নাজমা মোস্তফা
আমরা জানি বহুদিন থেকে ডঃ ইউনুসকে ঐ গ্রামীন ব্যাঙ্কের চৌহদ্দি থেকে সরিয়ে দেবার পায়তারা হয়েছে। এর মাঝে সরকারের সাধ আহ্লাদ বেড়ে আরো তাগড়া হয়েছে, এবার গ্রামীন ব্যাঙ্কের পুরোটাই গ্রাস করতে চায়। বাংলাদেশ নামের দেশটি একের পর এক বিপর্যয় পার হচ্ছে। দেশ বর্তমানে যে পর্যায় পার করে যেটুকুওবা টিকে আছে মনে হচ্ছে তা তার কর্মী জনতার দক্ষতার কারণেই। যেভাবে গোটা মানচিত্রে হামলা হচ্ছে ভিতরে বাইরে থেকে। বর্ডারে বিএসএফ সমানেই মানুষ মারছে, ভুমির উপরে হামলা হচ্ছে মানুষের উপর হামলা হচ্ছে। স্বাধীনতা বলতে আজ বড়ই নাজুক অবস্থানে দেশটি। গোটা দেশসহ জনতারা এমনকি মেধাবীরাও হুমকির সম্মুক্ষিণ। দেশে উচ্চ নীচ মাঝারি কোন মেধার নাম গন্ধ পেলেই সরকার তাদের উপর হামলে পড়ছে। এবার বড় মেধার উপর হামলা শুরু হয়েছে প্রকাশ্যে। গুম করে ছোট বড় মাঝারি মেধাকে ময়দান থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। হতভাগ্য দেশটিতে কোন মানুষেরই আজ সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা দায়। সরকার নিজের বাহাদুরিতে নিজেই নিজের ঢাক পিটিয়ে চারপাশ গরম করে রেখেছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনে গো-হারার পর প্রধানমন্ত্রীর সামান্যতম পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বরং তিনি উল্টো সারা জাতিকে জঙ্গি আখ্যা দিচ্ছেন, তারা এবার মজা বুঝবে উনার সোনার ছেলেদের অভাবে কেঁদে নাকি বুক ভাসাবে। জানিনা এর মাঝে কি সরকারের মাথা বিগড়ে গেছে নাকি প্রলাপের আদলে এটি অতিরিক্ত কাজ করছে। এরকম প্রলাপ হজম করতে হচ্ছে দেশবাসীকে। এত ধ্বসের পরও নিজেদের বাহাদুরি প্রকাশ হচ্ছে সংসদের ভিতরে বাইরে।
এদেশের মঙ্গলে রাজনেতারা নেই, অন্তত বর্তমানের সময়ে এটি মনে হয় পাগলেও জানে তাই সেদিন দেখি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এক পাগল পাজাকোলা করে ধরে, শেষে পুলিশের সাহায্যে নিস্তার মিলে। নিজেদের আখের গোছানো ছাড়া এইসব রাজনেতারা শুধু ধ্বস নামাতেই তৎপর। খেয়ে না খেয়ে কর্মীরা যা ইতিবাচক জমাচ্ছেন আর বিদেশীরা যে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন ওসব ক্রেডিট ছাড়া সরকারের নিজেদের জমা বলা চলে মাইনাস। তারপরও সরকার চায় নিজে সুকর্ম না করেও সব কৃতিত্ব তার গোলাতে উঠিয়ে দেখাতে। যেখানে সব সংস্থাই সুচারুরুপে সরকার চালাতে ব্যর্থ হচ্ছে সেখানে কেন গ্রামীন ব্যাঙ্কএর উপর তাদের এত লোভ! এর উপর তাদের আচরণ আতংকজনক ও হিংসাত্মক। যেখানে সারা বিশ্বে এ গ্রামীন ব্যাঙ্কের মডেল সমাদৃত হচ্ছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা কেন ডঃ ইউনুসের সাথে প্রতিদ্বন্ধির লড়াই লড়তে যান, এটি কোন সুবিবেচকের বুদ্ধিতে কুলাবার কথা নয়। এমন না যে ডঃ ইউনুসের কৃতিত্ব নিয়ে কোন অপব্যাখ্যার অবকাশ আছে, যে তাকে নিয়ে মুখরোচক চুটকি মন্তব্য করা চলে। এসবের কোনই সুযোগ নেই তারপরও তাকে “রক্তচোষা” বলে গালি