নাজমা মোস্তফা
কুরআনের কথাকে অবহেলার সুযোগ নেই: আজ ২২ এপ্রিল, মনটা বেশ ভালো আমার ব্যক্তিগত কিছু কারণে যদিও বৃহত্তর পরিসরে আমার মন খারাপ হবারই কথা। আজকের কুরআনের নির্দেশিত কথার উপর যদি মুসলিমরা নিবিষ্ট থাকতো তবে তারা বিশ^ জয় করে অনেক এগিয়ে যেত। কুরআনকে গুরুত্¦হীন করেছে মানবসৃষ্ট কিছু জটিলতা যা বারে বারে সচেতনকে বিচলিত করে। ধর্ম প্রচারের জায়গা আগে ছিল ময়দান, এখন ইউটিউবে ব্যবসা তুঙ্গে। গার্লস স্কুলে যখন পড়তাম তখন স্যার ম্যাডামরা ওয়াজ শুনলেই ছুটি দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ী চলে যেতে বলতেন। আমরা হুড়া–হুড়ি করে স্কুল থেকে ফিরতাম। আমরা জানতাম মেয়েদের দেখলেই আক্রমণাত্মক কথা হত নারী শিক্ষার উপর, সময় আজ বদলেছে। মেয়েদের প্রতি ওয়ায়েজদের এই হীনমন্যতা আমাদের কষ্ট দিত। এসবের কারণ ধর্ম বদলায়নি তবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ মূল সত্যকে সমাদর করতে শিখছে, মিথ্যা দূরিভূত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যুগে যুগে ধর্ম বাহকরাই গোজামিল তৈরী করেছে। আল্লাহর দেয়া সিরাতাল মোসতাকিম, সহজ সরল পথকে জটিল করা হয়েছে। ধর্মটি নাজেল হয় গ্যারান্টিসহ স্থায়ী সিলমোহর মারা যার কোনদিকেই বাড়ানো কমানোর সুযোগ নেই। এত কড়া নিরাপত্তার পরও শত্রুপক্ষ বসে নেই। তারা সমানেই জটিল থেকে জটিলতর সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। “আর তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকারকে স্বল্প মূল্যে বিনিময় করো না (অর্থাৎ সামান্য প্রার্থিব মুনাফা লাভের জন্য তোমাদের ওয়াদার বরখেলাফ করোনা)। নিঃসন্দেহ যা আল্লাহর কাছে রয়েছে তা তোমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ, যদি তোমরা জানতে”(আন নহল সুরার ৯৫ আয়াত)। কুরআন অনুসরণ করার উৎসাহ জনক অসংখ্য কথা আছে কুরআনে, যা তার অনুসারীকে অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহর প্রতিপক্ষ ইবলিস বসে নেই। সে লড়ে চলেছে আদমকে পথহারা করতে। উপরের আয়াতে এটি স্পষ্ট, আল্লাহর জানা মানুষ এ অপরাধ করবে, তাই আগাম নিষেধ বাণী দিয়ে রাখা।
গল্পের আদলে ইবলিসের প্রবেশ: কুরআনের মূল কলিমার বানী হচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট ও বার্তাবাহী অল্পকথা। যুগে যুগে নবীরা এসেছেন ধরাতে আল্লাহর বাণীকে মানুষের কাছে পৗছে দিতে। আল্লাহর কোন শরিক নেই। কেউ এ অপরাধ করলে সেটি এমন বড় পাপ যার কোন মাপ নেই, সেরা পাপ। তার মানে কুরআনের চেয়ে স্পষ্ট নির্দেশ কোথাও নেই। কুরআনকে দূরে ঠেলে গালগল্প সব বাড়াবাড়ির অংশ। ধর্মের নামে প্রচলিত গোপাল ভাড়ের গল্পের আদলে সত্য বা মিথ্যা গল্প আমরা সমঝদারের মত শুনি। মাত্র শোনা আজকার গল্প, বিবি আয়েশা ছিলেন খুব দুরন্ত টাইপের মেয়ে তাই তার বাপকে মানুষ বলতো ঐ লাফানো বকরির বাচ্চার বাপ। যে জন্য তার আসল নাম হারিয়ে টিকে আবু বকর অর্থাৎ বাচ্চা উটণীর বাপ। হয়তো গল্পের সবটাই মিথ্যে নয়, বেশীরভাগ গল্প অর্ধসত্য। অর্থ সত্য এমন এক জিনিস যা মিথ্যার থেকেও ভয়ংকর। এই ওসিলায় ইবলিস আমাদের সত্যাঙ্গণে ঢুকে তার বসার পরে শোয়ার ব্যবস্থা করে নিতে পারে। আরবের কালচার হচ্ছে বড় সন্তানের নামে মা বাবাকে সম্মোধন করা। সন্তানের নাম ধরে বাপ মাকে ডাকা হতো। বিবি আয়েশা কোন সময়ই বড় মেয়ে ছিলেন না, তার বড় বোনের নাম ছিল আসমা। উল্লেখ্য এসব মিথ্যাবাজি করে বিবি আয়েশাকে দুরন্ত দুর্বৃত্ত বানানোর পায়তারা চালানো হয়েছে। কুরআন সাবধান করেছে বারে বারে প্রকাশ্য শত্রু থেকে, যারা সত্যের সাথে মিথ্যে মিশায়।
