ডাঃ এম এ শুকুরের ‘হাতুড়ে’ গ্রন্থ থেকে
বিশেষ দ্রষ্টব্য: মরহুম ডাঃ শুকুরের বিগত শতকের লেখা থেকে নেয়া।
আমরা একে অপরকে ‘দালাল’ বলে আখ্যায়িত করছি কিন্তু আর নয় এবার থেকে আমাদেরে এই জাতীয় কর্কট রোগের প্রতিষেধক খুঁজে নিতে হবে। ১৭৫৭ সালের ৭ই জুন পলাশীর আম বাগানে দেশী বিদেশী শোষকদের খপ্পরে পড়ে বাংলা তথা ভারত বর্ষের ইতিহাসে যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল, আজ দু’শ বছর পরেও আমরা সেই বুদ্ধিহীনতার জটাজাল থেকে মুক্তি পাইনি। দেড়শ’ বছরের বিদেশী শাসন ও স্বদেশী শোষনের পর বাংলার এক কৃতী সন্তান এই শতাব্দীর প্রথম দিকে দিল্লীর শাসকের শুভ দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে বঞ্চিত এপার বাংলাকে নতুন করে গড়ে তোলার শুভ প্রেরণায় ১৯০৫ সালে ঢাকাকে কেন্দ্র করে গঠিত হলো নতুন প্রদেশ ‘পূর্ব বাংলা’। এতে বাংলা ও ভারতের যাবতীয় শোষকেরা ‘হায় হায় করে আর্তনাদ করে উঠেছিল। বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদে শিহরিয়া উঠেছিলেন আমাদের বাঙ্গালী ভাইয়েরাও। এর ফলে সর্ব ভারতীয় শোষকদের কুটিল চক্রান্ত আর বাঙ্গালীদের সক্রিয় আন্দোলনের জোয়ারে বাংগালের বাঁচার তাগিদে গড়া সুখ স্বপ্ন আতুড় ঘরেই মারা যায়। মানুষের চেয়ে মাটির মূল্য যাদের কাছে বেশী, তাদেরই হল জয়। রাজ আদেশে ১৯১১ সনে আবার এপার বাংলা ওপার বাংলা একত্রিত হল। বাংলার পাট ও বাংলার চাষীর ভাগ্যকে আবার বেধে নেয়া হল ডান্ডি ও কলকাতার পাটকলের চিমনীর পাশে লটকানো বেরোমিটারের সাথে। শোষকদের চোখেমুখে স্বস্তির আমেজ ফিরে এল।
কিন্তু অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস! ১৯৪৭ সনে ঐ বাংগালীরাই আবার অম্লান বদনে বঙ্গমাতাকে দু’টুকরা করে দিয়ে গেল। বাংগালের হাহুতাশ আর করুণ মিনতিকে তারা পাই ক্রান্তিরও দাম দিল না। বস্ততঃ দুটি ভিন্নধর্মী জীবন প্রবাহের শোচনীয় বিচ্ছেদের করুণ কাহিনীর অমর সাক্ষী হয়ে রইল ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্টের মধ্যরাত্রি। এক হাজার বছর একত্রে থেকেও তারা দেশও জাতি, মন ও মানুষ এমনকি জীবন ও মৃত্যু সম্বন্ধে একে অপর থেকে বহু যোজন দূরে পড়ে রইল এপারের বাংগাল ও অপারের বাংগালী আর কোনদিন একত্র হবে কিনা সে প্রশ্ন ভাবীকালের, আমরা শুধু আমাদের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার মাত্র এটুকুই জেনে গেলাম যে আলো এবং অন্ধকার, সত্য আর অবাস্তব একসাথে থাকতে পারে না। জোর করে বেধে নিলে তারা একদিন জোর করেই পৃথক হয়ে যায় এবং এই বিচ্ছেদের সময় প্রলয় ঘটে।
কার্যতঃ ভারতবর্ষের মূল সমস্যার সঠিক সমাধান কেউ দিতে পারলে না, হাতুড়ে ব্যবস্থায় শুধু অঙ্গচ্ছেদই ঘটালে। জিন্না-গান্ধী লীগ-কংগ্রেস সবাইকে ফুলে আর গানে বন্দনা করলো ভারতবাসীরা, তবু তাদের মুক্তি রইলো লক্ষ যোজন দূরে। জয় হল সাম্প্রদায়িকতার, আর স্বরাজ পেল দু®কৃতিকারী। সাধারণ নিরীহ নাগরিকরা না পেল অর্থনৈতিক মুক্তি, না পেল সসম্মানে বেঁচে থাকার কোন শান্তিময় আশ্বাস। শোষকের স্বার্থে জাতি ধর্ম আর ভাষা বিদ্বেষের অসফল নেশায় বিভ্রান্ত করে রাখা হল সাধারণ মানুষেদের।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রথম বিশ্ব সমরের ধাক্কায় কম্পিত হল জগত, শঙ্কিত হল ভারতবাসীরাও। খেলাফত আন্দোলনের দুরন্ত জোয়ারে কেঁপে উঠছিল ইংলন্ডের রাজার আসনখানিও। ঐ সময়ে নেটাল ডারবানে নির্যাতীত ভারতবাসীর পক্ষে ওকালতি করে ঘরে ফিরেছেন এক তরুণ বারিষ্টার। তার নেতৃত্বে গোটা ভারতের আপামর জনতা এগিয়ে এল। কিন্তু নতুন যুগের মুক্ত মানুষের মুক্তির পক্ষে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালে পুরাতন ভেদবুদ্ধি ও আচার সর্বস্বতা। তার পুরো সুযোগ গ্রহণ করলো বিদেশী শাসকেরা। তাই বিভেদের প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে মানুষ এখানে আর মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হলো না। বারিষ্টার খুলে নিলেন তার কোট প্যান্ট, গায়ে জড়ালেন ধূতি, তাও আবার খাটো করে তুলে নিলেন হাটুর উপরে এবং গ্রহণ করলেন নিরামিষ, মৌন আর উপবাসকে জীবনের ব্রতরুপে। সমস্যার বাস্তব কোন সমাধান না দিয়ে মানুষরে ভগবান হয়েই রইলেন তিনি।
