নাজমা মোস্তফা
যে ধারা চালু করেছিলেন শেখ মুজিব নিজে, সেটি ধরে রেখেছেন তার কন্যা আজ অবধি। ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবারে সিটি নির্বাচনের দিন হঠাৎ ৭/৮/৯ (?) বাসে আগুন দেয় কে বা কারা। কয়েকটা রং এর বাস পুড়তে দেখলাম। এর মাঝে জনতার কেউ একজন বেশ চড়া গলাতে বলতে শুনলাম এক বাসের সাথে অন্য বাসের ধাক্কা লেগে আগুন ধরেছে। মূল সত্যকে এড়াতে এরা সরকারের পোষা দালাল, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। এ ঘটনায় শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, বংশাল, কলাবাগান, কাঁটাবন, সূত্রাপুর, গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার ও প্রেস ক্লাব, খিলক্ষেত ও তুরাগ আক্রান্ত। বিভিন্ন থানায় ৯ মামলায় ২৮ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এভাবে গোটা ঢাকাতে স্থানে স্থানে বাসে আগুন দেয়া হয়, ৩২ জন ধড়পাকড় আসামী সেই শনিবারের বিকেল অবধি, এদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। দুইশ জনকে আসামী টার্গেট করে এসব কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। প্রায় সবাই বিরোধী দলের নেতাকর্মী। ১১টি মামলায় ৪৮ জন করে বিএনপির কর্মীরা কারাগারে রয়েছেন। ১০টি মামলার বাদী হচ্ছে পুলিশ ও একটি মামলা করেছেন এক পরিবহনের মালিক ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া, তিনি যদিও বাদী কিন্তু ঐ মামলার কোন খবর জানেন না। দুলাল বলেন সব করেছে খিলক্ষেত থানার পুলিশ, সেখানে ১১৪ জনকে আসামী করা হয়েছে। সবই হাসিনার গোঁজামিল আর নাটুকেপনা (প্রথম আলো, ১৬ নভেম্বরে খবর প্রাপ্ত)। বাদী দুলাল মিয়া বলেন, তিনজন যুবক এসে পেট্রোল দিয়ে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মামলার বাদী বলেন, পুলিশ বলছে, শুধু একটি সই দেন আমরা গাড়ীর ব্যবস্থা করবো। তিনি শুনেছেন তার ড্রাইভারের কাছে তিনি এসব দেখেন নাই। সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাকও আসামী তিনিও কভিডাক্রান্ত, ছাত্রনেতা জুয়েল কভিড আক্রান্ত, চেন্নাই হাসপাতালে আরেক ছাত্র নেতা, ভর্তিকৃত রোগী এরা সবাই মামলার আসামী। কোন সময় ক্ষ্যাপন না করেই আওয়ামী সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সচরাচরের মত বয়ানে বলেন ‘হঠাৎ নাশকতা প্রমাণ করে বিএনপি সন্ত্রাসী পন্থা পরিহার করে নাই। করোনার এই কঠিন সময়েও জনতাকে সাথে নিয়ে তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবে আওয়ামী লীগ।’ একের পর এক হত্যা গুম খুন ধর্ষণের রানী সেজে অবৈধ গদি দখলদার নির্লজ্জ হাসিনা যুগ পার করছেন। তারও আগেপিছে কখনোই তার অনাচার থেমে নেই, তবে কপট মিথ্যা শক্তির বলে কিছু দিন ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পেরেছেন বলেই আজো কিছু বোকারা তার পিছে ঘটি ধরে আছে। মানুষ যদি সচেতন হতো তবে কোন সৎ মুসলিম অন্তত তাকে অনুসরণ করতে পারতো না, কারণ এসব আদর্শহীনতা ঈমান ও সততার সাথে যায় না। এর প্রধান কারণ এদের বাপ বেটি মুজিব ও হাসিনার মাঝে নেতৃত্বে সততার চরম অভাব। আওয়ামী লীগের কামরুল ইসলামের টিভি চ্যানেল সময় টিভিও সাথে সাথে এ খবর প্রচার করে, ‘আবারো বিএনপি ফিরেছে অগ্নিসংযোগের রাজনীতিতে।’ হাসিনার হুকুমে সব অপকর্ম হয়। তার নিজের নিরাপত্তাকর্মী মেজর সিনহাকে মেরে জনতার আন্দোলনকে সামলাতে আইএসপিআর নাকে খত দিয়ে বলেছিল আর কোন গুম খুন হবে না। এ কথাই প্রমাণ তাদের দীর্ঘদিনের অসংখ্য মনগড়া গুম খুনের নাটকীয়তা। এরপরও খুন ধর্ষণ কিন্তু চলছে, বন্ধ হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয়ের সেঞ্চুরি করা মানিক হাসিনারই আদর্শের ধ্বজাধারী সন্তান।
বাস পোড়ার সাথে সাথে বিশেষজ্ঞরাসহ অনেকেই সরকারকে সন্দেহ করেছেন, এসব কাজ সরকার ছাড়া কেউ করবে না। অনেকেই কমেন্টে এর কারণ বিশ্লেষণ করছেন। নিজের নাক কেটে তিনি পরের যাত্রা ভঙ্গের দক্ষতায় একজন তুখোড় মহিলা। বাস পোড়ানোর সাথে সাথেই বিএনপির অফিস ঘেরাও করে রাখা, ধড়পাকড় করা পুলিশের উপর নির্দেশ থাকে আগে থেকেই। সবাই জানে এসব সরকারের পরিকল্পিত পাতা ফাঁদ। ধড়পাকড়ের এসব লিস্ট আগেই রেডি থাকে। কাকে কাকে খুন করবে কাকে কাকে আসামী বানাবে। তারা প্রচার করে গোয়েন্দা খবরে প্রাপ্ত হয়ে তারা এসব করছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে কখনোই হাসিনার গোয়েন্দারা সঠিক খবর পায় না। মনগড়া খবর ব্যতীত তারা বিডিআর জটিলতার খবরও পায় না। গতকাল যে ধরা পড়া মূল আসামীগংদের একজন মারুফ নামের ছেলেটি ধরা খেল ফেইসবুকে ইউটিউবে তার মুখ থেকে সব খবর দেশবাসী জানলো, এ সব দাগী আসামীদের খবর গোয়েন্দারা পায় না। প্রথমে সে বলতে চায় নাই, পরে জনতার তোপে পড়ে বলতে বাধ্য হয়। তারা ১৫/২০ জনের একটি দল সারা ঢাকা চষে বেড়ায় এবং আগুন দেয়, এ ধারার কিশোর ছেলেদের দিয়ে এসব গুণ্ডামি করানো হচ্ছে। সে অকপটে সব গড়গড় করে বলে দেয়, নিজের জান বাঁচাতে। ঘটনার একটু পরই ফেইসবুকের মাধ্যমে ভিডিওটি পাই। পরদিন দেখি ছাত্র পরিষদের মশিউরের মুখে পুরো ঘটনাটি ইউটিউবে। গোয়েন্দারা শুধু শেখ হাসিনা যা সাজিয়ে দেন, তাই প্রচার করতে পারে। অন্য প্রকৃত গোয়েন্দা খবর তাদের জন্য প্রকাশের অনুমতি নেই। মেজর দেলোয়ার হোসেন এটি স্পষ্ট করেন এদেশের প্রতিটি অপকর্ম সাজানো হয় ভারতের পরিকল্পনাতে আর ঘটানো হয় বাংলাদেশে। তা ছাড়া বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা মানুষ বহুদিন থেকে লক্ষ্য করছে ও তার প্রমাণ পাচ্ছে। কারণ এতে ভারতের নির্বাচনও প্রভাবিত হবে। দেশ চরম ভঙ্গুর অবস্থানে সময় পার করছে। মিথ্যা প্রচারের জারিজুরির উপর দেশ চলছে। উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভাসছে, এটিও হাসিনার সম্পূর্ণ মিথ্যাচারী প্রচারণা। কংক্রিটের গাঁথুনি হচ্ছে রডের বদলে বাঁশের ফালি দিয়ে। রাস্তার পিচ উঠে যায় অতি অল্প সময়ে। ব্যাংক খালি করা, রিজার্ভ চুরি, শেয়ার ধ্বস, সবদিকে এ সরকার দেশটির মেরুদণ্ড একদম