Articles published in this site are copyright protected.

আগ্রাসী ভারত অপকর্মের আগে দালাল দিয়ে টোপ ছাড়ে ও ঐ দালাল দিয়েই কাম সারে। বৃটিশ বিদায়কালে শুরুতে এসব দালালি অপকর্ম না করলে আজ কাশ্মীরের এমন অবস্থা হতো না। কাশ্মীরের হরিসিং, সিকিমের লেন্দুপ দরজি আর বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ভারতীয় আগ্রাসনের এক সূত্রে গাঁথা কলঙ্কময় তিন রতন! ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৫ “কাশ্মীর থেকে অবিলম্বে ভারতীয় সৈন্য হটাও” লেখাটি লিখেন অরুন্ধতী রায়। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ যে দুঃখ দুর্দশার মধ্যে কালাতিপাত করছে এবং ভারতীয় দখলদার সৈন্যরা স্বাধীনতা আর শান্তির নামে তাদের উপর যে অমানুষিক নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়গুলি ফলাও করে প্রকাশ বা প্রচার করতে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের স্বনামখ্যাত লেখিকা বুকার পুরষ্কার বিজয়ী অরুন্ধতী রায় গত মঙ্গলবার নয়াদিল্লীতে শিক্ষাবিদ সমাজকর্মী মানবাধিকার স্বেচ্ছাসেবক এবং ছাত্রদের এক সমাবেশে এ বক্তব্য রাখেন। তার মতে জম্মু ও কাশ্মীরে যা হচ্ছে তার সত্য প্রকাশ করতে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম যেন ভগ্নমনস্কতায় ভুগছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম কাশ্মীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতির গোলাপী চিত্র সব সময় ফুটিয়ে তোলে। অথচ এগুলোর সবই মিথ্যা। দিল্লীর “দি হিন্দু” পত্রিকায় অরুন্ধতী রায়কে উদধৃত করে বলা হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, “কাশ্মীর উপত্যকায় যে নির্যাতন নিপীড়ন চলছে সে ব্যাপারে আমাদের আলোচনা করতে না দিলে এবং সেগুলো উর্ধ্বে তুলে ধরতে না দিলে ফিলিস্তিন বা ইরাকে কি ঘটছে সে ব্যাপারে কিছু বলার অধিকার ভারতের নেই। বিষয়টি শুধু কাশ্মীরীদের স্বাধীনতার সাথে জড়িত নয়, এটা সব ভারতীয়দের জন্য উদ্বেগের ব্যাপার। কেমন তামাশার শান্তির কথা বলা হচ্ছে”। অরুন্ধতী রায় সভায় জোর দাবী জানান, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে অবিলম্বে দখলদার ভারতীয় সৈন্য হটাও। অরুন্ধতী রায় আরো বলেন, “বিশ্বের ভাঙ্গনে ভারতকে গণতন্ত্র আর গান্ধীবাদের জন্য শ্রদ্ধা করা হয়। অথচ এই গণতন্ত্র আর গান্ধীবাদের চর্চা একটা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। এদিকে মুজাহিদ দমনের নাম করে সমানেই সাধারণ কাশ্মীরীদেরে হত্যা করা হচ্ছে। শ্রীনগরে ভারতীয় সেনা মুখপাত্র লেঃ কর্ণেল ভিকে বাটরা স্বীকার করেছেন তাদের সৈন্যরা গত বৃহস্পতিবার এক পার্বত্য অঞ্চলে গুলি করে ৯ কাশ্মীরীকে হত্যা করেছে।  —-মুজাহিদ হত্যার নামে ১৯৮৯সাল থেকে এ পর্যন্ত ভারতীয় সৈন্যরা ৬৬ হাজারের বেশী বেসামরিক কাশ্মীরীকে হত্যা করেছে বলে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায় (বাংলা এক্সপ্রেস , লন্ডন থেকে এটি প্রকাশিত হয় ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০৫)।