মূলের উপর নিবিষ্ট থাকুন: পুরুষ শাসিত সমাজকে সত্যে ফিরতে হবে। আর নারী সমাজকে সত্যটা চিনতে হবে। উভয়ের পরিশুদ্ধি ও প্রকৃত মানুষ হওয়া দরকার। অতীত ধর্মসমূহও একটি সময় পার করার পর অধর্মে রুপান্তরিত হয়েছে অতীতে। কারণ ঐশী নির্দেশের পাশে মানবিক সংযোজন একে ইবলিসের ধর্মে পরিবর্তন করে। “কুরআনের বানী স্বল্পমূল্যে বিনিময় না করার কড়া নির্দেশ কুরআন প্রচার করে। এর মানে এ নিয়ে ব্যবসা নিষিদ্ধ। এ মূল্যবান গ্রন্থটি গ্রহণ লালন পালন করতে হবে প্রতিটি মুসলিমকে অন্তর থেকে, সম্মান দেখাতে হবে প্রতিটি কথাকে, গবেষনা করতে হবে প্রতিটি সত্যকে। সহজ উত্তর হচ্ছে এটি আত্মায় অন্তরে বুঝে হজম করতে হবে। কিন্তু দেড় হাজার বছরের আদর্শলেখা লক্ষ্য করা যাচ্ছে একে হজম করায় অনুসারীদের গরজ এতই কম যেন বলা চলে তলানীতে। গোটা মুসলিম বিশে^র অবুঝ সম্প্রদায় যারা আরবী বুঝে কম, তারা অর্থ না বোঝেই জপে। অতপর বস্তনীতে বেধে নাগালের বাইরে দূরে তাকিয়ার উপর রাখে। যেন ব্রাহ্মণ ছাড়া ছুতে মানা। টেবিলের উপরে থাকলে উৎসাহী পাঠক সত্যকে উদ্ধার করে ফেলতে পারে। ইবলিস এটি মানবে কেন? বাড়াবাড়ি অতি ধার্মিকতা লোক দেখানো আদিখ্যেতা ইবলিস দুর্বৃত্ত চরিত্র। যুক্তি দেখানো হয় এতে পূণ্য বেশী। ঠিক যেভাবে ফুসলিয়ে আদমকে গন্দুম খাইয়ে আজীবন বেহেশতে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। লোভে পড়ে আদম ও হাওয়া তাদের শর্ত ভুলে বিপদের গর্তে পা রাখেন। ঐ ধরা পড়ার ধারাবাহিতায় আমরা আদম প্রজন্ম আজো ময়দানে। দেড় হাজার বছর আগের কুরআনের অর্ডার, এ গ্রন্থ স্বল্প দামে বিনিময়যোগ্য নয়। এটি মুখের কথা নয়, আল্লাহর আদেশ। কিন্তু মুসলিমরা এ কথা মানেন না, এড়িয়ে যান বলেই ব্যবসা চলে জোরকদমে। একজন বলে একদল শুনে। এ নিয়ে ব্যবসা করলে এর বারোটা বাজবে, এটি আল্লাহর জানা। তাই ঐ নিষেধ না মেনে তারা সেই বারোটা বাজাচ্ছেন। যার যা মুখে আসে শিরোনাম দিচ্ছে ‘এই দোয়া একবার পড়েন সব পাপ মাফ হয়ে যাবে’ এই কাজ করেন যা চাইবেন তাই পাবেন।’ যেন ট্রেনের ফেরিওয়ালা লোকঠকানো পুরিয়া বিক্রি করছে। অসংখ্য অসংখ্য মিথ্যা কথা এভাবে বিবৃত হচ্ছে।
সাবধান বাণী: কুরআনের সাবধান বাণী ইহুদীদের পথে হাটবে না। ওরা এসব করে ধর্মের বারোটা বাজিয়েছে। এরাও ওপথেই যাবে, গাধার বোঝা বইবে। তাদের ঠেকায় কে? নিষিদ্ধ এসব গাধার গল্প অনুসরণ করতে কুরআন দ্বারা নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে গাধার আওয়াজ সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আর তার পিঠের বোঝা ধর্মের আদলে তালমুদের নামে ইহুদীরা যা সাজিয়েছিল তা উৎকৃষ্ট বর্জ পদার্থ। ও পথে হাটা বারণ। সাবধানী সংকেত কথা না মানলে তোমাদের থেকেও উন্নত কোন গোষ্ঠীর হাতে এর গুরুদায়িত্ব অর্পণ করা হবে। ঠিক যেমনটি ইসরাইলীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আরবদেরে