দিতে প্রধানমন্ত্রী কার্পন্য করেন নাই। তার মুখ থেকে রক্ষা পেয়েছেন এমন সুজন দেশে খুঁজলে পাওয়াই যাবে না। এটি কোন আভিজাত্যের পরিচয় বহন করে না। যেখানে তার স্বদলীয়রা চড়া গলাতে খালি বিরোধী দলের আভিজাত্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন কিন্তু বৃক্ষ বাস্তবিকই ফলে পরিচয়। তিনি কেমন করে এরকম একজনের অর্জনকেও খেলো করে দেখছেন। অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী আর ডঃ ইউনুসের ক্রেডিট কখনোই এক পাল্লাতে মাপা যায় না। দুজনার দুই মর্যাদা, কিন্তু তুলনা করতে গেলেই এক পক্ষ চুপষে যান, তার আচরণই তাকে ধ্বসিয়ে দেয়। তাকে প্রতিদ্বন্ধী মনে করলেও তিনি এসবের অনেক উপরে, এটি যে কোন বোকাতেও বোঝে। দেখা যায় তার ছেলে যে বিদেশেও নানান অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে, সেই ছেলেও ডঃ ইউনুসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যার প্রেক্ষিতে এর বিরুদ্ধে সঠিক প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত হয়েছে যে, “ডঃ ইউনুস গ্রামীন নামের কোন প্রতিষ্ঠানের একটি শেয়ারেরও মালিক নন”। ঢাকা ১০ মার্চ ব্যাঙ্কের মুখপাত্র সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। খবরটি চোখে পড়েছে (১৮ই-২৪ মার্চ ২০১১, লন্ডন থেকে প্রকাশিত সুরমা), তাই দিলাম।
এবার সরকার কেন গ্রামীন ব্যাঙ্ককে গরীব মহিলাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চায়? সঙ্গত কারণেই ডঃ ইউনুস এর স্বপক্ষে তুমুল আন্দোলন দাঁড় করতে পারেন। আর দেশের সচেতনরা এর স্বপক্ষে সরকারের এই একপেশে সব আস্ফালনের উচিত জবাব দিতে পারেন। সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি করাপ্ট দেশ হিসাবে তার অর্জন জমা করছে। এখানে নিজের দলের ব্যতিরেকে আর কারো চিন্তা ভাবনা হয় না। এর হাজারো প্রমাণ দেশবাসীর সামনে আছেই। এমন অবস্থাতে এটি যে কুটিল উদ্দেশ্যে এই ছিনিয়ে নেবার কাজ করা হচ্ছে, এতে কারো কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। ইতমধ্যে সুজনেরা এর উপর মন্তব্য প্রতিবেদনও দিয়ে যাচ্ছেন। যদিও ডঃ ইউনুস এখান থেকে কোন শেয়ার বানিজ্যেও জড়িত নন। কিন্তু তার গড়া প্রতিষ্ঠান হিসাবে অবশ্যই তার একটি শক্ত অর্জন সেখানে প্রোথিত আছেই। এটি যে অস্বীকার করবে এতে তার নীচতা আর অপরিণামদর্শীতা ছাড়া আর কিছুই প্রকাশিত হয় না। ব্যাংকিং খাতে সরকার যেভাবে লুটপাটের রাজত্ব চালিয়েছে এবার ঐ প্রতিষ্ঠানটিকে লাভেমূলে ধ্বংস করে দেবার জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। গরীর নারীদের এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কেন সরকার হামলে পড়েছে? দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতেই হবে। একজনের অন্যায় আবদার মেটাতে কেন লক্ষ নিরীহ মেয়ের দাবীকে অবজ্ঞা করা হবে, এটি কোন ধরণের সুবিচার? সবাই জানে ডাকাত মাদকাসক্ত স্বামী সবদিন নিরীহ স্ত্রীর সব গোপন আস্তানাতেই