Articles published in this site are copyright protected.

না জ মা মো স্ত ফা

(প্রায় এক যুগ আগে প্রকাশিত লেখাটি ইঙ্গিত করছে, ”ভারতকে ভাবতে হবে” ছিল লেখার শিরোনাম। আজকে ২০২২ সাল একই পাপের আসামী ভারত আজো। লেখাটি আমার দেশ ২০১৪ সালের ১৬ই জানুয়ারীতের ছাপে।)

সবাই বলছে এটি নির্বাচন নয়, গরিব একটি দেশের ৬০০ কোটি টাকার তামাশা। ভারতের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ভারত হাসিনাকে দেবে ১০০০ কোটি টাকা। কিন্তু কেন? এ দান কোনো মহত্ দান নয়, পার্শ্ববর্তী দেশটির সর্বনাশ করতে এ টাকা দেয়া হবে। ব্যক্তি হোক বা দেশ হোক, এমন অনৈতিক স্পর্ধা কি কারও করা উচিত? নীতির প্রশ্ন কী বলে? পরের মাথা কাটার জন্য খুনের দালাল নিয়োগ দেয়ার মতো অবস্থা। বহুদিন থেকে দেশটি ভারতের অনাচারের মোকাবিলা করছে। সমাজ সভ্যতা সততার মানদণ্ডে এসব অনুমতি পাওয়ার কথা নয়। অসভ্য সমাজে অমানবিক ময়দানে এসব সচল থাকতে পারে। অনেকেই সন্দেহ করছেন দেশের ভেতরে সহিংসতায় ভারত দলেবলে অংশ নিচ্ছে। শক্তি থাকলেই আর পরিধিতে বৃহত্ হলেই কি সব অনাচার করার অধিকার জন্মে যায়? বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট বলেছে, এ নির্বাচনে হাসিনার ভিত্তি পাওয়ার কথা নয়। এটি গণতন্ত্রের পচনের নমুনা। গত ৫ জনুয়ারির একতরফা নির্বাচনের ধাপ্পাবাজি ও তার পরবর্তী বুক-চাপড়ানো বাহাদুরির সব নমুনা সারা জগত্ দেখছে অবাক বিস্ময়ে। বাংলাদেশে সাহায্য বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সাহায্যদাতা দেশ ব্রিটেন। ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ব্রিটেন রিভিউজ এইড টু বাংলাদেশ আফটার ইলেকশন ভায়োল্যান্স’ শিরোনামে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। এ নির্বাচনের রাজনৈতিক, নৈতিক এবং জনগণের ম্যান্ডেট ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শক্তভাবে। ভারতীয় আউটলুকের মন্তব্যে ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার অর্থহীন নির্বাচন নিয়ে প্রসঙ্গ এসেছে। আউটলুক পত্রিকা মনিব ভারতকে নতুন নির্বাচনের জন্য দ্রুত হাসিনাকে পরামর্শ দিতে বলছে। কোনো রাখঢাক নেই, এতদিনের চেপে রাখা সব ধাপ্পাবাজি আজ ময়দানে খোলাসা হয়ে পড়েছে। এর জের ধরে সেনাবাহিনী এলেও ভারত খুশি হবে বলে মন্তব্য আসছে। প্রতিবেশীর জন্য ভারত একটি ভালো রাষ্ট্র, এ উদাহরণের প্রমাণ রাখতে ভারত আগাগোড়াই ব্যর্থ হয়েছে সবদিন। সর্বতোভাবে ভারত এক্ষেত্রে কলঙ্কতিলক পরে বসে আছে। ‘ভারতকে ভাবতে হবে’ শিরোনামটি দেয়ার কারণ হচ্ছে মনিবকে না বলে দাসকে বলার যুক্তি কম। সাধারণত দাসের হাত-পা বেঁধে রাখে মনিব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এক্ষেত্রে মেরুদণ্ডহীন দাসটি শক্ত করে ভারতীয় পিলারের সঙ্গে বাধা। 