নিজে আইনের বিশারদ হয়েও প্রাণ ভরে গাইলেন ‘রামধূন’।
“রঘুপতি রাঘব রাজা রাম, পতিত পাবন সীতা রাম।
ঈশ্বর, আল্লা তেরা নাম, জয় সীতা রাম, সীতা রাম।
যহি আল্লাহ সহি রাম, সবকো সন্মতি দে ভগবান।
রঘুপতি রাঘব রাজারাম, পতিত পাবন সীতা রাম।”
আশ্চর্য্য! স্র্রষ্টা এবং সৃষ্টিতে, এমনকি ঈশ্বর, আল্লাহ ও অযোধ্যার রাজা রামচন্দ্রকে যিনি একাকার করে দিতে পারেন, ভারতবাসীর মুক্তি নাইবা এল, ভারতীয় দর্শনের মুক্তি তো তারই হাতে। তাই শেষ পর্যন্ত জয় হল শোষকের এবং সাধারণ মানুষ যে তিমিরেই ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেল। মুল্লা পুরোহিত এক বাক্যে চিৎকার করে উঠল, ‘মহাত্মাজী কি জয়!’ ফলে মানুষের আর্থিক তথা আত্মিক মুক্তি হল চরমভাবে বাধাগ্রস্ত। এবং পৌরিহিত্যবাদ প্রতিষ্ঠা নিল এক নতুনতর আধুনিক কৌশলে, এক অব্রাহ্মণকে সামনে শিখন্ডি খাড়া করে। তেত্রিশ কোটি দেবতার পাশে যুক্ত হল আরো একটি নাম, আরো এক নতুন ভগবান, – শুধু ব্রাহ্মণ্যবাদের নড়বড়ে ভিতকে শেষ বারের মত রিপেয়ার করার জন্য।
পরিণামে ভারত বিভাগ হল অবধারিত, খন্ডিত হল বাংলা এবং চূর্ণ বিচূর্ণ হল পঞ্চনদের দেশ পাঞ্জাব। দেশীয় রাজ্য কাশ্মীরকে উপমহাদেশে এক রাজনৈতিক বিসুবিয়াসে তাপিত করে রাখা হল যার হাপরের আগুন জ্বালিয়ে রাখার তাগিদে কোটি কোটি মানুষের কপাল পুড়ে ছাই হয়ে গেল। পয়ষট্টি সালের যুদ্ধে যখন উভয় পক্ষ ‘কেহ কারে নাহি পারে সমানে সমান’ হয়ে ক্ষত বিক্ষত হল তখন উভয়ের আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা তাদের ডেকে নিয়ে একে অপরকে দিয়ে উভয়ের কান মলে লাল করে দিলেন। লাঞ্ছিত পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ছদরে রিয়াসতের মাঝে আস্তিন টানাটানি হল, এদিকে ভারতীয় প্রধান মন্ত্রীর হার্টফেল করা লাশ নিয়ে নীরবে ফিরে এল দিল্লীতে।
একটি কথা আছে, দুরাত্মা বাইরে মার খেলে ঘরে আসি বউকে পিটায়। আমাদেরও হল তাই। তৈরী হল আগরতলা মামলার মাল মসলা, আর তারই আগুনে জ্বলেপুড়ে ছাই হল পিন্ডির স্বৈরতন্ত্রের মসনদখানি। এর পরে এখানে যা হল তাকে একটি ছোটখাট আঞ্চলিক কিয়ামত বলা চলে। তারই তান্ডবে লাল হল মাটি, বিদীর্ণ হল আকাশ আর তছনছ হল উপমহাদেশের গোটা ইতিহাসসহ তার ভৌগলিক পরিসীমা। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ সূর্যাস্তের পর যে প্রলয়ের সূচনা হল তার শেষ কোথায় তা মানুষের পক্ষে বলা আজো সম্ভব হয়নি। আমরা যত্রতত্র জাতীয়তার নামে আকাশ ফাঁটা আর্তনাদ শুনি অথচ কার্যক্ষেত্রে দেশাত্মবোধের অভাব আজ দুর্ভিক্ষের পর্যায়ে। তাই দেশকে পূজা করার লোকের ভিড়ে পথ চলা দায় কিন্তু দেশপ্রেমিক খঁঁুঁজে পাওয়া যায় না।
দেশকে ভালবাসা এবং দেশকে পূজা করা এক কথা নয়। দেশকে ভালবাসতে হলে দেশের মানুষের কল্যাণে নিজকে আত্মাহুতি দিতে হয়, পরন্তু মাকে যারা পূজা করে নারীর অমর্যাদা করে তারাই সর্বাধিক! আমরা মাকে শ্রদ্ধা করি কিন্তু পূজা করি না, মার চরণতলে আমরা স্বর্গের কামনা করি বটে কিন্তু তথাপি তার চরণে মাথা পেতে দিই না। মানবাত্মার এই অমর্যাদাকে আমরা সৃষ্টির চরম বিপর্যয় বলে মনে করি। এরুপ অলীক অমানবতাকে আমাদের সমাজ তথা জাতীয় জীবনে আরোপের প্রতিটি চেষ্টাকে আমরা রুখে দাঁড়াবো, প্রয়োজন হলে সর্বস্ব পণ করেও। অদৃষ্টের পরিহাস, আজ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সত্য ও মিথ্যা, আলো ও অন্ধকার এবং ন্যায় ও অন্যায়কে সম স্তরে এনে দাঁড় করানো হয়েছে, অথচ ধর্ম আর ধার্মিকতাকে সাম্প্রদায়িকতায় আখ্যায়িত করে বিসর্জন দেবার প্রস্তুতি চলছে।