দেয়া হয়েছিল। মানুষ তার বিবেকের কারণে আল্লাহর কাছে দায়বদ্ধ আমৃত্যু। যে দায় পশুদের নেই। কুরআনের গভীর বস্তুনিষ্ঠতা তার অল্প চুম্বককথার মাঝে। আল্লাহর আদেশ এ বানীসব অল্পদামে বিনিময় করা হারাম, নিষিদ্ধ। এ নিষিদ্ধ মানলে সবাই নিজে থেকেই এটি জানতে মানতে উদ্যোগী হতো। এখন মুসলিমদের নিজের গরজ কম, কারণ সব দায় জমা রাখা অশিক্ষিত অল্প শিক্ষিত অর্ধ শিক্ষিত মানুষগুলোর জিম্মায়; তারা যাই বলছে তাই ধর্ম হয়ে আছে। ধরা হয় ওরাই ধর্মের মালিক মোক্তার। শিক্ষিতরা অনেকে এর দায় তাদেরে দিয়ে রেখেছেন। আর শ্রোতারা একদল বেওকুফে রুপান্তরিত হয়েছে। জবাব একটাই কুরআন বুঝে পড়েন আর সেটি পালন করেন। কুরআনে যা আছে তা রপ্ত করেন। যা নেই সেটির জন্য আপনি দায়বদ্ধ নন। আতিউল্লাহ ও আতিউর রসুল কথার অর্থ হচ্ছে ময়দানে যে গ্রন্থটি এসেছে রসুলের হাত দিয়ে ওটি আল্লাহর গ্রন্থ আল্লাহর বাণী আল্লাহর হাদিস, ওটি আগাগোড়া পড়বেন, মানবেন, পালন করবেন। তিনি যেভাবে দেখিয়ে গেছেন সেটি যা আজো বলবৎ আছে শুধু এটুকু প্রতিষ্ঠা করে দেখেন জগত কত দ্রুত সত্যতে বিস্ফারিত হয়। আর মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সম্প্রদায়, আল্লাহর নির্দেশ পালনকারীরা।
বিদায় হজ্জেও ইবলিস: ইবলিস তার সব প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তার কসরত দেখেন। বিদায় হজ্জ্বের ভাষণকে ভিত্তি করে তিনকথা আসার কারণও ইবলিস (১) তোমরা দুটি জিনিস কুরআন ও হাদিস ধরে থাকবে। (২) কুরআন, হাদিস ও আহলে বায়াতকে ধরে থাকবে। (৩) আর একদল এটি মানে যে কুরআন আঁকড়ে থাকবে। ইবলিসও জানে রসুল ধান্ধাবাজ ছিলেন না। সত্য ছাড়া মিথ্যা কথা তিনি বলেন নাই। ঐ সময় কুরআন ছাড়া রসুলের দেখাবার মত কিছু সামনে ছিল না। আর দ্বিতীয়টি রসুল বলেন নাই কারণ কোন পারিবারিক ধর্ম স্থাপন করতে নবীদের পাঠানো হয়নি। আর একদল এটি মানে যে, আল্লাহর গ্রন্থের কথাই অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কারণ ঐ সময় ময়দানে একমাত্র কুরআনের ঐ নির্দেশ আদেশবাণীসমূহ ছিল। সুবিধাবাদীরা কুরআনকে পিছনে ফেলতে কুরআন ছাড়া বাকী দুটি নিয়ে যুগ যুগ থেকে তুমুল লড়াই করছে। নিজেরা নিজেদের দুটি নামকরণও করেছে দুইনামে। এটিও কুরআনের আদেশ ধর্মকে ভাগ করবে না। এরা ভাগ করে আল্লাহর আদেশকে অমান্য করেছে। তাদের কাজই ইবলিসকে অনুসরণ করা। আল্লাহর প্রতিটি আদেশ নির্দেশকে অবহেলা করেই তারা আছে। কারণ আজকে তারা ধরা খাচ্ছে অসংখ্য কথাই তারা কুরআনের বিরুদ্ধে ধর্মকে সাজিয়েছে।
শয়তানের খপ্পরে ইসলাম: আদমকে যে সাবধান বাণী দেয়া হয়েছিল শয়তান নামের প্রকাশ্য শত্রু থেকে দূরে থাকতে, বিবেক খাটালেই শয়তানকে চেনা যায়। পরবর্তী অনুসারীরা কতটুকু মানছেন? মুসলিমরা যদি তা না মানে তবে মুক্তি হনুজ দূর অস্ত। শবে বরাত পালন করা নিয়ে সন্দেহের দোলাচলে প্রাচ্যের মুসলিমরা দেড় হাজার বছর পরও। অন্যের ধার করা এবাদতে মগ্ন তারা। তারাবি পড়বেন নাকি কমাবেন নাকি বাদ দেবেন। আল্লাহর যদি নির্দেশ হয় তবে কমাবেন কেন, আর আল্লাহর নির্দেশ না থাকলে এত জামাত করে সাজ সাজ রবে পড়বেন কেন। যে কোন বিপদ আপদে সেজদার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইলে মন প্রশান্ত হয়। আর