নাজমা মোস্তফা
২০২০এর রমজানের ৩১ মে তারিখে আমার ব্লগে একটি লেখা আপলোড করেছিলাম। লেখাটির শিরোনাম ছিল “আমরা কি আল্লাহর রমজান পালন করছি?” আজ ২০২১এর রমজান শুরু হয়েছে আজ রাতেই এপ্রিলের ১৩ তারিখে আমরা প্রথম সেহরী দিয়ে এবারের রোজা শুরু করবো। প্রতিটি কাজই যখন এবাদতের অংশ, তখন প্রতিটি সুচিন্তা আমাদের পথ দেখায় যেখানে প্রতিটি কুচিন্তা মানুষকে পথহারা ও বিভ্রান্ত করে। খোলামনে ভাবলে বোঝা যায় বাংলাদেশীরা খুব ভয়ংকর খারাপ সময় পার করছে। রাজনীতি ও ধর্ম দুটোই কেমন যেন গোলমেলে ঠেকছে। অনেকে বলবেন রাজনীতির সাথে ধর্ম মেলানোতেই এ গন্ডগোল। আমি মনে করি কথাটি ঠিক নয়। কারণ ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে এ দুয়ের সংমিশ্রণ হয়েছে আল্লাহর আদেশে ও নবীর কর্মকান্ডে। ইসলামের ইতিহাস বলে মসজিদই ছিল ইসলামের প্রথম পার্লামেন্ট হাউস। সেখান থেকেই দেশের সমাজের সব সমস্যা আলোচিত হতো ও সমাধান আসতো। হাতের কাছেই ছিল খোদা প্রদত্ত সিলেবাস। তা খেজুর পাতায় লিখা হোক আর সাহাবাদের অন্তরেই খোদাই করা হোক। সেটি বদলাবার বা ওদলবদল করার কোন সুযোগ কোনদিনও ছিল না। এর কারণ ঐ দিন থেকেই এটি মানুষের মুখে মুখে অবস্থান নিয়েছে। আরবের বাসিন্দারা তাদের নিজ ভাষাতে এটি রপ্ত করেছে, আর রপ্ত করার সাথে সাথে তারা সেটি বুঝতেও পেরেছে। বিপদ হয়েছে অন্য ভাষাভাষীদের তারা সুরা রপ্ত করলেও ওর অর্থ বুঝতে পারছে কম। তবে প্রতিটি সুরার সাথে সাথে ঘটনা জানা থাকলে অতি অল্পেই ওসবও রপ্ত করা যায়। বিশেষ করে নামাজে যেসব সুরা আমরা ব্যবহার করি তা অর্থ না জেনে নামাজ পড়ার কোন যুক্তি হয় না। লেখাপড়া জানা প্রতিটি মানুষকে এটি অর্থ বুঝে রপ্ত করলে নামাজের আগ্রহ ও একাত্মতা বহুগুণ বাড়ে। গতবছরের লেখাতে আমি দেখিয়েছি আমাদের অনেকেই আল্লাহর নির্দেশিত রোজার পাশে রসুলের নামে নির্দেশিত আরো বাড়তি কিছু রোজায় অভ্যস্ত হয়ে আছেন, ছিলেন হয়তো আরো বড় সময় থাকবেন।
কারো কারো মতে রোজার আগে ছয় ও পিছে ছয় আর কেউ কেউ বলেন শুধু শেষের ছয় রোজা রাখার বিধান রাখা হয়েছে যার কোন দাগ কুরআনে নেই। এই ছয় রোজা আমার জীবনের মোড় লেখালেখির দিকে ঘুরিয়ে দেবার এক মহাসোপান। ঐ ঘটনাই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় লেখালেখিতে ঢুকতে ঐ বিষয়েও একটি লেখা আছে যার নাম হচ্ছে ‘হোঁচট’। যদিও চিন্তার চলা আমার অনেক আগে থেকেই। সাম্প্রতিক সময়ে মামুনুল হক নামে এক হেফাজত কর্তাব্যক্তির অনেক উল্টাসিধা কাজের সুবাদে সৃষ্ট জটিলতা থেকে গোটা দেশে তুলকালাম কান্ড ঘটছে। অনেক সূত্র তথ্য বলছে এসব কান্ড সরকারই ঘটাচ্ছে, নিজের পাপ লুকাতে এসব অপকর্ম সাজানো হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেহ কারে নাহি পারে সমানে সমান। কিছু আগে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের অপকীর্তির মহা মহা সংকট কথা আল জাজিরা প্রকাশ করে একদম দেশকে উলংগ করে দিয়েছে। এদেশে কোন নীতি নৈতিকতা আর বাকী থাকে নাই। ২০০৯ সাল থেকেই শুরুতে নিজ দেশের বিডিআর হত্যা ঘটিয়ে শেখ মুজিবের কন্যা সরকার অপকর্মে ও মিথ্যাচারে এমন কিছু বাকী রাখেন নাই যা তিনি করেননি। বর্তমানে দিনের ভোট হয় রাতে, কোন বৈধতা নেই। মানুষ আজকাল ভোট দিতে যায় না। ওটি কন্যা সরকার গিলে হজম করে দিয়েছেন। আবার প্রতারণার হাতিয়ার হিসাবে কথায় কথায় লজ্জাস্কর ভাবে জায়নামাজ খোঁজা নামাজ পড়া তাহাজ্জুদ পড়া কুরআন তেলাওয়াত করার গল্প করেন, এসব বলে নিজেকে মুসলিম বলে জাহির করার চেষ্টা করেন। কেউ তাকে অমুসলিম বলে না, তারপরও কেন করেন জানি না। এর একমাত্র কারণ এরা কুরআন বুঝে কখনোই পড়েন না। পড়লে আল্লাহ যেখানে এসব না করতে আদেশ দিয়েছে সেখানে তাদের এসব করার কথা ছিল না। এরা আসলে বর্ণচোরা ধর্ম ব্যবসায়ী, রাজনীতির আড়ালে এটি তাদের বর্ণচোরা ব্যবসা। কন্যা সরকার সমানেই অনাচারে মিথ্যায় ধরা খাচ্ছেন কিন্তু তিনি এসব নিয়ে নীতি নৈতিকতার বিষয়ে মোটেও ভাবেন না। ভাবখানা এমন যেন খোদা প্রদত্ত কোন এজেন্ডাতে তারা ধর্ম নিয়ে মাঠে আছেন। এ জন্যই বলছি ধর্মটি সবার হাতের পুতুল নাচের বিষয় কি? সহজভাবে অনেকেই বলেন এসব মনে হচ্ছে রোজ কিয়ামতের আলামত মাত্র। সবার মুখে ধর্ম আর কাজে অধর্ম খোদ অবৈধ প্রধানমন্ত্রীসহ। আমি হোঁচট খেয়েছিলাম আজ থেকে ২৫ বছর আগের রমজান পার করা সময়ের ঐ হোঁচট আমার গতি ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সেদিন থেকে আজ অবদি আমি কমবেশী লিখছি, থামি নাই।
গতবছরের লেখাটির উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর নির্দেশিত রোজা কি আমরা করছি? আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে আমি নিতান্ত একজন সাধারণ চিন্তাশীল ছিলাম, লেখিকা ছিলাম না মোটেও। তবে তুখোড় কারো ঝগড়ার জবাব দিবার মত রসদ আমার জমা ছিল না। আজ একটি কঠিন সত্য প্রকাশ করছি বাহাদুরী বা কৃপণতা প্রকাশ করছি না মোটেও। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত জীবনেও কোন রোজা আমার বাকী নেই। আমি সবকটি রোজা পালন করেছি। কোন রোজা ভাংলেও সেটি আমি পরবর্তীতে রোজা শেষ হওয়ার নিকট সময়েই রেখেছি। কিন্তু জীবনেও এর বাইরে আর বাড়তি কোন রোজা রাখি নাই। আমার পূণ্য হোক আর পাপ হোক এটি আমার কৃতকর্ম। রোজার এই বস্তুনিষ্ঠতা এটি আমার আত্মবিশ^াস গড়ে দিয়েছে। আমি যদি মিথ্যা বলি আমি জানি তার দন্ড কত কঠিন হবে আর সত্যটা বলা দরকার তাই বলছি। একবার আমরা সমবয়সী সহপাঠিরা প্রায় পাঁচ সাতজন