ভেঙ্গে ঝরঝরে করে দিয়েছে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। কথা হচ্ছে এসব সম্পত্তি নষ্টের জঙ্গিপনার কোন দিনই বিচার হয়নি। বিগত শতকে এই আওয়ামীদের ষড়যন্ত্রী ইন্ধনে ১৭৩ দিন দেশে হরতাল হয়েছিল। এতে যে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, গাড়ী পোড়ানো হয়েছে, মানুষ হত্যা করে তারা লাশের রাজনীতি করেছে। এর কোন বিচারও হয়নি, তবে এদের বিচার জমা খাতায় থাকবে। আওয়ামী নাম নিয়ে যে বা যারা এসবে রসদ যুগিয়ে যাচ্ছেন এদেরকে ইহ ও পরকালেও এর খেসারত বহন করতে হবে। প্রতিটি অপকর্মের চুল পরিমাণ বিচার অপকর্মীকে বইতে হবেই, এর থেকে পালিয়ে যাবার কোন সুযোগ নেই। বিগত এক লেখাতে ‘অবৈধ সরকারের আয়নাবাজি’ নামে তাদের দাগাবাজির এক চিত্র তুলে ধরেছিলাম। আজো সেই সূত্রে পাওয়া আরো কিছু কথা না বলে পারছি না। এসব তাদের সাজানো সারিবাঁধা অনাচারের অল্প কিছু মাত্র।
মুজিবের মেয়ে বাংলাদেশে যা করছেন তা অকস্মাৎ কোন ঘটনা নয়। তার বাবা শেখ মুজিবও মুক্তিযুদ্ধে যেমন ছিলেন না তেমনি রক্ষীবাহিনী নামের এক দানব বাহিনীর মাধ্যমে স্বাধীন একটি দেশের মানুষকে ভয়ংকর দুর্যোগের দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। ঐ সময় ভারতীয় বাহিনী এ দেশ থেকে গেলেও মানুষ ঐ দানবদের সাথে দেশীয় দানবদের আক্রমণে বিধ্বস্ত হতে থাকে। এটি শুধু ভারতের মেজর জেনারেল উবানের নেতৃত্বেই গঠিত হয় নাই অনেক ভারতীয়রাও এখানে সরাসরি যুক্ত থেকে দেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চালু রাখেন বলে জানা যায়। মুজিবের কর্তৃত্বের সাথে ওটি খুব মিলে যায়, তাই জাতীয় রক্ষী বাহিনী এক্ট নামে ১৯৭২ সালে মুজিব এটি জারি করেন। যিনি চাইতেন না কোন বিরোধী দল থাকুক, সচেতনদের লেখনীতে উঠে এসেছে পাঁচটির বেশী বিরোধী আসন দিতে তিনি নারাজ ছিলেন। অপকর্মের অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে রক্ষী বাহিনী গোটা জাতির উপর হামলে পড়ে। ঘটনার ধারাবাহিকতায় যদিও জিয়াউর রহমানের সুবাদে শেখ হাসিনা এদেশে এসে মুজিবের হাতে বিলুপ্ত মৃত আওয়ামী লীগকে কবর থেকে তুলে আবারো রাজনীতি শুরু করেন। বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের সুযোগও করে দেন জিয়াউর রহমান। আকারে ইঙ্গিতে বেশ-ভূষায় তিনি কান্নাকাটি করে সরল মানুষদের দ্বিতীয়বারের মত প্রতারণায় নামেন। সহজ সরল মানুষরা তাকে গ্রহণ করেছিল কিন্তু তিনি তাদের সে সরলতার কোন মর্যাদা দেননি। “তোমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকিও কৃতঘ্ন হইও না (আল কুরআন)।” আদেশকৃত এ কথা থেকে বুঝা যায় কৃতঘ্ন বা অকৃতজ্ঞ হওয়া একটি মানুষ ভয়ংকর অধঃপতিত নিকৃষ্ট জীব মাত্র। শেখ হাসিনা ভারত থেকে যার মদদে ফেরত আসেন, এসেই তার বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করে তার মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে এ মাটিতে পদার্পণ করেন। তিনি প্রায়শ বলেন জিয়াউর রহমানই তার বাবাকে