আল্লাহর সাথে বেতার যোগাযোগের উত্তম মাধ্যম নামাজ, যা সেজদার মাধ্যমে করা যায়, সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া। এটি এমন একটি শারীরিক কসরত যা মানুষের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট অঙ্গ মাথাকে মাটিতে ছুঁইয়ে আল্লাহতে আত্মসর্পণ করা হয়। আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশ ছাড়া মনগড়া সাজানো এবাদত করলে তা বিদআত হয়ে যাবে। তখন এটি হবে ধর্মের নামে অতিরিক্ত সংযোজন, নিষিদ্ধ কাজ। এর উদাহরণ হাদিসেও আছে যে ফরজ হওয়ার ভয়ে রসুল তৃতীয় দিনে ঘর থেকে বের হন নাই। কিন্তু বর্তমানের মুসলিমরা ঐ নিষিদ্ধকে সিদ্ধ করেছে। বিগত শতকে জেনেছিলাম প্রত্যক্ষ সাক্ষীর বরাতে রমজানে তারাবি নামাজ পড়া লোকটি মাঠে গিয়ে ধরা পড়ে পড়শি মহিলার হাতে। তাকে বলা হলো, শুনেছি তুমি প্রতিরাতে তারাবিতে যাও, আবার রোজা করছো না- কারণ কি? জবাবে সে বলে মাগো, আমি কৃষক মানুষ কাজ করি রোজা করতে পারিনা কিন্তু গ্রামের মানুষের ভয়ে তারাবিতে যাই। তার মানে রোজা আর তারাবি নিয়ে মশকরা করছে, ধর্ম পালন নয় বরং জিম্মী জীবন যাপন করছে।
কুরআনের বস্তুনিষ্টতা: এই রোজা সম্বন্ধেও সব ষ্পষ্ট ঝরঝরে কথা এসেছে কুরআনে, কোন ধামাচাপা নেই। সারা জীবন দেখেছি আজীবন রোজা করা মানুষরা কোন অবস্থায়ও রোজা ভাঙ্গেন না। কারণ তারা এতই অভ্যস্ত হয়ে যান যে ওটি দরকারেও ভাঙ্গতে চাননা। আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উপোস করলে মানুষের শারীরিক মানসিক উভয় ক্ষেত্রে অশেষ কল্যাণ হয়। আজকাল সমানেই ডাক্তাররা উপোস থাকার পরামর্শ দেন। কুরআন অপূর্ণ গ্রন্থ নয়, আল্লাহর কথামত এটি পরিপূর্ণ। কিন্তু ইবলিসীয় ধারণা বলে এটি অপূর্ণ, একে পূর্ণতা দিতে হবে বাকী গোজামিল দিয়ে। আল্লাহকে বিশ^াস না করে মাতবরি করে খোদার উপরে খোদকারী করার কোন যুক্তি নেই। কুরআন পড়ে সত্যটা জানা মানা ফরজ কাজ। বিবি আয়েশাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল রমজানে রসুল কিভাবে নামাজ পড়তেন। জবাবে তিনি বলেছিলেন আপনারা কি কুরআন পড়েন না? এটিও একটি বিশ^াসযোগ্য হাদিস। এরকম একটি জবাবের পরও মুসলিমরা পথ পায় না। মিথ্যায় ঘোরপাক খায়, কারণ ইবলিসের গ্যাড়াকলে পড়ে গেছে তারা। কুরআনের আয়াত হচ্ছে ৬২৩৭, ৬৬৬৬ নয়। আর এর ব্যাখ্যার নামে সংযোজন ঘটানো হয়েছে মানুষের লক্ষ লক্ষ সহি জইফ মনগড়া কথা। যার অধিকাংশই আল্লাহর হাদিসের বাণীর বিরুদ্ধে সাজানো হয়েছে। বলা হয় এসব সহি, কে তা সহি করলো? আল্লাহ ছাড়া এসব সহি বলার অধিকার কারো আছে কি? ইমাম আবু হানিফা তার জীবনে এসব বানোয়াট হাদিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে কারাগারে বন্দী থেকে মুমূর্ষভাবে মারা যান শাসককুলের হাতে যারা ঐ সময় ব্যস্ত ছিল এসব নষ্ট হাদিস রচনায়। সত্য সাধনায় অটল থাকায় তাকে বিষপানে হত্যা করা হয়। ঠিক যেমন বাংলাদেশে আজকের শাসককুল তার কপট হাতে নির্দোষ মানুষকে ধমকাচ্ছে, গুম খুন করছে, হামলা মামলা করছে। ইসলামের ইতিহাসে এর জ¦লজ্যান্ত উদাহরণ সাধক ইমাম আবু হানিফা ও তার উৎস্বর্গীকৃত সাধক জীবন ঐ রকম অত্যাচারী শাসকের কুপে পড়ে বিষপানে তাকে হত্যা করা হয়, এসব রক্ত বৃথা যেতে পারে না। যে কোন মানুষই