দেশকে পূজা করার পদ্ধতি যারা আবিষ্কার করেছিল দেশের মানুষকে তারা সম্মান দিতে পারে নি। দেশের মানুষের ভাগ্য বিড়ম্বিত করে দেশের মাটিকে পূজা করার যে অলীক বিধান তা কিছু সংখ্যক শোষকের জন্য স্বর্গসুখ রচনা করতে সক্ষম হলেও কার্যতঃ মানুষকে তা সর্বহারার পর্যায়ে ঠেলে দেয়। (ডাঃ এম এ শুকুর রচিত ‘হাতুড়ে’ বই থেকে নেয়া)।
সেই লোমহর্ষক দিনগুলির কথা। সীমান্তে তখনো যুদ্ধ চলছিল। মাটিতে দৈত্য দানবের অত্যাচার আর আকাশ থেকে আগুনে বোমা পড়ার ভয়ে শহর থেকে কটি পরিবার এসে আমার গ্রামের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছিল। ঐ সাথে আমার এক বন্ধুও এসেছিলেন। দু’জনে প্রায়ই আলাপ হত একথা সেকথা অনেক কথা। ঐ সময়ে আমার হাতে ছিল একখানি বই। নাম তার ‘হেরার আলো’। বইটির ঐ নামে আমার বন্ধু আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাই তার প্রথম অংশ ‘আবার তোরা মানুষ হ’ নামে প্রকাশিত হয়েছিল। আজকের এই ষড়দর্শন তারই অবশিষ্ট অংশ, ষড়দর্শনের কিছু কথা নীচের এ অংশ ।
ষড়দর্শন থেকে
৪/৮২ ‘তারা কি কুরআন গবেষণা করে না? এবং ইহা যদি বিশ্বস্রষ্টা ছাড়া আর কারো নিকট হতে আসত তবে তারা এতে অনেক অসামঞ্জস্য পেত’।
দ্বিতীয়। নিজের ধর্ম আর অপরের ধর্ম বলে কোন কথা সত্যপথিকের অভিধানে থাকতে পারেনা। নিজের ধর্ম আর নিজের গুরুতে সর্বসত্য নিহিত এরুপ অভিমত সত্যানুসন্ধানের সহায়ক নয়। পরন্তু সর্বদেশে সর্বযুগে যে সব সত্যসাধক এসেছেন তারা মূলতঃ একই উৎসের বিভিন্ন ধারামুখ, তাই তারাও সমভাবে সম্মানিত।
তৃতীয়। এই নিয়ম পূর্বতন প্রতিটি বাণীচিরন্তনী বা ঐশী গ্রন্থের বেলা সমভাবে প্রযোজ্য। এ সকল গ্রন্থ একারণেই পরিত্যাজ্য নয় যে মানুষের অন্যায় হস্তক্ষেপে অনেক অসত্যের প্রলেপ প্রযুক্তি সত্ত্বেও তাতে এখনো অকুলষিত সত্য অবশিষ্ট আছে। শোষকের স্বার্থে আঘাত করে নাই এমন সব বানীকে তারা কলুষিত করেনি এবং তাই তা এখনও অক্ষত আছে। ফলে মানুষের চলার পথে আজো তা আলো দিতে সক্ষম আংশিকভাবে হলেও। একারণে চরম সত্যের সন্ধানে পূর্বতন শাস্ত্র সমূহের অন্তর্নিহিত সত্য সত্যানুসন্ধানীর জন্য বিশেষ সহায়ক।
চতুর্থ। নবীরা নিষ্পাপ, কারণ তারা সুনির্বাচিত ও সুনিয়ন্ত্রিতও।
পঞ্চম। সৃষ্টিধর্ম সম্বন্ধে অধিকাংশ বর্ণনায় একথা অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে, যেসব অকুরআনীয় অলীক মতবাদ কুরআনের নামে ভাষ্যকারেরা প্রচার করেছেন তার জন্য কুরআন দায়ী কিনা? সৃষ্টি ধর্ম সম্বন্ধে কুরআনের অভিমত সুস্পষ্ট। আল-কুরআন জোড়াহীন সৃষ্টি স্বীকার করেনা। কুরআন আরো বলে যে প্রতিটি প্রাণী মরণশীল। নির্দিষ্ট আয়ু সীমায় প্রত্যেককে মৃত্যু বরণ করতে হবে। তদুপরি সৃষ্টার বিধানে কারো জন্য সৃষ্টিধর্ম পরিবর্তনের কোন বিধান নাই। জন্ম মৃত্যু ও ন্যায় নীতি শৃঙ্খলার প্রশ্নে কুরআনের এই সুস্পষ্ট নীতিমালাকে জানা কুরআনের সত্যকে জানার জন্য অপরিহার্য।
নবীরাও মানুষ, কিন্তু তারা সুনির্বাচিত এবং সুনিয়ন্ত্রিত। তদুপরি তারা প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত। তাদের জন্ম মৃত্যু দেহ মনে কোন অস্বাভাবিকতা থাকার কথা নয়। অতিরঞ্জন বিলাসীদের ভাবাবেগদুষ্ট মিঠে দুশমনী থেকে নবীদের জীবনকে বাঁচাতেই হবে। শুধু সত্যের কারণেই নয় বরং নিজের মাঝে নিজের অফুরন্ত শক্তিকে আবিষ্কারের জন্যও। অপরের মাঝে অকারণ অস্বাভাবিকতা আবিষ্কারের প্রবণতা চিরদিন মানুষকে দুর্বল হীনমন্য ও অদৃষ্টবাদী করেছে। এই দুর্বলতার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে এবং নিজের মাঝে অফুরন্ত শক্তির উৎসকে জেনে নিতে হবে।