photoblog-nbcnews-com-kashmir

photoblog.nbcnews.com

কাশ্মিরে নির্যাতন: ধর্মের শিকলে বাঁধা পড়ে সারা বিশ্বে জনতারা যে কষ্টের কাল কাটাচ্ছে তা বর্তমানের সময়টিতে মধ্যযুগীয় বর্বর যুগের কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের নিষ্ঠুর নীরবতার জবাবে নির্বিঘেœ জুলুমকারীরা নির্যাতনের ষ্টিম রুলার চালিয়ে যায় নির্যাতীতের উপর। ইলেকট্রিক শক দান, জলন্ত সিগারেটের সাহায্যে পুড়ানো, লাঠি ও রাইফেলের বাট ইত্যাদি দিয়ে প্রহারের সাথে সাথে অভিনব নির্যাতনের নতুন পদ্ধতি হচ্ছে মানুষ অঙ্গ চুরি করা। অধিকৃত কাশ্মীরে জনতার উপর চলছে এসব নির্যাতন। যুবকদেরে হত্যা করে তাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিনিয়ে নেয়ার জন্য অপারেশন করে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ হয়তো কাশ্মীরী যুবকদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের এ মহৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে অরিগামের ঘটনাটি তুলে ধরা যেতে পারে। ভারতীয় সেনাবাহিনী কার্পেট বয়নকারী ২২ বছর বয়স্ক ফারুকসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। দু’ সন্তানের পিতা ফারুককে বেদম প্রহার করে মানবোয়ার নির্যাতন শিবিরে নিয়ে গেল। অসহনীয় নির্যাতনের পর ফারুক আত্মরক্ষার্থে তার বাড়ীতে বন্দুক আছে বলে স্বীকার করতে বাধ্য হয়। সৈন্যরা বাড়ীতে অস্ত্র না পেয়ে তার বৃদ্ধ পিতাকে ধরে আনলো। ফারুকের পিতা গোলাম রসুল (৫৯) একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের কনস্টেবল। তাকেও নির্মম প্রহারে ডানহাত ও আঙ্গুলসহ ভেঙ্গে দেয়া হয়। ফারুককে ভারতীয় সৈন্যরা হত্যা করে এবং শ্রীনগরের পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তার মৃতদেহ হস্তান্তর করে।

পুলিশের একজন ডাক্তার (স্থানীয় ডাক্তার) ফারুকের ময়না তদন্ত করেন। তিনি তার শরীরের ভিতরে তূলা ভর্তি অবস্থা দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কোন কিছুই ভিতরে ছিলনা। সবকিছুই ছিনিয়ে নিয়েছে বর্বরেরা। তার শরীরের মধ্যে একজোড়া সার্জিক্যাল গ্লোবও পাওয়া গেল। তার মাথার খুলির পিছনের দিকেও ভাঙ্গা ছিল। ভারতীয় সৈন্য বাহিনীর দ্বিতীয় জ্যাক রাইফেল ইউনিট এই বর্বরতা চালায়। অপর ঘটনার সাক্ষী হয়ে এখনও বেঁচে রয়েছেন মোহাম্মদ রফিক মীর। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের পর অলৌকিকভাবে হায়েনার হাত থেকে তিনি বেঁচে রয়েছেন, কিন্তু একটি কিডনী হারিয়েছেন। যোধপুর হাসপাতালে অপারেশন করে তার বাম কিডনীটি চুরি করে নেয় ওরা। হাজার হাজার কাশ্মীরীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যবহার ও বিক্রির জন্য তাদেরকে গিনিপিগের মত ব্যবহার করছে। দ্বিতীয় অভিনব নির্যাতনকে মানবাধিকার সংক্রান্ত  জম্মু ও কাশ্মীর পরিষদ “লোকদের রাস্তায় রোলার পিষ্ট করা” বলে বর্ণনা করেছেন। দুইজন সৈন্য নির্যাতনের শিকারকে হাত পা বাধা অবস্থায় খাড়াভাবে স্থাপিত একটি দন্ডের সাথে ধরে রাখে এবং কিছু দূর পর পর তার দু পায়ের উপর দিয়ে রোলার চালিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে নিদারুণ যন্ত্রণায় এরা স্বীকারোক্তি করতে বাধ্য হয়। এতে তাদের অস্থি চুরমার হয়ে যায় এবং পেশী থেতলে যায়। ভাঙ্গা অস্থির ক্ষতিগ্রস্থ পেশী থেকে তরল পদার্থ নির্গত হয়ে শিরাধমনীগুলো বন্ধ করে দেয় এবং এতে কিডনী অকার্যকর হয়ে যায়। প্রায়ই এরা নিহত হয়। অল্প কয়জন বেঁচে আছেন কাশ্মীর মেডিক্যাল ইন্সটিটিউটে ডায়ালাইসিস চিকিৎসার পর। এমন নির্যাতনের খবরাখবর নির্ভরযোগ্য তদন্তকারী সূত্রএ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ানস অন হিউম্যান রাইটস (ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, এশিয়া ওয়াচ, বৃটিশ পার্লামেন্টের মানবাধিকার গ্রুপ টর্চার, এরকম অনেক সংস্থা কর্তৃক সমর্থিত)।

Indian Forces Entering & Vandalizing A Home In Kashmir Indian Attrocities In Kashmir

 

ভারতের একটি পত্রিকা আনন্দবাজার থেকে নেয়া তথ্য, হোডিংটি ছিল “পুরুষরা ফিরবেন জীবিত বা মৃত, মেয়েরা অপেক্ষায়”(২৫ অগ্রহায়ন ১৪১৫ বাংলা, ১১ই ডিসেম্বর ২০০৮ সাল)। ওরা কাশ্মীরের মেয়ে যেখানে অগণিত পুরুষ নিঁখোজ হয়ে যান, সেই ভুস্বর্গের মেয়ে। কিছুদিন আগে ওদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন নীলশ্রী বিশ্বাস। খবরটির পাশে একটি ছবিও সন্নিবেশিত ছিল। এ এফপির দেয়া ছবি আশায় আশায়  কাশ্মীরী মহিলা একটি বালিকার ছবি তার অপেক্ষার প্রমাণ হয়ে ছিল।

Clashes erupt in Batmaloo on Eid day

“শ্রী নগরের বাটমালু এলাকায় যাব বলে একটি রিকশায় বসেছি। রিকশাচালক কাশ্মীরী হিন্দিতে বুঝিয়ে দেয় ও জলদি করতে বলে কারণ শ্রী নগরে সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টার পর মেয়েরা একা চলাচল করেনা। বিশেষত ডাউনটাউন এলাকায় বেহেরমতি বা (বেইজ্জত) হওয়ার ভয় থাকে, স্পষ্ট জানিয়ে দেয় চালক। তবে কি শহরটা দিনে রাতে আলাদা? যে প্রান্তে আমি থাকছি সেদিকে পর্যটকদের ভীড় বেশী। অলিগলি পেরিয়ে তসলিমার বাড়ী পৌছেছি। ৮x৮ ফুটের ঘরে গেরস্থালির খুঁটিনাটি ছড়ানো। মাঝারি সাইজের কাবার ছবি বাধাই করা দেয়ালে। চিনেমাটির ফুল পাতা আঁকা কাপে কেহওয়া (কাশ্মীরী চা) আসে। হালকা ধোয়ার ফাঁকে আমি প্রথম তসলিমাকে নজর করি। টেনেটুনে ২৫ বছর হবে। ২০০৫ এর কোন এক দিনে লালচক (শ্রীনগরের মূল অফিস বাজার এলাকা) থেকে আতর বিক্রেতা নাজির আহমেদকে সেনাবাহিনীর কারা যেন গাড়ীতে তুলে নিয়ে যায়। নাজির ছোট ঠেলায় করে আতর, জপমালা, ধূপ, বই পত্তর বিক্রি করতো। ২১ বছরের তসলিমা আড়াই বছর আর চল্লিশ দিনের দুটি সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে খোঁজা আরম্ভ করে। এক জেল থেকে অন্য জেলে, এক ইন্টারোগেশন ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে। আজ খবর আসে সে অনন্তনাগের জেলে, অন্যদিন শুনে তাকে গুলমার্গে বদলি করা হয়েছে। নাজিরকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। বছর ঘুরে যায়। হঠাৎই সীমান্তবর্তী গন্ধারবাল জেলায় তিন  শহীদের সঙ্গে নামহীন কবরে পাওয়া যায় নাজিরকে।