সহি হাদিস চিহ্নিত করতে পারবেন, যদি তার কুরআন জানা থাকে। সে খুব দ্রুতই বলে দিতে পারবে যে, এটি কুরআন বিরুদ্ধ কথা। কুরআন না জানলে সেটি বলা সম্ভব নয়। কুরআনের ব্যাখ্যা কুরআন দিয়ে বিচার করতে হবে কারণ এক একটি বিষয়ে কুরআনেই যুক্তি দেয়া হয়েছে যা একটি কথাকে অন্য কথা দ্বারা প্রতিষ্ঠা করা যায়, শক্ত ভিত্তি গড়া যায়। এটি কি বিশ^াসযোগ্য কথা যে আল্লাহ তার কাজে এত অগোছালো ও অসম্পূর্ণ। যার পূর্ণতায় আসতে হবে এক গোষ্ঠী অগ্নি উপাসক থেকে উদ্ভুত পারসী সমাজের দলবদ্ধ গোষ্ঠীকে। ইতিহাসে এটিও জেনেছি ঐ সময় এদের উত্থানের সময় মানুষ বিদ্রোহ করেছে। কিন্তু শক্তির তলানিতে তাদের দাপটের সাথে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। যে কেউ বলুক যে কথা কুরআনের সাথে যায় এমন অনুমোদিত কথাকে মানতে কোন অসুবিধা নেই। তাই বলে হাজার হাজার লাখ লাখ মিথ্যাচারে ভরা কুরআন বিরুদ্ধ মত ও পথ কেন একবিংশ শতকের মুসলিমকে মানতে হবে। আল্লাহ কিয়ামতের দিনে কুরআনের বাইরে কোন কাজের জন্য কাউকে প্রশ্ন করবে না; করতে পারে না। একবার এক বোন প্রশ্ন রেখেছিল, ‘আমি বোরখা পড়ছি না, শেষ কালে কিয়ামতের ময়দানে কি জবাব দিব?’ উত্তরে আমি বলি, ‘আল্লাহ তো কোথাও বোরখা পরতে বলে নাই। বেশী বিপদে পড়লে এই ভাবীকে দেখিয়ে দিও। তোমার সে বিপদের দিনে সে দায় নিতে আমি রাজি আছি। তবে আমার কথা হচ্ছে কুরআনের নির্দেশ অনুসরণ ও পালন করতে হবে।’
ব্যাখ্যার নামে অপব্যাখ্যা: সুরা নিসার ২৪ আয়াতে বলা হয়েছে দাসীদেরও বিয়ে করা যায় তবে মোহরানা দিতে হবে। প্রাথমিক ইসলামের যুগে অনেক বিদুষী দাসীরা ছিলেন যারা সহজলভ্য ও ধর্ম জ্ঞানে গুণি ছিলেন। আয়াতে এরকম কোন মুতা বিয়ের অনুমোদন নেই। কিন্তু কুরআন বিরোধী দালাল পক্ষ ভুল জিনিস ধর্মের নামে এসব মুতা বিয়ের প্রতিষ্ঠা চালায়। আর বোকা মানুষগুলো কুরআন না জানার কারণে ভুল ভাল হাততালি দেয়। ছলে বলে কলে কৌশলে কখনো হযরত ওমরের বরাতে হালাল বলে প্রচার করে। যদি কুরআনে স্পষ্ট দলিল না থাকে নবীর নামেও একে হালাল করা সম্ভব নয় । আর সুরা নিসার ২৪ আয়াতে এসব মুতা বিয়ের কোন সামান্যতম যুক্তি নেই। ইবলিস এভাবে ময়দানে বারে বারে জায়গা করে নেয়, দু’নাম্বারী ধান্ধাতে মূল গ্রন্থের ব্যাখ্যা নয় বরং অপব্যাখ্যা করে। এভাবে ইবলিস ময়দানে প্রবেশের সুযোগ লুফে নিয়েছে। কারণ মূল গ্রন্থ কুরআনে প্রবেশের অনুমোদন পায়নি, সে সুযোগমত মিথ্যে বানোয়াট ও জইফ দুর্বল নামে হাদিস রচনা করে তাফসিরের রেওয়ায়েতেও ঢুকিয়ে দিয়েছে। কেউ বলছেন চার বিয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, মুতা বিয়ের অনুমোদন আছে। এসবই বলছেন কুরআনকে এড়িয়ে গিয়ে কারণ একমাত্র বানোয়াট হাদিস দ্বারা এসব যুক্তি টেকানো যায়। তবে কুরআন দ্বারা এসব কথা টেকে না। কারণ কুরআন যদিও চার বিয়ের অনুমোদন দেয় কিন্তু পরের আয়াতেই বলে এটি অসম্ভব তোমরা চারের মাঝে সমতা বজায় রাখতে পারবে না, সমতা রাখার বড় শর্ত জুড়ে দিয়ে এক বিয়েই উত্তম ফয়সালা দেয়া হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োজনে একাধিক বিয়ে করা যাবে তবে ঐ শর্তসহ।