হত্যা করেছেন, এ কথাটি তার ঐসব বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রের অংশ মাত্র। হাসিনা তার শাসনামলে যত মিথ্যাচার করেছেন, তার কোন ইয়ত্তা নেই। কোন কোন রসিক জন আবার মিথ্যাচার সিরিয়েলি লিপিবদ্ধ করেছেন। লিখিত আকারে তা চিহ্নিত ও বর্ণিত আছেই জনতার আদালতে। ভারতফেরত হাসিনার কয়টি বড় অপকর্ম আনছি একটি লিখিত দলিল থেকে। যা তার প্রাইভেট সেক্রেটারি মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টু নিজের ফাঁসি চেয়ে জাতিকে সচেতন করে গেছেন যাতে এ জাতি বাঁচে। নীচে তার পৃষ্ঠাসহ ঘটনার সামান্য উল্লেখমাত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বইটি বাজেয়াপ্ত করে রেখেছে সরকার যার জন্য মানুষ বইটির ভিতরে ঢোকার সময় সুযোগ পেয়েছে কম। সরকারের বুকের পাটা নেই ঐসব প্রকাশিত খবরাদি মোকাবেলা করার, ঐ হাসিনা সরকারের আমলেই তিনি বইটি ছাপেন এ যুক্তিতে তার প্রতিটি কথাই তথ্য ও যুক্তি দিয়ে সত্যে মোড়া। আর প্রতিটি ব্যাখ্যাকৃত ঘটনাই প্রমাণ করে এর সত্যতা কত জীবন্ত ও স্পষ্ট, বাংলাদেশের রাজনীতি বুঝতে হলে এটি প্রতিটি বাংলাদেশীর পড়া উচিত। “আমার ফাঁসি চাই” গ্রন্থ থেকে সামান্য দাগ সমূহ।
(১) ৮৩ এর মধ্য ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যা ছিল টাকার বিনিময়ে করা হাসিনার অর্ডারি লাশ (৪৬ পৃষ্ঠা)। গুলিবিদ্ধ জয়নাল ও জাফরের লাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে, এ লাশের কোন বিচার পায়নি ছাত্ররা। বরং উল্টো হাসিনা এরশাদের সাথে শর্তবদ্ধ সমঝোতা করে ছাত্রদের বিরুদ্ধে একশন নিতে উৎসাহ যোগান। জানা গেল অজ্ঞাত পরিচয়ের সাথে (?) তিনি কালো বোরকা পরে অজ্ঞাত স্থানে গিয়েছেন (৪৯ পৃষ্ঠা)। অতঃপর ৮৪ সালে ঐ একই কায়দায় রুদ্ধদ্বার কক্ষে ছাত্র আন্দোলনের নামে পৈশাচিকতার মহড়া মিটিং ডাকেন। এভাবে হাসিনার সহযোগিতায় চলমান থাকে এরশাদের প্রতাপী মসনদীয় স্বৈরশাসন। টাকার বিনিময়ে রায়ট পুলিশের গুলিতে ট্রাকের চাকায় পিষে হত্যা করা হয় সেলিম ও দেলোয়ারকে। এক দানবীর নির্দেশে তাদের মায়ের বুক খালি করে তারা রাস্তায় লুটিয়ে মরে। এমন খবরে পুলকিত নেত্রী আবারো ছুটেন লং ড্রাইভে (৫১ পৃষ্ঠা)।
(২) পরপর ছাত্র হত্যায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা আন্দোলনে যেতে চাইলে আশ্বস্ত করে হাসিনা বলেন, “আমাদের শত্রু ছিল জিয়া, এরশাদ নয়। আবারো আমাদের মূল শত্রু বিএনপি, জিয়া তো শেষ। এরশাদ মাত্র ক্ষমতা ধরে রেখেছে। আমরা এরশাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যাব না। আমাদের এখন প্রধান কাজ বিএনপিকে চিরতরে শেষ করে দেয়া। এভাবে এ জাতির ঘাড়ে এরশাদ নামের একটি দুর্বৃত্ত স্বৈরশাসক দাঁড় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা (৫০, ৫২ পৃষ্ঠা)। ৮৬ এর নির্বাচন প্রক্রিয়া, দেশ দুই দলে ভাগ হলো। হাসিনার দল তার নিজের দেয়া বেইমানের তকমা লাগিয়ে সমঝোতা করে এরশাদের সাথে নির্বাচন করে, আর খালেদার দল আপোষহীন আন্দোলনে অনড় থাকে।
