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী তাদের হৃদয়ে যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। আর অন্যায়কারী ব্যতীত অন্য কেউ আমাদের নির্দেশাবলী অস্বীকার করে না। (সুরা আল-আনকাবুত এর ৪৯ আয়াত)

উপরে হাদিস থেকে নয় বরং কুরআন থেকে পাঁচটি আয়াত আনলাম। যতদূর জানি হাদিসের কারণে আমরা মেয়েরা জেনে এসেছি মাসিকের সময়টিতে  মেয়েদের রমজান মাফ করে দেয়া হয়েছে। যখন কুরআনে এর উপর কোন কথা নেই তখন এটি শতভাগ স্পষ্ট খোদার উপর খোদকারী নবী কখনোই করবেন না, করতে পারেন না। কিন্তু প্রচলিত হাদিসে তাই বলা আছে। নাহলে এমন বাড়াবাড়ি হলে আল্লাহ নবীর কন্ঠনালী ছিড়ে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে রেখেছে কুরআনে। আমার বিশ্লেষন হচ্ছে সমাজের যত বাড়তি সংযোজন সবই করা হয়েছে হাদিস দ্বারা। কুরআন দ্বারা সবকিছুকে সহজ সরল করে রাখা হয়েছে আর হাদিস দ্বারা বহু বহু সরলকে জটিল করা হয়েছে। এর মূল কারণ কুরআন আল্লাহর নির্দেশ আর হাদিস রসুলের নামে পরবর্তী মানবিক সংযোজন। কুরআন বিরোধী কথা রসুলের ব্যাখ্যা হতে পারে না। বরং বলা চলে এটি তৃতীয় পক্ষের বাড়তি সংযোজন ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহর কড়া নির্দেশ নবীকে অনুসরণ করতে, তার মানে এই কুরআনকে কুরআইশ আরবরা মানতো না, বলতো এ নবী পাগল যাদুকর কবি। তাকে অনুসরণ করো না, এভাবে তারা কুরআনকে স্বীকার করতো না। কিন্তু আল্লাহ বার বার নবীকে অনুসরণ করতে বলেছেন মানে এই নবীর মাধ্যমে প্রেরিত কুরআনকে কঠিনভাবে লাইন বাই লাইন পালন করতে বলেছেন। তার শাব্দিক ভাব গ্রহণ করে ও কিছু আয়াতের রুপক ভাবকে নিয়ে যুক্তির গ্রন্থকে যুক্তি দিয়ে বুঝার তাগাদা দিয়েছেন। সঠিকভাবে বুঝতে হলে কুরআনকে কুরআন দিয়ে বিশ্লেষণ করতেও বলা হয়েছে। একই বিষয়ে অনেক আয়াত আছে। সেটি পরখ করতে হবে। কিন্তু ইবলিসের বিজয় ঘটাতে মানুষ পথভ্রষ্ট হয়েছে, প্রমাণ এসব কুরআন বিরোধী কথা। কুরআন একটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ যে বা যারা মনে করে থাকেন এটি পরিপূর্ণ নয়। এটি তাদের কুরআন বোঝার গলতি। ইবলিস ছিদ্রহীন কুরআনে প্রবেশ করতে পারেনি কিন্তু হাদিস দ্বারা সেখানে ঢুকতে পেরেছে। এর প্রমাণ হাদিসের অপরিসীম ধরা খাওয়া ও তার দু’নাম্বারী পরিচয় স্পষ্ট হওয়া। মেয়েদের পাথর ছুড়ে হত্যা করার বিধান, বানরের উপর রজমের শাস্তি, সবই ইবলিস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। যে কেউ বলতে পারেন আমি হাদিসকে অবহেলা করছি। কুরআন অনুমোদিত হাদিস অস্বীকার করার দুঃসাহস কারো হবার কথা নয়। সহজ কথা হচ্ছে যা কুরআন স্পষ্ট করেছে সেটি হাদিস দ্বারা জটিলতা সৃষ্টি করা ইবলিসের কাজ। এভাবে মানুষ মূল থেকে সরে গেছে। এ ধারার গোজামিলে চিন্তা কারো করা উচিত নয়। দুর্বৃত্ত ইবলিসের সাথে আল্লাহর ফয়সালা হয়েছে সে কিয়ামত পর্যন্ত তার অনুগত বান্দাদের পথহারা করবে তবে এটিও তার জানা সে প্রকৃত মুমিন অনুসারীকে জীবনেও পথহারা করতে পারবে না। কুরআন জানি না বলবো না, জীবনের অনেক বড় সময় এই গ্রন্থ নিয়ে নাড়াচাড়া করে চলেছি। অনেকে মূল সত্য এড়িয়ে যান এ কথাটি বলে আল্লাহ ভালো জানেন। অবশ্যই আল্লাহ ভালো জানেন, তবে আল্লাহ সেটি চেপে যাননি বা গোপন করেন নি। বরং তার বানী সব জটিলকে স্পষ্ট করতেই নাজেল হয়েছে। 

অতীতে তসলিমা নাসরিন মন্তব্য করেছিলেন কুরআন একটি অশ্লীল গ্রন্থ এর কারণ সুরা বাক্কারাহএর একটি আয়াত। আয়াতটি ছিল এখানের উল্লেখিত বিষয়টি। বাণীটি, “(হে মুহাম্মদ) তারা তোমাকে ঋতুকাল (চলাকালে সহবাস) সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছে। বলো, ‘এটি (ঋতুকালে সহবাস) অনিষ্টকর  কেননা এতে নারীর জরায়ুতে এন্ডোমেট্রাইসিস রোগ হতে পারে, আর এটা পরিচ্ছন্ন থাকার দিক দিয়েও অশোভন); কাজেই ঋতুকালে স্ত্রীদের (সাথে সহবাস) থেকে আলাদা থাকবে; এবং তাদের নিকটবর্তী হয়ো না যে পর্যন্ত না তারা পরিষ্কার হয়ে যায় (আর সেজন্য ঋতুকালে দাম্পত্য সম্পর্ক ছেদপড়া অবস্থায় তখন বিবাহবিচ্ছেদ বৈধ নয়, ৬৫:১) তারপর যখন তারা (মাসিক ঋতুস্রাবের পরে) নিজেদের পরিষ্কার করে নেয় তখন  তোমাদের দাম্পত্য জীবনের সুফল উপভোগ করার জন্য) তাদের সঙ্গে মিলিত হও যেভাবে আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন। নিঃসন্দেহ আল্লাহ ভালবাসেন তাদের যারা তাঁর (নির্দেশের) দিকে ফেরে, আর তিনি ভালবাসেন পরিচ্ছন্নতা রক্ষাকারীদের।” বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ অনুবাদটি ডাঃ জহুরুল হকের অনুবাদ থেকে নেয়া। 

কুরআন বলেছে, তুমি বেশীরভাগ মানুষকে অনুসরণ করবে না, তাহলে তুমি পথভ্রষ্ট হবে। বিবি মরিয়মকে বলা হয়েছে, “(প্রসব বেদনা নিরসনের জন্য) খেজুর গাছকে তোমার দিকে টানো, এতে পাকা খেজুরও পড়বে” (পুষ্টিতে সহায়ক হবে)। যদি লোকজন দেখতে পাও তবে বলো, আমি পরম করুনাময়ের জন্য রোজা রাখার মানত করেছি, আমি আজ কারো সঙ্গে কথাবার্তা বলবো না”। সুরা মরিয়মের ২৫/২৬ আয়াতে দেখা যায় প্রসব কালিন তাকে কি নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং রোজা পালন করতেও বলা হয়েছে ঐ অবস্থায়। এতে এটিও স্পষ্ট হয়, এমতাবস্থায়ও রমজান পালনে কোন অসুবিধে নেই। মুসলিমরা যখন তাদের মূলগ্রন্থ থেকে ছিটকে দূূরে চলে যায় সেদিন থেকেই তাদের জীবনে ধ্বস নামতে শুরু করেছে। ইসলামের বিপর্যয় তখন থেকেই আজ অবধি চলছে। কুরআনের বানী এতই অর্থবহ যে এর প্রতিটি কথা যে কত মূল্যবান সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বেশীরভাগ মুসলিমরা এটি না বোঝেই জপে থাকে। বোঝার দরকার মনেও করেনা, গরজও দেখায় না। বলে একে সত্তুর নেকি অপেক্ষায়, সবই মানবিক সংযোজিত হাদিসের বদান্যতা। আল্লাহ বলে ভালো কাজে একে দশ পূণ্য দেয়া হবে, হাদিস বলে একে সত্তুর। আল্লাহ থেকে ষাটগুণ বেশী বলাই ইবলিসের কাজ। এ জন্যই বলা হয় এ রাস্তা বড় কঠিন চুলের চেয়ে চিকন আর ছুরির চেয়েও ধারালো। এটি সবাই হজম করতে পারে না। একমাত্র সত্যানুসন্ধানীরা একে লুফে নেয়। তারাই প্রকৃত সত্যের সমঝদাতা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার সঠিক বানী বোঝার ও সঠিকভাবে তা পালনে সাহায্য করুক। মনে রাখতে হবে এ ধর্মের নাম সিরাতুল মোসতাকিম। সহজ সরল ধর্ম, জটিল হলেই কঠিন হলেই ধর্ম নয়, বরং ওটি হবে বাতিল ধর্ম। আল্লাহর সাবধান বাণী, ইহুদীরা গাধার বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে, পরবর্তী মুসলিমরা যেন তা না করে। কিন্তু এটি সত্য আমরাও ঐ বোঝার ভার দিয়ে কুরআনকে অবজ্ঞা করি, কুরআনকে দূরে ঠেলি ও নিজেরাও সত্য থেকে দূরে অবস্থান করি। 

২৬ অক্টোবর ২০২১ সাল, রাত একটা।

বিশেষ নোট:

বিগত ২৬ অক্টোবর ২০২১ এর লেখাটি অনলাইনের ইমেইলের জন্য সাজাই। এখন মনে হচ্ছে এ জরুরী বিষয়টিও আমি আমার ব্লগে দেব, যদি এসব সত্য কাউকে নাড়া দেয়। ইসলামের প্রাথমিক বিজয় যুগের পর মুসলিমরা ক্রমে গবেষণাহীন জাতিতে পরিণত হয় যার কারণে বহু বহু জটিলতা এখানে এসে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। বলা হয় কুরআন নিয়ে কথা বলা নাজায়েজ। মানবদেহ ছেড়াফাড়া করাও বিতর্কীত কাজ বলে প্রচার করা হয়। কুরআনকে দূরে সরিয়ে দিয়ে এর নামে আরবী অক্ষরে লেখা তাবিজ কবজের ব্যবসার জোর প্রচার চালানোই ধর্মকথা। এসব ফতোয়া সংযোজনের পর থেকেই মানব দেহ ছেড়ে বানর বা ভিন্ন প্রজাতি নিয়ে গবেষনা শুরু হয়। মূল কথা তখন থেকে আল্লাহর নির্দেশকে শৃংখলিত করা হয়। ফতোয়া, জায়েজ নাজায়েজ যখন মানুষের মানবিক কসরতে ধর্মের গন্ডিতে জমা হয়, মানুষ পথ হারায়। বিজ্ঞের নামে অজ্ঞতার চাষ করতেই মানুষ মনোযোগী হয়ে পড়ে। আল্লাহ সাবধান বাণী ছিল ইবলিস সম্বন্ধে, সে সাবধান বানীর বিপরীতে ইবলিস প্রথমে বসে, পরে শোয়ার জায়গা করতে পারে ভালো মাপে। ধর্ম আজ পঙ্গুত্বের শিকার, মানুষ আল্লাহর নির্দেশিত মূল বানী থেকে ছিটকে যোজন যোজন দূরে চলে যায়, এভাবেই পথ হারায়। বর্তমানের মুসলিমরা প্রায় পনেরোশত বছর আগের আদর্শহারা গোষ্ঠীর অংশমাত্র, শেষ দৃশ্য পতনের অপেক্ষায় সময় পার করছে।

আজকের তারিখ ১৩ই নভেম্বর, ২০২১ সাল, রাত ১০টা।

ডাঃ এম এ শুকুরের ‘হাতুড়ে’ গ্রন্থ থেকে

বিশেষ দ্রষ্টব্য: মরহুম ডাঃ শুকুরের বিগত শতকের লেখা থেকে নেয়া।

আমরা একে অপরকে ‘দালাল’ বলে আখ্যায়িত করছি কিন্তু আর নয় এবার থেকে আমাদেরে এই জাতীয় কর্কট রোগের প্রতিষেধক খুঁজে নিতে হবে। ১৭৫৭ সালের ৭ই জুন পলাশীর আম বাগানে দেশী বিদেশী শোষকদের খপ্পরে পড়ে বাংলা তথা ভারত বর্ষের ইতিহাসে যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল, আজ দু’শ বছর পরেও আমরা সেই বুদ্ধিহীনতার জটাজাল থেকে মুক্তি পাইনি। দেড়শ’ বছরের বিদেশী শাসন ও স্বদেশী শোষনের পর বাংলার এক কৃতী সন্তান এই শতাব্দীর প্রথম দিকে দিল্লীর শাসকের শুভ দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে বঞ্চিত এপার বাংলাকে নতুন করে গড়ে তোলার শুভ প্রেরণায় ১৯০৫ সালে ঢাকাকে কেন্দ্র করে গঠিত হলো নতুন প্রদেশ ‘পূর্ব বাংলা’। এতে বাংলা ও ভারতের যাবতীয় শোষকেরা ‘হায় হায় করে আর্তনাদ করে উঠেছিল। বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদে শিহরিয়া উঠেছিলেন আমাদের বাঙ্গালী ভাইয়েরাও। এর ফলে সর্ব ভারতীয় শোষকদের কুটিল চক্রান্ত আর বাঙ্গালীদের সক্রিয় আন্দোলনের জোয়ারে বাংগালের বাঁচার তাগিদে গড়া সুখ স্বপ্ন আতুড় ঘরেই মারা যায়। মানুষের চেয়ে মাটির মূল্য যাদের কাছে বেশী, তাদেরই হল জয়। রাজ আদেশে ১৯১১ সনে আবার এপার বাংলা ওপার বাংলা একত্রিত হল। বাংলার পাট ও বাংলার চাষীর ভাগ্যকে আবার বেধে নেয়া হল ডান্ডি ও কলকাতার পাটকলের চিমনীর পাশে লটকানো বেরোমিটারের সাথে। শোষকদের চোখেমুখে স্বস্তির আমেজ ফিরে এল।

কিন্তু অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস! ১৯৪৭ সনে ঐ বাংগালীরাই আবার অম্লান বদনে বঙ্গমাতাকে দু’টুকরা করে দিয়ে গেল। বাংগালের হাহুতাশ আর করুণ মিনতিকে তারা পাই ক্রান্তিরও দাম দিল না। বস্ততঃ দুটি ভিন্নধর্মী জীবন প্রবাহের শোচনীয় বিচ্ছেদের করুণ কাহিনীর অমর সাক্ষী হয়ে রইল ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্টের মধ্যরাত্রি। এক হাজার বছর একত্রে থেকেও তারা দেশও জাতি, মন ও মানুষ এমনকি জীবন ও মৃত্যু সম্বন্ধে একে অপর থেকে বহু যোজন দূরে পড়ে রইল এপারের বাংগাল ও অপারের বাংগালী আর কোনদিন একত্র হবে কিনা সে প্রশ্ন ভাবীকালের, আমরা শুধু আমাদের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার মাত্র এটুকুই জেনে গেলাম যে আলো এবং অন্ধকার, সত্য আর অবাস্তব একসাথে থাকতে পারে না। জোর করে বেধে নিলে তারা একদিন জোর করেই পৃথক হয়ে যায় এবং এই বিচ্ছেদের সময় প্রলয় ঘটে।

কার্যতঃ ভারতবর্ষের মূল সমস্যার সঠিক সমাধান কেউ দিতে পারলে না, হাতুড়ে ব্যবস্থায় শুধু অঙ্গচ্ছেদই ঘটালে। জিন্না-গান্ধী লীগ-কংগ্রেস সবাইকে ফুলে আর গানে বন্দনা করলো ভারতবাসীরা, তবু তাদের মুক্তি রইলো লক্ষ যোজন দূরে। জয় হল সাম্প্রদায়িকতার, আর স্বরাজ পেল দু®কৃতিকারী। সাধারণ নিরীহ নাগরিকরা না পেল অর্থনৈতিক মুক্তি, না পেল সসম্মানে বেঁচে থাকার কোন শান্তিময় আশ্বাস। শোষকের স্বার্থে জাতি ধর্ম আর ভাষা বিদ্বেষের অসফল নেশায় বিভ্রান্ত করে রাখা হল সাধারণ মানুষেদের।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রথম বিশ্ব সমরের ধাক্কায় কম্পিত হল জগত, শঙ্কিত হল ভারতবাসীরাও। খেলাফত আন্দোলনের দুরন্ত জোয়ারে কেঁপে উঠছিল ইংলন্ডের রাজার আসনখানিও। ঐ সময়ে নেটাল ডারবানে নির্যাতীত ভারতবাসীর পক্ষে ওকালতি করে ঘরে ফিরেছেন এক তরুণ বারিষ্টার। তার নেতৃত্বে গোটা ভারতের আপামর জনতা এগিয়ে এল। কিন্তু নতুন যুগের মুক্ত মানুষের মুক্তির পক্ষে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালে পুরাতন ভেদবুদ্ধি ও আচার সর্বস্বতা। তার পুরো সুযোগ গ্রহণ করলো বিদেশী শাসকেরা। তাই বিভেদের প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে মানুষ এখানে আর মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হলো না। বারিষ্টার খুলে নিলেন তার কোট প্যান্ট, গায়ে জড়ালেন ধূতি, তাও আবার খাটো করে তুলে নিলেন হাটুর উপরে এবং গ্রহণ করলেন নিরামিষ, মৌন আর উপবাসকে জীবনের ব্রতরুপে। সমস্যার বাস্তব কোন সমাধান না দিয়ে মানুষরে ভগবান হয়েই রইলেন তিনি।

নিজে আইনের বিশারদ হয়েও প্রাণ ভরে গাইলেন ‘রামধূন’।

“রঘুপতি রাঘব রাজা রাম, পতিত পাবন সীতা রাম।

ঈশ্বর, আল্লা তেরা নাম, জয় সীতা রাম, সীতা রাম।

যহি আল্লাহ সহি রাম, সবকো সন্মতি দে ভগবান।

রঘুপতি রাঘব রাজারাম, পতিত পাবন সীতা রাম।”

আশ্চর্য্য! স্র্রষ্টা এবং সৃষ্টিতে, এমনকি ঈশ্বর, আল্লাহ ও অযোধ্যার রাজা রামচন্দ্রকে যিনি একাকার করে দিতে পারেন, ভারতবাসীর মুক্তি নাইবা এল, ভারতীয় দর্শনের মুক্তি তো তারই হাতে। তাই শেষ পর্যন্ত জয় হল শোষকের এবং সাধারণ মানুষ যে তিমিরেই ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেল। মুল্লা পুরোহিত এক বাক্যে চিৎকার করে উঠল, ‘মহাত্মাজী কি জয়!’ ফলে মানুষের আর্থিক তথা আত্মিক মুক্তি হল চরমভাবে বাধাগ্রস্ত। এবং পৌরিহিত্যবাদ প্রতিষ্ঠা নিল এক নতুনতর আধুনিক কৌশলে, এক অব্রাহ্মণকে সামনে শিখন্ডি খাড়া করে। তেত্রিশ কোটি দেবতার পাশে যুক্ত হল আরো একটি নাম, আরো এক নতুন ভগবান, – শুধু ব্রাহ্মণ্যবাদের নড়বড়ে ভিতকে শেষ বারের মত রিপেয়ার করার জন্য। 

পরিণামে ভারত বিভাগ হল অবধারিত, খন্ডিত হল বাংলা এবং চূর্ণ বিচূর্ণ হল পঞ্চনদের দেশ পাঞ্জাব। দেশীয় রাজ্য কাশ্মীরকে উপমহাদেশে এক রাজনৈতিক বিসুবিয়াসে তাপিত করে রাখা হল যার হাপরের আগুন জ্বালিয়ে রাখার তাগিদে কোটি কোটি মানুষের কপাল পুড়ে ছাই হয়ে গেল। পয়ষট্টি সালের যুদ্ধে যখন উভয় পক্ষ ‘কেহ কারে নাহি পারে সমানে সমান’ হয়ে ক্ষত বিক্ষত হল তখন উভয়ের আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা তাদের ডেকে নিয়ে একে অপরকে দিয়ে উভয়ের কান মলে লাল করে দিলেন। লাঞ্ছিত পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ছদরে রিয়াসতের মাঝে আস্তিন টানাটানি হল, এদিকে ভারতীয় প্রধান মন্ত্রীর হার্টফেল করা লাশ নিয়ে নীরবে ফিরে এল দিল্লীতে।

একটি কথা আছে, দুরাত্মা বাইরে মার খেলে ঘরে আসি বউকে পিটায়। আমাদেরও হল তাই। তৈরী হল আগরতলা মামলার মাল মসলা, আর তারই আগুনে জ্বলেপুড়ে ছাই হল পিন্ডির স্বৈরতন্ত্রের মসনদখানি। এর পরে এখানে যা হল তাকে একটি ছোটখাট আঞ্চলিক কিয়ামত বলা চলে। তারই তান্ডবে লাল হল মাটি, বিদীর্ণ হল আকাশ আর তছনছ হল উপমহাদেশের গোটা ইতিহাসসহ তার ভৌগলিক পরিসীমা। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ সূর্যাস্তের পর যে প্রলয়ের সূচনা হল তার শেষ কোথায় তা মানুষের পক্ষে বলা আজো সম্ভব হয়নি। আমরা যত্রতত্র জাতীয়তার নামে আকাশ ফাঁটা আর্তনাদ শুনি অথচ কার্যক্ষেত্রে দেশাত্মবোধের অভাব আজ দুর্ভিক্ষের পর্যায়ে। তাই দেশকে পূজা করার লোকের ভিড়ে পথ চলা দায় কিন্তু দেশপ্রেমিক খঁঁুঁজে পাওয়া যায় না।

দেশকে ভালবাসা এবং দেশকে পূজা করা এক কথা নয়। দেশকে ভালবাসতে হলে দেশের মানুষের কল্যাণে নিজকে আত্মাহুতি দিতে হয়, পরন্তু মাকে যারা পূজা করে নারীর অমর্যাদা করে তারাই সর্বাধিক! আমরা মাকে শ্রদ্ধা করি কিন্তু পূজা করি না, মার চরণতলে আমরা স্বর্গের কামনা করি বটে কিন্তু তথাপি তার চরণে মাথা পেতে দিই না। মানবাত্মার এই অমর্যাদাকে আমরা সৃষ্টির চরম বিপর্যয় বলে মনে করি। এরুপ অলীক অমানবতাকে আমাদের সমাজ তথা জাতীয় জীবনে আরোপের প্রতিটি চেষ্টাকে আমরা রুখে দাঁড়াবো, প্রয়োজন হলে সর্বস্ব পণ করেও। অদৃষ্টের পরিহাস, আজ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সত্য ও মিথ্যা, আলো ও অন্ধকার এবং ন্যায় ও অন্যায়কে সম স্তরে এনে দাঁড় করানো হয়েছে, অথচ ধর্ম আর ধার্মিকতাকে সাম্প্রদায়িকতায় আখ্যায়িত করে বিসর্জন দেবার প্রস্তুতি চলছে।

দেশকে পূজা করার পদ্ধতি যারা আবিষ্কার করেছিল দেশের মানুষকে তারা সম্মান দিতে পারে নি। দেশের মানুষের ভাগ্য বিড়ম্বিত করে দেশের মাটিকে পূজা করার যে অলীক বিধান তা কিছু সংখ্যক শোষকের জন্য স্বর্গসুখ রচনা করতে সক্ষম হলেও কার্যতঃ মানুষকে তা সর্বহারার পর্যায়ে ঠেলে দেয়। (ডাঃ এম এ শুকুর রচিত ‘হাতুড়ে’ বই থেকে নেয়া)।

সেই লোমহর্ষক দিনগুলির কথা। সীমান্তে তখনো যুদ্ধ চলছিল। মাটিতে দৈত্য দানবের অত্যাচার আর আকাশ থেকে আগুনে বোমা পড়ার ভয়ে শহর থেকে কটি পরিবার এসে আমার গ্রামের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছিল। ঐ সাথে আমার এক বন্ধুও এসেছিলেন। দু’জনে প্রায়ই আলাপ হত একথা সেকথা অনেক কথা। ঐ সময়ে আমার হাতে ছিল একখানি বই। নাম তার ‘হেরার আলো’। বইটির ঐ নামে আমার বন্ধু আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাই তার প্রথম অংশ ‘আবার তোরা মানুষ হ’ নামে প্রকাশিত হয়েছিল। আজকের এই ষড়দর্শন তারই অবশিষ্ট অংশ, ষড়দর্শনের কিছু কথা নীচের এ অংশ ।

ষড়দর্শন থেকে

৪/৮২ ‘তারা কি কুরআন গবেষণা করে না? এবং ইহা যদি বিশ্বস্রষ্টা ছাড়া আর কারো নিকট হতে আসত তবে তারা এতে অনেক অসামঞ্জস্য পেত’।

দ্বিতীয়। নিজের ধর্ম আর অপরের ধর্ম বলে কোন কথা সত্যপথিকের অভিধানে থাকতে পারেনা। নিজের ধর্ম আর নিজের গুরুতে সর্বসত্য নিহিত এরুপ অভিমত সত্যানুসন্ধানের সহায়ক নয়। পরন্তু সর্বদেশে সর্বযুগে যে সব সত্যসাধক এসেছেন তারা মূলতঃ একই উৎসের বিভিন্ন ধারামুখ, তাই তারাও সমভাবে সম্মানিত।

তৃতীয়। এই নিয়ম পূর্বতন প্রতিটি বাণীচিরন্তনী বা ঐশী গ্রন্থের বেলা সমভাবে প্রযোজ্য। এ সকল গ্রন্থ একারণেই পরিত্যাজ্য নয় যে মানুষের অন্যায় হস্তক্ষেপে অনেক অসত্যের প্রলেপ প্রযুক্তি সত্ত্বেও তাতে এখনো অকুলষিত সত্য অবশিষ্ট আছে। শোষকের স্বার্থে আঘাত করে নাই এমন সব বানীকে তারা কলুষিত করেনি এবং তাই তা এখনও অক্ষত আছে। ফলে মানুষের চলার পথে আজো তা আলো দিতে সক্ষম আংশিকভাবে হলেও। একারণে চরম সত্যের সন্ধানে পূর্বতন শাস্ত্র সমূহের অন্তর্নিহিত সত্য সত্যানুসন্ধানীর জন্য বিশেষ সহায়ক।

চতুর্থ। নবীরা নিষ্পাপ, কারণ তারা সুনির্বাচিত ও সুনিয়ন্ত্রিতও।

পঞ্চম। সৃষ্টিধর্ম সম্বন্ধে অধিকাংশ বর্ণনায় একথা অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে, যেসব অকুরআনীয় অলীক মতবাদ কুরআনের নামে ভাষ্যকারেরা প্রচার করেছেন তার জন্য কুরআন দায়ী কিনা? সৃষ্টি ধর্ম সম্বন্ধে কুরআনের অভিমত সুস্পষ্ট। আল-কুরআন জোড়াহীন সৃষ্টি স্বীকার করেনা। কুরআন আরো বলে যে প্রতিটি প্রাণী মরণশীল। নির্দিষ্ট আয়ু সীমায় প্রত্যেককে মৃত্যু বরণ করতে হবে। তদুপরি সৃষ্টার বিধানে কারো জন্য সৃষ্টিধর্ম পরিবর্তনের কোন বিধান নাই। জন্ম মৃত্যু ও ন্যায় নীতি শৃঙ্খলার প্রশ্নে কুরআনের এই সুস্পষ্ট নীতিমালাকে জানা কুরআনের সত্যকে জানার জন্য অপরিহার্য।

নবীরাও মানুষ, কিন্তু তারা সুনির্বাচিত এবং সুনিয়ন্ত্রিত। তদুপরি তারা প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত। তাদের জন্ম মৃত্যু দেহ মনে কোন অস্বাভাবিকতা থাকার কথা নয়। অতিরঞ্জন বিলাসীদের ভাবাবেগদুষ্ট মিঠে দুশমনী থেকে নবীদের জীবনকে বাঁচাতেই হবে। শুধু সত্যের কারণেই নয় বরং নিজের মাঝে নিজের অফুরন্ত শক্তিকে আবিষ্কারের জন্যও। অপরের মাঝে অকারণ অস্বাভাবিকতা আবিষ্কারের প্রবণতা চিরদিন মানুষকে দুর্বল হীনমন্য ও অদৃষ্টবাদী করেছে। এই দুর্বলতার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে এবং নিজের মাঝে অফুরন্ত শক্তির উৎসকে জেনে নিতে হবে।

ষষ্ঠ। ইন্টারপ্রিটেশন বা অনুবাদের জন্য কুরআনের নিজস্ব ফরমুলা আছে। এই ফরমুলাকে সামনে রেখে যারা কুরআন বা যে কোন নীতি শাস্ত্রকে অনুবাদ করতে বসে, তাদের কাজে বিভ্রান্তির সম্ভাবনা কম। কিন্তু এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে যারা পূর্বপরিকল্পিত অযৌক্তিক বিজ্ঞান বিরোধী মতবাদকে মূলধন করে সংস্কারাচ্ছন্ন মন নিয়ে অনুবাদ করতে চায় তারা পদে পদে ভুল করে এবং এইভাবে তারা বেদকে অবেদে, কুরআনকে অকুরআনে, এবং বাইবেলকে প্রহসনে রুপান্তরিত করেছে। ইন্টারপ্রিটেশনের এই নীতিমালাকে মেনে নিলে কুরআন একটি কম্পুটারের যে কোন বক্তব্য তা শাস্ত্র হউক আর অশাস্ত্রই হোক তার সত্যাসত্য নির্দ্ধারণে সম্পূর্ণ সক্ষম।        

৩/৬‘ তিনিই সেই যিনি তোমার কাছে এই পুস্তক অবতীর্ণ করেছেন, যার কিছু সংখ্যক আয়াত মুহরুম (সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন), এই গুলি পুস্তকের মূল অংশ এবং অন্য গুলি মুতাশাবেহা (রুপক); যাদের অন্তরে সত্যলংঘন প্রবণতা আছে শুধু তারাই কোন্দল ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রুপক তার অনুসরণ করে। স্রষ্টা ছাড়া অন্য কেহ এর ব্যাখ্যা জানেনা আর যারা জ্ঞানে সুগভীর; তারা বলে আমরা বিশ্বাস করি, সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে আগত এবং জ্ঞানী ছাড়া অন্যেরা সুশিক্ষা গ্রহণ করেনা’।

মুহরুম আয়াত সমূহ সত্যের মূলভিত্তি। এবং মুশতাবেহা (রুপক) আয়াত সমূহ বিস্তারিত ব্যাখ্যার কারণেই। মুহরুম আয়াতের সুস্পষ্ট আলোকে যেকোন রুপক আয়াতের বক্তব্য এমনকি হাদিসসহ যে কোন শাস্ত্রের সত্যাসত্য নির্ধারণ করা অতিমাত্রায় সহজ। পরন্তু রুপক আয়াতের অনুবাদে মুহরুম আয়াতের সুস্পষ্ট নির্দেশ সমূহকে অবজ্ঞা করলে স্বভাবতঃ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। ধর্মশাস্ত্র সমূহের যেকোন অভিমত তা যদি কুরআনের মুহরুম আয়াতের বক্তব্যের পরিপন্থি হয় তবে তাকে দ্বিধাহীনভাবে পরিত্যাগ করতে হবে। কুরআনের মূল বক্তব্যে কোন অসামঞ্জস্য নেই। তাই ভাষ্যকারের অজ্ঞানতা ও মনোবৈকল্যের জন্য কুরআন দায়ী হতে পারেনা।

ভাষ্যকার তার নিজের অভিমত ব্যক্ত করবেন না এমন কোন কথা নয় কিন্তু সত্যের বিকৃতি ঘটানোর কারো কোন অধিকার নেই। রুপক আয়াতে মুহরুম আয়াতের বক্তব্য বিরোধী ইন্টারপ্রিটেশন মূলতঃ কারা করে এবং কি উদ্দেশ্যে করে থাকে কুরআন উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে তাও সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছে। আল-কুরআন নিজেই এক অস্বাভাবিক রহস্য। গ্রন্থ হিসাবে অনন্য এই দাবী কুরআনের নিজস্ব। এর যে কোন বাণীর তাৎপর্য তাই অসাধারণ এবং তার গভীরতা বিস্ময়কর। তার প্রতিটি কথার নিহিত সত্য শাশ্বত ও সনাতন এবং সর্বযুগের জন্য তা সমভাবে প্রযোজ্য। এখানেই অন্য গ্রন্থের সাথে তার মৌলিক পার্থক্য। পরিপূর্ণ জীবনবিধান রুপে একমাত্র কুরআন এই দাবী করতে পারে, অন্যে তা পারেও না, করেও নাই।

৫/৩—-‘আজ এই দিনে তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবনবিধান রুপে মনোনীত করলাম।’

কুরআনের ব্যাপারে একটি কথা অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। এর বিধান সর্বযুগের উপযোগী যে কোন সমস্যা সমাধানের দাবী রাখে। কিন্তু যে বিশ্বনবী এই মহাগ্রন্থের বাণীবাহক, কুরআনের এমন অনেক তথ্য আছে যার তাৎপর্য সেযুগে অজানা ছিল। এর মাঝে এমন অনেক সত্য আজো অজানা এবং অনাবিস্কৃত আছে যা যেমন আপনিও জানেন না তেমনি আমিও জানিনা। এ কারণে এর ইজতিহাদ বা গবেষণা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবে এবং কোন দিন এই গবেষণার দুয়ার বন্ধ হতে পারেনা। ইজতিহাদ বা গবেষণার দ্বার বন্ধ করে দেয়া আর তার শ্বাশত সত্য রুপকে অস্বীকার করা একই কথা। 

একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় যে কুরআনের অনুসারীরা তরবারীর জোরে সত্য প্রচার করেছেন। কিন্তু কুরআনের সুস্পষ্ট ঘোষনা ‘লা ইকরাহা ফিদ্দিন’ এবং ‘লাকুম দিনুকুম ওলিয়াদিন’ সম্পূর্ণ এর বিপরীত কথা। আত্মরক্ষার্থে তরবারীর প্রয়োজনকে কুরআন কোনদিন অস্বীকার করেনা বরং জেহাদ বা সংগ্রামকে জীবনের এক পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করে। তরবারীর প্রয়োজন সর্বযুগে অনস্বীকার্য, ন্যায়নীতি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কারণে তো বটেই- এমনকি সত্য ও শান্তিকে টিকিয়ে রাখার জন্যও। ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম। তাই উহা যেমন কাপুরুষতাকে সমর্থন করে না তেমনি সীমা লংঘনকারীকেও সমভাবে ঘৃনার চোখে দেখে।

কু’রআনের সমালোচকেরা আরোও বলে থাকেন যে কু’রআনের বক্তব্যে অসংখ্য পুনরুক্তি বিদ্যমান। মূলতঃ কুরআন যার কাছে অবতীর্ণ হয়েছিল সত্যকে জানার কারণে তার নিজের জন্য প্রথম প্রত্যাদিষ্ট পাঁচটি আয়াতই যথেষ্ট ছিল। মহানবীর কাছে প্রত্যাদিষ্ট এই পাঁচটি মহাবাক্যে সেদিন একদিকে যেমন তার নবীত্বের নিয়োগনামা ছিল, তেমনি তার পরবর্তি তেইশ বছরে অবতীর্ণ সকল সত্যের পরিপূর্ণ নির্যাসও তাতে বিদ্যমান ছিল। মূলহিমের কাছে প্রথম প্রত্যাদিষ্ট ওহি শিক্ষা ইলহামের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। এটি একদিকে যেমন সত্যের চরম প্রকাশ, অন্যদিকে তা পরোক্ষভাবে মূলহিমকে তার মিশনের রুপরেখা জানিয়ে দেয়।

প্রথম প্রত্যাদেশের পর বেশ কিছুদিন বিশ্বনবীর কাছে ওহি আসেনি। এরপরে সুদীর্ঘ তেইশ বছরে খন্ড খন্ড প্রকাশের মাধ্যমে একখানি পরিপূর্ণ জীবন বিধান অবতীর্ণ হয়। তাতে পূনরুক্তি বিদ্যমান ছিল ইহা অনস্বীকার্য। সত্যকে জানার জন্য পুনরুক্তির কোন প্রয়োজন ছিল না বাণীবাহকের নিজের জন্য কিন্তু আমার মত অজ্ঞানজনের জন্য তার প্রয়োজন ছিল। আর প্রয়োজন ছিল মূল বক্তব্যকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেবারও।

কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা কি সত্যকে পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করে নিতে সক্ষম হয়েছি? আমরা কি আমাদের কর্মধারায় সত্যের পরিবর্তে অসত্য, জ্ঞানের বিরুদ্ধে অজ্ঞানতা এবং শান্তি শৃঙ্খলার নামে উশৃঙ্খলতার আমদানী করে সমাজ ও জাতির জীবনকে ব্যর্থ ও দুর্বিসহ করে দেই নি? কুরআন একখানি রহস্য। তার মাঝে দু’টি রহস্যঘেরা শব্দ আছে। মানুষের জন্য কুরআনের প্রথম আদেশ ‘ইকরা’ এবং প্রথম নিষেধ ‘লা-তাকরাবা’। কুরআন তার এই প্রথম আদেশের মাধ্যমে যেমন সারা মানব জাতিকে জ্ঞান সাধনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছিল ঠিক তেমনি তার প্রথম নিষেধের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষকে জগতের সকল অকল্যাণ থেকে পরিত্রাণের উপায়ও জানিয়ে দিয়েছিল। অজ্ঞান মানুষ তার কোনটিকেই গ্রহণ করতে পারেনি। সঠিকভাবে, হয় অহমিকার দম্ভে নয়তো বিশ্বাসের অভাবে।

কু’রআনের এই একটি আদেশ আর এই একটি নিষেধকে যদি মানুষ মনে প্রাণে গ্রহণ করে নিতে পারত তবে জগত অনেক অনেক দিন আগেই স্বর্গের সুষমায় ভরে উঠতো। কু’রআনকে যারা পুনরুক্তির দোষে অভিযুক্ত করে থাকে, পরিহাসের ব্যাপার এই যে তাদের রচিত দর্শনে শুধু হেয়ালী মাখা পুনরুক্তি ছাড়া আর কিছুই খুজে পাওয়া যায় না।

সত্যকে জানতে হলেঃ

অসত্য অন্যায় অনাচার ও অজ্ঞানতার একটি মাত্র ঔষধ আছে এবং তা হল ‘ইকরা’ বা জ্ঞান সাধনা করা। ক’টি অক্ষরজ্ঞান হলেই জ্ঞানী হওয়া যায় না। শিক্ষার সাথে তাই দীক্ষারও একান্ত প্রয়োজন। এ কারণে যুগে যুগে আগত সত্যসাধকদের আনীত সকল সত্যকে সমমর্যাদায় মেনে নিতে হবে। জাতি বর্ণ গোত্র ও ভাষা নির্বিশেষে প্রতিটি সত্যকে মানুষের সম্পদরুপে গণ্য করে বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে। সত্যকে পুরোপুরি জানতে হলে শেষটুকু জানতেই হবে। একারণে কুরআনকে অবশ্যই জানতে হবে।

‘আল-হক্ব’ বা ‘সত্য’ কুরআনের অপর এক নাম। চরম সত্যের শাণিত নির্যাস এটি। সুতরাং তাকে জানতে হলে বা তাকে বুঝতে হলে অন্ধ বিশ্বাস ও বাইবেলীয় বিভ্রান্তিকে পরিহার করতে হবে। একথা অনস্বীকার্য যে খ্রীষ্টধর্ম যীশুর প্রবর্তিত ধর্ম নয় বরং যারা তাকে হত্যা করে তার প্রবর্তিত সত্যকে নির্মুল করার প্রচেষ্ঠায় মত্ত ছিল তাদেরি কপট কুটিল চক্রান্তে পরবর্তিকালে সৃষ্টি হয় বর্তমান বাইবেল ও খ্রীষ্টধর্ম। তাতে সত্য নাই একথা বলবনা বরং কিছু সত্য আর কিছু কল্পনার মিশ্রিত এমন এক তত্ত্ব গাথা সেখানে রচিত হয়েছে যা আর যাই হউক না কেন মানুষের পথচলার বিধান তা হতে পারেনা।

চরম সত্যকে জানতে হলে কু’রআনকে অবশ্যই মানতে হবে। কিন্তু কু’রআনকে জানতে চাইলে পাদ্রী পুরোহিতের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। একারণে কুরআনের নিজস্ব পথে আসতে হবে। কুরআন নিজেই তার তত্ত্বকথা প্রকাশে সক্ষম। ‘কুরআন নিজেই কুরআনের ভাষ্য’ এই কথাতে কোন অতিরঞ্জন নেই। সত্যকে জানতে হলে স্রষ্টাকে জানতে হবে। জানতে হবে তার বাণী বাহককে এবং মানবসৃষ্টির পশ্চাতে বিশ্বস্রষ্টার সৃষ্টি পরিকল্পনার উদ্দেশ্যকেও। কুরআন মূলতঃ এমন কোন গ্রীকদর্শন নয় যে কেউ জানতে চাইলে তা বুঝতে পারবে না। এই পুস্তক অবতীর্ণ হয়েছিল এক অতি সাধারণ অক্ষরজ্ঞানহীন সত্য সাধকের কাছে। তাকে জানতে হলে অগাধ জ্ঞানের প্রয়োজন হবে এমন কোন কথা নয় বরং প্রয়োজন সত্যপ্রীতির এবং প্রয়োজন সত্যনিরপেক্ষ যুক্তিভিত্তিক মন ও মানসিকতার।

প্রথমত কুরআনকে জানতে হলে তার নিজস্ব গতিধারাকে বুঝতে হবে, জানতে হবে তার পরিভাষাকেও। কুরআন সত্যের শাণিত নির্যাস। তার বাণী সমূহের মাঝে কোন পরষ্পর অসংলগ্নতা নেই। পরম সত্যময়ের বাণী তা, তাই তাতে অসামঞ্জস্য থাকতে পারেনা। একারণে কুরআনের নিজস্ব আয়াত সমূহের মাঝে একের দ্বারা অপরটির মন্সুখ বা বাতিল হওয়ার থিওরী সর্বোতোভাবে পরিত্যাজ্য। কুরআনের ধারাকে যেজন জানে না, কুরআন অবতরণের উদ্দেশ্য বুঝেনা, তার উৎসমুখ বা তার বাণীবাহককে যারা চিনেনা এমন সব অজ্ঞানেরাই কুরআনের ভিতরে মন্সুখ আয়াতের সন্ধান খুজে। কার্যতঃ পরিপূর্ণ জীবন বিধানরুপে আলকুরআন র্প্বূবর্তী শাস্ত্রসমূহকে মন্সুখ বা বাতিল ঘোষনা করেছে, তার নিজস্ব কোন আয়াত বা বানীকে নয়।

উপরের অংশ ডাঃ এম এ শুকুরের লেখা বই থেকে টুকে নেয়া।

কুরআন হনুমানের নয়, মানুষের জন্য এক অনন্য দলিল

নীচের অংশ নাজমা মোস্তফার, সাম্প্রতিক ঘটনার আলোকে কুরআন অবমাননার উপর ব্যাখ্যা।

বাংলাদেশে সত্য ময়দান থেকে হারিয়ে গেছে বললে ভুল হবে না। মানুষ যেন আইয়ামে জাহেলিয়াত পার করছে। কে মরছে কে মারছে তার কোন হিসাব নেই। অপরাধী ধরা খায় না যারা প্রতিবাদ করে তারাই সাধারণত ধরা খায়। সাধারণত শক্তির ছায়াতলে সরকার একের পর এক লংকা কান্ড ঘটাচ্ছে। বিদেশী গনমাধ্যম আলজাজিরা যা বের করেছে তার উপর তারা পুরষ্কৃতও হয়েছে। লাজ লজ্জা হারিয়ে সরকার দুর্বৃত্তায়নে তারপরও পিছপা নয়। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে সরকার তার সব অনাচার ঢাকতে এসব ক্রমাগত করে যাচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে এদেশে যত দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, এসব হয়েছে আওয়ামী ছত্রচ্ছায়ায়। এর প্রমান হিসাবে বই লিখে গেছেন শেখ হাসিনার প্রাইভেট সেক্রেটারী মতিয়ুর রহমান রেন্টু। তিনি এমনভাবে তার নিজের ফাঁসি দাবী করেছেন কারণ এসব ঘটনা অনেকটা ঘটেছে তার ছত্রচ্ছায়ায়। তার চোখের সামনে তার জানার পরও এসব ঘটেছে। যার জন্য তিনি তার নিজের ফাঁসি দাবী করেছেন আগে পরে শেখ মুজিবসহ তার কন্যার ফাঁসি দাবী করেছেন। শেখ মুজিবের আজ কোন সম্মান অবশিষ্ট নেই। যা কিছু বাকী ছিল তার শেষ করে দিল তার পরবর্তী প্রজন্মরা। সবাই লুটেরা, দলে দলে তারা আজ আসামী হচ্ছে। গোটা বিশ^ তা পরখ করছে। ২১ শে আগষ্টের সাজানো বোমাবাজীর নাটকে যারা মারা গেছেন তাদের সবার হত্যার আসামী সরকার নিজে। দুর্ভাগী আইভি কাকতালীয় লাশের শিকার হন। কিন্তু মূল আসামী আজ অবধি নাটক করে যাচ্ছেন। এরপর রামুর বৌদ্ধ মন্দির, যশোহরে হিন্দু হত্যাকান্ড, অতীতে বিশ^জিৎ হত্যাকান্ড, কর্ণেল শহীদ খানও  এসেব অসংখ্য তথ্য তুলে ধরেন। হিন্দুদের সব সময় তিনি ট্রামকার্ড হিসাবে ব্যবহার করেন, তার প্রমাণ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হিন্দুরাও কপট স্বার্থ লাভ করতে এসব সরকারী কিল খেয়ে কিল চুরি করে। অবশ্যই শেয়ার পায় বড়মাপে, সাধারণতঃ সাহসের পরিচয়ে সত্য উন্মোচন করে না। এটি দুঃখজনক। তাহলে দেশের দুর্ভোগ অনেক কমে আসতো।

ওরা ৮০ মিলিয়ন ডলার খেয়েছে দেশের সাইবার সন্ত্রাসীদের তালিকায় হাসিনা পুত্র কন্যা বারে বারে এসে যায়। এসবব তথ্য ফাঁস ক্যাপ্টেন শহীদ ইউটিউবে প্রকাশিত হয়। (অক্টোবর ১৪, ২০২১ তারিখে)। এর আগেও বহুবার এসব কথা আলোচিত হয়েছে, আমেরিকার বাংলা পত্রিকাতে বড় কলামে ছেপেছে। তাছাড়া শেখ পরিবারের চৌদ্দগোষ্ঠীর অপকর্মের রেকর্ড আজ প্রতিটি দুয়ারে কড়া নেড়ে এর সত্যতা জানান দিচ্ছে। আমরা জানি শত অনাচার ছাপিয়েও সত্য উঠে আসে। শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন নাই যে তার প্রাইভেট সেক্রেটারীই তার বারোটা বাজিয়ে যাবে। তার নাম ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। এই সাম্প্রতিক কুরআন অবমাননা করার ঘটনায় সচরাচরের মত এক সুবোধ পাঞ্জাবী পরা এক সুবোধকে আনা হয়েছে। সবাই কমেন্ট করছে এসব একই নাটকের পনরাবৃত্তি। আজ অক্টোবরের ১৪ তারিখে ২০২১ আর একজন ভারতীয় নাগরিককে পাওয়া গেছে যিনি বাংলাদেশে ধরা খেয়েছেন তিনি বাংলাদেশে বড় পদে বসা ভারতীয় নাগরিক। এসব একই ধারাতে তার কৌশলী নাটক। ৯০% মুসলিমের দেশে ৫০% কখনো ৮০% হিন্দুরা উচ্চপদ দখল করে আছে। এসব বিষয় উঠে আসে কনক সরোয়ার নিউজ লাইভ মাহমুদুর রহমান ইউটিউবের সূত্রে। বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা ভারতীয় ইন্ধনে হাসিনার সাজানো নাটক মাত্র। সিকিমের লেন্দুপ দর্জির আদলে তিনি দম ছাড়ছেন। প্রচার চালাচ্ছেন এদেশের জনতারা উগ্রবাদী সন্ত্রাসী দাঙ্গাবাজ। যেখানে নীরিহ মানুষ না খেয়ে মরছে, আত্মহত্যা করছে সেদিকে দখলদার রাতে ভোট করা অবৈধ সরকারের নজর নেই। বরং এর ওপর পিঠে তিনি লুটপাটের মহামেলা সাজিয়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি নামের টেবলেট গেলাতে চাচ্ছেন ক্ষুধার্থ দেশবাসীকে। অসাম্প্রদায়িকতার বিস্ময়কর নজিরে ধন্য এ দেশ। যেখানে কখনোই এ ধারার ঘটনা এ দেশে ঘটে না, সেখানে তার ছত্রচ্ছায়ায় আজ এসব ঘটছে অনায়াসে।

কুমিল্লার এক মন্দিরে হনুমানের কোলে কুরআন রাখা। মুসলিমরা খুশী হও, মন খারাপ না করে ধৈর্য্য ধরাই বড় পূন্যের কাজ। ক্ষতি জমা করবে করছে ষড়যন্ত্রীরাই। এসব নতুন নয়, বিগত শতকের ৯৬ থেকেই এর শুরুটা। ব্যাংক লুটপাট, শেয়ার ধ্বংস, নীতি নৈতিকতা ধ্বংস, গুম খুন ধর্ষণের মহামেলা এ ময়দান আজ। সাগর রুণির ছেলে মেঘের কান্না সমানেই আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে বিলাপ করছে। সংলগ্ন চত্বরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা যায় অতীতে কোনদিন এখানে পুলিশকে পাহারা দিতে হয়নি। তবে এবার ঘটনার দিন রাত থেকেই পুলিশের আনাগোনা বেড়ে যায়। এটি তাদের নজরে আসে। এতে বোঝা যায় এটি পুলিশকে জানান হয়েছে চালবাজরাই করেছে। সঙ্গত কারণেই পুলিশ আসা যাওয়া শুরু করেছে। তারপরও কেন পুলিশ আসামী ধরতে পারলো না। তাহলে বলতে দ্বিধা নেই এটিও বলা যায় হয়তো পুলিশই নির্দোষদেরে যেভাবে ইয়াবা পকেটে গুঁজে দিয়ে ঘটনা সাজায়, ওভাবেই এটি ঘটিয়েছে।  ঠিক মুক্তাঙ্গনে যেভাবে বোমা নাটকটি সাজানো হয়েছিল এবং ঘটনার কয়েক বছর পর এটি তারেক জিয়ার উপর লেপে দেয়া হয়। ঐ ঝড়ে আইভি দলবলসহ জান খোয়ালেন আর চালবাজ ফকিরের কেরামতি বাড়লো। সত্যের দায়িত্ব যে অদেখার হাতে, তার কাছ থেকে কেউ সত্যকে লুকাতে পারবে না। তবে সাময়িক হয়তো পারবে, তবে চিরকাল ওটি চাপা থাকবে না। ইসলাম ধর্ম ও তার গ্রন্থ কুরআন অসামান্য সত্য বাণীতে ভরপুর। যাদের বিশ^াসের কমজোরী তারাই এসব নাটক সাজাতে পারে। এরাই ধর্ম নিয়ে নষ্ট ব্যবসা করে। তাহাজ্জুদ নাটক প্রচার করে বেড়ায়। কুরআনেই এদের বিরুদ্ধে কঠোর বানী উচ্চারিত হয়েছে। এসব লোকদেখানো ধর্ম ধারীকে কঠোর ভাষাতে কুরআনেই তিরষ্কার করা হয়েছে। আজ অনেক হিন্দুরাও জানে এর প্রকৃত মর্যাদা কতটুকু। স্বজ্ঞানে কোন হিন্দুও এ অপকর্ম করবে না। বাবরী মসজিদ ভেঙ্গেছে দানব হিন্দুরা কিন্তু এর মাঝ থেকে ঐ দানবদের থেকে এক সাধক বালবীর বেরিয়ে এসে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তিনিও সাম্প্রতিক মারা গেছেন, অনেকে সন্দেহ করছে তাকেও মারা হয়েছে। তার অর্জন কেউ কমাতে পারবে না। যারা তাকে হত্যা করেছে তারাই সর্বহারার দলে নাম লিখাচ্ছে। আর বালবীরের নাম বিধাতার ইতিহাসে মানবতার ইতিহাসে চিরদিন আলো ছড়াবে। কালের কন্ঠ পত্রিকায় ভয়ানক রিপোর্ট প্রকাশ ১৬ বছরে ১১ লক্ষ কোটি টাকা পাচার (১৩ অক্টোবর ২০২১)। সাম্প্রতিক নিকট অতীতে আল জাজিরার ডকুমেন্টারী রিপোর্টের ভিত্তিতে “All the Prime Minister’s Men” ডিআইজি এওয়ার্ড  পেয়েছে, নেত্র নিউজের ১৩ অক্টোবরের রিপোর্টে প্রকাশ। ইতালী ভিত্তিক এই সংস্থা এর অসাধারণ উপস্থাপনার প্রশংসা করেছে, সংবাদটি সাউথ এশিয়া জার্নাল প্রকাশ করেছে। এর নিখুত দক্ষ উপস্থাপনা জার্নালিজমের এক অনন্য দলিল হয়ে থাকবে। একজন হুইসেল ব্লেয়ারের সাহসিকতায় দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের খোঁজে ছবি তোলার অনেক খুটিনাটি তথ্য ও যোগসূত্র তাদের নিঁখুত উপস্থাপনায় উঠে এসেছে। এ অসাধারণ তদন্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে যুক্ত একটি অপরাধী পরিবার কিভাবে একটি রাষ্ট্র দখল করতে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে মিলে এ দুর্বৃত্তায়ন করতে পেরেছে এ এক অনন্য ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকবে। পুরষ্কারের এ অনুষ্ঠানটি হয় ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর তারিখে।

যে মুজিবকে একদিন ৭১ সালে বাংলাদেশের ৭ কোটি বাঙ্গালী অগাধ বিশ^াসে পথ চলা শুরু করেছিল, আজ ২১ সালে তাদের গোটা পরিবারের এমন সাগরচুরি গোটা জাতিকে হতবুদ্ধ করেছে। কুরআন জ্ঞানহীনতার কারণেই মানুষ পথ হারায়। শুধু এই গ্রন্থের মর্যাদা রাখতে শিখলে মানুষকে এত অধঃপাতে নামতে হতো না। হোক হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান জৈন সবারই এ গ্রন্থ অনুসরণ অনুকরণ করা উচিত, তার নিজের স্বার্থে। যে এর অনুসরণ করবে, সেই অসীমের সন্ধান পাবে। তার হারাবার কিছু থাকবে না। আর যারা এর অপমান করবে একে নিয়ে মিথ্যাচার করবে এ অপকর্মের শাস্তি কত গভীর হবে সেটি সহজেই অনুমেয়।

১৪ অক্টোবর ২০২১ সাল।

রাত ১১.৩৭ মিনিট।

নাজমা মোস্তফা

কুরআনের কথাকে অবহেলার সুযোগ নেই: আজ ২২ এপ্রিল, মনটা বেশ ভালো আমার ব্যক্তিগত কিছু কারণে যদিও বৃহত্তর পরিসরে আমার মন খারাপ হবারই কথা। আজকের কুরআনের নির্দেশিত কথার উপর যদি মুসলিমরা নিবিষ্ট থাকতো তবে তারা বিশ^ জয় করে অনেক এগিয়ে যেত। কুরআনকে গুরুত্¦হীন করেছে মানবসৃষ্ট কিছু জটিলতা যা বারে বারে সচেতনকে বিচলিত করে। ধর্ম প্রচারের জায়গা আগে ছিল ময়দান, এখন ইউটিউবে ব্যবসা তুঙ্গে। গার্লস স্কুলে যখন পড়তাম তখন স্যার ম্যাডামরা ওয়াজ শুনলেই ছুটি দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ী চলে যেতে বলতেন। আমরা হুড়া–হুড়ি করে স্কুল থেকে ফিরতাম। আমরা জানতাম মেয়েদের দেখলেই আক্রমণাত্মক কথা হত নারী শিক্ষার উপর, সময় আজ বদলেছে। মেয়েদের প্রতি ওয়ায়েজদের এই হীনমন্যতা আমাদের কষ্ট দিত। এসবের কারণ ধর্ম বদলায়নি তবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ মূল সত্যকে সমাদর করতে শিখছে, মিথ্যা দূরিভূত হচ্ছে।  দেখা যাচ্ছে যুগে যুগে ধর্ম বাহকরাই গোজামিল তৈরী করেছে।  আল্লাহর দেয়া সিরাতাল মোসতাকিম, সহজ সরল পথকে জটিল করা হয়েছে। ধর্মটি নাজেল হয় গ্যারান্টিসহ স্থায়ী সিলমোহর মারা যার কোনদিকেই বাড়ানো কমানোর সুযোগ নেই। এত কড়া নিরাপত্তার পরও শত্রুপক্ষ বসে নেই। তারা সমানেই  জটিল থেকে জটিলতর সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। “আর তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকারকে স্বল্প মূল্যে বিনিময় করো না (অর্থাৎ সামান্য প্রার্থিব মুনাফা লাভের জন্য তোমাদের ওয়াদার বরখেলাফ করোনা)। নিঃসন্দেহ যা আল্লাহর কাছে রয়েছে তা তোমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ, যদি তোমরা জানতে”(আন নহল সুরার ৯৫ আয়াত)। কুরআন অনুসরণ করার উৎসাহ জনক অসংখ্য কথা আছে কুরআনে, যা তার অনুসারীকে অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহর প্রতিপক্ষ ইবলিস বসে নেই। সে লড়ে চলেছে আদমকে পথহারা করতে। উপরের আয়াতে এটি স্পষ্ট, আল্লাহর জানা মানুষ এ অপরাধ করবে, তাই আগাম নিষেধ বাণী দিয়ে রাখা।  

গল্পের আদলে ইবলিসের প্রবেশ: কুরআনের মূল কলিমার বানী হচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট ও বার্তাবাহী অল্পকথা। যুগে যুগে নবীরা এসেছেন ধরাতে আল্লাহর বাণীকে মানুষের কাছে পৗছে দিতে। আল্লাহর কোন শরিক নেই। কেউ এ অপরাধ করলে সেটি এমন বড় পাপ যার কোন মাপ নেই, সেরা পাপ। তার মানে কুরআনের চেয়ে স্পষ্ট নির্দেশ কোথাও নেই। কুরআনকে দূরে ঠেলে গালগল্প সব বাড়াবাড়ির অংশ। ধর্মের নামে প্রচলিত গোপাল ভাড়ের গল্পের আদলে সত্য বা মিথ্যা গল্প আমরা সমঝদারের মত শুনি। মাত্র শোনা আজকার গল্প, বিবি আয়েশা ছিলেন খুব দুরন্ত টাইপের মেয়ে তাই তার বাপকে মানুষ বলতো ঐ লাফানো বকরির বাচ্চার বাপ। যে জন্য তার আসল নাম হারিয়ে টিকে আবু বকর অর্থাৎ বাচ্চা উটণীর বাপ। হয়তো গল্পের সবটাই মিথ্যে নয়, বেশীরভাগ গল্প  অর্ধসত্য। অর্থ সত্য এমন এক জিনিস যা মিথ্যার থেকেও ভয়ংকর। এই ওসিলায় ইবলিস আমাদের সত্যাঙ্গণে ঢুকে তার বসার পরে শোয়ার ব্যবস্থা করে নিতে পারে। আরবের কালচার হচ্ছে বড় সন্তানের নামে মা বাবাকে সম্মোধন করা। সন্তানের নাম ধরে বাপ মাকে ডাকা হতো। বিবি আয়েশা কোন সময়ই বড় মেয়ে ছিলেন না, তার বড় বোনের নাম ছিল আসমা।  উল্লেখ্য এসব মিথ্যাবাজি করে বিবি আয়েশাকে দুরন্ত দুর্বৃত্ত বানানোর পায়তারা চালানো হয়েছে। কুরআন সাবধান করেছে বারে বারে প্রকাশ্য শত্রু থেকে, যারা সত্যের সাথে মিথ্যে মিশায়।

মূলের উপর নিবিষ্ট থাকুন: পুরুষ শাসিত সমাজকে সত্যে ফিরতে হবে। আর নারী সমাজকে সত্যটা চিনতে হবে। উভয়ের পরিশুদ্ধি ও প্রকৃত মানুষ হওয়া দরকার। অতীত ধর্মসমূহও একটি সময় পার করার পর অধর্মে রুপান্তরিত হয়েছে অতীতে। কারণ ঐশী নির্দেশের পাশে মানবিক সংযোজন একে ইবলিসের ধর্মে পরিবর্তন করে। “কুরআনের বানী স্বল্পমূল্যে বিনিময় না করার কড়া নির্দেশ কুরআন প্রচার করে। এর মানে এ নিয়ে ব্যবসা নিষিদ্ধ। এ মূল্যবান গ্রন্থটি গ্রহণ লালন পালন করতে হবে প্রতিটি মুসলিমকে অন্তর থেকে, সম্মান দেখাতে হবে প্রতিটি কথাকে, গবেষনা করতে হবে প্রতিটি সত্যকে। সহজ উত্তর হচ্ছে এটি আত্মায় অন্তরে বুঝে হজম করতে হবে। কিন্তু দেড় হাজার বছরের আদর্শলেখা লক্ষ্য করা যাচ্ছে একে হজম করায় অনুসারীদের গরজ এতই কম যেন বলা চলে তলানীতে। গোটা মুসলিম বিশে^র অবুঝ সম্প্রদায় যারা আরবী বুঝে কম, তারা অর্থ না বোঝেই জপে। অতপর বস্তনীতে বেধে নাগালের বাইরে দূরে তাকিয়ার উপর রাখে। যেন ব্রাহ্মণ ছাড়া ছুতে মানা। টেবিলের উপরে থাকলে উৎসাহী পাঠক সত্যকে উদ্ধার করে ফেলতে পারে। ইবলিস এটি মানবে কেন?  বাড়াবাড়ি অতি ধার্মিকতা লোক দেখানো আদিখ্যেতা ইবলিস দুর্বৃত্ত চরিত্র। যুক্তি দেখানো হয় এতে পূণ্য বেশী। ঠিক যেভাবে ফুসলিয়ে আদমকে গন্দুম খাইয়ে আজীবন বেহেশতে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। লোভে পড়ে আদম ও হাওয়া তাদের শর্ত ভুলে বিপদের গর্তে পা রাখেন। ঐ ধরা পড়ার ধারাবাহিতায় আমরা আদম প্রজন্ম আজো ময়দানে। দেড় হাজার বছর আগের কুরআনের অর্ডার, এ গ্রন্থ স্বল্প দামে বিনিময়যোগ্য নয়। এটি মুখের কথা নয়, আল্লাহর আদেশ। কিন্তু মুসলিমরা এ কথা মানেন না, এড়িয়ে যান বলেই ব্যবসা চলে জোরকদমে। একজন বলে একদল শুনে। এ নিয়ে ব্যবসা করলে এর বারোটা বাজবে, এটি আল্লাহর জানা। তাই  ঐ নিষেধ না মেনে তারা সেই বারোটা বাজাচ্ছেন। যার যা মুখে আসে শিরোনাম দিচ্ছে ‘এই দোয়া একবার পড়েন সব পাপ মাফ হয়ে যাবে’ এই কাজ করেন যা চাইবেন তাই পাবেন।’  যেন ট্রেনের ফেরিওয়ালা লোকঠকানো পুরিয়া বিক্রি করছে। অসংখ্য অসংখ্য মিথ্যা কথা এভাবে বিবৃত হচ্ছে।

সাবধান বাণী: কুরআনের সাবধান বাণী ইহুদীদের পথে হাটবে না। ওরা এসব করে ধর্মের বারোটা বাজিয়েছে। এরাও ওপথেই যাবে, গাধার বোঝা বইবে। তাদের ঠেকায় কে? নিষিদ্ধ এসব গাধার গল্প অনুসরণ করতে কুরআন দ্বারা নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে গাধার আওয়াজ সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আর তার পিঠের বোঝা ধর্মের আদলে তালমুদের নামে ইহুদীরা যা সাজিয়েছিল তা উৎকৃষ্ট বর্জ পদার্থ। ও পথে হাটা বারণ। সাবধানী সংকেত কথা না মানলে তোমাদের থেকেও উন্নত কোন গোষ্ঠীর হাতে এর গুরুদায়িত্ব অর্পণ করা হবে। ঠিক যেমনটি ইসরাইলীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আরবদেরে দেয়া হয়েছিল। মানুষ তার বিবেকের কারণে আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধ আমৃত্যু। যে দায় পশুদের নেই। কুরআনের গভীর বস্তুনিষ্ঠতা তার অল্প চুম্বককথার মাঝে। আল্লাহর আদেশ  এ বানীসব অল্পদামে বিনিময় করা হারাম, নিষিদ্ধ। এ নিষিদ্ধ মানলে সবাই নিজে থেকেই এটি জানতে মানতে উদ্যোগী হতো। এখন মুসলিমদের নিজের গরজ কম, কারণ সব দায় জমা রাখা অশিক্ষিত অল্প শিক্ষিত অর্ধ শিক্ষিত মানুষগুলোর জিম্মায়; তারা যাই বলছে তাই ধর্ম হয়ে আছে। ধরা হয় ওরাই ধর্মের মালিক মোক্তার। শিক্ষিতরা অনেকে এর দায় তাদেরে দিয়ে রেখেছেন। আর শ্রোতারা একদল বেওকুফে রুপান্তরিত হয়েছে।  জবাব একটাই কুরআন বুঝে পড়েন আর সেটি পালন করেন। কুরআনে যা আছে তা রপ্ত করেন। যা নেই সেটির জন্য আপনি দায়বদ্ধ নন। আতিউল্লাহ ও আতিউর রসুল কথার অর্থ হচ্ছে ময়দানে যে গ্রন্থটি এসেছে রসুলের হাত দিয়ে ওটি আল্লাহর গ্রন্থ আল্লাহর বাণী আল্লাহর হাদিস, ওটি আগাগোড়া পড়বেন, মানবেন, পালন করবেন। তিনি যেভাবে দেখিয়ে গেছেন সেটি যা আজো বলবৎ আছে শুধু এটুকু প্রতিষ্ঠা করে দেখেন জগত কত দ্রুত সত্যতে বিস্ফারিত হয়। আর মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সম্প্রদায়, আল্লাহর নির্দেশ পালনকারীরা।

বিদায় হজ্জেও ইবলিস: ইবলিস তার সব প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তার কসরত দেখেন। বিদায় হজ্জ্বের ভাষণকে ভিত্তি করে তিনকথা আসার কারণও ইবলিস (১) তোমরা দুটি জিনিস কুরআন ও হাদিস ধরে থাকবে। (২) কুরআন, হাদিস ও আহলে বায়াতকে ধরে থাকবে। (৩) আর একদল এটি মানে যে কুরআন আঁকড়ে থাকবে। ইবলিসও জানে রসুল ধান্ধাবাজ ছিলেন না। সত্য ছাড়া মিথ্যা কথা তিনি বলেন নাই। ঐ সময় কুরআন ছাড়া রসুলের দেখাবার মত কিছু সামনে ছিল না। আর দ্বিতীয়টি রসুল বলেন নাই কারণ কোন পারিবারিক ধর্ম স্থাপন করতে নবীদের পাঠানো হয়নি। আর একদল এটি মানে যে, আল্লাহর গ্রন্থের কথাই অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কারণ ঐ সময় ময়দানে একমাত্র কুরআনের ঐ নির্দেশ আদেশবাণীসমূহ ছিল। সুবিধাবাদীরা কুরআনকে পিছনে ফেলতে কুরআন ছাড়া বাকী দুটি নিয়ে যুগ যুগ থেকে তুমুল লড়াই করছে। নিজেরা নিজেদের দুটি নামকরণও করেছে দুইনামে। এটিও কুরআনের আদেশ ধর্মকে ভাগ করবে না। এরা ভাগ করে আল্লাহর আদেশকে অমান্য করেছে। তাদের কাজই ইবলিসকে অনুসরণ করা। আল্লাহর প্রতিটি আদেশ নির্দেশকে অবহেলা করেই তারা আছে। কারণ আজকে তারা ধরা খাচ্ছে অসংখ্য কথাই তারা কুরআনের বিরুদ্ধে ধর্মকে সাজিয়েছে।   

শয়তানের খপ্পরে ইসলাম: আদমকে যে সাবধান বাণী দেয়া হয়েছিল শয়তান নামের প্রকাশ্য শত্রু থেকে দূরে থাকতে, বিবেক খাটালেই শয়তানকে চেনা যায়। পরবর্তী অনুসারীরা কতটুকু মানছেন? মুসলিমরা যদি তা না মানে তবে মুক্তি হনুজ দূর অস্ত। শবে বরাত পালন করা নিয়ে সন্দেহের দোলাচলে প্রাচ্যের মুসলিমরা দেড় হাজার বছর পরও। অন্যের ধার করা এবাদতে মগ্ন তারা। তারাবি পড়বেন নাকি কমাবেন নাকি বাদ দেবেন। আল্লাহর যদি নির্দেশ হয় তবে কমাবেন কেন, আর আল্লাহর নির্দেশ না থাকলে এত জামাত করে সাজ সাজ রবে পড়বেন কেন। যে কোন বিপদ আপদে সেজদার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইলে মন প্রশান্ত হয়। আর আল্লাহর সাথে বেতার যোগাযোগের উত্তম মাধ্যম নামাজ, যা সেজদার মাধ্যমে করা যায়, সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া। এটি এমন একটি শারীরিক কসরত যা মানুষের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট অঙ্গ মাথাকে মাটিতে ছুঁইয়ে আল্লাহতে আত্মসর্পণ করা হয়। আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশ ছাড়া মনগড়া সাজানো এবাদত করলে তা বিদআত হয়ে যাবে। তখন এটি হবে ধর্মের নামে অতিরিক্ত সংযোজন, নিষিদ্ধ কাজ। এর উদাহরণ হাদিসেও আছে যে ফরজ হওয়ার ভয়ে রসুল তৃতীয় দিনে ঘর থেকে বের হন নাই। কিন্তু বর্তমানের মুসলিমরা ঐ নিষিদ্ধকে সিদ্ধ করেছে। বিগত শতকে জেনেছিলাম প্রত্যক্ষ সাক্ষীর বরাতে রমজানে তারাবি নামাজ পড়া লোকটি মাঠে গিয়ে ধরা পড়ে পড়শি মহিলার হাতে। তাকে বলা হলো, শুনেছি তুমি প্রতিরাতে তারাবিতে যাও, আবার রোজা করছো না- কারণ কি? জবাবে সে বলে মাগো, আমি কৃষক মানুষ কাজ করি রোজা করতে পারিনা কিন্তু গ্রামের মানুষের ভয়ে তারাবিতে যাই। তার মানে রোজা আর তারাবি নিয়ে মশকরা করছে, ধর্ম পালন নয় বরং জিম্মী জীবন যাপন করছে।

কুরআনের বস্তুনিষ্টতা: এই রোজা সম্বন্ধেও সব ষ্পষ্ট ঝরঝরে কথা এসেছে কুরআনে, কোন ধামাচাপা নেই। সারা জীবন দেখেছি আজীবন রোজা করা মানুষরা কোন অবস্থায়ও রোজা ভাঙ্গেন না। কারণ তারা এতই অভ্যস্ত হয়ে যান যে ওটি দরকারেও ভাঙ্গতে চাননা। আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উপোস করলে মানুষের শারীরিক মানসিক উভয় ক্ষেত্রে অশেষ কল্যাণ হয়। আজকাল সমানেই ডাক্তাররা উপোস থাকার পরামর্শ দেন। কুরআন অপূর্ণ গ্রন্থ নয়, আল্লাহর কথামত এটি পরিপূর্ণ। কিন্তু ইবলিসীয় ধারণা বলে এটি অপূর্ণ, একে পূর্ণতা দিতে হবে বাকী গোজামিল দিয়ে। আল্লাহকে বিশ^াস না করে মাতবরি করে খোদার উপরে খোদকারী করার কোন যুক্তি নেই। কুরআন পড়ে সত্যটা জানা মানা ফরজ কাজ। বিবি আয়েশাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল রমজানে রসুল কিভাবে নামাজ পড়তেন। জবাবে তিনি বলেছিলেন আপনারা কি কুরআন পড়েন না? এটিও একটি বিশ^াসযোগ্য হাদিস। এরকম একটি জবাবের পরও মুসলিমরা পথ পায় না। মিথ্যায় ঘোরপাক খায়, কারণ ইবলিসের গ্যাড়াকলে পড়ে গেছে তারা। কুরআনের আয়াত হচ্ছে ৬২৩৭, ৬৬৬৬ নয়। আর এর ব্যাখ্যার নামে সংযোজন ঘটানো হয়েছে মানুষের লক্ষ লক্ষ সহি জইফ মনগড়া কথা। যার অধিকাংশই আল্লাহর হাদিসের বাণীর বিরুদ্ধে সাজানো হয়েছে। বলা হয় এসব সহি, কে তা সহি করলো? আল্লাহ ছাড়া এসব সহি বলার অধিকার কারো আছে কি? ইমাম আবু হানিফা তার জীবনে এসব বানোয়াট হাদিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে কারাগারে বন্দী থেকে মুমূর্ষভাবে মারা যান শাসককুলের হাতে যারা ঐ সময় ব্যস্ত ছিল এসব নষ্ট হাদিস রচনায়। সত্য সাধনায় অটল থাকায় তাকে বিষপানে হত্যা করা হয়। ঠিক যেমন বাংলাদেশে আজকের শাসককুল তার কপট হাতে নির্দোষ মানুষকে ধমকাচ্ছে, গুম খুন করছে, হামলা মামলা করছে। ইসলামের ইতিহাসে এর জ¦লজ্যান্ত উদাহরণ সাধক ইমাম আবু হানিফা ও তার উৎস্বর্গীকৃত সাধক জীবন ঐ রকম অত্যাচারী শাসকের কুপে পড়ে বিষপানে তাকে হত্যা করা হয়, এসব রক্ত বৃথা যেতে পারে না। যে কোন মানুষই সহি হাদিস চিহ্নিত করতে পারবেন, যদি তার কুরআন জানা থাকে। সে খুব দ্রুতই বলে দিতে পারবে যে, এটি কুরআন বিরুদ্ধ কথা। কুরআন না জানলে সেটি বলা সম্ভব নয়। কুরআনের ব্যাখ্যা কুরআন দিয়ে বিচার করতে হবে কারণ এক একটি বিষয়ে কুরআনেই যুক্তি দেয়া হয়েছে যা একটি কথাকে অন্য কথা দ্বারা প্রতিষ্ঠা করা যায়, শক্ত ভিত্তি গড়া যায়। এটি কি বিশ^াসযোগ্য কথা যে আল্লাহ তার কাজে এত অগোছালো ও অসম্পূর্ণ। যার পূর্ণতায় আসতে হবে এক গোষ্ঠী অগ্নি উপাসক থেকে উদ্ভুত পারসী সমাজের দলবদ্ধ গোষ্ঠীকে। ইতিহাসে এটিও জেনেছি ঐ সময় এদের উত্থানের সময় মানুষ বিদ্রোহ করেছে। কিন্তু শক্তির তলানিতে তাদের দাপটের সাথে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। যে কেউ বলুক যে কথা কুরআনের সাথে যায় এমন অনুমোদিত কথাকে মানতে কোন অসুবিধা নেই। তাই বলে হাজার হাজার লাখ লাখ মিথ্যাচারে ভরা কুরআন বিরুদ্ধ মত ও পথ কেন একবিংশ শতকের মুসলিমকে মানতে হবে। আল্লাহ কিয়ামতের দিনে কুরআনের বাইরে কোন কাজের জন্য কাউকে প্রশ্ন করবে না; করতে পারে না। একবার এক বোন প্রশ্ন রেখেছিল, ‘আমি বোরখা পড়ছি না, শেষ কালে কিয়ামতের ময়দানে কি জবাব দিব?’ উত্তরে আমি বলি, ‘আল্লাহ তো কোথাও বোরখা পরতে বলে নাই। বেশী বিপদে পড়লে এই ভাবীকে দেখিয়ে দিও। তোমার সে বিপদের দিনে সে দায় নিতে আমি রাজি আছি। তবে আমার কথা হচ্ছে কুরআনের নির্দেশ অনুসরণ ও পালন করতে হবে।’ 

ব্যাখ্যার নামে অপব্যাখ্যা: সুরা নিসার ২৪ আয়াতে বলা হয়েছে দাসীদেরও বিয়ে করা যায় তবে মোহরানা দিতে হবে। প্রাথমিক ইসলামের যুগে অনেক বিদুষী দাসীরা ছিলেন যারা সহজলভ্য ও ধর্ম জ্ঞানে গুণি ছিলেন। আয়াতে এরকম কোন মুতা বিয়ের অনুমোদন নেই। কিন্তু কুরআন বিরোধী দালাল পক্ষ ভুল জিনিস ধর্মের নামে এসব মুতা বিয়ের প্রতিষ্ঠা চালায়। আর বোকা মানুষগুলো কুরআন না জানার কারণে ভুল ভাল হাততালি দেয়। ছলে বলে কলে কৌশলে কখনো হযরত ওমরের বরাতে হালাল বলে প্রচার করে। যদি কুরআনে স্পষ্ট দলিল না থাকে নবীর নামেও একে হালাল করা সম্ভব নয় । আর সুরা নিসার ২৪ আয়াতে এসব মুতা বিয়ের কোন সামান্যতম যুক্তি নেই। ইবলিস এভাবে ময়দানে বারে বারে জায়গা করে নেয়, দু’নাম্বারী ধান্ধাতে মূল গ্রন্থের ব্যাখ্যা নয় বরং অপব্যাখ্যা করে। এভাবে ইবলিস ময়দানে প্রবেশের সুযোগ লুফে নিয়েছে। কারণ মূল গ্রন্থ কুরআনে প্রবেশের অনুমোদন পায়নি, সে সুযোগমত মিথ্যে বানোয়াট ও জইফ দুর্বল নামে হাদিস রচনা করে তাফসিরের রেওয়ায়েতেও ঢুকিয়ে দিয়েছে। কেউ বলছেন চার বিয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, মুতা বিয়ের অনুমোদন আছে। এসবই বলছেন কুরআনকে এড়িয়ে গিয়ে কারণ একমাত্র বানোয়াট হাদিস দ্বারা এসব যুক্তি টেকানো যায়। তবে কুরআন দ্বারা এসব কথা টেকে না। কারণ কুরআন যদিও চার বিয়ের অনুমোদন দেয় কিন্তু পরের আয়াতেই বলে এটি অসম্ভব তোমরা চারের মাঝে সমতা বজায় রাখতে পারবে না, সমতা রাখার বড় শর্ত জুড়ে দিয়ে এক বিয়েই উত্তম ফয়সালা দেয়া হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োজনে একাধিক বিয়ে করা যাবে তবে ঐ শর্তসহ।

বিদায় হজ্জ্বের মনগড়া ব্যাখ্যা: কৌশলী ইবলিসের কান্ডকারখানা ভয়ংকর! ব্যাখ্যার নামে কুরআনকে অবহেলা করে মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে। নবী জীবনেও এসব করতে পারেন না, একমাত্র ইবলিস পারে। আল্লাহ বলেছেন কুরআন পরিপূর্ণ গ্রন্থ, কুরআনের ব্যাখ্যা কুরআন নিজেই। আল্লাহর ব্যাখ্যার জন্য নবী নন, তিনি ময়দানের উদাহরণ। তার নামে কুরআনের পাশে গ্রন্থ রচনার অনুমোদন কুরআন দেয় না। তাই তার জীবিতকালে তিনি তার নামে কিছু লিখে রাখতে নিষেধ করেছেন। এটিও আমরা জেনেছি দুচার কথা লিখে রাখলেও তা আবুবকর ওমর(রাঃ) রা পুড়িয়ে ফেলেন। আল্লাহ কুরআনে স্পষ্ট করেছেন তিনি একজন বানিবাহক মাত্র, একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নন। আল্লাহর কালাম ব্যতীত নবীর বাড়তি কোন কথা নেই। এমন হলে সেটি কঠিন পাপ বলে বিবেচিত হবে। এবং কুরআনের হিসাবে ধরা পড়লে বলা হয়েছে তার কন্ঠনালী ছিড়ে ফেলা হবে। কিন্তু এখন আমরাই পাই অসংখ্য কুরআনহীন কথা হাদিসের নামে চলছে। নবী কন্ঠনালী ছিড়ার অপরাধ করবেন, এটি কি মানা যায়? এমন কথাও হাদিসে আছে আল্লাহর কালাম ছাড়া সাংসারিক কাজে তার ভুল হতে পারে, ওটি অনুকরনীয় নয়। কুরআন ছাড়া বাকীটা সাংসারিক কথা কাজকে গ্রহণ না করতে বলেছেন। তবে ইবলিস ঐ ছুতায় ইসলাম ধ্বংসের এজেন্ডায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।  

মানবিক সংযোজনে শর্ত পালিত হয়নি: যারা হাদিস কালেকশন ও পরিশুদ্ধির কাজ করেছিলেন সেখানে শর্ত ছিল একবার মিথ্যাচারে ধরা খাবে তাদের থেকে কোন হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়, শর্ত  বলা হলেও দেখা যায় এসব ধরা খাওয়া অপরাধীর কাছ থেকেও হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ হাদিস এসেছে এবং আজকের মুসলিম সমাজ তা পালন করে ধর্মের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। ধর্মকে অল্প দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই, কুরআন এটি রুখে দিয়েছে তার আয়াত দিয়ে। কিন্তু ওয়াজেয়ানরা এটি তাদের গলাবাজি ও হুমকি দিয়ে প্রতিষ্ঠার পক্ষে কুরআন বিরোধী অবস্থানে ছিলেন আছেন, সহজে যাবেন না। এদের কাজ কুরআনের বক্তব্যকে উল্টে দেয়। প্রথম অস্ত্র কুরআনকে ধ্বংস করতে প্রায় চৌদ্দশত বছর থেকে তারা ইবলিসের পক্ষ হয়ে লড়ছে। নবী মাটির তৈরী না নূরের তৈরী। নবী যদি স্বর্ণের তৈরী হন তাতে জনতার লাভ বা ক্ষতি কি? কুরআন তাকে মানুষ বলে স্পষ্ট করলেও ইবলিস অশান্ত, সে তার নিজের ব্যাখ্যা নিজে দেয়। কারণ তাকে মানুষ নবীকে অতিমানুষ অতিভৌতিক করতেই হবে। আরো প্রচার করে নবীর কোন ছায়া ছিল না। তাই যদি হবে তবে বদর ওহুদ খন্দক যুদ্ধের কি কোন দরকার ছিল? মূর্তিপূজক কুরাইশদের যুদ্ধের ডাকে নবী তাদের রোদে ডেকে নিলে, যুদ্ধ সেখানেই শেষ হতো। তখন তারা তাকে দেবতার আসনে বসিয়ে ৩৬০ মূর্তির সাথে আর একটি দেবতা যোগ করতো। কুরআন দিয়ে কোন অনাচার টিকানো যায় না, যখনই নবীর নামে মনগড়া মিথ্যা এনে দাঁড় করা হয় তখনই ইসলাম একটি প্রতিবন্দী ধর্ম হয়ে যায়। আর এসব প্রতারণাকে তারা বলছে কুরআনের ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যার জন্য তাদের লাগবে কেন? ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে আল্লাহই শ্রেষ্ঠ উৎকৃষ্ট ও যথেষ্ট। 

কুরআনের সত্যটা জানুন: ধর্ম অমূল্য ধন, সেটি অল্প দামে বিক্রির কাতারে কেন? যাদের সামনে কোন গবেষণা নেই, চিন্তা চেতনা নেই। ধর্ম মানুষকে যখন যুক্তির বদলে বেওকুফ বানায় তখন তারা তাবিজ কবজে যুক্তি খুঁজে পায়। মানুষকে প্রতারণা করে জিন চালান দেয়, প্রেত চালান দেয়। কিছু প্রশ্ন শুনলে হাসি পায়, দাঁত ব্রাশ করা কি জায়েজ? এটি আমাদের দু বছরের বাচ্চাও বুঝে কিন্তু বেওকুফ ধার্মিকরা বুঝে না। কুরআনকে অল্প মূল্যে বিক্রি করো না কথাটি কোন ওয়াজেয়ানরা মানেন না বলেই ধর্মের এত নাকানী চুবানি দশা। তারা ভুলেও বলেন না আপনারা কুরআন বুঝে পড়েন। তাদের ছাত্ররাও বুঝে পড়ে না, অনেকে নিজেরাও তেমন কিছু জানেনা বলেই তাদের মনগড়া গাঁজাখুরী কথাকে ধর্ম বলে চালায়। ১১৪টি সুরার এক বিরাট সংস্করণ কুরআন । আমাদের বাচ্চারা ছাত্ররা এর চেয়েও ভয়ংকর বড় বড় বই পড়ে অভ্যস্ত। মানুষকে প্রথমে কুরআন জানতে হবে। রসুলের নামে প্রচারিত হাদিস সত্য না মিথ্যা তা কুরআন না জানলে কেউ বুঝতেও পারবে না। কারণ যখনই কুরআন বিরুদ্ধে কথা হাদিসে আসবে সে খুব সহজে ধরতে পারবে এ কথাটি কুরআন বিরুদ্ধ কথা, যদি তার কুরআন জানা থাকে। কিন্তু ঐ প্রয়াস মুসলিমরা কস্মিনকালেও করেন না। এ জন্য ভুলের মাঝে পা থেকে মাথা ডুবিয়ে আছে তারা। তাহলে ধর্মের সব জটিলতা সহজ হয়ে যেত। মানুষ সুপথ সহজেই খুঁজে পেত।

ফতোয়ার মালিক আল্লাহ: জানা যায় মুনশিরা মুফতিরা ফতোয়া দেন। এটি অনেক জটিল বিষয় এ কারণে যে, এ কাজটি স্বয়ং আল্লাহর কাজ। কুরআন একমাত্র আল্লাহর ফতোয়া বই। সে হিসাবে ফতোয়া কোন মানুষ করার কথা নয়। এটি খোদার উপর খোদকারী। প্রাথমিক যুগে কেউ ফতোয়া দিলে তাকে বেত্রাঘাত করা হতো। হযরত ওমরের সময়ে তামিমদারী নামে এক ধৃষ্টান ধর্মান্তরিতকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হয় তার মিথ্যা ফতোয়াবাজির জন্য। যেখানে আল্লাহ চৌদ্দশত বছর আগে তার ফতোয়া বিলি করেছে, সেখানে কোন সংযোজন বিয়োজনের কোন সুযোগ নেই। যে বা যারা এ কাজটি নিজের মনগড়া ব্যাখ্যাতে করবে তারা বেদআত করবে। আর নবী বার বার বলেছেন যদি কেউ বেদআত করে, তবে সে জাহান্নামে যাবে। ঐ জাহান্নামে যাবার কাজটি বেশীর ভাগ প্রচারকরা দল বেধে করে চলেছেন। একমাত্র কুরআন মুসলিমদের একতাবদ্ধ করতে পারে। ইহকালে ও পরকালের দুটি বেহেশতের নিশ্চয়তা দিতে পারে। এ গ্রন্থ চিন্তাশীলের চিন্তার খোরাক ছাড়া আর কিছু নয়; এটি উচ্চ মানসম্পন্ন শিক্ষিতদের সিলেবাস। এ জটিলকে সহজ করে বোঝার সব ক্ষমতা তারা রাখেন। বাংলাদেশে কাজের মেয়েরা কাজ করে আর বিবি সাহেবরা স্কুলে বাচ্চা নিয়ে যান আর গালগল্পে সময় পার করতেন। এসব আমাদের সময়কার কথা বলছি। আমার কাছে মনে হতো এই মায়েদের মেধাগুলির অপচয় হচ্ছে এভাবে। সেখানে তারা বই পড়তে পারতো কিছু লিখতে পারতো,গবেষনামূলক  ধর্ম চর্চা করতে পারতো। পরচর্চা ও শাড়ী চর্চায়ই তারা মূলত করে সময় পার করতো। মৌলভীদের উচিত নামাজ পড়ানোকে পেশা হিসাবে না নিয়ে জীবন ধারণের জন্য ভিন্ন পেশা বেছে নেয়া। নামাজ পড়িয়ে কেন টাকা নিবেন। আপনার নিজের নামাজই তো আপনি পড়ছেন। আবার এর বিনিময় নিচ্ছেন, পেশা হিসাবে নেয়াতে সত্য মিথ্যা জুড়ে ব্যবসা করছেন। কখনো প্রতারণাও করছেন, উপরের আয়াতে ধরা খেলে আপনি লাজওয়াব!

শেষকথা: সম্প্রতি ‘তসলিমার কলামের জবাব’ গ্রন্থটির পিডিএফ দিয়েছি (https://nazmamustafa.files.wordpress.com/2021/04/taslimar-kolamer-jobab-book.pdf) আমার ব্লগের বুক সেকশনে। নাস্তিক্য ধারায় ইসলাম ধ্বংসের এজেন্ডা নিয়ে মুসলিমদের বিভ্রান্ত পথহারা করতে কাজ চলছে বিগত শতক থেকেই। ঐ সময়ে এর জবাবে এটি লেখা, মনে পড়ে ২৫/২৬ বছর আগে আমার হাই¯স্কুলের শিক্ষিকা প্রশ্ন রেখেছিলেন কুরআন না বুঝে পড়লে কেন পূণ্য হবে না। জবাবে বলেছিলাম আপা, আপনিই বিচার করেন একজন শিক্ষিকা আপনি, আপনি কি আপনার ছাত্রকে মার্ক দেবেন যদি সে না বোঝেই পড়ে বা জবাবও সেভাবে দেয়। আমার মতে সে কোন পূণ্য অর্জন করবে না, ফলাফল অশ^ডিম্ব। কুরআন খুবই শ্রুতিমধুর ও প্রাণকাড়া ছন্দময় বলেই আমরা অতি অল্পে এটি মুখস্ত করতে পারি। এটি মুখস্ত করাও জরুরী তাহলে আমাদের একতার সমন্বয় থাকে। এটি মুখস্ত করার জন্যই এটি এত শ্রুতিমধুর করে সাজানো হয়েছে এবং এটি খুব অল্পেই রপ্তও করা যায়। এর প্রমাণ আমরা নিজেরা তা রপ্ত করেছি। তারপরও অর্থ বোঝে তার মর্ম উদ্ধার করা জরুরী। দেখা যায় ধর্ম আলোচনায় কুরআনের কথার চেয়ে রসুলের নামে প্রচলিত কুরআন বিরোধী কথাই বেশী প্রচারিত হয়। কুরআনই আল্লাহর কালাম, আল্লাহর হাদিস। সাধারণত সমাজের অযোগ্যরা ইমামতি করে, যদিও ইসলামের রীতি অনুসারে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে ইমামতি করতে হয়। স্কুলে ওয়ান থেকে পাঠ্য তালিকায় কুরআন আবিশ্যকভাবে থাকা উচিত। একে অর্থসহ সবার কাছে এর ম্যাসেজ পৌছে দিতে হবে। পরিপূর্ণ জীবনে সেই হবে ইমাম, হতে পারে ডাক্তার হতে পারে ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে অধ্যাপক ব্যারিষ্টার। কুরআন প্রতিষ্ঠা পেলে সমস্ত সমাজ সভ্যতা এমন উচ্চতায় পৌছে যাবে পৃথিবীর কোন শক্তি নেই মুসলিমদের পেছনে ঠেলার। সমস্ত বিশ^ ছুটে আসবে ঐ সত্যে আত্মাহুতি দিতে। সময় থাকতে সঠিক কাজ করুন। ইহ ও পরকাল ঝরঝরে কেন করবেন? বর্তমানের ইমামরা সৎ ভাবে বাঁচার জন্য যে কোন পেশা বেছে নেন। প্রতিটি বাচ্চাকেও ঐ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। বাচ্চাদেরে ধর্মের বস্তুনিষ্টতা সুন্দর করে বুঝিয়ে শেখান ছোটকাল থেকে যা ইহ পরকালের জীবন গঠনের হাতিয়ার। তবেই কাটবে জটিলতা; বর্তমান সমাজের ঘুনেধরা মিথ্যায় ভরা জীবন ব্যবস্থা আর নয়, পরিপূর্ণ কুরআন ভিত্তিক সত্য ধর্মের নির্দেশনায় মনোযোগী হন। সহজ সরল জটিলতা পরিহার করা সুরা ফাতিহার পূণ্যে গড়া জীবন হোক, আমাদের চলার পথ। যদি কবিতার ছন্দে বলি – এটিই আমার শেষকথা।

“অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি বিচার দিনের স্বামী,

যতগুণ গান হে চির মহান তুমিই অন্তর্যামী।

দ্যুলোকে ভূলোকে সবারে ছাড়িয়া তোমারি চরণে পড়ি লুটাইয়া,

তোমারি সকালে যাচি হে শকতি, তোমারি করুণাকামী।

সরল সঠিক পূণ্য পন্থা মোদেরে দাও গো বলি,

চালাও সে পথে যে পথে তোমার প্রিয়জন গেছে চলি।

যে পথে ভ্রান্তি চির অভিশাপ, যে পথে ভ্রান্তি চির পরিতাপ

হে মহাচালক! মোদেরে কখনো করো না সেপথ গামী।

২৩ এপ্রিল ২০২১।  


নাজমা মোস্তফা

২০২০এর রমজানের ৩১ মে তারিখে আমার ব্লগে একটি লেখা আপলোড করেছিলাম। লেখাটির শিরোনাম ছিল “আমরা কি আল্লাহর রমজান পালন করছি?” আজ ২০২১এর রমজান শুরু হয়েছে আজ রাতেই এপ্রিলের ১৩ তারিখে আমরা প্রথম সেহরী দিয়ে এবারের রোজা শুরু করবো। প্রতিটি কাজই যখন এবাদতের অংশ, তখন প্রতিটি সুচিন্তা আমাদের পথ দেখায় যেখানে প্রতিটি কুচিন্তা মানুষকে পথহারা ও বিভ্রান্ত করে। খোলামনে ভাবলে বোঝা যায় বাংলাদেশীরা খুব ভয়ংকর খারাপ সময় পার করছে। রাজনীতি ও ধর্ম দুটোই কেমন যেন গোলমেলে ঠেকছে। অনেকে বলবেন রাজনীতির সাথে ধর্ম মেলানোতেই এ গন্ডগোল। আমি মনে করি কথাটি ঠিক নয়। কারণ ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে এ দুয়ের সংমিশ্রণ হয়েছে আল্লাহর আদেশে ও নবীর কর্মকান্ডে। ইসলামের ইতিহাস বলে মসজিদই ছিল ইসলামের প্রথম পার্লামেন্ট হাউস। সেখান থেকেই দেশের সমাজের সব সমস্যা আলোচিত হতো ও সমাধান আসতো। হাতের কাছেই ছিল খোদা প্রদত্ত সিলেবাস। তা খেজুর পাতায় লিখা হোক আর সাহাবাদের অন্তরেই খোদাই করা হোক। সেটি বদলাবার বা ওদলবদল করার কোন সুযোগ কোনদিনও ছিল না। এর কারণ ঐ দিন থেকেই এটি মানুষের মুখে মুখে অবস্থান নিয়েছে। আরবের বাসিন্দারা তাদের নিজ ভাষাতে এটি রপ্ত করেছে, আর রপ্ত করার সাথে সাথে তারা সেটি বুঝতেও পেরেছে। বিপদ হয়েছে অন্য ভাষাভাষীদের তারা সুরা রপ্ত করলেও ওর অর্থ বুঝতে পারছে কম। তবে প্রতিটি সুরার সাথে সাথে ঘটনা জানা থাকলে অতি অল্পেই ওসবও রপ্ত করা যায়। বিশেষ করে নামাজে যেসব সুরা আমরা ব্যবহার করি তা অর্থ না জেনে নামাজ পড়ার কোন যুক্তি হয় না। লেখাপড়া জানা প্রতিটি মানুষকে এটি অর্থ বুঝে রপ্ত করলে নামাজের আগ্রহ ও একাত্মতা বহুগুণ বাড়ে। গতবছরের লেখাতে আমি দেখিয়েছি আমাদের অনেকেই আল্লাহর নির্দেশিত রোজার পাশে রসুলের নামে নির্দেশিত আরো বাড়তি কিছু রোজায় অভ্যস্ত হয়ে আছেন, ছিলেন হয়তো আরো বড় সময় থাকবেন।

কারো কারো মতে রোজার আগে ছয় ও পিছে ছয় আর কেউ কেউ বলেন শুধু শেষের ছয় রোজা রাখার বিধান রাখা হয়েছে যার কোন দাগ কুরআনে নেই। এই ছয় রোজা আমার জীবনের মোড় লেখালেখির দিকে ঘুরিয়ে দেবার এক মহাসোপান। ঐ ঘটনাই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় লেখালেখিতে ঢুকতে ঐ বিষয়েও একটি লেখা আছে যার নাম হচ্ছে ‘হোঁচট’। যদিও চিন্তার চলা আমার অনেক আগে থেকেই। সাম্প্রতিক সময়ে মামুনুল হক নামে এক হেফাজত কর্তাব্যক্তির অনেক উল্টাসিধা কাজের সুবাদে সৃষ্ট জটিলতা থেকে গোটা দেশে তুলকালাম কান্ড ঘটছে। অনেক সূত্র তথ্য বলছে এসব কান্ড সরকারই ঘটাচ্ছে, নিজের পাপ লুকাতে এসব অপকর্ম সাজানো হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেহ কারে নাহি পারে সমানে সমান। কিছু আগে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের অপকীর্তির মহা মহা সংকট কথা আল জাজিরা প্রকাশ করে একদম দেশকে উলংগ করে দিয়েছে। এদেশে কোন নীতি নৈতিকতা আর বাকী থাকে নাই। ২০০৯ সাল থেকেই শুরুতে নিজ দেশের বিডিআর হত্যা ঘটিয়ে শেখ মুজিবের কন্যা সরকার অপকর্মে ও মিথ্যাচারে এমন কিছু বাকী রাখেন নাই যা তিনি করেননি। বর্তমানে দিনের ভোট হয় রাতে, কোন বৈধতা নেই। মানুষ আজকাল ভোট দিতে যায় না। ওটি কন্যা সরকার গিলে হজম করে দিয়েছেন। আবার প্রতারণার হাতিয়ার হিসাবে কথায় কথায় লজ্জাস্কর ভাবে জায়নামাজ খোঁজা নামাজ পড়া তাহাজ্জুদ পড়া কুরআন তেলাওয়াত করার গল্প করেন, এসব বলে নিজেকে মুসলিম বলে জাহির করার চেষ্টা করেন। কেউ তাকে অমুসলিম বলে না, তারপরও কেন করেন জানি না। এর একমাত্র কারণ এরা কুরআন বুঝে কখনোই পড়েন না। পড়লে আল্লাহ যেখানে এসব না করতে আদেশ দিয়েছে সেখানে তাদের এসব করার কথা ছিল না। এরা আসলে বর্ণচোরা ধর্ম ব্যবসায়ী, রাজনীতির আড়ালে এটি তাদের বর্ণচোরা ব্যবসা। কন্যা সরকার সমানেই অনাচারে মিথ্যায় ধরা খাচ্ছেন কিন্তু তিনি এসব নিয়ে নীতি নৈতিকতার বিষয়ে মোটেও ভাবেন না। ভাবখানা এমন যেন খোদা প্রদত্ত কোন এজেন্ডাতে তারা ধর্ম নিয়ে মাঠে আছেন। এ জন্যই বলছি ধর্মটি সবার হাতের পুতুল নাচের বিষয় কি? সহজভাবে অনেকেই বলেন এসব মনে হচ্ছে রোজ কিয়ামতের আলামত মাত্র। সবার মুখে ধর্ম আর কাজে অধর্ম খোদ অবৈধ প্রধানমন্ত্রীসহ। আমি হোঁচট খেয়েছিলাম আজ থেকে ২৫ বছর আগের রমজান পার করা সময়ের ঐ হোঁচট আমার গতি ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সেদিন থেকে আজ অবদি আমি কমবেশী লিখছি, থামি নাই।

গতবছরের লেখাটির উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর নির্দেশিত রোজা কি আমরা করছি? আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে আমি নিতান্ত একজন সাধারণ চিন্তাশীল ছিলাম, লেখিকা ছিলাম না মোটেও। তবে তুখোড় কারো ঝগড়ার জবাব দিবার মত রসদ আমার জমা ছিল না। আজ একটি কঠিন সত্য প্রকাশ করছি বাহাদুরী বা কৃপণতা প্রকাশ করছি না মোটেও। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত জীবনেও কোন রোজা আমার বাকী নেই। আমি সবকটি রোজা পালন করেছি। কোন রোজা ভাংলেও সেটি আমি পরবর্তীতে রোজা শেষ হওয়ার নিকট সময়েই রেখেছি। কিন্তু জীবনেও এর বাইরে আর বাড়তি কোন রোজা রাখি নাই। আমার পূণ্য হোক আর পাপ হোক এটি আমার কৃতকর্ম। রোজার এই বস্তুনিষ্ঠতা এটি আমার আত্মবিশ^াস গড়ে দিয়েছে। আমি যদি মিথ্যা বলি আমি জানি তার দন্ড কত কঠিন হবে আর সত্যটা বলা দরকার তাই বলছি। একবার আমরা সমবয়সী সহপাঠিরা প্রায় পাঁচ সাতজন এক হয়েছি রোজার পর পরই। প্রশ্ন উঠেছে কে কয়টি রোজা রেখেছো? ওখানে অনেকেই আমার বড় আপা খালা, তারা আমার থেকেও অনেক কম রেখেছেন, কেউই সবকটি রোজা রাখেন নাই। আমার নিজেরই লজ্জা লাগলো, কেউ বললো আমি সাতটি কেউ বলে আমি পাঁচটি, সামনে পরীক্ষা, আমি হু বলে এমনভাবে মাথা নাড়ি যে তোমাদের মতই। স্পষ্ট কথাটি হচ্ছে আমি সেদিন গর্ব করে বলতে পারি নাই, যে আমি সবকটি রেখেছি।

তাই সংসার জীবনে পরবর্তীতে যখন ঢুকি তখন ঢাকাতে পাড়ার এক ভাবীর ছোবলে আমি এমনই আহত হই যে আমার জীবন স্থবির হয়ে পড়ে। কয়টি দিন আমার কেটেছে এরকম কষ্ট আমি জীবনেও পাই নাই। বিষয়টি ছিল রোজার পরের ঐ ছয় রোজা রাখা মহিলা রোজা মুখে আমার উপর হামলে পড়েন যেন আস্ত গিলে খাবেন। আমি হাসিমুখে বলেছিলাম রোজা শেষ এখন আবার কিসের রোজা। আমি তার ঐ রোজা সম্বন্ধে জানি না বলেই তার এত হামলে পড়া। জবাবে আমি বলি জানি না রে ভাই। আমি জীবনেও রোজা বাকী রাখি নাই আর বাড়তি কোন রোজাও করি নাই। তখন মহিলা আমাকে টিটকারী দিয়ে বলেন, আপনি তো বেহেশতে চলে যাবেন। আমি মনের বেদনা মনেই চেপে রেখে বলি আল্লাহ কবুল করুক। এতে মহিলা আরো বেশী রেগে যান। তার হিসেব মত আমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে কারণ আমি ঐ ছয় রোজার কথা জানিইনা আর তিনি জানেন। জানি না আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছে কি না, তবে এসব আমার জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা। যখন প্রায় বেশ দিন গড়িয়ে যাচ্ছে কোন কাজই করতে পারি না, ঐ কষ্টে আমি এতই আহত বিধ্বস্ত হয়েছি যে বলার মত না। এর বড় কারণ আমাকে জীবনেও কেউ এভাবে সাক্ষাৎ ছোবল মারে নাই। বাসায় এসে কর্তাকে বড় ছেলেকে বলেছি তারপরও মনে শান্তি পাইনা। হঠাৎ কি মনে করে টেবিলে কাগজ কলম নিয়ে বসি আর গড় গড় করে আদ্যপান্ত সব লিখে নেই, ঐদিন কি ঘটেছিল, লেখা শেষ হলে আমি ওটি চাপা দিয়ে রেখে দেই। মনের অলক্ষ্যেই বুঝি মনটা হাল্কা হয়ে যায়। আমি আমার দৈনন্দিনের কাজে নেমে পড়ি। ঐসময় আমার বড় ছেলে বাহির থেকে ঘরে ঢুকেই কাগজটি উল্টে দেখে সে গড় গড় করে ওটি পড়ে নেয়। এবং ঐ কাগজ নিয়েই আমার কাছে ছুটে যায় আর বলে ‘আম্মু তুমি লিখছো না কেন? তোমার কষ্টটি আমি শুনেছি তোমার মুখে আর তোমার লেখাটি দেখে ভাবছি তুমি লিখছো না কেন?’ ঐটি আমার আজকের লেখার হাতে খড়ি দুর্ঘটনার বদৌলতে পাওয়া পুরস্কার। আমার ছেলের অনুপ্রেরণা আমার আজকের লেখার কৃতিত্ব তার বড় পাওনা। সাথে ছিল বাবার সুপ্ত অনুপ্রেরণা।

https://wordpress.com/post/nazmamustafa.wordpress.com/6018

গত বছরের রমজানের লেখাটি আবারো অনুরোধ করবো লিংকটি আবারো দিলাম, সেটি পড়তে অনুরোধ করবো। মুসলিমদের অপকর্ম ব্যর্থতা ও মূল সত্য কুরআনকে এড়িয়ে চলাই কি ইসলাম? ওটি পরখ করেন, পড়েন। আল্লাহকে অন্তরে ধারণা করেন, কুরআনকে বুকে ঠাঁই দেন, শুধু মুখে নয়। বেশীর ভাগ মানুষ কুরআন জপেন মানেনও না, পালনও করেন না। মনে করেন জপেই শেষ। শিক্ষিতরা একথা বলে পার পাবেন না। আপনার চক্ষু কর্ণ হাত কেউই নিরাপদ নয়। আপনার বিপক্ষে প্রতিটি অঙ্গ রায় দেবে। আল্লাহর কালামের চেয়ে বড় অন্য কিছুই হতে পারে না। আগে আল্লাহকে প্রতিষ্ঠা করবেন তার বাইরে যা করবেন তা, অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। কারণ সেটি নির্দেশ নয়। তার নাম বিদআত। বিদআত কি? যা ধর্ম নয়, ধর্মের নামে বাড়তি সংযোজন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এটি নবীর কড়া নিষেধ ছিল। ইহুদীরা এভাবে ধ্বংস হয়েছে, আমরা যেন বাঁচি। ঐ নির্দেশ কুরআনে এসেছে। অনুরোধ করছি কুরআন পড়েন, জানেন, বুঝে পালন করেন। ঐ কুরআন প্রতিষ্ঠার জন্য নবী এসেছিলেন, তিনি কুরআনকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন কথা বলতেই পারেন না। অসম্ভব, কুরআনের বাইরে ভিন্ন কথা বললে কুরআন বলে তাকে মোকাবেলা করতে হবে দ্বিগুণ শাস্তি তার জীবিত অবস্থায় ও মৃত্যুকালে (বনি ইসরাইলের ৭৫ আয়াত)। মুসলিমরা কিভাবে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে এর উদাহরণ ময়দানে সবাই দেখছেন। সরকারসহ জনতারা অনেকেই ধর্মের নাম নিয়ে অনেক কিছু করছে এসব ধর্ম নয়। কুরআন দ্বারা কোন অপকর্ম প্রমাণ করা যায় না, এটি অসম্ভব। কিছু তফসিরকারক বলেন নবী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মিথ্যা বলেছেন। যারা এটি বলে এরা কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা করে। সত্যটি হচ্ছে বালক ইব্রাহিম ঐ সময় বড় মূর্তিটাকে ভাঙ্গেন নাই এবং কুঠারটি তার কাঁধে রাখেন। তারা তাকে প্রশ্ন করলে তিনি মিথ্যাচার করেন নাই বরং উল্টো বলেন, বড়টি তো দাঁড়িয়ে রয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করো। সে বলতে পারে না? তিনি চেয়েছেন তাদের অন্ধদের চক্ষু খুলে দিতে। যে মূর্তি তার নিজেকে প্রতিরোধ করতে পারে না সে কিভাবে তোমাদের প্রতিরোধ করবে।

মানুষের স্বরচিত হাদিস দ্বারা তারা প্রমাণ করে দেয় রসুলের নামে প্রচারিত হাদিসে মিথ্যা বলা জায়েজ। তার সহজ জবাব এসব বাতিল হাদিস সৃষ্ট হয়েছে ইসলামের মূল সত্যকে ধ্বংস করার জন্য। ঐ সময়ও যারা ইহুদী খৃষ্টান থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলামে এসেছে তারা এসব গালগল্প হাদিসের বরাতে ঢুকিয়ে দিয়েছে মানুষকে সত্য থেকে বিচ্যুত করতে এটি তারা করেছে, ইতিহাস গবেষণা তাই স্পষ্ট করছে। অনেকে অতীত ধর্মকে ভুলে না গিয়ে ওসব ঢুকিয়ে দেয় চেতনে অবচেতনে।

ইসলামের সুক্ষ্ম গবেষক মোহাম্মদ আকরম খাঁর মোস্তফা চরিত থেকে উদ্ধৃত করছি। সাহাবীগণ যা বলেছেন বা করেছেন তার জন্য সাহাবীগণই দায়ী; হযরতের বা ইসলামে তার জন্য কোন জওয়াবদিহিতা নেই (৬০, ৬১ পৃষ্ঠা)। ‘আলায়ী বলেন, সকল দলের অপেক্ষা অধিক অনিষ্টকারী তারা যারা খুব পরহেজগারী দেখিয়ে থাকে’ (ইমাম আলায়ী সুফিদের কথা বলে দেখিয়েছেন, কিভাবে তারা অসংখ্য মিথ্যা হাদিস রচনা করেন, পৃষ্ঠা৬২)। এভাবে জানা যায় যা সাহাবীগনের নামে বা স্বয়ং হযরতের উক্তি বলে কথিত হয়েছে যদিও সেগুলি অসংলগ্ন, অবিশ^াস্য ও অপ্রামাণিক”(৬৩ পৃষ্ঠা)। ‘জ্ঞান ও যুক্তি দ্বারা আমরা এই শ্রেণীর হাদিস গুলি আবার বাছাই করে নিতে পারি (ফওজুল কবির, মোহাম্মদী প্রেস, ৪১ পৃষ্ঠা, মোস্তফা চরিত ৬৪ পৃষ্ঠা)। ‘আর একটা গুঢ় তত্ত্ব এই যে, ইহুদী ও খৃষ্টানদের নিকট থেকে (আগত বিশ^াস সংস্কার ও কিংবদন্তিগুলি) প্রচুরভাবে আমাদের ধর্মে প্রবেশ করেছে। কিন্তু আমাদের স্বীকৃত শাস্ত্রীয় বিধান এটি যে, ইহুদী ও খৃষ্টানদের বর্ণনাগুলিকে সত্য ও মিথ্যা কোন প্রকার বলিও না।’ এই শাস্ত্রীয় বিধান থাকার পরও লেখকগণ ঐ সকল বিবরণকে সত্যরুপে গ্রহণ ও বর্ণনা করেছেন (ঐ ফওজুল কবির সূত্র)। এ প্রসঙ্গে ইবনে খাল্লেদুন বলেছেন: ‘আমাদের লেখকগণ ঐ সকল কিংবদন্তি ও গল্প গুজব নকল করে তফসিরের কেতাবগুলোতেও ভরে তুলেছেন। আগেই বলা হয়েছে এসব গল্পের মূল মূর্খ ও অজ্ঞ মরু প্রান্তরবাসী ইহুদীদিগের নিকট থেকে গৃহীত। অথচ তারা যা নকল করেছেন তার সত্যাসত্যও তারা পরীক্ষা করে দেখেন নাই মোকদ্দমা ইবনে খাল্লেদুন) (মোস্তফা চরিত ৬৪/৬৫ পৃষ্ঠা)।

ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলের একটি উক্তি বিখ্যাত কালবী ও মোকালেতের তাফসির প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত আগা গোড়াই মিথ্যায় ভরা। তিনি ঐসব তাফসির পড়াও হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন। কথা ছিল জাল ও দূর্বল হাদিস চিহ্নিত করণের কিন্তু পরবর্তীরা এর উপর আরোপিত কঠোর আদেশ পালন করেন নাই। (ঐ গ্রন্থ, ৬৮ পৃষ্ঠা)।

কে বা কারা এসব অপকর্মে জড়িত থেকেছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। (ঐ গ্রন্থ, ৬৯ পৃষ্ঠা)।


(১) জিন্দিকগণ: এরা ধর্মের সর্বনাশ করতে বহু সংখ্যক হাদিস জাল করেছেন, এরা মূলত পার্সিক ধর্মাবলম্বি। এরা ইসলামে আসলেও ইসলামের ক্ষতি করতে তাদের পূর্ববর্তী বিশ^াসের উপরই কাজ করে। বর্তমানে প্রচলিত অনেক বেদআতের মূল এরাই।
(২) অতি পরহেজগারগণ: (সওয়াব ও ফজিলতের আশায়)
(৩) মোকাল্লেদগণ: নিজ মাযহাবের নামে ও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অসংখ্য জাল হাদিস রচনা করেন
(৪) মোসাহেবগণ: রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে রাজা বাদশাহ আমির ওমরাহ প্রভুর সমর্থণে মিথ্যা হাদিস রচনা করেন
(৫) ওয়ায়েজগণ: ওয়াজের অভিনবত্ব ও চমৎকারিত্ব প্রদর্শণ করতে ওয়াজ ব্যবসায়ীরা আজগুবী প্রচারে এসব মিথ্যা হাদিস প্রচার করেন।


হযরতের জীবনকালে মিথ্যা, জেনা, চুরি মদপান, ও নরহত্যা ইত্যাদি হারাম কার্য কোন সাহাবী কর্তৃক কখনো ঘটে নাই, এ কথা কি কেউ বলতে পারেন? এসব সাহাবী নরনারীদের দন্ডভোগের কথা কি হাদিসে বর্ণিত হয় নাই? জিজ্ঞাসা করি, ওসমান, তালহা, জুবের, এসব সাহাবীদেরে হত্যা করা, পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হওয়া এবং সাহাবীদের হাতেই বহু সংখ্যক সাহাবী হত্যা – এসব কি ইসলামে অনুমোদিত হালাল ও পূণ্য কার্য? (কুরআন ও বহু সহি হাদিসে এর উল্লেখ আছে) (ঐ গ্রন্থ ৫৮ পৃষ্ঠা)।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সাহাবীদের মধ্যে এরুপ লোকও ছিলেন, যারা সময় সময় ভ্রম করতেন, তাদের পরবর্তী সময়েও এই অবস্থা। এজন্য সহী আখ্যায় যেসব হাদিস সংকলিত হয়েছে, তার মধ্যে এরুপ হাদিসও আছে, যা ভ্রম বলে পরিজ্ঞাত (কেতাবুল তাওয়াচ্ছোল ৯৬ পৃষ্ঠা)। সাহাবীদের ভক্তি করতে অন্ধভক্তি করতে ইসলাম বলে না। বিবেকবর্জিত এসব বিশ^াসই হচ্ছে নরপূজার ভিত্তি। তারা বাড়াবাড়ি করতে করতে এমন কথাও বলে যে আল্লাহর পক্ষেও মিথ্যা বলা সম্ভব কারণ তিনি সব পারেন (ঐ গ্রন্থ ৫৮ পৃষ্ঠা)। এরকম অবস্থায় একজন সত্যনিষ্ট মুসলিমকে খুঁজে দেখতে হবে সহি হাদিস হবে মাত্র সেটি যা কুরআন দ্বারা অনুমোদন পায়, নয়তো তা সহি বলে গন্য হবার নয়। কুরআনে নেই এবং স্বপক্ষের কোন কথা কখনোই বলা সঠিক নয় যে এটি নবী মোহাম্মদ বলেছেন, তার ভিত্তি একমাত্র কুরআন। সত্যকে সন্ধান করতে অসংখ্য যুক্তিসমূহ ময়দানে থাকলেও এর সমাদর করা উৎসাহী খুব কম। বাইবেল ও কুরআনে বর্ণিত ঐ গল্পের আদম ও ইবলিসের রুপক গল্পের ইশারা সেই সত্যটি স্পষ্ট করছে। ইবলিস কিভাবে আল্লাহর সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে জিতছে, এসব তারই ইঙ্গিত বহন করছে। তবে আল্লাহ তাকে জবাবে বলেছেন আমার প্রকৃত অনুসারী যারা তাদের তুমি কখনোই তোমার দলে ভিড়াতে পারবে না। একমাত্র এই জায়গায় ইবলিস হতাশ হবে। আল্লাহ আমাদের নবীকে বলেন, “তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা আল্লাহর বাণী প্রত্যাখ্যান করে, পাছে তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যকার হয়ে যাও” (সুরা ইউনুসের ৯৫ আয়াত)। আল্লাহ যা নবীকে বলেছেন, তা কি আমাদেরেও বলা হয়নি? প্রশ্নটি সবার সামনে রেখে লেখাটি এখানেই শেষ করছি।

সবাই ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন।
রমজান মোবারক।
এপ্রিলের ১৩ তারিখ ২০২১। রাত তিনটা।

নাজমা মোস্তফা

বিশেষ দ্রষ্টব্য: তসলিমার কলামের জবাব গ্রন্থটির পুরো পিডিএফ দিয়ে দিয়েছি (On top BOOKS section) বুক কলাম সেকশনে।

উৎসাহী পাঠকরা খুঁজে নিবেন বাংলাদেশের নাস্তিকতা বনাম মূর্খতা কিভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সাজানো হয়েছে বিগত শতকে আর ময়দান উত্তপ্ত করা হয়েছে। যার খেসারত আজো মানুষ দিয়ে যাচ্ছে, ময়দান আজও ক্ষরা জরাগ্রস্ত, ইসলাম ধ্বংসের পায়তারা দ্বিতীয় স্বাধীনতার শুরুর কাল থেকে চলছে, চলবে। আপনারা জেগে উঠুন, সত্যকে জানুন। এটি প্রতিটি জনতার ফরজ কাজের একটি সত্যকে জানা ও নিজের বিবেকের নির্দেশ মেনে সঠিক কাজ করা।

প্রকাশিকাঃ

নাজমা মোস্তফা

প্রচ্ছদঃ এহতেশাম মোস্তফা,

বইটির প্রচ্ছদ উপরে আমার বুক্স আইকনে আছে।

৬২/সি ইউনিভার্সিটি কোয়ার্টার

নীলক্ষেত ঢাকা- ১০০০

ফোন ৮৬৯৬৩৯

প্রকাশকালঃ জুলাই ১৯৯৬ ইং

কম্পিউটার কম্পোজঃ অপূর্ব কম্পিউটার।

মুদ্রণেঃ অপূর্ব প্রিন্টার্স

১৯০, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।

ফোনঃ ৮৬৩১১৩

মূল্য ৬০.০০ টাকামাত্র।

সূচীপত্র:

(১) কুসংস্কারের জঞ্জালে জ্বলছি মোরা (ক)

(২) কুসংস্কারের জঞ্জালে জ্বলছি মোরা (খ)

(৩) নির্বাচিত কলামের নির্যাতিত নারী

(৪) ইসলামের ইজ্জত ইরানের নারী

(৫) পাশ্চাত্যে নারী

(৬) অনেকের চোখে

(৭) ভারতে মিশ্র বিয়ের প্রস্তাব

(৮) যুক্তির মাধ্যমে মুক্তির অন্বেষায়

(৯) তসলিমার তমসার তন্দ্রা কি কাটবে?

(১০) ভিন্ন সম্প্রদায়ের মনিষীদের দৃষ্টিতে

(১১) সংকীর্ণতার গন্ডিতে বাধা ধর্মের মহানুভবতা

(১২) ইসলামে বিয়ে 

(১৩) উত্তরাধিকারের গ্যাড়াকলে নাসরিন

(১৪) রসুল(সঃ)এর বিয়ে

(১৫) ইসলামের পর্দায় তসলিমার লজ্জা

(১৬) পর্দার আয়াত

(১৭) তসলিমা নাসরিনের উত্থানের নেপথ্যে কিছু তথ্য

(১৮) শিকড়ের সন্ধানে

(১৯) ইসলামপূর্ব জগতের অবস্থা

(২০) উপসংহার

উৎসর্গ:

যারা আমায় তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন, সত্যের দীপশিখা জ্বালিয়ে জীবনকে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন, সেই পরম শ্রদ্ধেয় বাবা-মা এর প্রতি উৎসর্গ করলাম আমার এই প্রয়াসটুকু। আমার সুকর্মের অংশীদার তারাও। আল্লাহ তাঁদের অনন্ত জীবন মহাআনন্দের করুক। আজ বাস্তবের সংকীর্ণতার বাইরে তাদের বসবাস। জীবনের অনেক হতাশার রাস্তায় আলো জ্বালতে আজীবন প্রাণান্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এই দুই জোড় মানিক আমার। স্রষ্টার আপনার হোন, আদরের হোন, সম্মানের অংশীদার হোন আমার বাবা-মা।

ভূমিকা :

     ধর্মের মৌলিক জিনিসকে অবজ্ঞা করে সমাজের নানান ত্রুটি বিচ্যুতিই ধর্মের অঙ্গ হিসাবে সমাজের সর্বত্র অনাচার হয়ে ছড়িয়ে আছে আর আমাদের সমাজপতিরা তার প্রতিবাদ না করে বরং প্রতিপালনই করে থাকেন। সে কারণেই আজ এসব তসলিমাদের আবির্ভাব। যুগে যুগে ধর্মের নামেই অধর্মের সৃষ্টি হয়েছে, আর এ অধর্মের অনাচারকে ঠেকাতে এগিয়ে এসেছে কঠিন হাতে এক শান্তির ধর্ম-ইসলাম।

     ইসলামকে নিয়েও ব্যবসা কম হয় নি, এখনও হচেছ, হয়তো আরও হবে। তবু অবশ্যই এই শান্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হবে সারা বিশ্বময়-এ কুরআনেরই ভাবষ্যদ্বানী।

     তসলিমা এবং তারই সহযোগী বেশ কিছু বিশেষ ব্যক্তিত্বের নাস্তিকতার জবাব এই গ্রন্থখানি। সে হিসাবে তাদের অনেক ভুল, বিভ্রান্তির জবাবে আমার এ সামান্য প্রয়াসটুকু যেন তসলিমাসহ গোটা বিশ্বের হতাশার মাঝে আলোর সঞ্চার ঘটায় এ আকাঙখা রেখেই এ লেখার উপস্থাপনা।

     নাসরিনের ভাষায় ইসলাম একটি বিতর্কিত বাজে উপাখ্যান। যার প্রতিবাদ করতে বসেই আমার এ বই লেখা। তাই এ উপাখ্যান যে বাজে নয়, তা প্রমাণ করতে অবশ্য আরো আরো গুণীজনদের সাহায্য সহযোগিতা আমাকে প্রমাণ স্বরূপ খাড়া করতে হয়েছে। যার কারণে অনেক সময় অনেক বিজ্ঞ জনের জ্ঞানগর্ভ কথা ও তথ্য সংগ্রহ করেছি আমার বক্তব্যকে আরো বস্তুনিষ্ট ও জোরালো করার জন্যই।

     তাছাড়া আলহাজ্জ ডাঃ জহুরুল হকের ‘সহজ সঠিক বাংলা কুরআন’ থেকে তসলিমার বিতর্কিত বেশ কিছু আয়াতের বাংলা তরজমা সুবিন্যস্তভাবে দেয়ার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া আরো আরো তরজমা থেকেও আমি উদ্ধৃতি টেনেছি। ডাঃ হকের তরজমা কিছুটা বিশ্লেষণধর্মী হওয়াতে পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে আমি এটার সাহায্য নিয়েছি। ‘নির্বাচিত কলামের’ প্রতিটি আয়াত যেগুলোকে নিয়ে নাসরিন খেলো কথাবার্তা বলেছেন তা আমি অবশ্যই এখানে এনেছি। তাছাড়া বিয়ে, তালাক, পর্দা ও উত্তরাধিকারের নানান ত্রুটি বিচ্যুতি তুলে ধরার কারণে কুরআনের দৃষ্টিতে পাঠকের কাছে এসব কিছুর একটা ধারণা দেয়ার জন্য আমি অনেক সময় যথেষ্ট সংখ্যক কুরআনের উদ্ধৃতি টানতে বাধ্য হয়েছি।

     আমার এ লেখা শুধু তসলিমার প্রতিবাদ করাই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, আমার মূল লক্ষ্য আমার দেশের উঠতি তরুণ তরুণীর আশায়ভরা অনাগত ভবিষ্যত; যার দিকে আমরা তাদের সুন্দর জীবনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। বিজয় স্মরণীর মাঠের গত বইমেলার ‘মন্তব্য পুস্তিকাতে’ আমার দেশের তরুণদের কিছু মন্তব্য আমাকে বেদনাহত করে যার ফলশ্রুতিতে আমি আরো বেশী করে অনুপ্রাণিত হই বইটি লেখার কাজে হাত দিতে। তাই আমার টার্গেট তসলিমা নন, বরং আগত প্রজন্ম। প্রগতির নামে গতিহীনতার শিকার যেন না হয় আমাদের প্রজন্ম। বিভ্রান্ত যুক্তির মানদন্ডে প্রকৃত যুক্তির মাপকাঠিতে বিচার করার বোধ তাদের মাঝে বিকাশ লাভ করুক, এই কামনায় আমার এ প্রয়াসটুকু শুধু তাদের জন্য। খুব স্বল্প সময়ের আয়োজনে আমার এ লেখার প্রথম সংস্করণে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকা স্বাভাবিক। আমি আশা করি আপনাদের সুবিবেচনাই আমার মূল্যায়নের মাপকাঠি হবে। আল্লাহ হাফিজ।

নাজমা মোস্তফা।