হামলে পড়ে। স্ত্রী যদি মুরগী বিক্রি করে হাসের ডিম বিক্রি করেও পয়সা লুকিয়ে রাখে, মেরে ধরে হলেও দুর্মুখ স্বামী তা ছিনিয়ে নিতে তৎপর থাকে। বাংলাদেশ আজ ঐ ডাকাত স্বামীর রুপ ধারণ করেছে। বর্তমানে সরকারের বারোটা বাজার এমন পর্যায় পার করছে, সব খাতেই এটি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সাম্প্রতিক বাজেটকে সবাই বলছেন এটি চোরদের জন্য একটি বাড়তি সুযোগ তৈরী করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশাল বপু নিয়ে বিরাট অংকের বাজেট করা হয়েছে কপট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। বড় অংকের বাজেটের কারণে সবাই টু পাইস বানাতে পারার সুযোগ পাবে। এটি সবদিনই আওয়ামী লীগ সরকার চায়, এটি আজ নতুন নয়। গ্রামীন ব্যাংক ইস্যুর উপর দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বিরুপ মন্তব্য করেন। তারা এটিকে সরকারের কুটিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া আর কোন দ্বিতীয় উদ্দেশ্য দেখছেন না। তারা একে আত্মঘাতি ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বলেই মন্তব্য করছেন। যেখানে সরকার নিজেই চলতে হিমসিম খাচ্ছে প্রতিটি সেক্টরেই ব্যর্থতার ধ্বস নামছে সেখানে যে সংস্থা সুন্দরভাবে চলছে তাতে কেন সরকার বাগড়া দিতে চাচ্ছে, সরকারের এ দ্বৈত ভূমিকার কপট অত্যাচার থেকে একে বাঁচাতে হবে, এ তাদের মতামত। সরকারের প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ব্যাপক এবং এটি একটি ওপেন সিক্রেট অন্তত বর্তমানের প্রেক্ষিতে।
তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্ঠা ডঃ আকবর আলী খান সরাসরি একে রাজনৈতিক বলেই ব্যাখ্যা করেন। গ্রাহক ঠিকই ঋণ পাচ্ছে আবার ঋণ দিচ্ছেও, তাদের কোন অসুবিধা নেই। এখানে সরকারের কর্তৃত্বের কোন দরকার নেই। গত ৪০ বছরের সরকারের প্রতিষ্ঠানের রেকর্ড ভালো নেই বরং লজ্জাজনক। যেসব প্রতিষ্টান তার মালিকানাতে আছে সরকার ওসবই চালাতে পারছে না, গোজামেলে অবস্থান লক্ষনীয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডঃ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সরকার যে ভাঙ্গার কথা বলছে এটি হবে গায়ের জোরে করা একটি কাজ। এমন না যে গ্রামীন ব্যাঙ্ক কোন কাজ করছে না। শিল্প ব্যাঙ্কের আদলে নিয়ে এর ৫১ শতাংশ সরকারী শেয়ারে উন্নীত করার যে প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে তা সুবিবেচনার বিষয় বলে মনে হচ্ছে না। অতীতেও দেখা গেছে যেসব প্রতিষ্টান সরকারের আন্ডারে আসে তাতে দুর্নীতি আর জালিয়াতির আখড়াতে পরিণত হয়। তাই জনতার কথা মাথায় রেখে এসব সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে দূরে থাকার পরামর্শই তারা বিলি করেন। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের সাবেক গভর্নর ডঃ সালেহ উদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারের এ ধরণের উদ্যোগ পুরোপুরিভাবে অযৌক্তিক। দেশের সরকারী ব্যাঙ্কগুলোই সবচেয়ে করুণ অবস্থার শিকার। এখানে দূর্নীতি প্রবল ভূমিকা রাখে। এ অবস্থায় এটিকে এভাবে স্থানান্তরের চিন্তা করলে এটি অব্যশই শংকার মাঝে পড়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুৃ আহমেদ বলেন, কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটি সম্পূর্ণ তার নিজস্ব মতামত। কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক এটি ভাঙ্গা সরকারের উচিত হবে না। তিনি এটি যেভাবে আছে সেভাবে থাকতেই ইচ্ছা ব্যক্ত করেন, উল্টো তিনি প্রশ্ন করেন এটি যদি সরকারের আওতাতে থাকতো তাহলে কি কখনো নোবেল পুরষ্কার পেতো? সরকারের কোন প্রতিষ্ঠানতো নোবেল পুরস্কার পায়নি। এর উপর সরকারের এত নজর কেন? সমাজের একজন সচেতন হয়ে তিনিও তার অভিমত ব্যক্ত করেন যে, একে ভেঙ্গে টুকরো করা সরকারের উচিত হবে না।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে সংবর্ধনায় ডঃ ইউনুস বলেন, “গ্রামীন ব্যাংক ছিনতাইয়ের চেষ্ঠা করছে সরকার” গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তিনি আহবান জানান। কিছুদিন আগে আর একটি মেসেজে দেখি তিনি বলছেন, ‘কৃতদাস নয়, মানুষ হিসাবে বাঁচতে চাই’। এরকম একটি কথাতেই বুঝা যায় তাকে কি রকম বিপর্যয়ের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। একজন নোবেল বিজয়ীকে আজ মানুষের মর্যাদাটুকুও দেয়া হচ্ছে না এটি তার বক্তব্যে সুস্পষ্ট। এটি অনেকটা দিন দুপুরে ডাকাতীর পর্যায়েই পড়ে। সরকার বর্তমানে গ্রামীন ব্যাঙ্কের মাত্র তিন শতাংশ মালিক। কিন্তু লোভী সরকার গ্রামীনের উপর তার কপট শ্যেনদৃষ্টি নিক্ষেপ করছে, উদ্দেশ্য নিয়ে সবাই সন্দীহান। এর বাকী ৯৭ শতাংশ মালিক দেশের গরীব জনগণ। হঠাৎ করেই সরকারের মাথাতে ভুত ঢুকেছে যে সে এটি সরকারী করণ করবে। বলা হয়েছে ৫১ শতাংশ তাদেরে ছেড়ে দিতে হবে, ডঃ ইউনুস বলছেন এটি ছিনতাইয়ের কথা হলো, এটি কোন আইনের কথা নয়। অতি সামান্য মালিকানা নিয়ে সরকার এর সিংহভাগে অধিকার অর্জন করতে পারে না। অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়া ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন পথ সরকারের নেই ওটি ছিনিয়ে নেয়ার। তিনি প্রশ্ন ছুড়েন সরকারের দিকে কেন আপনি এরকম একটি প্রতিষ্ঠানকে ভেঙ্গে দিবেন যে প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বে অসাধারণ সম্মান অর্জন করে চলেছে। জনগণের ভরসাতেই তিনি আশায় বুক বেধে আছেন। তাই প্রকাশ করছেন ‘জনতার বিজয়কে তাদের অর্জনকে কোনভাবেই নষ্ট করতে জনগণ দিবে না’, তারা প্রতিরোধ করবেই। তার কথাতে আসে তিনি শুনতে পেয়েছেন এর মাঝে কিছু জনারা ভারতে গেছেন এ ছিনতাই পরিচালনার দক্ষতা অর্জনের ট্রেনিংএর জন্য। গ্রামীনের সব কিছু বাংলাদেশের আর ভারত কেন এবার ট্রেনিং দিবে? তাহলে ওটি হয়ে যাবে বাংলাদেশ নয়, ভারতীয় গ্রামীন ব্যাঙ্ক। তিনি আহবান জানান এটি কোন রাজনৈতিক দলের সম্পদ নয়, এটি জাতীয় গৌরবের একটি প্রতিষ্ঠান। একে রক্ষা করতে হবে কারণ তার স্বপ্ন, এর নামেই ছেলেপেলেরা পরিচিতি অর্জন করবে, বড় হবে। একদিন এর গৌরবে সারা বিশ্ব থেকে মানুষ ছুটে আসবে। স্বপ্ন দেখা অনেক কঠিন জিনিস এটি সবাই দেখতে পারে না। তবে ছিনতাইয়ের স্বপ্ন দেখা খুব সোজা, ছলবাজরা ওটি দেখে কিন্তু গঠনমূলক স্বপ্ন অনেক কঠিন কাজ, এটি দেখে জাতির মেধাবীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদক কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল প্রাপ্তি উপলক্ষে ডঃ ইউনুসের সম্মানে এ সংর্বধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই মাত্র কিছুদিন আগে তিনি যে বিরল সম্মান অর্জন করেন তাতে আমাদের সবার মুখই উদ্দীপ্ত হয়েছে। তিনি বলছেন আজ আমরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে এর আবেদন ছড়িয়ে দিয়েছি। ইউরোপ আফ্রিকার দেশগুলো এ কনসেপ্ট গ্রহণ করেছে তাদের বেকারত্ব দূর করতে। অনেক উন্নত দেশই যখন এর সমূহ পজিটিভ দিক দেখতে পাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের মোটাবুদ্ধির সরকার কেন সবকিছু আন্ধার দেখছে। চট্টগ্রামের জোবরা গ্রাম থেকে এ যাত্রা শুরু হয় অনেকটা শূন্য হাতে। প্রথমে এ ব্যাঙ্কে সরকারের ৬০ শতাংশের অংশ ছিল যদিও তাদের বিনিয়োগ ছিল কম, বাদ বাকী ৪০ শতাংশ ছিল সদস্যদের। পরে অনেক কষ্ট করে সরকারের অংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। সরকার চেয়েছিল এমডি পদে তারাই নিয়োগ দেবে। ইউনুস পক্ষরা এটি মানেন নাই। তারা বলেছে সদস্যরাই এমডি নিয়োগ করবে। পরে সরকার রাজি হলে তিনি সদসদ্যদের পক্ষে এমডি হন। কিন্তু চেয়ারম্যান পদটি সরকার নিজের হাতেই রেখে দেয়। সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ হলেও সরকারের বিনিয়োগ কম হওয়াতে তা প্রায় তিন শতাংশ এসেছে।
যে সরকার সততার ক্ষেত্রে শূন্যমার্গে বিচরণ করছে, তার সবকিছুই ভয়ঙ্কর। পুলিশ নিয়োগে জেলাকরণের রেকর্ড ৩২ হাজারের মধ্যে গোপালগঞ্জের ৮,০০০ কিশোরগঞ্জের ৭,০০০। জেলাভিত্তিক কোটা থাকলেও গোপালগঞ্জসহ বৃহত্তর ফরিদপুর ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে বিপুল সংখ্যক লোক নিয়োগ করা হয়েছে। যেভাবে একদিন পশ্চিম পাকিস্তানের লোকরা পূর্ব পাকিস্তানকে অবহেলা করে রেখেছিল আজ সেটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। তাহলে কি অপরাধে পাকিস্তানের বিভাজন জরুর হয়েছিল, শুধুই কি প্রভু বদলের দরকার পড়েছিল? কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু দলীয় লোকদের বিবেচনাতে আওয়ামী লীগদেরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিরোধী দমনে এসব লোকদেরে এভাবে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে সরকার। বিরোধীদলের চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুককে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে প্রকাশ্যে অমানবিকভাবে হামলাকারী দেশজুড়ে সমালোচিত সেই ডিসি হারুণকে এবার প্রেসিডেন্ট