ষষ্ঠ। ইন্টারপ্রিটেশন বা অনুবাদের জন্য কুরআনের নিজস্ব ফরমুলা আছে। এই ফরমুলাকে সামনে রেখে যারা কুরআন বা যে কোন নীতি শাস্ত্রকে অনুবাদ করতে বসে, তাদের কাজে বিভ্রান্তির সম্ভাবনা কম। কিন্তু এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে যারা পূর্বপরিকল্পিত অযৌক্তিক বিজ্ঞান বিরোধী মতবাদকে মূলধন করে সংস্কারাচ্ছন্ন মন নিয়ে অনুবাদ করতে চায় তারা পদে পদে ভুল করে এবং এইভাবে তারা বেদকে অবেদে, কুরআনকে অকুরআনে, এবং বাইবেলকে প্রহসনে রুপান্তরিত করেছে। ইন্টারপ্রিটেশনের এই নীতিমালাকে মেনে নিলে কুরআন একটি কম্পুটারের যে কোন বক্তব্য তা শাস্ত্র হউক আর অশাস্ত্রই হোক তার সত্যাসত্য নির্দ্ধারণে সম্পূর্ণ সক্ষম।
৩/৬‘ তিনিই সেই যিনি তোমার কাছে এই পুস্তক অবতীর্ণ করেছেন, যার কিছু সংখ্যক আয়াত মুহরুম (সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন), এই গুলি পুস্তকের মূল অংশ এবং অন্য গুলি মুতাশাবেহা (রুপক); যাদের অন্তরে সত্যলংঘন প্রবণতা আছে শুধু তারাই কোন্দল ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রুপক তার অনুসরণ করে। স্রষ্টা ছাড়া অন্য কেহ এর ব্যাখ্যা জানেনা আর যারা জ্ঞানে সুগভীর; তারা বলে আমরা বিশ্বাস করি, সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে আগত এবং জ্ঞানী ছাড়া অন্যেরা সুশিক্ষা গ্রহণ করেনা’।
মুহরুম আয়াত সমূহ সত্যের মূলভিত্তি। এবং মুশতাবেহা (রুপক) আয়াত সমূহ বিস্তারিত ব্যাখ্যার কারণেই। মুহরুম আয়াতের সুস্পষ্ট আলোকে যেকোন রুপক আয়াতের বক্তব্য এমনকি হাদিসসহ যে কোন শাস্ত্রের সত্যাসত্য নির্ধারণ করা অতিমাত্রায় সহজ। পরন্তু রুপক আয়াতের অনুবাদে মুহরুম আয়াতের সুস্পষ্ট নির্দেশ সমূহকে অবজ্ঞা করলে স্বভাবতঃ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। ধর্মশাস্ত্র সমূহের যেকোন অভিমত তা যদি কুরআনের মুহরুম আয়াতের বক্তব্যের পরিপন্থি হয় তবে তাকে দ্বিধাহীনভাবে পরিত্যাগ করতে হবে। কুরআনের মূল বক্তব্যে কোন অসামঞ্জস্য নেই। তাই ভাষ্যকারের অজ্ঞানতা ও মনোবৈকল্যের জন্য কুরআন দায়ী হতে পারেনা।
ভাষ্যকার তার নিজের অভিমত ব্যক্ত করবেন না এমন কোন কথা নয় কিন্তু সত্যের বিকৃতি ঘটানোর কারো কোন অধিকার নেই। রুপক আয়াতে মুহরুম আয়াতের বক্তব্য বিরোধী ইন্টারপ্রিটেশন মূলতঃ কারা করে এবং কি উদ্দেশ্যে করে থাকে কুরআন উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে তাও সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছে। আল-কুরআন নিজেই এক অস্বাভাবিক রহস্য। গ্রন্থ হিসাবে অনন্য এই দাবী কুরআনের নিজস্ব। এর যে কোন বাণীর তাৎপর্য তাই অসাধারণ এবং তার গভীরতা বিস্ময়কর। তার প্রতিটি কথার নিহিত সত্য শাশ্বত ও সনাতন এবং সর্বযুগের জন্য তা সমভাবে প্রযোজ্য। এখানেই অন্য গ্রন্থের সাথে তার মৌলিক পার্থক্য। পরিপূর্ণ জীবনবিধান রুপে একমাত্র কুরআন এই দাবী করতে পারে, অন্যে তা পারেও না, করেও নাই।
৫/৩—-‘আজ এই দিনে তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবনবিধান রুপে মনোনীত করলাম।’
কুরআনের ব্যাপারে একটি কথা অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। এর বিধান সর্বযুগের উপযোগী যে কোন সমস্যা সমাধানের দাবী রাখে। কিন্তু যে বিশ্বনবী এই মহাগ্রন্থের বাণীবাহক, কুরআনের এমন অনেক তথ্য আছে যার তাৎপর্য সেযুগে অজানা ছিল। এর মাঝে এমন অনেক সত্য আজো অজানা এবং অনাবিস্কৃত আছে যা যেমন আপনিও জানেন না তেমনি আমিও জানিনা। এ কারণে এর ইজতিহাদ বা গবেষণা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবে এবং কোন দিন এই গবেষণার দুয়ার বন্ধ হতে পারেনা। ইজতিহাদ বা গবেষণার দ্বার বন্ধ করে দেয়া আর তার শ্বাশত সত্য রুপকে অস্বীকার করা একই কথা।
একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় যে কুরআনের অনুসারীরা তরবারীর জোরে সত্য প্রচার করেছেন। কিন্তু কুরআনের সুস্পষ্ট ঘোষনা ‘লা ইকরাহা ফিদ্দিন’ এবং ‘লাকুম দিনুকুম ওলিয়াদিন’ সম্পূর্ণ এর বিপরীত কথা। আত্মরক্ষার্থে তরবারীর প্রয়োজনকে কুরআন কোনদিন অস্বীকার করেনা বরং জেহাদ বা সংগ্রামকে জীবনের এক পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করে। তরবারীর প্রয়োজন সর্বযুগে অনস্বীকার্য, ন্যায়নীতি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কারণে তো বটেই- এমনকি সত্য ও শান্তিকে টিকিয়ে রাখার জন্যও। ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম। তাই উহা যেমন কাপুরুষতাকে সমর্থন করে না তেমনি সীমা লংঘনকারীকেও সমভাবে ঘৃনার চোখে দেখে।
কু’রআনের সমালোচকেরা আরোও বলে থাকেন যে কু’রআনের বক্তব্যে অসংখ্য পুনরুক্তি বিদ্যমান। মূলতঃ কুরআন যার কাছে অবতীর্ণ হয়েছিল সত্যকে জানার কারণে তার নিজের জন্য প্রথম প্রত্যাদিষ্ট পাঁচটি আয়াতই যথেষ্ট ছিল। মহানবীর কাছে প্রত্যাদিষ্ট এই পাঁচটি মহাবাক্যে সেদিন একদিকে যেমন তার নবীত্বের নিয়োগনামা ছিল, তেমনি তার পরবর্তি তেইশ বছরে অবতীর্ণ সকল সত্যের পরিপূর্ণ নির্যাসও তাতে বিদ্যমান ছিল। মূলহিমের কাছে প্রথম প্রত্যাদিষ্ট ওহি শিক্ষা ইলহামের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। এটি একদিকে যেমন সত্যের চরম প্রকাশ, অন্যদিকে তা পরোক্ষভাবে মূলহিমকে তার মিশনের রুপরেখা জানিয়ে দেয়।
প্রথম প্রত্যাদেশের পর বেশ কিছুদিন বিশ্বনবীর কাছে ওহি আসেনি। এরপরে সুদীর্ঘ তেইশ বছরে খন্ড খন্ড প্রকাশের মাধ্যমে একখানি পরিপূর্ণ জীবন বিধান অবতীর্ণ হয়। তাতে পূনরুক্তি বিদ্যমান ছিল ইহা অনস্বীকার্য। সত্যকে জানার জন্য পুনরুক্তির কোন প্রয়োজন ছিল না বাণীবাহকের নিজের জন্য কিন্তু আমার মত অজ্ঞানজনের জন্য তার প্রয়োজন ছিল। আর প্রয়োজন ছিল মূল বক্তব্যকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেবারও।
কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা কি সত্যকে পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করে নিতে সক্ষম হয়েছি? আমরা কি আমাদের কর্মধারায় সত্যের পরিবর্তে অসত্য, জ্ঞানের বিরুদ্ধে অজ্ঞানতা এবং শান্তি শৃঙ্খলার নামে উশৃঙ্খলতার আমদানী করে সমাজ ও জাতির জীবনকে ব্যর্থ ও দুর্বিসহ করে দেই নি? কুরআন একখানি রহস্য। তার মাঝে দু’টি রহস্যঘেরা শব্দ আছে। মানুষের জন্য কুরআনের প্রথম আদেশ ‘ইকরা’ এবং প্রথম নিষেধ ‘লা-তাকরাবা’। কুরআন তার এই প্রথম আদেশের মাধ্যমে যেমন সারা মানব জাতিকে জ্ঞান সাধনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছিল ঠিক তেমনি তার প্রথম নিষেধের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষকে জগতের সকল অকল্যাণ থেকে পরিত্রাণের উপায়ও জানিয়ে দিয়েছিল। অজ্ঞান মানুষ তার কোনটিকেই গ্রহণ করতে পারেনি। সঠিকভাবে, হয় অহমিকার দম্ভে নয়তো বিশ্বাসের অভাবে।
কু’রআনের এই একটি আদেশ আর এই একটি নিষেধকে যদি মানুষ মনে প্রাণে গ্রহণ করে নিতে পারত তবে জগত অনেক অনেক দিন আগেই স্বর্গের সুষমায় ভরে উঠতো। কু’রআনকে যারা পুনরুক্তির দোষে অভিযুক্ত করে থাকে, পরিহাসের ব্যাপার এই যে তাদের রচিত দর্শনে শুধু হেয়ালী মাখা পুনরুক্তি ছাড়া আর কিছুই খুজে পাওয়া যায় না।
সত্যকে জানতে হলেঃ