(৩) হাসিনার বলা ও খেলা ছিল আন্দোলন আন্দোলন খেলা। থাকেন খালেদার পিছন পিছন ভান করেন আন্দোলন করছেন, নাম লাগান মাত্র; ছাত্রদেরকেও সেই নির্দেশ দেন (৫৭ পৃষ্ঠা)। ছাত্রলীগদের এভাবে দানবরুপে প্রতারকরুপে গড়ে তোলেন হাসিনা। সেদিন নেতৃত্বে থাকেন খালেদা জিয়া আর জীবন দেয় বুকে “স্বৈরাচার নিপাত যাক” আর পিঠে “গণতন্ত্র মুক্তি পাক” খচিত নূর হোসেন (ঐ)।
(৪) ১৯৯১ সালে অবাধ স্বচ্ছ একটি নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া জিতলেন। খালেদার বিজয়ের পর হাসিনা বললেন তাকে তিনি একদণ্ড শান্তিতে থাকতে দিবেন না। যেমন বলা তেমন কাজ। প্রথমে অভিযোগ তুললেন সূক্ষ্ম কারচুপির, ১৭৩ দিনের হরতাল তার বাস্তবতা। এরপর হাসিনার পদত্যাগ নাটক ও তার মিথ্যাচারিতা সবই তার ধারাবাহিকতা চলছে আজ অবধি। এই হাসিনা নিজেও এক স্বৈরশাসকের কঙ্কাল হয়ে বেঁচে আছেন; কারো দৃষ্টিতে মাফিয়া রানী, লেডী হিটলার, মিথ্যা প্রচারের নায়ক গোয়েবলসএর অনুসারী আজ অবধি।
(৫) এরশাদ আর জিয়ার মাঝে কি তুলনা চলে? না চলে না। জিয়া ছিল এ জাতীর অস্তিত্ব, প্রাণ, জীবন দানের অসাধারণ এক অর্জন। হাসিনার সাহসে কুলায় নাই গদিতে যাবার, তাই ক্ষমতালোভী এরশাদকে এগিয়ে দেয়, স্বৈরশাসকের তকমা লাগিয়ে, যেন নব্য আইয়ুব খান। হাসিনা রইলেন পিছে এরশাদের বোন হয়ে, আইয়ুবের তৃতীয় প্রেতাত্মা হয়ে।
(৬) কারো ভালো বা অর্জনকে তিনি সইতে পারেন না। তাই জাহানারা ইমামও তার চোখের শূল ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধেও তিনি মিথ্যাচার প্রচারে অবদান রাখেন (৬৩ পৃষ্ঠা)।
(৭) বাংলাদেশে হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ যুগ যুগ ব্যাপী বর্তমান। এর গোড়াতে বিষ ঢালেন শেখ হাসিনা। তিনি কৌশলে হিন্দু মুসলিম রায়ট লাগান যেখানে মুসলিমরা প্রহরা দিয়ে হিন্দুদের নিরাপত্তা দিয়েছে সেখানে তিনি নিজে টাকা খরচ করে হিন্দু মুসলিম রায়ট লাগান, এতে বিশ্ব জানলো বাংলাদেশের মুসলিমরা হিন্দু নির্যাতন করে। এর জন্য ঢাকা শহরের সব গুণ্ডা বদমাশদের হাতে নগদ ৫ লক্ষ টাকা তুলে দেয়া হয় (৯২ এর হিন্দু মুসলিম রায়ট ৬৩ পৃষ্ঠা)। বললেন, এখনই রায়ট লাগাতে পারলে সার্ক সম্মেলনও পণ্ড হয়ে যাবে। এসব ষড়যন্ত্রে বাড়তি সচেতনতা হিসাবে নিজের টেলিফোন ব্যবহার না করে পাশের চাচাতো চাচা শেখ হাফিজুর রহমানের বাসা থেকে কল করা হয় (৬৪ পৃষ্ঠা)। পাঁচ লক্ষ টাকা ছাড়াও নগদে কড়কড়ে কয়েকটি করে এক শত টাকার নোট দাঙ্গাবাজদের হাতে গুজে দেয়া হয়। হিন্দুরাও বাড়তি সুবিধা পেতে কিল খেয়ে কিল হজম করতো। যারা তাদের মারে, তারা উল্টো নির্দোষদের দিকে আঙ্গুল দেখাতো হাসিনাকে সুহৃদ ভেবে। এতে তারা কিলও খেতো আবার লাভের গুড়ও তারা জমাতো। বাকী কিলগুলো পড়তো নিরপরাধ মুসলিমদের উপর। ওরা নির্দোষ মুসলিমরা নানা ভৎর্সনা লাভ করতো আর একুল ওকুল হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে থাকতো। শুরু হলো হৈ হৈ করে শিববাড়ী মন্দির, ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, তাতি বাজার, শাঁখারি পট্টি, বাংলাবাজার, মালাকাটোলা, মিলব্যারেক, গুসাইবাড়ী, নারিন্দা, টিকাটুলি ও ইসলামপুরে চলে টাকার অঙ্কে খেল খতম কাজ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও এর ঢাকা আসা বন্ধ হয়। সার্ক সম্মেলন পণ্ড হয় (৬৫ পৃষ্ঠা)।