এক হয়েছি রোজার পর পরই। প্রশ্ন উঠেছে কে কয়টি রোজা রেখেছো? ওখানে অনেকেই আমার বড় আপা খালা, তারা আমার থেকেও অনেক কম রেখেছেন, কেউই সবকটি রোজা রাখেন নাই। আমার নিজেরই লজ্জা লাগলো, কেউ বললো আমি সাতটি কেউ বলে আমি পাঁচটি, সামনে পরীক্ষা, আমি হু বলে এমনভাবে মাথা নাড়ি যে তোমাদের মতই। স্পষ্ট কথাটি হচ্ছে আমি সেদিন গর্ব করে বলতে পারি নাই, যে আমি সবকটি রেখেছি।
তাই সংসার জীবনে পরবর্তীতে যখন ঢুকি তখন ঢাকাতে পাড়ার এক ভাবীর ছোবলে আমি এমনই আহত হই যে আমার জীবন স্থবির হয়ে পড়ে। কয়টি দিন আমার কেটেছে এরকম কষ্ট আমি জীবনেও পাই নাই। বিষয়টি ছিল রোজার পরের ঐ ছয় রোজা রাখা মহিলা রোজা মুখে আমার উপর হামলে পড়েন যেন আস্ত গিলে খাবেন। আমি হাসিমুখে বলেছিলাম রোজা শেষ এখন আবার কিসের রোজা। আমি তার ঐ রোজা সম্বন্ধে জানি না বলেই তার এত হামলে পড়া। জবাবে আমি বলি জানি না রে ভাই। আমি জীবনেও রোজা বাকী রাখি নাই আর বাড়তি কোন রোজাও করি নাই। তখন মহিলা আমাকে টিটকারী দিয়ে বলেন, আপনি তো বেহেশতে চলে যাবেন। আমি মনের বেদনা মনেই চেপে রেখে বলি আল্লাহ কবুল করুক। এতে মহিলা আরো বেশী রেগে যান। তার হিসেব মত আমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে কারণ আমি ঐ ছয় রোজার কথা জানিইনা আর তিনি জানেন। জানি না আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছে কি না, তবে এসব আমার জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা। যখন প্রায় বেশ দিন গড়িয়ে যাচ্ছে কোন কাজই করতে পারি না, ঐ কষ্টে আমি এতই আহত বিধ্বস্ত হয়েছি যে বলার মত না। এর বড় কারণ আমাকে জীবনেও কেউ এভাবে সাক্ষাৎ ছোবল মারে নাই। বাসায় এসে কর্তাকে বড় ছেলেকে বলেছি তারপরও মনে শান্তি পাইনা। হঠাৎ কি মনে করে টেবিলে কাগজ কলম নিয়ে বসি আর গড় গড় করে আদ্যপান্ত সব লিখে নেই, ঐদিন কি ঘটেছিল, লেখা শেষ হলে আমি ওটি চাপা দিয়ে রেখে দেই। মনের অলক্ষ্যেই বুঝি মনটা হাল্কা হয়ে যায়। আমি আমার দৈনন্দিনের কাজে নেমে পড়ি। ঐসময় আমার বড় ছেলে বাহির থেকে ঘরে ঢুকেই কাগজটি উল্টে দেখে সে গড় গড় করে ওটি পড়ে নেয়। এবং ঐ কাগজ নিয়েই আমার কাছে ছুটে যায় আর বলে ‘আম্মু তুমি লিখছো না কেন? তোমার কষ্টটি আমি শুনেছি তোমার মুখে আর তোমার লেখাটি দেখে ভাবছি তুমি লিখছো না কেন?’ ঐটি আমার আজকের লেখার হাতে খড়ি দুর্ঘটনার বদৌলতে পাওয়া পুরস্কার। আমার ছেলের অনুপ্রেরণা আমার আজকের লেখার কৃতিত্ব তার বড় পাওনা। সাথে ছিল বাবার সুপ্ত অনুপ্রেরণা।
https://wordpress.com/post/nazmamustafa.wordpress.com/6018