বাংলাদেশের মূল অর্জনের মূলে ছিল পূর্ব পাকিস্তান বনাম পরবর্তী বাংলাদেশ এবং ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় তার সেই ঐতিহাসিক ভিত্তি সরে গিয়ে বাংলাদেশের সূচনা হয়। এবার স্বাধীনতার চল্লিশ পার করে নানান প্রশ্নে বিদ্ধ হয় আগেকার আওয়ামী লীগ। তার ঘেরা দেয়া অনেক ছলবাজি খেলা অনাচার উন্মোচন হয়ে পড়ে জনতার কাছে। বন্ধুর প্রীতিডোরে বাঁধা সব অপকর্ম ধরা পড়ছে সব সচেতনের কাছে। প্রতিদিনের মতো এটিও এ সপ্তাহের তাজা খবর—‘দর্শনা সীমান্ত থেকে বাংলাদেশী কৃষককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ।’ এটি হচ্ছে বন্ধুত্বের উত্কৃষ্ট নিদর্শন। সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে চলছে সংখ্যালঘুর ওপর হামলার সে পুরনো খেলা। বিগত শতকে ভারতের কূটচালে তসলিমা দিয়ে যার শুরুটা জমেছিল বেশ। সারা দেশের বিএনপি-জামায়াতসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-মিছিল হচ্ছে সমানেই, ১১০১ জন চিকিত্সক একযোগে প্রহসনের নির্বাচনের প্রতিবাদ করেছেন। দেশকে নব্য সাম্প্রদায়িকতার ট্যাগ লাগানোর পাঁয়তারা করছে সরকার ও তার ষড়যন্ত্রী প্রতিবেশী বন্ধু। নিজের লজ্জা ঢাকতে ব্যর্থ ভারতের এটি বেশ পুরনো চাল। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্টও সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদ করছে। 

এমনই ভোট ডাকাতি যে নিজ দলের মাঝেও জেতার লড়াই হয়েছে, জাল ভোট দিয়ে, কেউ হাজার ভোটও দিয়েছে খবরে এসেছে। যেখানে গৃহপালিত ছাড়া কোনো বিরোধী দলই অংশ নেয়নি, সেখানেও জাল ভোটের ছড়াছড়ি। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেপেলেরা, ৭-৮ বছরের বাচ্চারাও দল বেঁধে ভোট দিচ্ছে। হাত উঁচিয়ে দেখাচ্ছে হাতজোড় করে মাফ চাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনার চমক, বাচ্চাদের হাতে ভোটের দাগচিহ্ন বুড়ো অঙ্গুলিতে। এরা যখন বৃদ্ধ হবে তখনও এ গল্প বলে বেড়াবে তাদের নাতিপুতিদের এ চমক রানীর গল্প। ভোট পড়েনি অর্ধশত ভোট কেন্দ্রে। বগুড়ার আওয়ামী লীগের এক বয়োজ্যেষ্ঠ হেডমাস্টার নিজ স্কুলের চেয়ার-টেবিল জড়ো করে দপ্তরির মারফতে আগুন লাগাতে অকস্মাত্ হাতেনাতে ধরা পড়েন। সবটা লীগের মাথাতে এক বুদ্ধিই সচল বা এটি তাদের অর্ডার দেয়া হয়েছে তাই সারা দেশে একই ধরনের প্রধানের আদলে সিরিজ অপকর্ম চলছে। প্রধান শিক্ষক হাতেনাতে ধরা পড়লেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে মাত্র। প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় কৃতকর্মের কোনো শাস্তি সাধারণত বরাদ্দ হয় না। পুলিশের কাছে মেসেজ আছে জানা আছে—কাকে কাকে ধরতে হবে আর কাকে কাকে শাস্তি দিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওটিই হচ্ছে। নিজের দলের হত্যাকারী তকী হত্যার নায়ক নারায়ণগঞ্জের ওসমান আওয়ামী গুণ্ডামিতে হাতপাকানো সাগরেদ, তিনিও সংখ্যালঘু নির্যাতনে হাত দাগিয়ে চলেছেন। খবরে তাকেও এ অপকর্মে পাওয়া যায়, যার জন্য সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যরা মানববন্ধন করছেন। সাতক্ষীরা ও সাতকানিয়াতে বিরোধীদের ওপর সব ধরনের গদিলাভের নারকীয় তাণ্ডব চলেছে। এসবই প্রমাণ করেছে যে বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক দাবিটি কতটা যৌক্তিক ছিল! 