(৮) কোকোর মৃত্যুর পর বিধ্বস্ত খালেদার উপর অভিযোগ তিনি কেন হাসিনার সাথে দৌড়ে বের হয়ে এলেন না। ধারণা সেদিন হাসিনা খুব উৎফুল্ল ছিলেন কারণ তিনি নিজ দলের ছাত্ররা মরলেও উৎফুল্ল থেকে মিষ্টি বিতরণে আগ্রহী হন। ওদিকে সেদিন অসুস্থ মুমূর্ষু মা খালেদা জিয়া পুত্রের মৃত্যু শোকে কাতর থেকে ডাক্তারের নির্দেশে বিশ্রামে ছিলেন। ঐ সময়ই কেন হাসিনাকে আসতে হলো! তার কি উচিত ছিল না সময় নির্ধারণ করে সঠিক সময়ে তাকে দেখতে আসা। টকশোতে সব সময় কিছু দালালকে সমস্ত দেশ লুটপাটের জবাবে এই কয়টি কথাকে ঢাল হিসাবে দাঁড় করাতে দেখি। কারণ হাসিনার অপকর্মের কোন জবাব তাদের জানা নেই, এই দু তিনটি সাজানো নাটক ছাড়া। একটি হলো খালেদা কেন দৌড়ে বের হলেন না। আর তারেক ও তার মা কিভাবে বোমা মেরে হাসিনাকে মারতে গেলেন? কেন সারা দেশে একযোগে বোমা ফুটলো? কেনো তাকে ১৯ বার মারার চেষ্টা হলো। এসব সত্য হলে মানুষ সবার আগে এরশাদকেও মারতে যেত। কিন্তু এরশাদকে তারা একবারও মারতে গেল না। কারণটি কি? এক কথায় সহজ উত্তর এসবই মিথ্যা বলাতে পারদর্শী হাসিনার নিজ হাতে সাজানো নাটক। যেন টকবাজরা বলতে চায় ঐ দিন খালেদা দৌড়ে বের হলে আর হাসিনাকে মারতে এই ২০০৪ এর বোমা নাটক না হলেই তারা নির্দোষ বলে গণ্য হতেন। সমস্ত জাতি জানে অসংখ্য প্রশ্নবিদ্ধ আচরণে শেখ হাসিনা এসব নাটকের অংশ সজীব রেখেছেন। তার শত শত অপকর্মকে ঢেকে রাখার জন্যই এসব মিথ্যা নাটকের অবতারণা। নিজ হাতে বোমা মারার সব সূতানাতা ঠিক করে বহু পরে তারেক জিয়ার নাম জড়িয়ে অভিযোগ তোলেন। আর মৃত ছেলের মাকে দেখতে কি সত্যিই হাসিনা উদগ্রীব ছিলেন, এটি কি তাই ছিল? কিন্তু ঘটনার ধারাবাহিতা বলে তার কারসাজিতে সত্যটা হচ্ছে তার দুই ছেলেকেই হাসিনা মারতে চেয়েছিলেন! অত্যাচারে নিগ্রহে এক ছেলে মরেছে আর অন্য ছেলে আজো ভিন দেশে লড়ে যাচ্ছে আর মায়ের মন ঐ দুর্বৃত্তকে দেখে খুশীতে নেচে উঠবে! কোকোর কথা থাক আমরা জানি খোদ হাসিনা তার স্বামীর সাথেও মানবিক আচরণ করেন নাই। এটি অনেকেই জানেন তাকে বহুদিন গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন। মেয়ে পুতুলের বিয়ের দিনে ডঃ ওয়াজেদের অমতে বিয়ে হওয়াতে খালেদা জিয়ার সাথে মাত্র ৩/৪ মিনিটের জন্য দেখা হলেও হাসিনার সাথে তার কোন কুশলাদি হয়নি, তিনি খালেদা জিয়ার সাথেই বের হয়ে গেলেন (৭৫ পৃষ্ঠা)। তিনি যে কত ভদ্র ও সুশীল এ থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় কোকোর জন্য তিনি কতই না নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, যেখানে স্বামীই মানুষের মর্যাদা পান নাই! ডঃ ওয়াজেদ এটি বুঝতে পেরেছিলেন হাসিনার হাত দিয়ে দেশ ভীষণ সংকটের মাঝে পড়েছে। এসব কথা তিনি বার কয়েক উচ্চারণও করেছেন। সাথে সাথে গৃহবন্দিত্বই তার ভাগে জমা হয়েছে, এসব অনেকেই জানেন, দৈবাৎ হয়েও মিডিয়াতে এসেছে।