গত বছরের রমজানের লেখাটি আবারো অনুরোধ করবো লিংকটি আবারো দিলাম, সেটি পড়তে অনুরোধ করবো। মুসলিমদের অপকর্ম ব্যর্থতা ও মূল সত্য কুরআনকে এড়িয়ে চলাই কি ইসলাম? ওটি পরখ করেন, পড়েন। আল্লাহকে অন্তরে ধারণা করেন, কুরআনকে বুকে ঠাঁই দেন, শুধু মুখে নয়। বেশীর ভাগ মানুষ কুরআন জপেন মানেনও না, পালনও করেন না। মনে করেন জপেই শেষ। শিক্ষিতরা একথা বলে পার পাবেন না। আপনার চক্ষু কর্ণ হাত কেউই নিরাপদ নয়। আপনার বিপক্ষে প্রতিটি অঙ্গ রায় দেবে। আল্লাহর কালামের চেয়ে বড় অন্য কিছুই হতে পারে না। আগে আল্লাহকে প্রতিষ্ঠা করবেন তার বাইরে যা করবেন তা, অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। কারণ সেটি নির্দেশ নয়। তার নাম বিদআত। বিদআত কি? যা ধর্ম নয়, ধর্মের নামে বাড়তি সংযোজন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এটি নবীর কড়া নিষেধ ছিল। ইহুদীরা এভাবে ধ্বংস হয়েছে, আমরা যেন বাঁচি। ঐ নির্দেশ কুরআনে এসেছে। অনুরোধ করছি কুরআন পড়েন, জানেন, বুঝে পালন করেন। ঐ কুরআন প্রতিষ্ঠার জন্য নবী এসেছিলেন, তিনি কুরআনকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন কথা বলতেই পারেন না। অসম্ভব, কুরআনের বাইরে ভিন্ন কথা বললে কুরআন বলে তাকে মোকাবেলা করতে হবে দ্বিগুণ শাস্তি তার জীবিত অবস্থায় ও মৃত্যুকালে (বনি ইসরাইলের ৭৫ আয়াত)। মুসলিমরা কিভাবে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে এর উদাহরণ ময়দানে সবাই দেখছেন। সরকারসহ জনতারা অনেকেই ধর্মের নাম নিয়ে অনেক কিছু করছে এসব ধর্ম নয়। কুরআন দ্বারা কোন অপকর্ম প্রমাণ করা যায় না, এটি অসম্ভব। কিছু তফসিরকারক বলেন নবী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মিথ্যা বলেছেন। যারা এটি বলে এরা কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা করে। সত্যটি হচ্ছে বালক ইব্রাহিম ঐ সময় বড় মূর্তিটাকে ভাঙ্গেন নাই এবং কুঠারটি তার কাঁধে রাখেন। তারা তাকে প্রশ্ন করলে তিনি মিথ্যাচার করেন নাই বরং উল্টো বলেন, বড়টি তো দাঁড়িয়ে রয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করো। সে বলতে পারে না? তিনি চেয়েছেন তাদের অন্ধদের চক্ষু খুলে দিতে। যে মূর্তি তার নিজেকে প্রতিরোধ করতে পারে না সে কিভাবে তোমাদের প্রতিরোধ করবে।
মানুষের স্বরচিত হাদিস দ্বারা তারা প্রমাণ করে দেয় রসুলের নামে প্রচারিত হাদিসে মিথ্যা বলা জায়েজ। তার সহজ জবাব এসব বাতিল হাদিস সৃষ্ট হয়েছে ইসলামের মূল সত্যকে ধ্বংস করার জন্য। ঐ সময়ও যারা ইহুদী খৃষ্টান থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলামে এসেছে তারা এসব গালগল্প হাদিসের বরাতে ঢুকিয়ে দিয়েছে মানুষকে সত্য থেকে বিচ্যুত করতে এটি তারা করেছে, ইতিহাস গবেষণা তাই স্পষ্ট করছে। অনেকে অতীত ধর্মকে ভুলে না গিয়ে ওসব ঢুকিয়ে দেয় চেতনে অবচেতনে।
ইসলামের সুক্ষ্ম গবেষক মোহাম্মদ আকরম খাঁর মোস্তফা চরিত থেকে উদ্ধৃত করছি। সাহাবীগণ যা বলেছেন বা করেছেন তার জন্য সাহাবীগণই দায়ী; হযরতের বা ইসলামে তার জন্য কোন জওয়াবদিহিতা নেই (৬০, ৬১ পৃষ্ঠা)। ‘আলায়ী বলেন, সকল দলের অপেক্ষা অধিক অনিষ্টকারী তারা যারা খুব পরহেজগারী দেখিয়ে থাকে’ (ইমাম আলায়ী সুফিদের কথা বলে দেখিয়েছেন, কিভাবে তারা অসংখ্য মিথ্যা হাদিস রচনা করেন, পৃষ্ঠা৬২)। এভাবে জানা যায় যা সাহাবীগনের নামে বা স্বয়ং হযরতের উক্তি বলে কথিত হয়েছে যদিও সেগুলি অসংলগ্ন, অবিশ^াস্য ও অপ্রামাণিক”(৬৩ পৃষ্ঠা)। ‘জ্ঞান ও যুক্তি দ্বারা আমরা এই শ্রেণীর হাদিস গুলি আবার বাছাই করে নিতে পারি (ফওজুল কবির, মোহাম্মদী প্রেস, ৪১ পৃষ্ঠা, মোস্তফা চরিত ৬৪ পৃষ্ঠা)। ‘আর একটা গুঢ় তত্ত্ব এই যে, ইহুদী ও খৃষ্টানদের নিকট থেকে (আগত বিশ^াস সংস্কার ও কিংবদন্তিগুলি) প্রচুরভাবে আমাদের ধর্মে প্রবেশ করেছে। কিন্তু আমাদের স্বীকৃত শাস্ত্রীয় বিধান এটি যে, ইহুদী ও খৃষ্টানদের বর্ণনাগুলিকে সত্য ও মিথ্যা কোন প্রকার বলিও না।’ এই শাস্ত্রীয় বিধান থাকার পরও লেখকগণ ঐ সকল বিবরণকে সত্যরুপে গ্রহণ ও বর্ণনা করেছেন (ঐ ফওজুল কবির সূত্র)। এ প্রসঙ্গে ইবনে খাল্লেদুন বলেছেন: ‘আমাদের লেখকগণ ঐ সকল কিংবদন্তি ও গল্প গুজব নকল করে তফসিরের কেতাবগুলোতেও ভরে তুলেছেন। আগেই বলা হয়েছে এসব গল্পের মূল মূর্খ ও অজ্ঞ মরু প্রান্তরবাসী ইহুদীদিগের নিকট থেকে গৃহীত। অথচ তারা যা নকল করেছেন তার সত্যাসত্যও তারা পরীক্ষা করে দেখেন নাই মোকদ্দমা ইবনে খাল্লেদুন) (মোস্তফা চরিত ৬৪/৬৫ পৃষ্ঠা)।
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলের একটি উক্তি বিখ্যাত কালবী ও মোকালেতের তাফসির প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত আগা গোড়াই মিথ্যায় ভরা। তিনি ঐসব তাফসির পড়াও হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন। কথা ছিল জাল ও দূর্বল হাদিস চিহ্নিত করণের কিন্তু পরবর্তীরা এর উপর আরোপিত কঠোর আদেশ পালন করেন নাই। (ঐ গ্রন্থ, ৬৮ পৃষ্ঠা)।
কে বা কারা এসব অপকর্মে জড়িত থেকেছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। (ঐ গ্রন্থ, ৬৯ পৃষ্ঠা)।
(১) জিন্দিকগণ: এরা ধর্মের সর্বনাশ করতে বহু সংখ্যক হাদিস জাল করেছেন, এরা মূলত পার্সিক ধর্মাবলম্বি। এরা ইসলামে আসলেও ইসলামের ক্ষতি করতে তাদের পূর্ববর্তী বিশ^াসের উপরই কাজ করে। বর্তমানে প্রচলিত অনেক বেদআতের মূল এরাই।
(২) অতি পরহেজগারগণ: (সওয়াব ও ফজিলতের আশায়)
(৩) মোকাল্লেদগণ: নিজ মাযহাবের নামে ও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অসংখ্য জাল হাদিস রচনা করেন