বিদায় হজ্জ্বের মনগড়া ব্যাখ্যা: কৌশলী ইবলিসের কান্ডকারখানা ভয়ংকর! ব্যাখ্যার নামে কুরআনকে অবহেলা করে মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে। নবী জীবনেও এসব করতে পারেন না, একমাত্র ইবলিস পারে। আল্লাহ বলেছেন কুরআন পরিপূর্ণ গ্রন্থ, কুরআনের ব্যাখ্যা কুরআন নিজেই। আল্লাহর ব্যাখ্যার জন্য নবী নন, তিনি ময়দানের উদাহরণ। তার নামে কুরআনের পাশে গ্রন্থ রচনার অনুমোদন কুরআন দেয় না। তাই তার জীবিতকালে তিনি তার নামে কিছু লিখে রাখতে নিষেধ করেছেন। এটিও আমরা জেনেছি দুচার কথা লিখে রাখলেও তা আবুবকর ওমর(রাঃ) রা পুড়িয়ে ফেলেন। আল্লাহ কুরআনে স্পষ্ট করেছেন তিনি একজন বানিবাহক মাত্র, একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নন। আল্লাহর কালাম ব্যতীত নবীর বাড়তি কোন কথা নেই। এমন হলে সেটি কঠিন পাপ বলে বিবেচিত হবে। এবং কুরআনের হিসাবে ধরা পড়লে বলা হয়েছে তার কন্ঠনালী ছিড়ে ফেলা হবে। কিন্তু এখন আমরাই পাই অসংখ্য কুরআনহীন কথা হাদিসের নামে চলছে। নবী কন্ঠনালী ছিড়ার অপরাধ করবেন, এটি কি মানা যায়? এমন কথাও হাদিসে আছে আল্লাহর কালাম ছাড়া সাংসারিক কাজে তার ভুল হতে পারে, ওটি অনুকরনীয় নয়। কুরআন ছাড়া বাকীটা সাংসারিক কথা কাজকে গ্রহণ না করতে বলেছেন। তবে ইবলিস ঐ ছুতায় ইসলাম ধ্বংসের এজেন্ডায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
মানবিক সংযোজনে শর্ত পালিত হয়নি: যারা হাদিস কালেকশন ও পরিশুদ্ধির কাজ করেছিলেন সেখানে শর্ত ছিল একবার মিথ্যাচারে ধরা খাবে তাদের থেকে কোন হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়, শর্ত বলা হলেও দেখা যায় এসব ধরা খাওয়া অপরাধীর কাছ থেকেও হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ হাদিস এসেছে এবং আজকের মুসলিম সমাজ তা পালন করে ধর্মের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। ধর্মকে অল্প দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই, কুরআন এটি রুখে দিয়েছে তার আয়াত দিয়ে। কিন্তু ওয়াজেয়ানরা এটি তাদের গলাবাজি ও হুমকি দিয়ে প্রতিষ্ঠার পক্ষে কুরআন বিরোধী অবস্থানে ছিলেন আছেন, সহজে যাবেন না। এদের কাজ কুরআনের বক্তব্যকে উল্টে দেয়। প্রথম অস্ত্র কুরআনকে ধ্বংস করতে প্রায় চৌদ্দশত বছর থেকে তারা ইবলিসের পক্ষ হয়ে লড়ছে। নবী মাটির তৈরী না নূরের তৈরী। নবী যদি স্বর্ণের তৈরী হন তাতে জনতার লাভ বা ক্ষতি কি? কুরআন তাকে মানুষ বলে স্পষ্ট করলেও ইবলিস অশান্ত, সে তার নিজের ব্যাখ্যা নিজে দেয়। কারণ তাকে মানুষ নবীকে অতিমানুষ অতিভৌতিক করতেই হবে। আরো প্রচার করে নবীর কোন ছায়া ছিল না। তাই যদি হবে তবে বদর ওহুদ খন্দক যুদ্ধের কি কোন দরকার ছিল? মূর্তিপূজক কুরাইশদের যুদ্ধের ডাকে নবী তাদের রোদে ডেকে নিলে, যুদ্ধ সেখানেই শেষ হতো। তখন তারা তাকে দেবতার আসনে বসিয়ে ৩৬০ মূর্তির সাথে আর একটি দেবতা যোগ করতো। কুরআন দিয়ে কোন অনাচার টিকানো যায় না, যখনই নবীর নামে মনগড়া মিথ্যা এনে দাঁড় করা হয় তখনই ইসলাম একটি প্রতিবন্দী ধর্ম হয়ে যায়। আর এসব প্রতারণাকে তারা বলছে কুরআনের ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যার জন্য তাদের লাগবে কেন? ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে আল্লাহই শ্রেষ্ঠ উৎকৃষ্ট ও যথেষ্ট।