পদকে সরকার পুর®কৃত করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ন্যাক্কারজনকভাবে হারুণের প্রশংসা করে সাংবাদিকদেরে বলেন, জয়নুল আবেদিন ফারুককে পিটিয়ে ডিসি হারুণ যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, সে কারণেই তাকে এবারই প্রেসিডেন্ট পদক (পিপিএম) প্রদান করা হয়েছে। রাজধানীর জর্জকোর্ট এলাকায় এক তরুণীকে শ্লীলতাহানি ও আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যার ঘটনায় বিতর্কিত ভূমিকা পালনের পরেও ডিসি হারুণ পুরষ্কৃত হন। এমনই লীলাখেলা চলছে সরকার আর তাদের সাঙ্গোাপাঙ্গদের।
দেশের অর্থনীতির অবস্থা এমনই যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে একশ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা লাভের জন্য সরকার শর্ত হিসাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। ঠিক একই পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়ে অস্ত্র কেনা হয়েছে সবই লুকোচুরির খেলা, প্রশ্নসাপেক্ষ এসব কান্ডকারখানা। দীপুমনিকে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তিনি মূল বিষয় এড়িয়ে যান। কমিশন খেতে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা হয়েছে বিএনপির এক নেতার এ দাবির জবাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিশন খাওয়ার সুযোগ নেই। আমার খাওয়ার অভ্যাস নেই। পথঘাটও চিনি না। তাছাড়া টেস্ট টু টেস্ট বিনিময় হবে। ওনাদের অভ্যাস আছে ওনারাই ভালো বলতে পারবেন। এই ছিল তার জবাব। জবাবের মূল্যায়ন করেন দেশবাসীরা।
ডঃ ইকবালের নেতৃত্বে আওয়ামী ক্যাডাররা যখন রাজধানী ঢাকার রাজপথে বিএনপির মিছিলে গুলি চালিয়ে চারজনকে হত্যা করেছিল, তা দেখে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিদ্রুপ করে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা কি শাড়ি পরেন? জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা কি একটার বদলে দশটা লাশ ফেলতে পারেন না? বস্তুত সাগরেদরা যে নেত্রীর কথাতে এসব অপকর্মে ঝাপিয়ে পড়েন। কর্মীরা কি মনে করেন শেষ বিচারের ময়দানে এসবের দায় শুধু নেত্রীর উপরই বর্তাবে তারা কি অপকর্মের দায় থেকে বেঁচে যেতে পারবেন? পুরোনো হলেও এসব সাধুত্বের স্বরুপ উন্মোচনের জন্য জরুরী বিধায় কিছু প্রসঙ্গ টানতেই হল। অপর পিঠে জাতির মেধাবীদের ক্রেডিট মিটিয়ে দিতে যাই করা হোক না কেন এসব মেটানো যায় না। এসব চলমান ইতিহাসে খোদাই হয়ে যায়, কারো সংকীর্ণতাতেও সেটি মিটে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই মেপে নিতে পারেন তার আচরণ মেধাবী মানুষের একজন ডঃ ইউনুসের সাথে। অনেক মেধাবীরাই প্রধানমন্ত্রীর চোখে কিছুই না। যে জাতি তার উপযুক্ত সন্তানদেরে মর্যাদা দিতে জানে না, সে এক দুর্ভাগা জাতি। জাতি হিসাবে বাংলাদেশীরা এত কৃপণ বলে মনে হচ্ছে না। তারা দরিদ্র হলেও তাদের নারীরা তার কথাতে এতবড় একটি আলোড়ন তৈরী করতে পেরেছেন, যার