ভারতের বিজেপি তার সাম্প্রদায়িক লম্বাগলা বাড়িয়ে বলছে, বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর আক্রমণ সুপরিকল্পিত। বহুদিন থেকেই অপকর্মে খোদ ভারতের স্বার্থেই হাসিনার দলদাস দলবাজরা সংখ্যালঘু নির্যাতনে বার বারই ধরা খাচ্ছে প্রকাশ্য ময়দানে। ভারতের এটি না জানার কথা নয়। তাই সংখ্যালঘুদের এ থাপ্পড়টি আসলে ভারত থেকেও চাপের কারণে সংগঠিত হচ্ছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে প্রকাশ, অনেক কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২০-৩০টি। পশ্চিমাদের কাছে এ নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। শত শত মানুষ প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছে, একজন মহিলার একগুঁয়েমির কারণে একটি জাতি ধ্বংসের খেলাতে সহযোগিতা দিতে নির্লজ্জভাবে ভারতও নানাভাবে নাম দাগিয়ে চলেছে। সভ্য দুনিয়ার একটি বড় দেশ হয়েও তাদের অর্জন কেন এত নিচে নেমে আছে? বস্তুত এতে প্রমাণ হয় ভারতের সততার কোনো মানদণ্ড নেই, কোনো নীতি নেই। আরব নিউজে বলা হয় ভোট দিতে কেউ আসেনি, বলা চলে কেউ না। পত্রিকাটির ‘বাংলাদেশ ইজ ইন ট্রাবল’ শিরোনামে মন্তব্য করা হয়—আওয়ামী লীগের এ নির্বাচনের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। ৫ শতাধিক নির্বাচনী কেন্দ্রে আগুন জ্বলে। ২০০-এরও বেশি লোক নিহত হয়। বলা হচ্ছে ৪-৫ ভাগ ভোট পড়েছে। ওবায়দুল কাদের মার্কা দলদাসরা এ নির্বাচনকে আমেরিকার নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করছেন। যুক্তি দেখাচ্ছেন আমেরিকাতে ৪০-৪৫ ভাগ ভোট পড়ে। এ সংখ্যাতত্ত্বের ব্যাখ্যা ওবায়দুল কাদেরের মতো কিছু অন্ধ ছাড়া আর পৃথিবীর কারও চোখে ধরা পড়ছে না। নিজেদের ছলের বিজয়ে চোখে আন্ধার দেখা দলদাস হয়ে বলছেন বিরোধী নেত্রী এবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন (কী বাজিমাত্ চুরিটাই না আমার নেত্রী করতে পেরেছেন!)। ব্রিটিশ মুখপাত্রসহ সবাই বলেন, ৩০০ আসনের মাঝে ১৫৩টিতে ভোট দেয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। কারণ সবেধননীলমণি প্রার্থী মাত্র একজনই। বাকি ১৪৭ আসনে হয়েছে ভোটের নামে প্রতীকী প্রতিযোগিতার নকল খেলা। 