অসত্য অন্যায় অনাচার ও অজ্ঞানতার একটি মাত্র ঔষধ আছে এবং তা হল ‘ইকরা’ বা জ্ঞান সাধনা করা। ক’টি অক্ষরজ্ঞান হলেই জ্ঞানী হওয়া যায় না। শিক্ষার সাথে তাই দীক্ষারও একান্ত প্রয়োজন। এ কারণে যুগে যুগে আগত সত্যসাধকদের আনীত সকল সত্যকে সমমর্যাদায় মেনে নিতে হবে। জাতি বর্ণ গোত্র ও ভাষা নির্বিশেষে প্রতিটি সত্যকে মানুষের সম্পদরুপে গণ্য করে বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে। সত্যকে পুরোপুরি জানতে হলে শেষটুকু জানতেই হবে। একারণে কুরআনকে অবশ্যই জানতে হবে।
‘আল-হক্ব’ বা ‘সত্য’ কুরআনের অপর এক নাম। চরম সত্যের শাণিত নির্যাস এটি। সুতরাং তাকে জানতে হলে বা তাকে বুঝতে হলে অন্ধ বিশ্বাস ও বাইবেলীয় বিভ্রান্তিকে পরিহার করতে হবে। একথা অনস্বীকার্য যে খ্রীষ্টধর্ম যীশুর প্রবর্তিত ধর্ম নয় বরং যারা তাকে হত্যা করে তার প্রবর্তিত সত্যকে নির্মুল করার প্রচেষ্ঠায় মত্ত ছিল তাদেরি কপট কুটিল চক্রান্তে পরবর্তিকালে সৃষ্টি হয় বর্তমান বাইবেল ও খ্রীষ্টধর্ম। তাতে সত্য নাই একথা বলবনা বরং কিছু সত্য আর কিছু কল্পনার মিশ্রিত এমন এক তত্ত্ব গাথা সেখানে রচিত হয়েছে যা আর যাই হউক না কেন মানুষের পথচলার বিধান তা হতে পারেনা।
চরম সত্যকে জানতে হলে কু’রআনকে অবশ্যই মানতে হবে। কিন্তু কু’রআনকে জানতে চাইলে পাদ্রী পুরোহিতের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। একারণে কুরআনের নিজস্ব পথে আসতে হবে। কুরআন নিজেই তার তত্ত্বকথা প্রকাশে সক্ষম। ‘কুরআন নিজেই কুরআনের ভাষ্য’ এই কথাতে কোন অতিরঞ্জন নেই। সত্যকে জানতে হলে স্রষ্টাকে জানতে হবে। জানতে হবে তার বাণী বাহককে এবং মানবসৃষ্টির পশ্চাতে বিশ্বস্রষ্টার সৃষ্টি পরিকল্পনার উদ্দেশ্যকেও। কুরআন মূলতঃ এমন কোন গ্রীকদর্শন নয় যে কেউ জানতে চাইলে তা বুঝতে পারবে না। এই পুস্তক অবতীর্ণ হয়েছিল এক অতি সাধারণ অক্ষরজ্ঞানহীন সত্য সাধকের কাছে। তাকে জানতে হলে অগাধ জ্ঞানের প্রয়োজন হবে এমন কোন কথা নয় বরং প্রয়োজন সত্যপ্রীতির এবং প্রয়োজন সত্যনিরপেক্ষ যুক্তিভিত্তিক মন ও মানসিকতার।
প্রথমত কুরআনকে জানতে হলে তার নিজস্ব গতিধারাকে বুঝতে হবে, জানতে হবে তার পরিভাষাকেও। কুরআন সত্যের শাণিত নির্যাস। তার বাণী সমূহের মাঝে কোন পরষ্পর অসংলগ্নতা নেই। পরম সত্যময়ের বাণী তা, তাই তাতে অসামঞ্জস্য থাকতে পারেনা। একারণে কুরআনের নিজস্ব আয়াত সমূহের মাঝে একের দ্বারা অপরটির মন্সুখ বা বাতিল হওয়ার থিওরী সর্বোতোভাবে পরিত্যাজ্য। কুরআনের ধারাকে যেজন জানে না, কুরআন অবতরণের উদ্দেশ্য বুঝেনা, তার উৎসমুখ বা তার বাণীবাহককে যারা চিনেনা এমন সব অজ্ঞানেরাই কুরআনের ভিতরে মন্সুখ আয়াতের সন্ধান খুজে। কার্যতঃ পরিপূর্ণ জীবন বিধানরুপে আলকুরআন র্প্বূবর্তী শাস্ত্রসমূহকে মন্সুখ বা বাতিল ঘোষনা করেছে, তার নিজস্ব কোন আয়াত বা বানীকে নয়।
উপরের অংশ ডাঃ এম এ শুকুরের লেখা বই থেকে টুকে নেয়া।
কুরআন হনুমানের নয়, মানুষের জন্য এক অনন্য দলিল
নীচের অংশ নাজমা মোস্তফার, সাম্প্রতিক ঘটনার আলোকে কুরআন অবমাননার উপর ব্যাখ্যা।
বাংলাদেশে সত্য ময়দান থেকে হারিয়ে গেছে বললে ভুল হবে না। মানুষ যেন আইয়ামে জাহেলিয়াত পার করছে। কে মরছে কে মারছে তার কোন হিসাব নেই। অপরাধী ধরা খায় না যারা প্রতিবাদ করে তারাই সাধারণত ধরা খায়। সাধারণত শক্তির ছায়াতলে সরকার একের পর এক লংকা কান্ড ঘটাচ্ছে। বিদেশী গনমাধ্যম আলজাজিরা যা বের করেছে তার উপর তারা পুরষ্কৃতও হয়েছে। লাজ লজ্জা হারিয়ে সরকার দুর্বৃত্তায়নে তারপরও পিছপা নয়। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে সরকার তার সব অনাচার ঢাকতে এসব ক্রমাগত করে যাচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে এদেশে যত দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, এসব হয়েছে আওয়ামী ছত্রচ্ছায়ায়। এর প্রমান হিসাবে বই লিখে গেছেন শেখ হাসিনার প্রাইভেট সেক্রেটারী মতিয়ুর রহমান রেন্টু। তিনি এমনভাবে তার নিজের ফাঁসি দাবী করেছেন কারণ এসব ঘটনা অনেকটা ঘটেছে তার ছত্রচ্ছায়ায়। তার চোখের সামনে তার জানার পরও এসব ঘটেছে। যার জন্য তিনি তার নিজের ফাঁসি দাবী করেছেন আগে পরে শেখ মুজিবসহ তার কন্যার ফাঁসি দাবী করেছেন। শেখ মুজিবের আজ কোন সম্মান অবশিষ্ট নেই। যা কিছু বাকী ছিল তার শেষ করে দিল তার পরবর্তী প্রজন্মরা। সবাই লুটেরা, দলে দলে তারা আজ আসামী হচ্ছে। গোটা বিশ^ তা পরখ করছে। ২১ শে আগষ্টের সাজানো বোমাবাজীর নাটকে যারা মারা গেছেন তাদের সবার হত্যার আসামী সরকার নিজে। দুর্ভাগী আইভি কাকতালীয় লাশের শিকার হন। কিন্তু মূল আসামী আজ অবধি নাটক করে যাচ্ছেন। এরপর রামুর বৌদ্ধ মন্দির, যশোহরে হিন্দু হত্যাকান্ড, অতীতে বিশ^জিৎ হত্যাকান্ড, কর্ণেল শহীদ খানও এসেব অসংখ্য তথ্য তুলে ধরেন। হিন্দুদের সব সময় তিনি ট্রামকার্ড হিসাবে ব্যবহার করেন, তার প্রমাণ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হিন্দুরাও কপট স্বার্থ লাভ করতে এসব সরকারী কিল খেয়ে কিল চুরি করে। অবশ্যই শেয়ার পায় বড়মাপে, সাধারণতঃ সাহসের পরিচয়ে সত্য উন্মোচন করে না। এটি দুঃখজনক। তাহলে দেশের দুর্ভোগ অনেক কমে আসতো।
ওরা ৮০ মিলিয়ন ডলার খেয়েছে দেশের সাইবার সন্ত্রাসীদের তালিকায় হাসিনা পুত্র কন্যা বারে বারে এসে যায়। এসবব তথ্য ফাঁস ক্যাপ্টেন শহীদ ইউটিউবে প্রকাশিত হয়। (অক্টোবর ১৪, ২০২১ তারিখে)। এর আগেও বহুবার এসব কথা আলোচিত হয়েছে, আমেরিকার বাংলা পত্রিকাতে বড় কলামে ছেপেছে। তাছাড়া শেখ পরিবারের চৌদ্দগোষ্ঠীর অপকর্মের রেকর্ড আজ প্রতিটি দুয়ারে কড়া নেড়ে এর সত্যতা জানান দিচ্ছে। আমরা জানি শত অনাচার ছাপিয়েও সত্য উঠে আসে। শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন নাই যে তার প্রাইভেট সেক্রেটারীই তার বারোটা বাজিয়ে যাবে। তার নাম ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। এই সাম্প্রতিক কুরআন অবমাননা করার ঘটনায় সচরাচরের মত এক সুবোধ পাঞ্জাবী পরা এক সুবোধকে আনা হয়েছে। সবাই কমেন্ট করছে এসব একই নাটকের পনরাবৃত্তি। আজ অক্টোবরের ১৪ তারিখে ২০২১ আর একজন ভারতীয় নাগরিককে পাওয়া গেছে যিনি বাংলাদেশে ধরা খেয়েছেন তিনি বাংলাদেশে বড় পদে বসা ভারতীয় নাগরিক। এসব একই ধারাতে তার কৌশলী নাটক। ৯০% মুসলিমের দেশে ৫০% কখনো ৮০% হিন্দুরা উচ্চপদ দখল করে আছে। এসব বিষয় উঠে আসে কনক সরোয়ার নিউজ লাইভ মাহমুদুর রহমান ইউটিউবের সূত্রে। বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা ভারতীয় ইন্ধনে হাসিনার সাজানো নাটক মাত্র। সিকিমের লেন্দুপ দর্জির আদলে তিনি দম ছাড়ছেন। প্রচার চালাচ্ছেন এদেশের জনতারা উগ্রবাদী সন্ত্রাসী দাঙ্গাবাজ। যেখানে নীরিহ মানুষ না খেয়ে মরছে, আত্মহত্যা করছে সেদিকে দখলদার রাতে ভোট করা অবৈধ সরকারের নজর নেই। বরং এর ওপর পিঠে তিনি লুটপাটের মহামেলা সাজিয়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি নামের টেবলেট গেলাতে চাচ্ছেন ক্ষুধার্থ দেশবাসীকে। অসাম্প্রদায়িকতার বিস্ময়কর নজিরে ধন্য এ দেশ। যেখানে কখনোই এ ধারার ঘটনা এ দেশে ঘটে না, সেখানে তার ছত্রচ্ছায়ায় আজ এসব ঘটছে অনায়াসে।
কুমিল্লার এক মন্দিরে হনুমানের কোলে কুরআন রাখা। মুসলিমরা খুশী হও, মন খারাপ না করে ধৈর্য্য ধরাই বড় পূন্যের কাজ। ক্ষতি জমা করবে করছে ষড়যন্ত্রীরাই। এসব নতুন নয়, বিগত শতকের ৯৬ থেকেই এর শুরুটা। ব্যাংক লুটপাট, শেয়ার ধ্বংস, নীতি নৈতিকতা ধ্বংস, গুম খুন ধর্ষণের মহামেলা এ ময়দান আজ। সাগর রুণির ছেলে মেঘের কান্না সমানেই আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে বিলাপ করছে। সংলগ্ন চত্বরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা যায় অতীতে কোনদিন এখানে পুলিশকে পাহারা দিতে হয়নি। তবে এবার ঘটনার দিন রাত থেকেই পুলিশের আনাগোনা বেড়ে যায়। এটি তাদের নজরে আসে। এতে বোঝা যায় এটি পুলিশকে জানান হয়েছে চালবাজরাই করেছে। সঙ্গত কারণেই পুলিশ আসা যাওয়া শুরু করেছে। তারপরও কেন পুলিশ আসামী ধরতে পারলো না। তাহলে বলতে দ্বিধা নেই এটিও বলা যায় হয়তো পুলিশই নির্দোষদেরে যেভাবে ইয়াবা পকেটে গুঁজে দিয়ে ঘটনা সাজায়, ওভাবেই এটি ঘটিয়েছে। ঠিক মুক্তাঙ্গনে যেভাবে বোমা নাটকটি সাজানো হয়েছিল এবং ঘটনার কয়েক বছর পর এটি তারেক জিয়ার উপর লেপে দেয়া হয়। ঐ ঝড়ে আইভি দলবলসহ জান খোয়ালেন আর চালবাজ ফকিরের কেরামতি বাড়লো। সত্যের দায়িত্ব যে অদেখার হাতে, তার কাছ থেকে কেউ সত্যকে লুকাতে পারবে না। তবে সাময়িক হয়তো পারবে, তবে চিরকাল ওটি চাপা থাকবে না। ইসলাম ধর্ম ও তার গ্রন্থ কুরআন অসামান্য সত্য বাণীতে ভরপুর। যাদের বিশ^াসের কমজোরী তারাই এসব নাটক সাজাতে পারে। এরাই ধর্ম নিয়ে নষ্ট ব্যবসা করে। তাহাজ্জুদ নাটক প্রচার করে বেড়ায়। কুরআনেই এদের বিরুদ্ধে কঠোর বানী উচ্চারিত হয়েছে। এসব লোকদেখানো ধর্ম ধারীকে কঠোর ভাষাতে কুরআনেই তিরষ্কার করা হয়েছে। আজ অনেক হিন্দুরাও জানে এর প্রকৃত মর্যাদা কতটুকু। স্বজ্ঞানে কোন হিন্দুও এ অপকর্ম করবে না। বাবরী মসজিদ ভেঙ্গেছে দানব হিন্দুরা কিন্তু এর মাঝ থেকে ঐ দানবদের থেকে এক সাধক বালবীর বেরিয়ে এসে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তিনিও সাম্প্রতিক মারা গেছেন, অনেকে সন্দেহ করছে তাকেও মারা হয়েছে। তার অর্জন কেউ কমাতে পারবে না। যারা তাকে হত্যা করেছে তারাই সর্বহারার দলে নাম লিখাচ্ছে। আর বালবীরের নাম বিধাতার ইতিহাসে মানবতার ইতিহাসে চিরদিন আলো ছড়াবে। কালের কন্ঠ পত্রিকায় ভয়ানক রিপোর্ট প্রকাশ ১৬ বছরে ১১ লক্ষ কোটি টাকা পাচার (১৩ অক্টোবর ২০২১)। সাম্প্রতিক নিকট অতীতে আল জাজিরার ডকুমেন্টারী রিপোর্টের ভিত্তিতে “All the Prime Minister’s Men” ডিআইজি এওয়ার্ড পেয়েছে, নেত্র নিউজের ১৩ অক্টোবরের রিপোর্টে প্রকাশ। ইতালী ভিত্তিক এই সংস্থা এর অসাধারণ উপস্থাপনার প্রশংসা করেছে, সংবাদটি সাউথ এশিয়া জার্নাল প্রকাশ করেছে। এর নিখুত দক্ষ উপস্থাপনা জার্নালিজমের এক অনন্য দলিল হয়ে থাকবে। একজন হুইসেল ব্লেয়ারের সাহসিকতায় দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের খোঁজে ছবি তোলার অনেক খুটিনাটি তথ্য ও যোগসূত্র তাদের নিঁখুত উপস্থাপনায় উঠে এসেছে। এ অসাধারণ তদন্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে যুক্ত একটি অপরাধী পরিবার কিভাবে একটি রাষ্ট্র দখল করতে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে মিলে এ দুর্বৃত্তায়ন করতে পেরেছে এ এক অনন্য ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকবে। পুরষ্কারের এ অনুষ্ঠানটি হয় ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর তারিখে।
যে মুজিবকে একদিন ৭১ সালে বাংলাদেশের ৭ কোটি বাঙ্গালী অগাধ বিশ^াসে পথ চলা শুরু করেছিল, আজ ২১ সালে তাদের গোটা পরিবারের এমন সাগরচুরি গোটা জাতিকে হতবুদ্ধ করেছে। কুরআন জ্ঞানহীনতার কারণেই মানুষ পথ হারায়। শুধু এই গ্রন্থের মর্যাদা রাখতে শিখলে মানুষকে এত অধঃপাতে নামতে হতো না। হোক হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান জৈন সবারই এ গ্রন্থ অনুসরণ অনুকরণ করা উচিত, তার নিজের স্বার্থে। যে এর অনুসরণ করবে, সেই অসীমের সন্ধান পাবে। তার হারাবার কিছু থাকবে না। আর যারা এর অপমান করবে একে নিয়ে মিথ্যাচার করবে এ অপকর্মের শাস্তি কত গভীর হবে সেটি সহজেই অনুমেয়।
১৪ অক্টোবর ২০২১ সাল।
রাত ১১.৩৭ মিনিট।