কুরআনের সত্যটা জানুন: ধর্ম অমূল্য ধন, সেটি অল্প দামে বিক্রির কাতারে কেন? যাদের সামনে কোন গবেষণা নেই, চিন্তা চেতনা নেই। ধর্ম মানুষকে যখন যুক্তির বদলে বেওকুফ বানায় তখন তারা তাবিজ কবজে যুক্তি খুঁজে পায়। মানুষকে প্রতারণা করে জিন চালান দেয়, প্রেত চালান দেয়। কিছু প্রশ্ন শুনলে হাসি পায়, দাঁত ব্রাশ করা কি জায়েজ? এটি আমাদের দু বছরের বাচ্চাও বুঝে কিন্তু বেওকুফ ধার্মিকরা বুঝে না। কুরআনকে অল্প মূল্যে বিক্রি করো না কথাটি কোন ওয়াজেয়ানরা মানেন না বলেই ধর্মের এত নাকানী চুবানি দশা। তারা ভুলেও বলেন না আপনারা কুরআন বুঝে পড়েন। তাদের ছাত্ররাও বুঝে পড়ে না, অনেকে নিজেরাও তেমন কিছু জানেনা বলেই তাদের মনগড়া গাঁজাখুরী কথাকে ধর্ম বলে চালায়। ১১৪টি সুরার এক বিরাট সংস্করণ কুরআন । আমাদের বাচ্চারা ছাত্ররা এর চেয়েও ভয়ংকর বড় বড় বই পড়ে অভ্যস্ত। মানুষকে প্রথমে কুরআন জানতে হবে। রসুলের নামে প্রচারিত হাদিস সত্য না মিথ্যা তা কুরআন না জানলে কেউ বুঝতেও পারবে না। কারণ যখনই কুরআন বিরুদ্ধে কথা হাদিসে আসবে সে খুব সহজে ধরতে পারবে এ কথাটি কুরআন বিরুদ্ধ কথা, যদি তার কুরআন জানা থাকে। কিন্তু ঐ প্রয়াস মুসলিমরা কস্মিনকালেও করেন না। এ জন্য ভুলের মাঝে পা থেকে মাথা ডুবিয়ে আছে তারা। তাহলে ধর্মের সব জটিলতা সহজ হয়ে যেত। মানুষ সুপথ সহজেই খুঁজে পেত।
ফতোয়ার মালিক আল্লাহ: জানা যায় মুনশিরা মুফতিরা ফতোয়া দেন। এটি অনেক জটিল বিষয় এ কারণে যে, এ কাজটি স্বয়ং আল্লাহর কাজ। কুরআন একমাত্র আল্লাহর ফতোয়া বই। সে হিসাবে ফতোয়া কোন মানুষ করার কথা নয়। এটি খোদার উপর খোদকারী। প্রাথমিক যুগে কেউ ফতোয়া দিলে তাকে বেত্রাঘাত করা হতো। হযরত ওমরের সময়ে তামিমদারী নামে এক ধৃষ্টান ধর্মান্তরিতকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হয় তার মিথ্যা ফতোয়াবাজির জন্য। যেখানে আল্লাহ চৌদ্দশত বছর আগে তার ফতোয়া বিলি করেছে, সেখানে কোন সংযোজন বিয়োজনের কোন সুযোগ নেই। যে বা যারা এ কাজটি নিজের মনগড়া ব্যাখ্যাতে করবে তারা বেদআত করবে। আর নবী বার বার বলেছেন যদি কেউ বেদআত করে, তবে সে জাহান্নামে যাবে। ঐ জাহান্নামে যাবার কাজটি বেশীর ভাগ প্রচারকরা দল বেধে করে চলেছেন। একমাত্র কুরআন মুসলিমদের একতাবদ্ধ করতে পারে। ইহকালে ও পরকালের দুটি বেহেশতের নিশ্চয়তা দিতে পারে। এ গ্রন্থ চিন্তাশীলের চিন্তার খোরাক ছাড়া আর কিছু নয়; এটি উচ্চ মানসম্পন্ন শিক্ষিতদের সিলেবাস। এ জটিলকে সহজ করে বোঝার সব ক্ষমতা তারা রাখেন। বাংলাদেশে কাজের মেয়েরা কাজ করে আর বিবি সাহেবরা স্কুলে বাচ্চা নিয়ে যান আর গালগল্পে সময় পার করতেন। এসব আমাদের সময়কার কথা বলছি। আমার কাছে মনে হতো এই মায়েদের মেধাগুলির অপচয় হচ্ছে এভাবে। সেখানে তারা বই পড়তে পারতো কিছু লিখতে পারতো,গবেষনামূলক ধর্ম চর্চা করতে পারতো। পরচর্চা ও শাড়ী চর্চায়ই তারা মূলত করে সময় পার করতো। মৌলভীদের উচিত নামাজ পড়ানোকে পেশা হিসাবে না নিয়ে জীবন ধারণের জন্য ভিন্ন পেশা বেছে নেয়া। নামাজ পড়িয়ে কেন টাকা নিবেন। আপনার নিজের নামাজই তো আপনি পড়ছেন। আবার এর বিনিময় নিচ্ছেন, পেশা হিসাবে নেয়াতে সত্য মিথ্যা জুড়ে ব্যবসা করছেন। কখনো প্রতারণাও করছেন, উপরের আয়াতে ধরা খেলে আপনি লাজওয়াব!