বিরোধীকে মারা হত্যা গুম খুন কারাগারে প্রেরণ করা আইনসিদ্ধ করে ফেলেছে সরকার। জামায়াত হলে তো কথাই নেই। এভাবে যৌথ বাহিনী বিরোধীদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। সবাই একসঙ্গে বলছেন, টকশোতে দেখলাম সংবিধানের কিতাব হাতে সবাই দেখাচ্ছেন কীভাবে সাংবিধানিক আইনকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। সংবিধান সংবিধান করে আগা থেকে গোড়া সংশোধনীর নামে প্রতারণাসহ নির্বাচনের নামেও বার বার সংবিধানের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বলা চলে এর মাঝে বাংলাদেশের সংবিধান জনতার সঙ্গে লাশ হয়ে গেছে। একে আবার জীবিত করে বাঁচিয়ে তুলতে হবে জনগণকে। এসব দলদাস শুধু স্বার্থের গোলামি করতেই শিখেছে। একটি প্রতারক অপকর্মের দাগী আসামি পক্ষের একজন হয়ে ক্ষমাপ্রার্থী ভুলের শিরোমণি মিথ্যাচারী চরিত্রহীনের কাছে গোটা জাতি জিম্মি হয়ে আছে। আর পার্শ্ববর্তী একটি দেশ তার হীন কুটিল কপট উদ্দেশ্যে ওই শত অপকর্মের পেছনে টাকা খাটাচ্ছে। জাতির ঘাড় থেকে যে ৬০০ কোটি টাকা খসে গেল এর খেসারত কে দেবে? ভারতের ব্যয় করা ১,০০০ কোটি তো যাবে গোলাম দলদাস চোরদের পকেটে। ভারত কি বাংলাদেশের এ ৬০০ কোটি টাকার নবনির্বাচনের দায়ভার নেবে? হাসিনা সরকার তার জনপ্রিয়তা শূন্যের কাছে পৌঁছানোর পরও ভারতের ইন্ধনে সাহসে ভর করে নির্বাচনে যায়। হাসিনা জানতেন তার দুরবস্থা যে কত করুণ! যার জন্য স্বাভাবিক নির্বাচনের সাহস তার বহাল থাকেনি। ওটি বাইরে ভেতরে মরে যায়। বিগত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় থেকে তিনি মানুষের কলিজাতে কামড় দিয়ে চলেছেন। তাই তাকে আশ্রয় নিতে হয় প্রতারণার নির্বাচনের, মৃত সাধন সাহারা আজ শ্মশান পেরিয়েও ভোট দিয়েছেন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এসব হচ্ছে আওয়ামী দলদাসদের সততার পরিসংখ্যান। আজকের খবরে দেখলাম, অবশেষে এরশাদ শপথ নিচ্ছেন। তাকে সরকার অসুস্থ বলে হাসপাতালে নিয়ে হাসপাতালবন্দি করে রাখে। তিনি গলফ খেলে সময় কাটান আর দেশবাসীকে জানান তিনি অসুস্থ নন। সরকার তাকে বন্দি করে রেখেছে। আজ গৃহপালিত পশুর মতো বিগত অপকর্মের বহু মামলার আসামি স্বৈরশাসককে ঘাড় ধরে ময়দানে হাজির করা হয়েছে নব্য স্বৈরশাসকের সব অপকর্মে সই-স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। চোরের সাক্ষী চোর। এ হচ্ছে ভারতীয় টাকার খেলা। এ নষ্ট অর্জনের টাকাতে জাতির ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। বাটপারেরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে আর জাতি তার সর্বস্ব হারাচ্ছে। 