প্রায়ই লিংকগুলি মুছে দেয়া হচ্ছে। বাস্তবতা এখানেই নীচে।

INfocus – Endless abuses of human rights in Kashmir

তবে কি কাম্মীরে সবাই জঙ্গি? বেসরকারী সূত্রে (এ পি ডি পি এবং জে কে সি সি এর সূত্র অনুযায়ী) মৃত মানুষের সংখ্যা ৭৫,০০০, হারিয়ে গিয়েছেন ১০,০০০এরও বেশী। তারা সবাই নিশ্চয়ই জঙ্গি কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত, না হলে কী করেই বা এই অভিযোগ উঠে যে ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাদের গ্রেফতার করছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী? গত মে মাসেও সারা কাশ্মীরে মোতায়েন ছিল ৬ লক্ষেরও বেশি সেনা। সুরক্ষার তাড়নায় দুলক্ষ পরিবার ছন্নছাড়া, প্রতিটি পরিবার থেকে মানুষ নিঁখোজ। আগুণের ফুলকি সবচেয়ে বেশী এসে পড়ছে মেয়েদের জীবনে। শান্ত গেরস্থালি থেকে বেরিয়ে মোকাবেলা করতে হচ্ছে জীবনকে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ, সেনাবাহিনী , প্রশাসনকে। স্কুলের গন্ডি পার না হওয়া এই মেয়েরা নিঁখোজ স্বামীর খোঁজে দিল্লী অবধি ছুটে গিয়েছেন। সাহায্য নিয়েছেন আদালতের, আশায় ঘাটতি পড়েনি। অধিকাংশ মেয়েই বুক বেধে আছেন, করে ফিরবে স্বামী, বা ভাই বা ছেলে। আর যদি সত্যিই তারা না ফেরে, তবে মেয়েরা দেখতে চায় তাদের মৃতদেহ।

কতজনের কথা বলবো? ত্রিকোলবালের মাহমুদা, যে তার প্রেমিক গোলাম নবীর জন্য সাত বছর প্রতিক্ষারত। ঔষধের কারবারি গোলামকে নাকি গুলমার্গের কোন গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যায় সেনা। হাঞ্জিবেরার ফৈয়াজের জন্যে অপেক্ষারত তার বৃদ্ধা মা। ২৫ বছরের আব্দুল হামিদের জন্য প্রত্যেক রাতে ঘুমহীন তার মা আজরা বেগম। মহঃ মকবুল, যিনি ছিলেন মাধ্যমিক স্তরের স্কুল শিক্ষক, স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পথে আজ বারো বছর নিঁখোজ। স্ত্রী আফরোজা তার বড় মেয়ে রেহানা তার মৃতদেহের অপেক্ষায়। রেহানা বলেন, “আমার কাশ্মীর জ্বলছে – তোমরা আমাদের ছেড়ে দিচ্ছ না কেন?” আমি দ্বন্ধে পড়ে যাই। কই, একবারও তো পাকিস্তানের কথা বলছে না কেউ! তারপর সংক্ষিপ্ত একটা মন্তব্য করেন ছোটবোন সুলতানা, যার অর্থ, “দিদি আর বলিস না”।

খেটে খাওয়া মানুষের জীবন যাপন চলছে। ফল উঠতে আর বেশি বাকী নেই। আপেল ক্ষেতে তুমুল কাজ চলছে, চলছে ধানের ক্ষেতের কাজ। মহিলা পুরুষ সমানতালে কাজ করছেন। কই মেয়েরা কমতি কোথায় কাশ্মীরে? ইসলামের দোহাই, রক্ষণশীলতার চাপানো যুক্তি আমরা দেখিয়ে থাকি, ওরা কিন্তু নিজেদের মত করে জীবনের লড়াইতে ব্যস্ত। ভারতীয় সেনা অভিযানের নামে ধরপাকড়, খুন আর অত্যাচারের অভিযোগ শুনতে থাকি। বারামুল্লা জেলার প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে মানুষ নিখোঁজ। নিখোঁজ গুলমার্গ, অনন্তনাগ, তনমাগ, কুপওয়ারা, গন্ধারবাল জেলার বহু মানুষ। রাতের অন্ধকারে, দিনের আলোয় কাজ থেকে ফেরার পথে, দোকান থেকে, বাড়ী থেকে, এমনকি শোওয়ার ঘর থেকে মানুষকে অপহরণ করা হয়েছে। কোনও বিচার নেই, কোন প্রতিকার নেই। কারণ হিউম্যান রাইটস শব্দটা সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কাশ্মীরে সেনার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া সহজ নয় – সরাসরি ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দ্বারস্থ হতে হয়। কোন কারণ ছাড়াই তল্লাশি করতে পারে তারা। তুলে নিয়ে যেতে পারে যে কাউকে। “আর্মর্ড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট” সুরক্ষার নামে এক আইন যা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে দেয় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। রাজ্যে মানবাধিকার কমিশন কাগুজে বাঘের চেহারা নিয়েছে। আদালত পর্যন্ত পৌছানো দূরের কথা, নিকটবর্তী থানা নাকি এফ আই আর টুকুও নেয়না, ঘুষ চায়। অসংখ্য মেয়ে পিটিশনার হিসাবে এ কথাটি প্রমাণই করতে পারেন না যে, তাদের স্বামী ভাই ছেলে নিখোঁজ।

যখন হাজারো মহিলার জীবন বিধ্বস্ত, যখন তারা প্রায় ধরেই নিয়েছেন যে প্রিয়জনেরা আর ফিরবেন না। তখন গোটা কাশ্মীরের এই সব মহিলাকে এক জায়গায় জড়ো করেছেন একজন আগুণে মহিলা। পারভিনা আহামগার, কাশ্মীরের প্রতিটি পরিবার যাকে এক ডাকে চেনে। শোনা যায় ১৯৯০ সালের আগষ্ট মাসে ১৬ বছরের ছেলে জাভেদকে তুলে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর জোয়ানরা। ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র জাভেদ স্কুল থেকে বাটমুলার বাড়ীতে ফিরছিল। ১৮ বছর জাভেদ নিখোঁজ। এই ১৮ বছরে পারভিনা বদলেছেন আমূল। নিছক ঘরোয়া কাশ্মীরী গৃহবধু থেকে এশিয়ার মানবাধিকার আন্দোলনের অকুতোভয় নেত্রী। পারভিনার এ পি ডি পি (অ্যাসোসিয়েশন অব পেরেন্টস অব ডিস্যাপিয়ার্ড পার্সনস) আজ হারানো মানুষের স্বজন মেয়েদের নিজস্ব সংগঠন। প্রতিবাদে প্রতিরোধে যারা স্তব্ধ করতে পারেন সমস্ত কাশ্মীর। জাভেদকে খোঁজছেন পারভিনা আইনের পথ ধরে, প্রতিবাদের আন্দোলনের পথ ধরে। তার সঙ্গে আছেন কয়েক শত মহিলা। এই মহিলারা সরকারী রেকর্ডে হাফ উইডোজ। কিংবা পেরেন্টস অব ডিস্যাপিয়ার্ড পার্সনস।

অভিযোগ অজস্র। ভারতীয় সেনা নাকি গ্রাস করছে ৬,০০০ কুলাক জমি, যাতে ছিল আপেল, আখরোট, জাফরানের ক্ষেত, স্কুল বা হাসপাতাল। ধর্ষণ শ্লীলতাহানির অভিযোগ অগুণতি, অনাথ হয়েছেন এক লাখেরও বেশী শিশু। এমন গ্রাম আছে যেখানে একজনও সধবা নেই। যেমন কুপওয়ারা জেলার দর্দপুরা গ্রাম। ২০০৬এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ ভুগছেন পি টি এস ডি তে (পোস্ট ট্রমা ষ্ট্রেস ডিসঅর্ডার) সমস্যাতে। স্বাধীন বিশ্বে একটু স্বাধীনতার ছোঁয়া পেতে যারা জীবনপাত করছে তাদের তরে মানবতার এ ভ্রুকুটি প্রতিটি সচেতন মানুষকে অবশ্যই পীড়া দেয়। কেন যে পৃথিবীর মানুষেরা পশুর মত আচরণ করছে, এই মানুষ নামক সম্প্রদায়টির সাথে এর একমাত্র খোড়া যুক্তি হল, এরা তাদের স্বধর্মের নয় এই তাদের অপরাধ। শুধু ধর্মের অপরাধে এ যাবত যত রক্ত গঙ্গা বয়ে গেল এ পৃথিবীতে যদিও সে বোকারা এ তথ্যটি আজো বুঝে উঠতে পারলো না যে, এ ধর্ম জিনিসটি এসেছে মানুষের মঙ্গলেরই জন্য। এটি যদি মানুষের ধর্ম হয়ে থাকে, তবে সেখানে থাকবে এই মানুষের জন্য গড়ে দেয়া বিজয়ের রাজপথ। কোন হিংসা নয়, কোন ঘৃণা নয়, আমরা একই রংএর রক্তের অধিকারী মানুষ সবাই আমরা এক খোরে মাথা মোড়ানো এক দল বুদ্ধিধারী  প্রাণী, আমরা সবাই এক মায়ের পুত। বেশীরভাগ সময়ই আমরা আমাদের বুদ্ধিকে সুবুদ্ধির দিকে চালিত না করে কুবুদ্ধির কাজেই বেশী উৎসাহ দিচ্ছি, এসব তারই উত্তম নিদর্শন।

আমরা আমাদের সে বুদ্ধিটিকে সুচারুরুপে ব্যবহার করলে খুব সহজে এটি ধরা পড়ার কথা যে, সংকীর্ণতা আমাদের মুক্তি দিতে পারবেনা, আমরা প্রত্যেকে ভাই প্রত্যেকে বন্ধু সেখানে কোন মানুষের জন্য কবর রচিত হতে পারেনা। মানুষের ধর্ম এটি মানব ধর্ম এর আরেক নাম শান্তি – সালাম – পিস। মানুষ নামধারী ঐ সব অমানুষদেরকে চিৎকার করে কবির ভাষায় আবারো বলতে ইচ্ছে করে –

“তোমার দেয়া এ বিপুল পৃথ্বি সকলে করিব ভোগ

এই পৃথিবীর নাড়ী সাথে আছে সৃজন দিনের যোগ।”

একই চিত্র চলছে বাংলাদেশে ভারতীয় ও সরকারী ছত্রচ্ছায়াতে। দুটি ঘটনা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।বাংলাদেশ নামের ক্ষুদ্র মানচিত্রের দেশটিতেও ষড়যন্ত্র কাজ করেছে সেদিনও, যখন দেশটি বিভাগ হয়। এরপর বেশ বড় একটি সময় পার হলেও বর্তমানের সময়টিতে সেখানের জনতারা মানুষ নয় যেন পাখি। কিন্তু আজকাল পাখিও মানুষ এভাবে শিকার করেনা, এরা যেন তার চেয়েও ক্ষুদ্র অবহেলিত কোন জীব প্রজাতি আর বন্ধু নামধারী ভারতই শিকারী। (এটি ২০১২ সালে প্রকাশিত নাজমা মোস্তফারএকই ধর্ম একই ধারা গ্রন্থে প্রকাশিত, ২২৮২৩৩ পৃষ্ঠা)

 

নাজমা মোস্তফা,    ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬।

Leave a comment