(৪) মোসাহেবগণ: রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে রাজা বাদশাহ আমির ওমরাহ প্রভুর সমর্থণে মিথ্যা হাদিস রচনা করেন
(৫) ওয়ায়েজগণ: ওয়াজের অভিনবত্ব ও চমৎকারিত্ব প্রদর্শণ করতে ওয়াজ ব্যবসায়ীরা আজগুবী প্রচারে এসব মিথ্যা হাদিস প্রচার করেন।
হযরতের জীবনকালে মিথ্যা, জেনা, চুরি মদপান, ও নরহত্যা ইত্যাদি হারাম কার্য কোন সাহাবী কর্তৃক কখনো ঘটে নাই, এ কথা কি কেউ বলতে পারেন? এসব সাহাবী নরনারীদের দন্ডভোগের কথা কি হাদিসে বর্ণিত হয় নাই? জিজ্ঞাসা করি, ওসমান, তালহা, জুবের, এসব সাহাবীদেরে হত্যা করা, পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হওয়া এবং সাহাবীদের হাতেই বহু সংখ্যক সাহাবী হত্যা – এসব কি ইসলামে অনুমোদিত হালাল ও পূণ্য কার্য? (কুরআন ও বহু সহি হাদিসে এর উল্লেখ আছে) (ঐ গ্রন্থ ৫৮ পৃষ্ঠা)।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সাহাবীদের মধ্যে এরুপ লোকও ছিলেন, যারা সময় সময় ভ্রম করতেন, তাদের পরবর্তী সময়েও এই অবস্থা। এজন্য সহী আখ্যায় যেসব হাদিস সংকলিত হয়েছে, তার মধ্যে এরুপ হাদিসও আছে, যা ভ্রম বলে পরিজ্ঞাত (কেতাবুল তাওয়াচ্ছোল ৯৬ পৃষ্ঠা)। সাহাবীদের ভক্তি করতে অন্ধভক্তি করতে ইসলাম বলে না। বিবেকবর্জিত এসব বিশ^াসই হচ্ছে নরপূজার ভিত্তি। তারা বাড়াবাড়ি করতে করতে এমন কথাও বলে যে আল্লাহর পক্ষেও মিথ্যা বলা সম্ভব কারণ তিনি সব পারেন (ঐ গ্রন্থ ৫৮ পৃষ্ঠা)। এরকম অবস্থায় একজন সত্যনিষ্ট মুসলিমকে খুঁজে দেখতে হবে সহি হাদিস হবে মাত্র সেটি যা কুরআন দ্বারা অনুমোদন পায়, নয়তো তা সহি বলে গন্য হবার নয়। কুরআনে নেই এবং স্বপক্ষের কোন কথা কখনোই বলা সঠিক নয় যে এটি নবী মোহাম্মদ বলেছেন, তার ভিত্তি একমাত্র কুরআন। সত্যকে সন্ধান করতে অসংখ্য যুক্তিসমূহ ময়দানে থাকলেও এর সমাদর করা উৎসাহী খুব কম। বাইবেল ও কুরআনে বর্ণিত ঐ গল্পের আদম ও ইবলিসের রুপক গল্পের ইশারা সেই সত্যটি স্পষ্ট করছে। ইবলিস কিভাবে আল্লাহর সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে জিতছে, এসব তারই ইঙ্গিত বহন করছে। তবে আল্লাহ তাকে জবাবে বলেছেন আমার প্রকৃত অনুসারী যারা তাদের তুমি কখনোই তোমার দলে ভিড়াতে পারবে না। একমাত্র এই জায়গায় ইবলিস হতাশ হবে। আল্লাহ আমাদের নবীকে বলেন, “তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা আল্লাহর বাণী প্রত্যাখ্যান করে, পাছে তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যকার হয়ে যাও” (সুরা ইউনুসের ৯৫ আয়াত)। আল্লাহ যা নবীকে বলেছেন, তা কি আমাদেরেও বলা হয়নি? প্রশ্নটি সবার সামনে রেখে লেখাটি এখানেই শেষ করছি।
সবাই ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন।
রমজান মোবারক।
এপ্রিলের ১৩ তারিখ ২০২১। রাত তিনটা।