শেষকথা: সম্প্রতি ‘তসলিমার কলামের জবাব’ গ্রন্থটির পিডিএফ দিয়েছি (https://nazmamustafa.files.wordpress.com/2021/04/taslimar-kolamer-jobab-book.pdf) আমার ব্লগের বুক সেকশনে। নাস্তিক্য ধারায় ইসলাম ধ্বংসের এজেন্ডা নিয়ে মুসলিমদের বিভ্রান্ত পথহারা করতে কাজ চলছে বিগত শতক থেকেই। ঐ সময়ে এর জবাবে এটি লেখা, মনে পড়ে ২৫/২৬ বছর আগে আমার হাই¯স্কুলের শিক্ষিকা প্রশ্ন রেখেছিলেন কুরআন না বুঝে পড়লে কেন পূণ্য হবে না। জবাবে বলেছিলাম আপা, আপনিই বিচার করেন একজন শিক্ষিকা আপনি, আপনি কি আপনার ছাত্রকে মার্ক দেবেন যদি সে না বোঝেই পড়ে বা জবাবও সেভাবে দেয়। আমার মতে সে কোন পূণ্য অর্জন করবে না, ফলাফল অশ^ডিম্ব। কুরআন খুবই শ্রুতিমধুর ও প্রাণকাড়া ছন্দময় বলেই আমরা অতি অল্পে এটি মুখস্ত করতে পারি। এটি মুখস্ত করাও জরুরী তাহলে আমাদের একতার সমন্বয় থাকে। এটি মুখস্ত করার জন্যই এটি এত শ্রুতিমধুর করে সাজানো হয়েছে এবং এটি খুব অল্পেই রপ্তও করা যায়। এর প্রমাণ আমরা নিজেরা তা রপ্ত করেছি। তারপরও অর্থ বোঝে তার মর্ম উদ্ধার করা জরুরী। দেখা যায় ধর্ম আলোচনায় কুরআনের কথার চেয়ে রসুলের নামে প্রচলিত কুরআন বিরোধী কথাই বেশী প্রচারিত হয়। কুরআনই আল্লাহর কালাম, আল্লাহর হাদিস। সাধারণত সমাজের অযোগ্যরা ইমামতি করে, যদিও ইসলামের রীতি অনুসারে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে ইমামতি করতে হয়। স্কুলে ওয়ান থেকে পাঠ্য তালিকায় কুরআন আবিশ্যকভাবে থাকা উচিত। একে অর্থসহ সবার কাছে এর ম্যাসেজ পৌছে দিতে হবে। পরিপূর্ণ জীবনে সেই হবে ইমাম, হতে পারে ডাক্তার হতে পারে ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে অধ্যাপক ব্যারিষ্টার। কুরআন প্রতিষ্ঠা পেলে সমস্ত সমাজ সভ্যতা এমন উচ্চতায় পৌছে যাবে পৃথিবীর কোন শক্তি নেই মুসলিমদের পেছনে ঠেলার। সমস্ত বিশ^ ছুটে আসবে ঐ সত্যে আত্মাহুতি দিতে। সময় থাকতে সঠিক কাজ করুন। ইহ ও পরকাল ঝরঝরে কেন করবেন? বর্তমানের ইমামরা সৎ ভাবে বাঁচার জন্য যে কোন পেশা বেছে নেন। প্রতিটি বাচ্চাকেও ঐ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। বাচ্চাদেরে ধর্মের বস্তুনিষ্টতা সুন্দর করে বুঝিয়ে শেখান ছোটকাল থেকে যা ইহ পরকালের জীবন গঠনের হাতিয়ার। তবেই কাটবে জটিলতা; বর্তমান সমাজের ঘুনেধরা মিথ্যায় ভরা জীবন ব্যবস্থা আর নয়, পরিপূর্ণ কুরআন ভিত্তিক সত্য ধর্মের নির্দেশনায় মনোযোগী হন। সহজ সরল জটিলতা পরিহার করা সুরা ফাতিহার পূণ্যে গড়া জীবন হোক, আমাদের চলার পথ। যদি কবিতার ছন্দে বলি – এটিই আমার শেষকথা।
“অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি বিচার দিনের স্বামী,
যতগুণ গান হে চির মহান তুমিই অন্তর্যামী।
দ্যুলোকে ভূলোকে সবারে ছাড়িয়া তোমারি চরণে পড়ি লুটাইয়া,
তোমারি সকালে যাচি হে শকতি, তোমারি করুণাকামী।
সরল সঠিক পূণ্য পন্থা মোদেরে দাও গো বলি,
চালাও সে পথে যে পথে তোমার প্রিয়জন গেছে চলি।
যে পথে ভ্রান্তি চির অভিশাপ, যে পথে ভ্রান্তি চির পরিতাপ
হে মহাচালক! মোদেরে কখনো করো না সেপথ গামী।
২৩ এপ্রিল ২০২১।