জামায়াতকে ভারত গিলে খেতে চায়, ওই স্বপ্নে হাসিনাকে লেলিয়ে দিয়েছে। ভারত কি তাদের বিজেপিকে গিলে খেতে পেরেছে? না, বরং তাকে আদরে-আহলাদে লাই দিয়ে রেখেছে, সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতনের জন্য। যদিও সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের খেলার যুক্তি ইসলাম ধর্মের সঙ্গে যায় না। ওটি ভারতের নিজের পরিমণ্ডলের খেলা। তাই কার্যত দেখা যায়, ইসলাম নাম নেয়া জনতা বরং সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এর প্রমাণ বার বার পাওয়া যায়। এবারও পাওয়া গেছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের মালোপাড়ার সংখ্যালঘুরা যখন আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা ও ভাংচুরের মোকাবিলা করে, তখন বিএনপি-জামায়াতের কাছেই তারা আশ্রয় পেয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা শারি ও হিউম্যানিটি ওয়াচের একটি প্রতিনিধি দল মালোপাড়া পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) নেতারা বলছেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে তীব্র জনমতকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে শাসক দল ইচ্ছাকৃতভাবে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। তাই আজ বাংলাদেশের মানচিত্রে ভারতের কর্তৃত্বে যা ঘটছে তার দায় কি ভারত নেবে, এটি জাতি জানতে চায়। সারা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে ভারতের বাড়াবাড়ি, প্রতিটি অপকর্ম যা করতে গোপন চুক্তি ও গোপন টাকাতে কেনা গোলাম সরকারকে বাধ্য করা হচ্ছে, এমনকি এই যে সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন, সে দায়ও পরোক্ষভাবে ভারতের ওপর বর্তায়। ভারত কোনো দিন নিজ দেশে সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি, উপরন্তু পার্শ্ববর্তী দেশে এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে ইন্ধন দেয়ার অনেক প্রমাণ বাংলাদেশীদের হাতে আছে। অতীতে তসলিমা ইস্যুকে কবজা করে অনেক ভানুমতির খেল দেখানো হয়েছে। এবার চলছে হাসিনার খেল। এত অনাচারের পর তার দলদাসরা অপকর্মের জবাবে বলছেন, এসব নাকি হাসিনার উদারতার নমুনা। কৌশলে মানুষ মারা যদি উদারতার নমুনা হয় তবে মানুষ হত্যা যখন তিনি সজ্ঞানে করবেন তখন তার স্বরূপ কতগুণ ভয়ঙ্কর হবে? 

ক্ষমতার আড়াই গুণ বন্দিতে কারাগার টইটুম্বুর। ওদিকে গোটা দেশকে কাঁটাতারে ঘের দিয়ে বাংলাদেশকে কি ভারত কারাগার বানিয়ে তার মনোবাসনা পূরণ করতে চায়? আর ভেতরে তাদের লেন্দুপ দর্জি গোটা দেশকে কারাগার বানিয়ে কানায় কানায় ভরেছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই সচেতনরা লক্ষ্য করছেন কীভাবে ভারত দেশটির সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে। স্বাধীন একটি বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর পরিকল্পিত লুণ্ঠনের কথা অকপটে বলে গেছেন সচেতন মুক্তিযোদ্ধারা। ভারতের সম্প্রসারণবাদী প্রতিক্রিয়াশীল শাসক গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের শেষপর্বে সব মুক্তিযোদ্ধার ভয়ে ভীত হয়েই বাঙালির স্বাধীনতার গৌরবকে জবরদখলের মধ্য দিয়ে অতীতে নিজেদের হীন স্বার্থ উদ্ধার করেছে মাত্র। দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা ১৬ ডিসেম্বরের পর মিত্র বাহিনী হিসেবে পরিচিত ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্পদ মালামাল লুণ্ঠন করতে দেখেছে। সে লুণ্ঠন ছিল পরিকল্পিত। সৈন্যদের স্বতঃস্ফূর্ত উল্লাসের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ নয়। সে লুণ্ঠনের চেহারা ছিল বীভত্স-বেপরোয়া। পাকিস্তান যেদিন সৃষ্টি হয় সেদিন আমরা জানতাম না পরবর্তী মানচিত্রের নতুন অধ্যায়ের কথা। পাকিস্তানের অনাচার যদি বাংলাদেশীদের চোখ খুলে দিতে পারে তবে আওয়ামী লীগের অনাচার থেকে দেশবাসীর চোখ অন্ধ থাকবে এটি ভাবা ঠিক নয়। তারা তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও স্বকীয়তার প্রতিফলন যে ঘটাবে না, এটি ভাবার কোনো কারণ নেই। ২০১৪-এর নির্বাচনই একটি বিশাল আওয়াজে ভারতের গুণধর পোষ্য সরকারকে একটি বড় ‘না’ বলে দিয়েছে। ভারত কি বাংলাদেশের জনগণের ভাষা বুঝে কম? বাংলাদেশীরা অতিরিক্ত ভদ্র, তাই চল্লিশ বছর অবধি ভারতের শত অনাচার নীরবে সমর্থন করে গেছে। শক্ত প্রতিবাদ জানায়নি। এবারের ভাষা যদি ভারত না বুঝে তবে বলতে হবে এতে শুধু বাংলাদেশীর ভাগ্যেই দুঃখ আসবে না, ভারতের কপালেও দুঃখ আছে। 