নাড়াতে সারা বিশ্ব আলোড়িত হচ্ছে। বলা যায় দুর্ভাগা গোটা জাতি, কারণ তাদের প্রধানের দৃষ্টিতে মেধাবীরা লাচার হয়ে আছেন। তার দৃষ্টিতে জিয়াউর রহমান “রাজাকার” ইউনুস “রক্তচোষা”, আল্লামা শফির লোকেরা ছলবাজ “রংমাখা সং”, মাহমুদুর রহমান “গাড়ী ভাঙ্গার আসামী মস্তান”, সম্মানিতজনদেরে টিটকারী মেরে বলেন “মুই কার খালুরে”, খুঁজলে এরকম অনেক পাওয়া যাবে। রাজনীতি ছেড়ে দিবেন বলেও কথা রাখতে পারেন নাই। রাজনীতি করেন আর যাই করেন সবার কথা বলার একটি ওজন সবাই আশাকরে। এটি পালন না করলে যিনি এসব বলেন তার ওজন সীমাহীনভাবেই কমে আসে। অপু উকিলের ভাষা জনতা প্রধানের কাছ থেকে শুনতে চায় না। শরীরের ওজন দিয়ে রং দিয়ে রুপ দিয়ে মানুষের মর্যাদা হয় না, কথা দিয়ে আচার আচরণ দিয়েই মানুষ মানুষকে মাপে, অন্তত মেধাবীরা এভাবেই মাপে। সমাজ হিতৈষী ডঃ ইউনুসরা এতই সংযমী যে চরম নির্য়াতনের শিকার হয়েও কত ভদ্র তার আচরণ। তার দাবী খুব বেশী নয়, ক্রিতদাস নয় মানুষ থাকার দাবীটুকু চাইছেন তিনি। দরকারে নীচুদের থেকে নয়, জাতির মেধাবীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। শেখার কোন বয়সে নেই, সব বয়সেই সেটি শেখা যায়। ছোটর কাছ থেকেও বড় শিখতে পারে।
তাই ডঃ ইউনুস প্রসঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে ঐ মূল্যায়নটুকু জরুরী মনে করছি। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেছিলেন, ‘‘It’s hard to imagine what would have happened to Bangladesh had Ziaur Rahman been assassinated in 1975 instead of 1981. A failed state on the model of Afghanistan or Liberia might well have resulted. Zia saved Bangladesh from that fate.’ – AMBASSADOR William B Milam in ‘Bangladesh And Pakistan: Flirting With Failure In South Asia’, page 69. অর্থাৎ এটি ধারণা করা খুবই কঠিন যদি জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে না মরে ১৯৭৫ সালে মারা যেতেন। তাহলে এটি একটি আফগানিস্তানের আদলে অথবা লাইবেরিয়ার মত একটি দেশ হতো। জিয়া বাংলাদেশকে ঐ দুর্ভাগ্যের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম “বাংলাদেশ এন্ড পাকিস্তাান: ফ্লিরটিং উইথ ফেইলার ইন সাউথ এশিয়া” গ্রন্থের ৬৯ পৃষ্ঠাতে কথাটি এসেছে। এরা মেধাবীরা এভাবে ইতিহাসে মূল্যায়িত হবেন। বিমান বন্দর থেকে ঐ নাম মুছে ফেললেও জনতার মনের মুকুরে খোদিত সে নাম মুছে দেবার সাধ্য কারো নেই, সুকর্মধারী ডঃ ইউনুসরা এভাবেই ইতিহাসের পাতাতে শক্ত প্রতিরোধের অলক্ষ্যেই জায়গা করে নিবেন। তার অবদানকে উঁচুতে তুলে ধরে নিজেদের ভাগ্য গড়তে যেখানে জাতির দরিদ্র নারীরা এটি করতে পেরেছেন সেখাতে উঁচু তলার নারীরা তাদের প্রতিরোধ নয়, বরং প্রতিপালন করতে সহযোগিতা দিন। তাহলে একদিন ঐ সুকর্মের দায়ও আপনাদের সবার পাওনা হবে।
২১ জুন ২০১৩ সাল।
২০১৩ সালের জুনের ২৭ তারিখে পাবলিশ হয়। From Amar Desh, Bangladesh online.