(৯) সেক্রেটারীয়েটের একজন কর্মচারীকে কিভাবে দিগম্বর করা হয়েছিল তাকি ভুলে গেছেন দেশবাসী? ওটিও ছিল হাসিনার নির্দেশে করা, একজন অসুস্থ মানুষ না হলে এসব কোন সুস্থ মানুষ করতে পারে না। তিনি অনেক টাকা খরচ করে ওটি করিয়েছিলেন (৮১ পৃষ্ঠা)। এটিও সত্য আদালত তাকে রং হেডেড তকমা দিয়েছিল। (খাতা কলম গোলাবারুদ ও দিগম্বর কাহিনী শিরোনামে ৮২ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য), ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৪ সাল। মঞ্চে উঠেছেন বিরোধী নেত্রী হাসিনা। মঞ্চে শুধু ছাত্রনেতারা ও হাসিনা নিজে, সেদিন কোন নেতা নেই, তারা নীচে বসা। ছাত্রদের হাতে নাটকীয় ভঙ্গিতে খাতা কলম তুলে দিয়ে এক অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করা হলো। আর উদাও আহবান করা হলো পূর্ণ উদ্যমে পড়াশুনা করো। ফটো সাংবাদিকদের ক্লিক ক্লিক শব্দে চারদিক ঝলসে উঠলো। ঐদিনই বিকেল তিনটায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের লাইব্রেরী কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা অজয় কর, পঙ্কজ, হিমাংশু দেবনাথ, জ্যোতির্ময় সাহা, ত্রিবেদী ভৌমিক, ও আলমসহ মোট ৯ জনকে ডেকে গোলাবারুদ ও অস্ত্রসহ কেনার জন্য ১ লক্ষ টাকা হাসিনা দেন। বলেন, আগামী ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করার পর তোমরা ঢাকা শহরসহ সারা দেশে নজিরবিহীন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে। খালেদা জিয়ার পতন না হওয়া পর্যন্ত এসব চলবে। দৈনিক ৫/১০টা লাশ তোমাদের ফেলতেই হবে। নইলে জিয়ার পতন হবে না। গোলাবারুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে বাইরে রাখবে, নয়তো পুলিশ পেয়ে যাবে। হরতালের দিনেও সচিবরা কার্যালয়ে হেটে যায় ঐ দিন তোমরা ওৎ পেতে থাকবে এবং তাদের কাপড় খুলে নিয়ে তাদের অপদস্থ করে দিগম্বর করে দিবে। ৯ জনকে দুদলে ভাগ করে দিয়ে একদলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের দায়িত্বে ও অন্য দলকে সচিবকান্ড ঘটাতে নির্দেশ দেন। পর পর অনেক হরতালেই তারা সফল হতে না পারলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং শর্তের হুমকি দেন। শর্ত হচ্ছে এটি করতে না পারলে তাদের দেয়া এ বাবদ টাকা ফেরত দিতে হবে, মানে এটি করতেই হবে। অতঃপর আলম নামের মহা গুণধর (?) হাসিনার ছেলে সেটি করতে পারলে তিনি আনন্দে নেচে উঠে বলেন তাকে নিয়ে এসো, মিষ্টি খাবো তার সাথে। ততক্ষণে আলম শ্রী ঘরে (৮২/৮৩)।
(১০) দিনাজপুরে ইয়াসমীন নাটককে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ভয়ংকর রূপ দানেও হাসিনার হাত ছিল। সেখানেও তিনি অজস্র টাকা ঢেলে একে ফলপ্রসূ করেন। নগদে ২০ লাখ টাকা দেয়া হয় এবং প্রয়োজনে আরো পৌঁছে দেয়া হবে কাজ পুরোপুরি হলে। এসব কাজে সন্দেহ এড়াতে হাসিনা সব সময় ঐ চাচার ফোনই ব্যবহার করতেন। খালেদার সময়ে দিনাজপুরে এক ইয়াসমীনের বদলে পুলিশের গুলিতে নিহত ৭ লাশ জমা করে বিবেচক খালেদাকে তিনি বেকায়দায় ফেলেন। সাথে সাথে তিনি দিনাজপুরে ছুটে গিয়ে মানুষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়ে কিছু মায়াময় বুলি আওড়ে ঢাকাতে ফেরত এসে বললেন, যত গুড় (টাকা!) তত মিঠা হয়নি (৮১ পৃষ্ঠা)।
(১১) তিনি এমন একজন নেত্রী যিনি তার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিতেন এবার ‘পুলিশের লাশ চাই, মিলিটারির লাশ চাই’ (৮৩ পৃষ্ঠা)। বড় অংকের টাকা খরচ করেও সেটি ঘটানো হয়। এভাবে শত শত মানুষকে তিনি অর্ডার দিয়ে হত্যা করেন। এমনকি এসব বলে শেষ করার মতো নয়। তিনি বলেন জিয়া মুজিবকে মেরেছেন বস্তুত সত্য হচ্ছে তিনি জিয়ার মৃত্যুর পারোয়ানা নিয়ে ভারত থেকে আসেন। আর পরবর্তীতে তিনি খালেদাকে হত্যা করতেও আগাম টাকা বায়না করেন। জাতি ঘুমিয়ে আছে বলে সত্যটা জানে কম।
(১২) এবার ঐ ভয়ংকর অসুস্থ মহিলাটির প্রকৃত স্বরূপ স্পষ্ট করতে হলে ঐ মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টুর পুরো বইকে এনে হাজির করতে হবে। এবার শেষ একটি কথা তার দুর্বৃত্তায়নের কথা বলে আজকের ডজন নম্বর শেষ করবো। যখন তিনি এসব কাজ করে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারছিলেন আর গোটা দেশ এর জন্য বিরোধী খালেদাকে দোষ দিচ্ছিল। আজো অনেককে বলতে শুনি এ দুটি দলই সমান সমান, বস্তুত এরা আচরণে এতই পরস্পর বিরোধী যে এদেরকে এক পাল্লায় মাপা বেমানান। দুজন দু পাড়ের বাসিন্দা। তিনি নিজে অর্ডার দিয়ে লাশ ফেলতেন আবার পরোক্ষনেই রুমালে গ্লিসারিন মেখে দৌড়ে মেডিক্যালে ছুটে যেতেন আর চোখে রুমাল ধরে রাখতেন, ক্লিক ক্লিক শব্দে সাংবাদিকরা ছবি তুলতেন আর মুজিব কন্যা অপার আনন্দ বুকে নিয়ে লাশের বোঝা ঠেলে নিজের বিলাস ঘরে ফিরতেন। আনন্দের আতিশয্যে এতই উৎফুল্ল থেকেছেন যে কারো অপেক্ষা না করেই হাসিনা নিজেই স্কুটারে আগুন দেন। দেখুন ৮৫ পৃষ্ঠায় ইতিহাস কি ভাবে কথা বলতে জানে। এ মহিলা নিজেই গাড়ীতে আগুন ধরানোর মত মেধার অধিকারী তিনি। এ জন্যই সব সম্মানিত জনদের বিরুদ্ধে গাড়ীতে আগুন দেয়ার মামলা, পেট্রোল বোমার মামলা দিতে তিনি পিছপা হন না। সব কর্মেই তার হাত লম্বা। তাহাজ্জুদের নামাজ ও মদীনার সনদে দেশ চালাবার প্রতিশ্রুতি দেন, প্রায়শই নামাজের বাহাদুরী, হজের পাগড়ি পরে নিজেকে ধার্মিক প্রচার চালান। সারাক্ষণ কথায় কথায় জায়নামাজ খোঁজা তার স্বভাবের অংশ, এসব জাতিকে শোনান। সহজ সরল দেশবাসীকে প্রতারণা করাই যাদের একমাত্র ধ্যান ধারণা কৌশল। এরাই ধার্মিক না হয়েও প্রকৃতপক্ষে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে আর সারাক্ষণ বাকী ধার্মিকদেরকে টিটকারি করে কপট মন্তব্য করে।
১৫ নভেম্বর ২০২০
বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখাটি আমার দেশ অনলাইনে আজ ১৯ নভেম্বর ছেপেছে।