জাতির ইটভাঙা নারী আর হাসিনার মাঝে পার্থক্য হচ্ছে, তারাও নারী তিনিও নারী। তারা সহজ সরল, ইতিহাস জানেও না, বুঝে কম। আন্তরিক, নিজের ও দেশের মঙ্গল চায়। আর হাসিনা হচ্ছেন নিজের নষ্ট ইতিহাস ঢেকে রাখতে উদ্যমী, আন্তরিকতার অভাব আর দেশের মঙ্গলের কথা ভুলেও মনে নেই, সারাক্ষণ নিজের ও পরিবারের মোটাতাজাকরণের দিকে অতিরিক্ত নজর। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মন্তব্যে তার সাধারণ ইউনিয়ন পরিষদে দাঁড়ানোর যোগ্যতাতেও সন্দেহ আছে। তার দক্ষতার এ সন্দেহ দিন দিন বাড়ছে গুণে গুণে। বাংলাদেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারেও গৃহকাজের বুয়া নিয়োগেও কিছু যোগ্যতার দিকে নজর দেয়া হয়। যেমন এরা মিথ্যা কথা বলে কিনা? এ ঘরের কথা ও ঘরে লাগায় কিনা? ঝগড়াটে কিনা? চোর কিনা? কাজের বুয়াদেরও একটি যোগ্যতা ধরা হয়। ১৬ কোটি জনতার দেশে সবচেয়ে করাপ্ট ব্যক্তিটি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। যার আচরণের মাঝে সততার কোনো বালাই নেই বললেই চলে। প্রথম কৃত অপরাধের পর হাতজোড় করে মাফ চেয়ে যাকে পরে গদিতে শত অপরাধে মাফ দেয়ার অলিখিত শর্ত দিয়ে বসতে হয়। বিনা অপরাধে তিনি মাফ চাননি! এসব অপরাধে তার পরিবারের সবাই গোষ্ঠীবদ্ধভাবে জড়িত ছিল। বংশানুক্রমের এ অপরাধ বহুগুণিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান আচরণে। 

দেশে সঠিক বিচার থাকলে বছরের ৩৬৫ দিন যার কারাগারে থাকার কথা। সে কিনা বাইরে থেকে সব নির্দোষকে কারাগারে বন্দি করে রাখছে। বর্তমানে পুতুলের নির্বাচন খেলার পর চলছে বিরোধীদের ধড়পাকড় খেলা। ইথারে ছুড়ে দেয়া হয়েছে একটি কথা। তিনি সেরা খেলোয়াড় তাই খেলারাম খেলবে যা তা সবাইকে অবাক বিস্ময়ে দেখতে হবে, মানতে হবে। সে দেশের রাষ্ট্রপতির, নির্বাচন কমিশনারের পারতপক্ষে কোনো ক্ষমতাই নেই। এরা পুতুলের জি-হুজুরের প্রক্সিদাতা, সিটেবসা চেয়ার দখল করা গোলাম মাত্র। এরা চামচারা বলছে আল্লাহর পর প্রধানমন্ত্রী, তারপর আমরা। এরকম কথা একজন মুসলমান কীভাবে বলে জানি না, তবে আওয়ামী লীগের মতো অনাচার করা হাসিনা ও তার অনুসারীরা সব অপকর্মই করতে পারে। হুদার কার্টুনে খুব সুন্দর এসেছে বিজয়িনীর মহা বিজয়ের অঙ্গুলি সঙ্কেত আর দৌড় প্রতিযোগিতার শিরোভাগে, দুই আঙুলে বিজয় চিহ্ন ধরা। পেছনে চলেছে লেংড়া লুলা হাঁটুভাঙা পাভাঙা গুটিকয় আর পার্শ্ববর্তী গাছে বেঁধে রাখা প্রধান বিরোধী নেত্রী খালেদা ও অন্যরা। সবই আওয়ামী বিজয়ের খেলা। এ নির্বাচন জাতির জন্য এক মাইলফলক হয়ে রইবে বাংলাদেশের জীবনে। ১৬ কোটি মানুষকে কারাগারে রেখে বাইরে ট্রাইব্যুনাল আর হাসিনা। তাদের দৃষ্টিতে আল্লাহ কিছু দেখে না। তাই এমন খেলা চলছে। আল্লাহ শয়তানকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিয়েছেন অপকর্ম করার জন্য। এতে শয়তানের উত্ফুল্ল হওয়ার কিছু নেই। এটি তার শক্ত মরণের ইশারা মাত্র। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ‘ফক্স এন্ড লায়ন ইন বাংলাদেশ’ নিবন্ধে আওয়ামী লীগকে খেঁকশিয়াল কল্পনা করা হয়েছে আর বিএনপিকে ধরা হয়েছে সিংহ। এখন শেয়ালের দিকে কিন্তু সিংহ ওঁত্ পেতে আছে। ওদিকে ভারত আগাগোড়াই জড়িয়ে গেছে ওই খেঁকশিয়ালের খেয়ালি খেলাতে। দুটি উদাহরণই অর্থবহ ইঙ্গিত হয়ে এসেছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অস্থিতিশীলতার জন্য বড়দাগে দায়ী ভারত অনেকাংশে। আর খেঁকশিয়াল সবসময়ই ধূর্ততার উদাহরণ আর সিংহ প্রতীক কী নির্দেশ দেয় সেটি বলার মনে হচ্ছে আর দরকার নেই। এটি সবারই জানা। ফক্সের ভাগে এবার ৪-৫ ভাগ মানুষ হলে বাকি ৯৫-৯৬ ভাগ সিংহের ভাগে। খেঁকশিয়াল তার ধূর্তামিতে বাকিদেরে খালি চোখে দেখছে না। সঙ্গত কারণে দেশটির প্রতি জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্বের সুনজর দাবি করছি। এর মাঝে আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, জি-নিউজ, ফিনান্সিয়াল টাইমস অনলাইন, অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি), টাইমস অব ইন্ডিয়া, এএফপি, এনডিটিভি, ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, সিনহুয়া, নিউইয়র্ক টাইমস, আরব নিউজ, সৌদি গেজেট, আনন্দবাজার পত্রিকাসহ বিদেশি গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের বক্তব্যে সমালোচনার বাস্তবতা এসেছে চোখে পড়ার মতোই। বাংলাদেশ বিশ্বের একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী পরিবার। মানবিক অর্জন নিয়ে মাথা উঁচু করে মানুষের মর্যাদা নিয়ে দাঁড়ানোর অধিকার তারা বাকি গোটা বিশ্বের মতোই পায়। বিশ্ব পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বাধীন একটি দেশে এমন দুর্দিনে বিচারের ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দিকে সবার আরও বেশি সুনজর আশা করছি।

Tag Cloud

%d bloggers like this: