Articles published in this site are copyright protected.

না জ মা মো স্ত ফা

আমার চিরচেনা দেশটিকে অন্য অনেকের মতোই আজ বড়ই অচেনা লাগছে। পৃথিবীর মানচিত্রে এটি চতুর্থ মুসলিম দেশ। উইকিপিডিয়ার তথ্যে পাওয়া ২০১০ সালের হিসাবে এর ৯০.৪ ভাগ হচ্ছে মুসলমান আর এ ধর্মই এখানের জনসাধারণের মূল পরিচিতি। যেখানে নাস্তিকদের বলতে গেলে প্রায় কোনো অস্তিত্বই নেই। জাতিসংঘের হিসাবেও দেশটি গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনায় খুবই সহনশীল এবং অসাম্প্রদায়িক। এখানে ইসলামের আগমন ঘটে ১০ শতাব্দীতে। মূলত আরব বণিকদের এবং পারসিয়ান সাধকদের আগমনে ইসলাম প্রসারিত হয়। কোনো কোনো সূত্রে এর আগেও এতদঅঞ্চলে ইসলামের আগমন লক্ষ্য করা গেছে। অর্থনীতির জন্য ব্যবসা আর আদর্শের জন্য ধর্ম ছিল তাদের জীবনের অবলম্বন। শাহজালাল (রহ.) এ রকম এক সাধকের নাম। যিনি ১৩০৩ সালে ৩৬০ আউলিয়া নিয়ে সিলেটে এসে বসতি গড়েন। এটি বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মের গোড়ার কথা। অষ্টম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধরা পাল রাজবংশ নামে এতদঅঞ্চল শাসন করত। সে হিসেবে এতদঅঞ্চলের বড় অংশের মানুষ মূলত বৌদ্ধ ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিক হওয়া মুসলমান। বৌদ্ধ ধর্ম-পরবর্তী যখন সেন বংশ ক্ষমতায় এলো, তখনই বড় অংশের মানুষ ইসলামের ছায়াতলে শান্তির ছায়া দেখে আশ্রয় নেয় এবং এটি চলে প্রায় ১০০ বছর অবধি। উল্লেখ্য, এখানে শুধু বৌদ্ধরাই এসে ভিড় করেনি, নিম্নবর্ণের অনেক হিন্দুও এসে আশ্রয় নেয়। কারণটি কি? ধর্মে জোর-জবরদস্তি? না, মোটেও তা নয়। এ ধর্মে এটি নিষিদ্ধ শাস্ত্রবাণী। যদিও প্রতিপক্ষের মিথ্যা সাজানো ইতিহাস আর কৌশলী মিডিয়া সেটির প্রচারে তত্পর থেকেছে। বিরুদ্ধবাদীরা তো চালিয়েছেই, কখনও কখনও দেখা গেছে এক শ্রেণীর মুসলমানকেও তারা কৌশলে কিনে নিয়েছে এ কাজটি করার জন্য। এরা হতে পারে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ছাত্র, ডাক্তার, প্রকৌশলী সর্বস্তরে এরা ঢুকে পড়েছে।

যার কিছু নমুনা হিসেবে কিছুদিন আগে তারা বাংলাদেশের কলিজাতে একদম শাহবাগের চত্বরেও ঢুকে জয়ধ্বনি দিয়েছে। এরা অনেকেই নামে মুসলমান, ধর্মেও মুসলিম। চিন্তাশীলদের জন্য কিছু চিন্তার খোরাক, যারা নিজের পরিচিতি এরই মধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন বা খুঁজে পাচ্ছেন না। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু ভারতের মতো সাম্প্রদায়িক নয়। এটি জোর গলায় বলার দরকার আছে। আমরা নিজেদের প্রশংসা থাকলেও করতে কুণ্ঠিত থাকি। আমরা মনে করি বৌদ্ধরা অহিংস নীতির ধারক, যদিও সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা তাদের সমূহ অর্জন খুইয়েছে বলেই ধারণা হয়। দেখা গেছে ইসলাম হচ্ছে ফজলি আম, যে কারণে তসলিমার মতো একজন মহিলাকেও সেখানে (অন্যের দালাল হিসেবে) ঢিল ছুঁড়তে দেখা গেছে। ইসলামের সর্বনাশ করতে অনেক কিছুই করা হচ্ছে; কিন্তু সবসময়ই সর্বনাশ না হয়ে বরং ওটি কখনও কখনও বুমেরাং হচ্ছে। টুইন টাওয়ার কে ধসালো আজ পর্যন্ত কোনো বিচারে সেটি সাব্যস্ত হয়নি। কে ওটি ঘটিয়েছে? কিন্তু অবশ্যই কেউ এটি সাজিয়েছিল, নয়তো ওই বিল্ডিংগুলো এমনি-এমনি ধসে পড়েনি। বিশাল শক্তিধর আমেরিকাও এখানে নানা প্রশ্নের জমা বাড়িয়ে চলেছে।

কথা হচ্ছে ইসলাম কোনো জুয়াখেলার নাম নয়। এটি একটি শক্তিশালী সত্য ধর্মের নাম। কী কারণে বাংলাদেশকে আজ অচেনা লাগছে? কারণ পরবর্তী প্রজন্মেরা ইতিহাস ঠিক করে পড়েনি, জানেনি। তাদের উচিত ছিল পাকিস্তান কেন হলো, বাংলাদেশ কীভাবে হলো এসব পড়ে জেনে নেয়া। বস্তুত দেখা গেছে, অনেকেই যারা পাকিস্তান গড়েছেন তারাই আবার পাকিস্তান ভাঙার কাজ করেছেন। ইসলাম ধর্মের হিসাবে ৯০.৪ ভাগ অধ্যুষিত মুসলমান ছেলেমেয়ের ওপর ধর্মের নির্দেশ হচ্ছে ‘পড়ো’। চারপাশের মঙ্গলের চিন্তায় যখন নবী মুহাম্মদ (সা.) একাগ্রচিত্তে ধ্যানরত ছিলেন হেরার গুহাতে, ঠিক তখন জিবরাঈল ফেরেশতা প্রথম যে বাণীটি নিয়ে আসেন সেটি হচ্ছে ‘ইকরা’ অর্থাত্ ‘পড়ো’। এভাবে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে পুরো ধর্ম গ্রন্থটি ধাপে ধাপে নাজিল হয় বিভিন্ন জটিলতার জবাবে সমাধান হিসেবে। এমন একটি গ্রন্থের পাঠ পৃথিবীর সবারই পড়া দরকার। কারণ এটি স্বয়ং আল্লাহর প্রেরিত। এটিও দাবি করা হয়, হযরত মুহাম্মদ (সা.) শুধু মুসলমানের নবীই নন, তিনি বিশ্বনবী (সা.)। যুগে যুগে স্রষ্টা এ সত্য ধর্মের সূত্রে পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করেছেন। এটি সব ধর্মের সার কথা। 

সে কারণে এটি অবশ্যই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি মুসলমানের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য এ পড়ার নির্দেশ মেনে চলা। ইসলাম ধর্ম নিয়ে আজ ব্লগাররা খুব মজা লুটছে, এর একমাত্র কারণ তারা প্রথম শব্দটির কোনো মর্যাদা দিতে শেখেনি। যদি শিখতো তবে এই ৯০.৪ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে বাড়তি কাউকে আর জ্ঞানদান করতে হতো না। তারা নিজেরাই সচেতন বিবেকসম্পন্ন মানুষ হতো এবং অন্যকেও সে জ্ঞান বিলাতে সক্ষম হতো। এমনকি ধারণা হয়, তারাই গোটা বিশ্বকে আলো বিলাতে পারতো। সপ্তম শতাব্দীতে যে আলোটুকু আরব ময়দানে জ্বলেছিল এবং পরে ওই বণিকরা গোটা বিশ্বে এটি নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। সেটি আজও আমাদের হাতে আছে কিন্তু আমরা একে অনেক বিবর্ণ করে ফেলেছি, যার জন্য এটি আগের মতো আর মানুষকে কাছে টানতে পারছে না। পড়া ছাড়া, জ্ঞান অর্জন ছাড়া একটি জাতির মুক্তি নেই। এ পড়া শুধু স্কুলে পাশ করার জন্য নয়, চাকরি করাটাই মুখ্য নয় আর শুধু ধর্মীয় জ্ঞানই নয়। সার্বিক জ্ঞানের অর্জন দ্বারা মানুষ যে পড়ায় নিজেকে চিনতে পারে। প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ নিজের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত্ মাপতে পারার দক্ষতা অর্জন করে। এটিই ছিল ইসলামের প্রথম নির্দেশ, যেটি এসেছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ’ বছর আগে। এ বাণী এসেছে নবীর পরবর্তীদের জন্য। এটি ছিল আমাদের সিলেবাস, বাঁচার অবলম্বন। মানুষ হওয়ার ফরমুলা বা সূত্রকথা। 

মাস তিনেক আগের এক পত্রিকায় শাহবাগের ঘটনায় নাগরিকদের বিশাল প্রতিক্রিয়া পড়েছিলাম। এখানে সেখান থেকে মাত্র কয়টি নিলাম। ১. একজন মন্ত্রী বলছেন, আমরা দেখবো কি করে রায় পাল্টে ফাঁসি দেয়া যায়। ২. যেখানে ৮০ ভাগ(?) মানুষ মুসলমান সেখানে তাদের ধর্মের রাজনীতি বন্ধের আহ্বান কেমন করে আসে? ৩. শাহবাগকে মদ-গাঁজা আর ধর্ষণের চত্বর বানানো হয়েছে। ৪. এটি হচ্ছে আওয়ামী, বাম ও মিডিয়ার ক্যু। ৫. শাহবাগে ছিটানো কেক, বিস্কুট, বিরিয়ানি, সিগারেট সব ফ্রি। কেউ ফাঁসির দাবিতে নয়, এসেছে সব ফ্রি খাওয়ার জন্য, সরকার লাখ লাখ টাকা খরচ করছে। ৬. যদি কাদের মোল্লা দোষী হয় তার ফাঁসি হবে। আর যদি নির্দোষ হয় সে বেকসুর খালাস পাবে, যাবজ্জীবন কেন? মন্তব্যগুলো বিবেককে নাড়া দিয়েছে। একের প্রতি অন্যের এত হিংসা কেন? বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের দৃষ্টিতেও সাম্প্রদায়িক নয়। এ তাদের রক্তে নেই। তারা প্রকৃত জ্ঞান অর্জন না করে মিথ্যা আবেগে ভেসে চলেছে এটি কোনো নীতির কথা নয়। তারুণ্যের দায়িত্ব অনেক বেশি। তারাই একটি জাতির মেরুদণ্ড, সেটি যদি ত্রুটিযুক্ত হয় তবে জাতি কুঁজো হতে বাধ্য। মুক্তিযুদ্ধের কাজে তরুণরাই এগিয়ে গিয়েছে। বিগত শতকের পরিস্থিতি তাদের সামনে একটি যুদ্ধ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তারা তার মোকাবিলা করেছে।

তোমাদের সামনে কি উদ্দীপ্ত হওয়ার মতো, তোমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি? তোমরা তো পড়ো না, তোমরা তাহলে চোখ থাকতে অন্ধ। তোমাদের বিবেক অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেছে। কারণ তোমরা সুপাঠক নও। তাই আজকের তরুণকে পড়তে হবে, ভালো পাঠক হতে হবে। সব খানা-খন্দকের খবর জানতে হবে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ এই ধর্মের কাছে ঋণী, যাকে তোমরা কিছু আনাড়ি ব্লগার গালাগাল করছ। ইহুদি, খ্রিস্টান আর মুসলমান এরা তিন দল সদস্যই একগুচ্ছ সারিবাঁধা নবী দ্বারা পরিচালিত। কোরআনে ২৪ জন নবীর কথা বলা আছে। নবী ঈসা (আ.) আর মুহাম্মদ (সা.) খ্রিস্টান ও ইসলাম নামের দুটি ধর্মের নামে দাগ দিয়ে রাখা। দাগটি আল্লাহও দেননি. নবীরাও দেননি। বাকিরা দিয়েছে। না বুঝে দাগ দিয়ে রেখেছে বোকারা, যারা ঠিকমত পড়েনি, তারাই এ কাজটি করেছে। সে হিসেবে এরা সবাই ইসলামের নবী। পৃথিবীর মানুষ এ জ্ঞান অর্জনে পিছিয়ে আছে বলেই এই একত্বটি ধরতে পারছে না, বস্তুত এরা একঘরের মানুষ। এবার পুরো বিশ্ব থেকে যদি এই তিন দল মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা যায় তবে আর কতভাগ মানুষ বাকি থাকে, বলো? তারপরও ভালো করে চোখ মেলে দেখ, বাকিরাও কম-বেশি ইসলামের কাছে ঋণভারে জর্জরিত। ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক হিংসার বশবর্তী হয়ে আজ অবধি ইসলামের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে চলেছে। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাজ করেছে এই পরবর্তী অর্জনকে খেলো করে দিতে। তাই বলে সে সমাজেও এত চাপাচাপির পর পণ্ডিতরা ফাঁকে ফাঁকে সত্য কথা বলছেন।

আর সত্য কথা মানেই যুক্তির কথা, স্রষ্টার কথা যা আল্লাহর বাণী হয়ে এসেছে। দেখা যায় ওরাই আজ ইসলামের প্রকৃত সেবক হয়ে কাজ করছে। যার জন্য প্রতিপক্ষ আরও বেশি করে ক্ষেপে উঠেছে এ ধর্মটির ওপর। তবে এই জ্ঞানের দৈন্যতা আজকের যুগে আমাদের মুসলমানেরই বেশি, কারণ নকল সৃষ্ট জটিলতা সুস্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়ার দায়িত্বও ছিল আমাদেরই। আমাদের প্রাথমিক যুগের মুসলমান আজকের মুসলিমের মতো ছিলেন না। ওদের বাঁধভাঙা দক্ষতাই ইউরোপের জাগরণের সূচনা করে, যা পাশ্চাত্যের পণ্ডিতরা আজও স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না। কিন্তু পরবর্তীরা হয়ে পড়ে অনেক গাফেল, সত্য ধর্মের শেকড় তারা হারিয়ে ফেলে। কারণ আল্লাহর সেই প্রথম বাক্যের উপযুক্ত সমাদর করতে পারেনি পরবর্তীরা। আর তাই ওই সূত্রে আজও আমরা পথহারা, দিশাহারা জনতার একাংশমাত্র। 

সেই দিশাহারা যাত্রীকে পথ দেখাতে এগিয়ে আসতে হবে আজকের প্রকৃত সত্য সাধককে। মদ আর গাঁজার ছিলিম নিয়ে সে সাধ্য-সাধন হবে না। এখানের সৈনিকদের হতে হবে আদর্শবান, সত্যসাধক। ন্যায়নীতি আদর্শই একটি জাতির প্রকৃত বিজয়ের ঠিকানা। মিথ্যার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকবে না। একমাত্র তখনই আল্লাহর সত্য সৈনিক আমরা হতে পারবো। আল্লাহর সাহায্যও অবধারিত নেমে আসবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমিও তোমাদের স্মরণ করবো, আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও আর আমাকে অস্বীকার করো না।’ (আল বাক্কারাহ, ১৫২ আয়াত)। নাস্তিকরা মনে করতে পারে আল্লাহ মনে হয় অনেক লাভবান হবেন আমাদের কাছ থেকে, তাই বলে এরকম কথা বলছেন। বস্তুত এটি বলা হচ্ছে যাতে জনতারা সত্যকে স্বীকার করতে শিখবে। যার জন্য অনেকেই আজ পথহারা। এ লাভ প্রকৃতই জনতার ঘরে এসে জমবে, আল্লাহর ঘরে নয়। জগত্স্রষ্টা কখনও কোনো মানুষের মুখাপেক্ষী নন। হয়তোবা মনের সঙ্গোপনে ইচ্ছা থাকলেও পথ হারিয়ে, তাই আজ আমাদের নিজের ভাই, নিজের সন্তান ধর্মে বিদ্রোহী হচ্ছে আর বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছে। আমাদের মন্ত্রীরা পড়েননি বলে এমন নীতিহীন কথা বলতে পারেন। নাহলে একজন মুসলমান নামধারী মন্ত্রী এ রকম অন্যায় কথা বলতে পারেন না। তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে ইচ্ছেমত আদালতের রায়কে ফাঁসির রায়ে পরিণত করাকেই শক্তির বড়াই মনে করছেন। তাই তারা মন্ত্রী হলেও মানুষ হতে পারেননি। একজন মানুষ যখন সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করবে ঠিক তখনই সে সার্থক মানুষ, সুশিক্ষিত মানুষ বলা যাবে। নয়তো সে কুশিক্ষিত মানুষ, সে মানুষ নামের কলঙ্ক।

 Published in Amardesh online, June 10, 2013

2 

Tag Cloud

%d bloggers like this: