Articles published in this site are copyright protected.

নাজমা মোস্তফা

(সংকট সময়ে একটি লেখা সাজালেও যখন করোনার মরোনায় ওলট পালট গোটা দুনিয়া, তাই থমকে দাঁড়ায় লেখাটি, দেয়া হয়নি। যদিও এটি দেয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি)।

ধর্মের নামে একটি সংস্থা “ইসকন” (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস) লালিত পালিত ও মোটাতাজা হয়ে খোলা ময়দানে সম্প্রতি সরবে হাজিরা দিচ্ছে বাংলাদেশে। ইসকন এক চিকন আস্তানা, সাজানো স্বাধীনতার শুরুতেই দেশ বিধ্বংসী এক গুটি, বাংলাদেশের কলিজাতে প্রোথিত হয়ে এর বিজ রুপিত আছে। কিছু জনরা চাইছে একে সাধুতার লেবাস পরিয়ে মানুষকে আরো ঘুম পাড়িয়ে রাখতে, হরে হরে সাধু সাধু কৃষ্ণ নামের আড়ালে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সচেতনরা দেখছেন ষড়যন্ত্রের বাঘ নখর। যেটি সাম্প্রতিক নানা ভাবে ওপেন হয়েছে। যদিও তারা বাঘনখর লুকিয়ে বলছে সাধু সাধুই আমাদের ধ্যান ধারণা। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এক মহৎ বানী! বলা হচ্ছে এটি ঐক্যের, সমতার মহান বানী! স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী ভারতীয় লুটপাটের শ্রী দেখে বিস্মিত মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিল তার ক্ষোভ আচরণে, প্রতিবাদে, লিখিত আকারেও প্রকাশ করেছেন, এছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শী ময়দানের বাসিন্দারাও সাক্ষী। পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া কয়েক হাজার সামরিক বেসামরিক গাড়ী, অস্ত্র, গোলাবারুদ, আরো সব মূল্যবান জিনিসপত্র ট্রাক বোঝাই ট্রেন বোঝাই করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, প্রাইভেট কারও রক্ষা পায়নি। যশোহর সেনানিবাসের প্রত্যেকটি অফিস তন্ন তন্ন করে, বাথরুমের ফিটিংসসহ সব খুটিনাটিও তারা লুট করেছে, ভিন্ন সীমান্তের অবস্থানও একই। সেদিন ভারতীয় জেনারেল দানবীরের আচরণে বিস্মিত মেজর জলিল, মনে হচ্ছিল তিনি যেন তার এক অধিনস্ত প্রজা মাত্র। খুলনা ত্যাগ করার সময় যখন বলা হলো ভারতীয়দের নির্দেশ ব্যতীত মেজর জলিল নড়তে পারবেন না। তখনই তাদের কু-মতলব তার কাছে বিদ্যুৎ গতিতে স্পষ্ট হয়ে যায়। সেদিন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতির নাড়ী বোঝার জন্য সামান্যতম ধৈর্যও তারা প্রদর্শন করেনি। মুক্তিযুদ্ধে অনেক অস্ত্র প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের টাকাতে কেনা হয়। সে অস্ত্র সম্পদ ছিল মুক্তিযুদ্ধের সম্পদ। মুক্তিযুদ্ধের সম্পদ ভারতীয়দের কাছে অর্পন করার কথা নয়, কিন্তু তারা ওটিই চাইছিল। সবকিছুই তারা নিয়ে যেতে উদ্যত। এসবের প্রতিবাদ করাতে মেজর জলিলকে গ্রেফতার করা হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার সাধের স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি হলেন প্রথম রাজবন্দী। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয়রা যুদ্ধে ময়দানে নামে, মাত্র ১৩ দিন চলে সে যুদ্ধ। এর মানে এটি নয় তারাই গোটা যুদ্ধের শক্তি! বরং বলতে হয় পাকিস্তানকে কবজা করতে এর আগে তারা বারে বারে অপারগ হয়ে ব্যর্থ ছিল। গোটা নয় মাস যুদ্ধ করেছে বাংলার প্রকৃত দামাল মুক্তিযোদ্ধারা। অনেক তথ্য স্পষ্ট করে ঐ সময়ে বর্তমান সময়কার ক্ষমতালোভী শাসকবর্গের প্রশ্নবিদ্ধ সম্পর্ক। এ জন্যই প্রায় পঞ্চাশ পার করেও টিকে থাকার ধান্ধায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গীতি গাইতে হয় তাদের। ক্ষমতান্ধ বেশীরভাগ নেতারা আরামে আয়েশে বিলাসে সময় পার করেছে। ৭১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর তারিখে সকাল এগারোটায় ময়দানের মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিলকে ভারতীয় সেনারা বন্দী করে। এ আচরণে চরম হতাশায় তার বিস্ময়কর ছন্দ প্রকাশ “রক্ত দিয়ে এ স্বাধীনতা আনলে তোমরা”!

৭১এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল জাতির স্বাধীনতা সমতা মানবিক মর্যাদার যুদ্ধ, ওটি কখনোই ধর্মযুদ্ধ ছিল না। ইসলাম শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানে বিশ^াসী সবদিন। স্বাভাবিক মানবিক কারণেই বাংলাদেশের ৯৫% গরিষ্ঠ সংখ্যক মুসলিম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রধান শক্তি। ধর্মনিরপেক্ষতা সেদিন কথায় কাজে দলিলে কোথাও ছিল না। সেটি খুব কৌশলে ইন্দিরা সরকার স্বাধীন বাংলাদেশে জুড়ে দেন ঠিক যেন অস্ত্র লুটপাটের মতই স্বাধীনতা পরবর্তী ৭২ সালে। এমনও প্রমাণিত ভারতের সংবিধানেও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ সংযোজিত হয় বাংলাদেশে সংযোজনেরও অনেক পরে। এই যদি হয় ভারতের মানসিকতা তার মানে বলতে হবে ভারত নিজেই সেদিনই প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তির সময় থেকেই অফিসিয়ালী বাংলাদেশের সাথে পুনরায় লুটপাটের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের বিজ বপন করে। আওয়ামী লীগ জানতো জনতার মনোবৃত্তি, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা শুনলে সব ভেস্তে যাবে। তাই ভুলেও এটি ৭০এর আগে বা পরে কখনো বলে নাই। ঐ নীতির ম্যান্ডেট নেয়ার সাহস তারা কখনোই দেখায় নাই। সেদিন থেকেই কপট নীতির দেশবিরোধী কিছু কাজকর্মে মানুষ বিতশ্রদ্ধ। যুদ্ধ পরবর্তী ২৫ বছরের শান্তি চুক্তি ছিল গোলামী চুক্তির নামান্তর। স্বাধীনতার শুরু থেকেই দাসত্ব চুক্তির আড়ালে কিভাবে লুটপাটের মহামেলা তৈরী করেছে তখনকার ক্ষমতায় থাকা দল। যার অনেক দাগ রেখা স্পষ্ট করে মেজর জলিল তার অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা গ্রন্থ রচনা করেন ১৯৮৮ সালে। আজ ২০১৯ সাল অবদি সেই একই ঘরোয়া লুটপাটের মহা মঞ্চনাটক ময়দানে বহমান চলমান আছে। এদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি, সংস্কৃতি নিয়ে পাশর্^বর্তী দেশের অতিরিক্ত নাকগলানোর কায়দা লক্ষ্যনীয়। নির্বাচনসহ শেয়ার বাজার লুটপাট, ব্যাংক লুট, ক্যাসিনো বানিজ্যসহ হত্যা গুম খুনে তাদের সম্ভাব্যতা স্বাধীনতা পরবর্তী বর্তমান সময়ে ভয়ংকর খেলা সচেতনদের নজর কেড়েছে। খোদ ধর্মনিরপেক্ষ ভারত হচ্ছে মুসলিম নিধনের উত্তম ভাগাড়। মোদির ভারত সবার জন্য উদার হলেও মুসলিমদের জন্য কবর। এটিও লুকানো নয়, বরং স্পষ্ট। মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় নির্দেশ অনুমোদিত মাংস খেলেই এদের মারা যায়, একদম তক্তা পিটা মরণ। ভারতীয় মুসলিমদের একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য তারা কখনোই মনে করে না পাকিস্তান বা বাংলাদেশ তাদের দেশ। জনম জনম থেকে তারা মনে করে ভারতই তাদের দেশ। যেখানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ হিন্দুরা রেখে ঢেকে আমতা আমতা করেও মানে ভারতই তাদের হিন্দুদেশ। প্রকৃত ইতিহাসে ভারতীয় মুসলিমরা অকাতরে দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, বাকী ভারতীয়রা অনেকটাই ব্যর্থ, এমনকি সংকীর্ণতায় ঢাকা মুসলিমদের কৃতকর্মকে স্বীকার করতেও কপটতা দেখিয়েছে।

ইতিহাস তথ্যে প্রমাণ, অনেকে বলেন বন্ধু ভারত তবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা কল্পকাহিনী ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক দেশ হিসাবে চিহ্নিতকরণে ভারতের ভূমিকা অনেক ব্যাপক ও কপটতায় ভরা। এটি ভারতের “র” এর অনেক বড় পরিকল্পিত লক্ষ্য, সাজানো পরিকল্পনার অংশ। এর সুবাদে বাবরী মসজিদ ইস্যুকে চাঙ্গা করার সাথে সাথে বাংলাদেশের হিন্দুরাও এ মিথ্যাচারে জড়িত থেকেছে। বাংলাদেশের ছয়টি জেলা নিয়ে বঙ্গভূমি আন্দোলনের নামে একটি হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা প্রকাশ পায় (১৯৯২ সালের জুনে দৈনিক মিল্লাত এসবের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে)। এসব অপতৎপরতাতে ধরা পড়ে স্বাধীনতার পর থেকেই লোক দেখানো ত্রাণ তৎপরতার নামে ভারত বাংলাদেশে বঙ্গভূমি আন্দোলন শুরু করে। জানা যায় ঐ বঙ্গভূমি আন্দোলনের নেতা কালিদাস কর্মকার ভারত থেকে তিনটি ইট নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের তিন জায়গায়  তিনটি রাম মন্দির নির্মান করার জন্য। এর একটি হবে পাইকগাছায়। সরকারের হিন্দু সদস্যরা এর পিছনে ইন্ধনে ছিল আছে, হয়তো সামনেও থাকবে। বঙ্গভূমি আন্দোলনের সাথে ভারতের বিজেপি, বিশ^ হিন্দু পরিষদ, শিবসেনা, বজরঙ্গ দল এরা এক সূতায় গাঁথা। বাংলাদেশ বিরোধী কর্মে আরো জড়িত আছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, প্রণব মঠ ও সেবাশ্রম, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, বাংলাদেশ সন্তু মহামন্ডল, বাংলাদেশে হিন্দু ফাউন্ডেশন, বিশ^ ধর্ম ও শান্তি সম্মেলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ চৈতন্য সাংস্কৃতিক সংঘ, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, ইত্যাদি। এরা আবার নিয়মিত পত্রিকা বের করে। উল্লেখ্য, তাদের পত্রিকা অবিভক্ত ভারত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে।

সমাজ দর্পন এরকম এক পত্রিকার উদাহরণ। এর মাল মসালা বাংলাদেশে সহজলভ্য নয়, তাই কলকাতা থেকে ছাপিয়ে আনা হয়। এসবের সমন্বয় সাধন করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বাইর থেকে মনে হবে “ইসকন” নিছক সাধু সাধু, আসলে এরা বাংলাদেশের পানি যা ভারতে জল, ঘোলা করে শিকার করছে। ইন্দিরা গান্ধী নিজেই এদের সহযোগিতা দিতে ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশকে পরাধীনতার শিকল পরার ছলাকলার নামে এসব করা হচ্ছে। সমাজ দর্পণের সম্পাদক হচ্ছেন শ্রী শিবশংকর চক্রবর্তী। কে এম দাস লেনস্থ ভোলাগিরি আশ্রম থেকে এটি প্রকাশিত হয়। এসব পুস্তিকা ও প্রচারপত্র বঙ্গভূমি আন্দোলনসহ অবিভক্ত ভারত প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে লালন করে। ইন্দিরা গান্ধী নিজেই এই সংস্থার পিছনে কাঠখড় পুড়িয়ে গেছেন, এ তথ্য বিলি করেন সংস্থার প্রধান বিজয়ানন্দজী বনগাঁর বঙ্গভূমিওয়ালাদের এক সম্মেলনে সব স্পষ্ট করেন। এর জন্য আওয়ামী সরকারকে বেছে নিয়ে বিধ্বংসী হিসাবে নির্দেশ চলেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এরা তৎপর। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে ভারতীয় কর্মকর্তারা সরে পড়ে। এরা দলে দলে মঠ সেবাশ্রমের আড়ালে নিজেদের কাজ চালাচ্ছে “ইসকন” নামে। এদের সদর দফতর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। এ সংগঠনের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উস্কানীমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করা। ৮৮ সালের মার্চে নেপালে অনুষ্ঠিত বিশ^ হিন্দু পরিষদের মহাসম্মেলনে ১৯০ জন বাংলাদেশী অংশ নিয়েছিল। এ ছাড়াও বিশে^র অন্য দেশ থেকেও প্রতিনিধিরা আসেন। ভারত থেকে বিশ^ হিন্দু পরিষদ ও বিজেপি ও বিশ^ হিন্দু পরিষদের কাজ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে মিথ্যাচারকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে। একইভাবে ভারতের প্রতিটি উগ্র হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশে ও ভারতে এ কল্পিত হিন্দু নির্যাতনের প্রচার চালায়। নামে থাকছে (সাধু সাধু ভাব, ইন্টারনেশন্যাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ), এর প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি। এই শিব শংকর বিশাল ব্যক্তি। তাদের কর্মকান্ড বিজেপির কর্মকান্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। বিশ^ হিন্দু পরিষদের এ সম্মেলন ৮৮ সালে মরিসাসে ও ৮৯ সালে ভারতের এলাহাবাদ, গোরখপুরে অনুষ্ঠিত হয় সব সম্মেলনেই শিবশংকরের তৎপরতা লক্ষ্যনীয়।

উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য করা নেপালের হিন্দু সম্মেলনের টার্গেটও কিন্তু বাংলাদেশ। লক্ষ্যনীয়, ঐ ‘ইসকন’ সম্মেলনের ১৫ নম্বর সিদ্ধান্তে বলা হয় রামের জন্মস্থান অযোধ্যা হিন্দুদের জন্মগত অধিকার, তাই এটি হিন্দুদের দিয়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য ঐ স্থানে রাম নামে আদৌ কারো জন্ম হয়েছিল কি না সেটিও  প্রশ্নবিদ্ধ(?), কোনভাবেই স্পষ্ট নয়। খৃষ্টপূর্ব ১,০০০ বছর আগে বলা হয় রামের জন্ম যদিও কিন্তু প্রত্মতাত্মিক বিশেষজ্ঞদের গবেষনা বলে ঐ সময় ওখানে কোন মানব বসতিই ছিল না। মাত্র কয় শতক আগে তুলসী দাস রামচরিত লিখে গেছেন কিন্তু সেখানে একটি লাইনও খুঁজে পাওয়া যায় না যে বাবর মন্দির তোড়ে মসজিদ বানিয়েছেন। ভারত ও তাদের প্রাদেশিক সরকার তুলসী দাসের ৫০০শ তম জন্মবার্ষিকী পালন করেছে ১৯৯৭ সালে (উইকি সূত্র)। রাম নন, বরং বলা যায় বাবর আর তুলসী দাস সমসাময়িক, জন্ম কাহিনী লিখলেন আর মন্দির ভাঙ্গা এড়িয়ে গেলেন কি যুক্তিতে? বিবেকবান মানুষের জন্য একবিংশ শতকে যুক্তি বিহীন সব ধর্ম নামের অধর্ম অবস্থান বেমানান। যুক্তির মানদন্ডে তাকে টিকতে হবে, নয়তো তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে যাবে। যুগে যুগে সত্য ধর্মেও মিথ্যারা আসন গেড়ে বসে। মানুষের বিবেকের মসনদে অসত্যকে ময়দান থেকে বিদায় নিতেই হবে। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের সরকারী ইতিহাস সবসাজানো মিথ্যা ইতিহাস। সেখানে ভারতের ইতিহাসে শেখানো হয়েছে সিরাজ মাতাল, দুষ্ট লোভী ও নষ্ট ছিলেন। এসব ছিল নষ্ট কথা (ডাঃ সুরেন্দ্র নাথ সেন)। যদিও বেশির ভাগ হিন্দুরাই সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির প্রমাণ পাওয়া যায় তবে এদের মাঝে ব্যতিক্রম ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ, অরবিন্দ ঠাকুর এরা সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। “ইতিহাস রচনার প্রণালী”তে ডাঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার অনেক সত্য তুলে ধরেন। বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় সৌম্য সরকারের ইসকন মন্দিরে অর্ঘ্য প্রদান আতংক বাড়ায়। এর মূল কারণ ধর্মের নামে ইসকন জটিলতা। সিলেট, খাগড়াছড়ি, বরিশাল, বান্দরবন, চট্টগ্রাম, এভাবে সুবিধাজনক জায়গাগুলোকে ইসকন হামলে পড়েছে মুসলিমদের উপর। জীবন্ত মুসলিমরা হচ্ছে লাশের শিকার আর প্রিয়া সাহাদের মত নটরাজরা মিথ্যাচার করে নিজেদের পর্ণ কুটিরে নিজেরা আগুন দিয়ে সরকারের কাছ থেকে বেহিসাব ক্ষতিপূরণ লাভ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। ষড়যন্ত্রী হিন্দুরা বার বার অনাচারেও নিরাপদ থাকছে, সরকারের সীমাহীন নীরবতায় মুসলিমরা বিধ্বস্ত। একইভাবে রংপুরের ঘটনায় হিন্দুরা নিরাপদ আর মুসলিমরা কেউ প্রাণ হারিয়েছে, মামলা খেয়েছে ৫,০০০ মুসলিম, ক্ষতিপূরণ পেয়েছে শুধু হিন্দুরা (১৩ই নভেম্বর ২০১৭, দৈনিক ইনকিলাব)। এটি তারা বড় সময় থেকে করছে, এভাবে উপকৃত হয়েও সময়ে সময়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিবেক হারিয়ে মিথ্যাচার করতে পিছপা হয় না। এ হচ্ছে পরাধীনতার খোলসে স্বাধীন বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থান। অজানা কারণে মুসলিম ভুক্তভোগীদের খবর মিডিয়াতেও আসে কম। এ দেশে তাদের কথা ভাবারও যেমন কেউ নেই, বিপদে শোনারও কেউ নেই। ভারত তার সীমান্তের প্রতিবেশীদের হাতে ক্ষণে ক্ষণে বেদম প্রহার হজম করলেও আর ঐ খেদ মেটাতে একমাত্র বাংলাদেশের বর্ডারে মানুষ খুন করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। কিন্তু ঐ মানচিত্রের মানুষগুলো এ ক্ষোভের কথা কখনোই ভুলে যাবে না, সেটি মনে রাখলে ভালো হতো। সারাক্ষণ পাকিস্তানকে মুখে মুখে শত্রু ঠাওরালেও ময়দানে হাতজোড় করে সমিহ করেই চলে, যা বাংলাদেশের জন্য কখনোই নয়। বাংলাদেশের আত্মমর্যাদাহীন অবস্থানের দায় মেরুদন্ডহারা শাসক বর্গের নিজের অর্জন।

ফিরে যাচ্ছি নেপালের সেই ইসকন সম্মেলনের সূত্রে। সেখানে ২৪ নম্বর সিদ্ধান্তে স্থির হয় এখানে এমন শক্তিশালী রেডিও স্থাপন হবে যেখান থেকে সারা বিশে^ বিভিন্ন ভাষাতে প্রচারণা চলবে। সম্মেলনের ৩৬ নাম্বারে বলা হয় গরু হত্যা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং গোহত্যা সমান মানুষ হত্যা রুপে চিহ্নিত করতে হবে। প্রকারান্তরে তারা বলতে চাচ্ছে মুসলিমরা গোহত্যাকারী, যুক্তিতে এর সোজাসাপটা অর্থ হচ্ছে এরা মানুষ হত্যাকারী। যদিও ভারত গরুর মাংস রপ্তানীতে শীর্ষে থেকেও মুসলিম নিধনে আগুয়ান! বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার মা বাবা গরুদের কি কারণে তারা কুরবানীর নামে বর্ডার পার করে দেয়। তখন তাদের ধর্ম কোন মাত্রায় থাকে? তাদের ধর্মযুক্তিতে গরু = মানুষ। কিন্তু মুসলিমদের ধর্মযুক্তিতে গরু = পশু, খাদ্য, বলা চলে প্রাণিজ ব্যঞ্জন। ভগবান, মা, দেবতা কিছুই নয়। ৭১ সালে ভারতে জেনারেল উবানের নেতৃতে মুজিব বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য ছিল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করা, স্বাধীনতা পরবর্তী এই মুজিব বাহিনী অনেক অপকর্মের হোতা। ১৯৮১ সালের ৩১ শে মে “র” এর পরিকল্পনা মাফিক চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে ঢাকার ইংরেজী ‘দি নিউ ন্যাশন’ পত্রিকায় বলা হয় “ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুমোদনক্রমে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে” (The New Nation 29 September, 1988, RAW planned to kill Ziaur Rahman.. স্মরন করার বিষয় ৮১ তে জিয়া হত্যার খবর, ২০০৯এ বিডিআর হত্যার খবরও ভারতই প্রথম প্রচার করে। এরকম অনেক ঘটনায় হত্যার আগের দিনই সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ, হত্যার খবর সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে আকাশবানী থেকে প্রচার করা হয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নয়াদিল্লীস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জানতে চান যে, শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না? ভারতীয় আচরণ যেন চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। জিয়ার স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি ও স্বকীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে কৌশলগত নীতিমালার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়। জিয়া হত্যার দায়ে দুই পলাতক সেনা অফিসার দীর্ঘকাল ভারতে আশ্রয় পায়, এমন কি এখনো একজন কলকাতা নগরীতে ব্যবসা বানিজ্য করছেন (শাসছুর রহমান, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ২২ বর্ষ ৯ সংখ্যা)। জিয়াউর রহমানের হত্যার পর এরশাদ নাটের গুরু আসার পর থেকেই আবারো বিভিন্নরুপ এজেন্ডা চালু হয়। জিয়ার হাতে করা বাংলাদেশের অসামান্য অবদানকে ভারত ভালো চোখে দেখে নাই। যার ফলশ্রুতিতে আজ অবদি বাংলাদেশ ধুকে ধুকে মরছে (লেখকের এ নিবন্ধটি দৈনিক দিনকাল, ৩০ শে মে’৯৭ উপলক্ষ্যে বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত)। তথাকথিত বঙ্গভূমির ব্লু প্রিন্ট হচ্ছে একটি স্বাধীন হিন্দু রাষ্ট্র তৈরীর প্রথম চক্রান্ত। ভারতের তালপট্টি দখল, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, ও এরশাদের ক্ষমতায়ন একসূত্রে গাথা (আবু রুশদএর বাংলাদেশে ‘র’ গ্রন্থ, ১৬৫-১৭৯ পৃষ্ঠা )। ঐ বইটি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা বাংলাদেশে ‘র’ আগ্রাসী মনোবৃত্তির স্বরুপ সন্ধানে সকল ভারতীয় ষড়যন্ত্র ওপেন করে দেখিয়েছে। প্রতিটি বাংলাদেশীর নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে ২৮৮ পৃষ্ঠার পুরো বইটি আগাগোড়া পড়া দরকার।

ইসলাম কারো ধর্মে অন্যায় হস্তক্ষেপের অধিকার স্বীকার করে না। কিন্তু ভারত শিকড় থেকে বড় সময় আজ অবদি সেটি রাখছে। শুদ্রকে স্পর্শ করলে কাপড়শুদ্ধ ধৌত ও উপবাস করতে হতো। চন্ডাল ছিল অম্পৃশ্য। ব্রাহ্মণদের সাথে কথা বললে ছায়া মাড়ালে প্রায়শ্চিত্য করতে হতো। যার সহজ হিসাবে বৌদ্ধ জৈনসহ ব্রাহ্মণ ছাড়া সবাই অচ্ছুৎ। নারীর কোন স্বাধীনতা থাকতে নেই। আজকে ভারতীয় নারীরা সম্পত্তির ভাগও পাচ্ছে, এর পিছনেও মুসলিমদের থেকে শেখা বুলিতে আজ সমৃদ্ধ। স্বামীর মৃত্যুর পর চিতায় গমন নারীর ঠিকানা। মুসলিম সংস্কৃতির সবকটি অর্জনে তারা ধন্য হলেও গো মাংস ভক্ষণ মুসলিমরা করে বলেই তাদের বিদ্বেষ চরমে।  অতীতে এত ছিল না, বর্তমানে বেড়েই চলেছে। রামেশচন্দ্র মজুমদারের বাংলাদেশের ইতিহাসের ১৮৯ পৃষ্ঠাতে বর্ণিত হয়েছে তাদের ধর্মের এমন সব নির্দেশনা এসেছে পুরানে, যুক্তি হিসাবে শ্লীলতা বজায় রেখে তা উল্লেখ করা যায় না। শ্রী মজুমদার আরো লেখেন, সে যুগের পন্ডিতগণ প্রামাণ্য গ্রন্থে প্রকাশ করেন, শুদ্রাকে ব্যবহার করা অসঙ্গত কিন্তু তার সাথে অবৈধ সহবাস করা ঐরকম নিন্দনীয় নয় (পৃ: ১৯৩)। তারা যাই বলতো তাই ছিল ঈশ^রবাক্য। সমুদ্র যাত্রাও ছিল প্রায়শ্চিত্যযোগ্য পাপ। ইতিহাস গবেষকরা এসব চেপে রাখা ইতিহাস সাম্প্রতিক উগলে বের করেছেন। তারপরও বেশীর ভাগ সাধকেরা এসব চেপে রেখে প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন বলেই ভারতীয় জটিলতা শেষ হতে চায় না, একবিংশ অবদি চলমান। বাংলাদেশের কৃষকের ছেলেরা লেখাপড়া শিখবে সেটি সইতে পারেন নাই খোদ রবীন্দ্রনাথও। ধর্ম তাকে উদারতা শিখায় নাই, যেখানে নজরুল তাকে এ ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছেন যোজন যোজন দূর। তিনি চেয়েছেন হিন্দু মুসলিমদের পরস্পরের গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করতে। আর ঢাকাতে বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনে মক্কা ইউনিভার্সিটি / ফাক্কা ইউনিভার্সিটি বলে টিটকারী করা / কৃষকের ছেলেদের এসব দরকার নেই / জমিদার রবীবাবু উপসত্ব উঠাতে ব্যস্ত থাকলেও এদের জন্য কিছু করার কোন প্রয়োজনও বোধ করেন নাই বরং ম্লেচ্ছ যবন বলে বার বার গালি পেড়েছেন। এসব সংকীর্ণ সাধুদের অপরাধেই ভারত আজ অবদি মানবতার বিপক্ষ অবস্থানে আছে। ১৯২১ সালের ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্থাপনের এসব কষ্টকথা অসংখ্য লেখনীতে জীবন্ত হয়ে আছে। কিভাবে তারা সংঘবদ্ধভাবে মুসলিম বিরোধী ভূমিকা রেখেছে তা অকল্পনীয়, প্রায় দুইশত গণ্যমান্য হিন্দু ঢাকার প্রখ্যাত উকিল বাবু আনন্দ চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে যারা রাজনীতি করতেন না, কিন্তু মুসলিমদের বিরোধীতা করতে তারাও এগিয়ে আসেন। রাসবিহারী ঘোষ, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও গুরুদাস বন্দোপাধ্যায়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সবাই এক খোরে মাথা মোড়ানোর দল, সাথে কবি রবীন্দ্রনাথও থাকেন নেতৃত্বে।  এভাবে বাবু গিরীশচন্দ্র ব্যানার্জী, ডঃ স্যার রাসবিহারী ঘোষ এবং কলকাতা বিশ^দ্যিালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখার্জীর নেতৃত্বে এসব এলিটরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ১৮ বার স্মারক লিপি দ্বারা বৃটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ এর উপর চাপ সৃষ্টি করেন (Calcutta University Commission report. Vol. IV পৃষ্ঠা ১১৩ পৃষ্ঠা ১১২, ১৫১ তে আরো বর্ণিত আছে)। ১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকঢোল পিটিয়ে যে সভা হয় সেখানে সভাপতিত্ব করেন কবি রবীন্দ্রনাথ (অসংখ্য সূত্রে প্রমাণিত/ অধ্যাপক আব্দুন নূর (চ. বি) দৈনিক সংগ্রাম দ্রষ্টব্য ২৬ এপ্রিল ১৯৯৩ ইং)। এসব কারণে এটি প্রতিষ্ঠায় অনেক অর্থকষ্ট ও সংকট অতিক্রম করতে হয়। এর ব্যপ্তি ও শর্ত ছিল ক্ষমতা ও অধিকার হবে ঢাকা শহরের দশ মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ (‘জীবনের স্মৃতিদ্বীপে’ ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার)। টিটকারীতে শুধু ঢাকা মক্কা হয়নি, বুড়িগঙ্গা নদী হয়েছে বৃদ্ধগঙ্গা নদী, যারা এখানে আসবে তারা হবে সবাই অসুর, দেও দানব। ঐ উক্তিটি ছিল ভান্ডারকরের, সেটিও ডক্টর রমেশচন্দ্র তার জীবনের স্মৃতিদ্বীপে উল্লেখ করেন। ঘটনাটি ঘটবে “কলিযুগে বৃদ্ধগঙ্গা নদীতীরে (হরতগ) নামে এক অসুর জন্ম গ্রহণ করবে। —- যারা অর্থলোভে পূর্ববর্তী আশ্রম ছেড়ে এই অসুরের আকর্ষণে বৃদ্ধগঙ্গার তীরে যাবে তারা ক্রমে অসুরত্ব প্রাপ্ত হবে ও অনেক দুর্দশাগ্রস্ত হবে। এটি প্রমাণিত পরবর্তীতে সেই অসুরেরা সদলে ঐখানে চাকুরী নিয়ে দেও দানবের স্বরুপ নেন। সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। মুসলিমদের প্রতি তাদের ঘৃণা ও বৈরিতা যে কত গভীর ও তীব্র ছিল এসব তার প্রমাণ মাত্র। এই দেও দানবের সংখ্যা এতই বৃদ্ধি পায় যে, ভোটের সময় তারা অনায়াসে জিততে পারতো। সেটিও জীবনের স্মৃতিদ্বীপে লেখক উল্লেখ করেছেন। আবুল আসাদের লেখা ‘একশ বছরের রাজনীতি’ থেকে পাওয়া কথাগুলি বৃটিশ ভারত অধিকৃত প্রতিটি মানুষের জানার দরকার আছে। এসব চেপে রাখা ইতিহাস চাপাই আছে এর প্রধান কারণ হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক মুসলিমদের সীমাহীন হজমশক্তি। হিন্দুরা হলে এ নিয়ে সেই কবে লঙ্কাকান্ড বাধাতে যেত। সত্য মিথ্যা পাঠকের বিবেচনাতেই জমা রইলো। এসব চেপে রাখা ইতিহসের লজ্জাস্কর ভাসুরদের নাম কেউ সজ্ঞানে নেন না। কিন্তু ইতিহাস জানতে হলে সত্যকে বুঝতে হলে এর কোন পাঠই অবহেলার নয়। এ ইতিহাস জনতা নাড়ে না বলেই মিথ্যা ইতিহাসে রচিত কুরুক্ষেত্র সমান লঙ্কাযুদ্ধ বাবরি মসজিদ নিধনসহ একের পর এক ধ্বংস যুদ্ধ চলমান আছে। ইসকন একই ধারাবাহিকতা, যেটি আরো ভয়ংকর ও জটিল। ধর্মের নামে অসংখ্য অনাচারের নতুন আমদানী।

ইতিহাস কখনোই অবহেলার জিনিস নয়, সময় কথা বলে। থরে বিথরে মূল্যবান অতীতের জমা চাপা দিয়ে রাখা যা অতি উত্তাপে আগ্নেয় বিস্ফোরণে বিচ্ছুরিত হয়। আজ বাংলাদেশের সন্তান আবরাররা নিজ দেশের পক্ষে কথা বলতে পারে না, নির্দেশ আসে এদের মেরে ফেলতে। আবরার হত্যার পর বিশ^বিদ্যালয়ের ভিপি নূরদের উপর সদলবলে হামলা হয়। প্রশ্ন করা হয় তুমি কে? এর জবাব ছিল আমি কে, কিছুক্ষণ পরই বুঝবি। এটি ছিল ভিপি নূরকে ইসকন সদস্য সনজিৎ এর জবাব। অনেকেই বলছে সনজিৎ ইসকন সদস্য, আবরার হত্যায় জড়িত অমিত শাহও তাই। এসব কেমন ধারার একবিংশের ধর্মভাষা? ভাগ্যের ফেরে নুরুরা বেঁচে আছে। নতুন বছরে ২২ জানুয়ারীতে ৪ ছাত্রকে আবরারের মতই রাতে নির্যাতন করা হয়েছে হাতুড়ী রড লাঠি ও স্ট্যাম্প দিয়ে, এতে তারা মার খেতে খেতে অচেতন হয়ে থানায় সোপর্দ হয়। কারণ তারা জানে এতসব অপরাধের পরও অপরাধীরা নিরাপদ থাকবে। কে করবে এ রাষ্ট্রের বিচার, শিকড় থেকে শাখা প্রশাখা সর্বত্রই অন্যায় অবিচারে ঠাসা। মিথ্যার ময়দানে মেরুদন্ড ভাঙ্গা ভারতের পুতুল সরকার ক্ষমতায়। সব অংকই ২+২=৪ এর মতই স্পষ্ট। এখানে কোন গোজামিল নেই। জাতির প্রতিটি সদস্য আজ শত্রু ও বন্ধু চিনতে পারে। দখলদার সরকার সময় সময় নষ্ট সাধুদের মত উপদেশ বাণী ছুড়ে সাধুতার কসরতে বয়ান ছাড়ে। হতবুদ্ধ জনতারা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারে না।

স্মরণ করার বিষয়, জিয়ার বদৌলতে ভারত ফেরত হাসিনার দেশে পদার্পনের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় জিয়া হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর পরই শেখ হাসিনা সিলেট থেকে ফেরত আসার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে বোরখা পরে ভারতে পাড়ি দেয়ার সময় সীমান্তরক্ষীরা বাধ সাধে” (শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার ১২ বছর, দৈনিক দিনকাল ২০/৫০৯৩ সংখ্যা)। বিগত শতকে “র” এর ছত্রচ্ছায়ায় তসলিমা ইস্যুকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলা হয়েছে, হিন্দু নির্যাতনের মিথ্যাচারে বাংলাদেশকে আসামী করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হয়। ঐ পাশাপাশি সময়ে শেখ হাসিনাও নিজে কলকাতা গিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যাচারে বাড়তি যোগ করেন (দৈনিক যুগান্তর, কলকাতা ০৪-০৬-৮৭সংখ্যা)। চাকমাদের বিষয়েও একইভাবে শেখ হাসিনা মিথ্যাচার করেন (দৈনিক আদালত, কলকাতা ০৪-০৭-৮৭ সংখ্যা)। এসব মিথ্যা অভিযোগ ভারত সব সময়ই করতো, এসব রসদ পেয়ে দেশবিরোধী উস্কানীতে ভারত আরো বেশী তাল পায়। সিকিমের লেন্দুপ দর্জি বেওকুফের মত নিজ দেশ সিকিমকে দেউলিয়ার শেষ ধাপে ধ্বংস করে নিজেও ধ্বংস হয়। ভারতের প্রতিবেশীদের বেলায় একই ধারার ইতিহাস বার বার রচিত হচ্ছে। যার সহজ পরিণতিতে গোটা জাতির উপর মিথ্যাচারের তকমা সাটা হয়। মিথ্যাচারে মুজিবের কন্যার জুড়ি মেলা ভার, একটি জাতির জন্য এর চেয়ে বেশী লজ্জার আর কি হতে পারে? ভোটের আগে মধ্যরাতের ভোট তার উজ্জ¦ল উদাহরণ। এ অসাম্প্রদায়িক দেশকে সাম্প্রদায়িক বানানোর প্রাণান্তকর প্রচেষ্ঠায় সবদিন ভারত নিবেদিত। ইসলামের আদর্শকে সত্যকে যুক্তিকে মিথ্যারা ভয় পায়। ইসলামের ইতিহাসের গৌরবগাথায় বিমুগ্ধ জওহরলাল নেহরু এটি স্বীকার করে গেছেন তার লিখিত গ্রন্থ “Glimpses of World History (Delhi: Oxford University Press, 1989, Centennial Edition, pp. 141-145) যে কিভাবে এ ধর্মটি অতি অল্প দিনের মাঝে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য ও পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্য, ইহুদী ও খৃষ্টানের করায়ত্ব জেরুজালেম তাদের দখলে যায়। গোটা সিরিয়া, ইরাক পারস্য সবই আরব সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এসব মিথ্যাচারের জোরে নয়, ন্যায়ের সত্যের আদর্শের সৎ শক্তির কাছে ওসব অঞ্চল পদানত হয়। ইসলামের সত্য হারিয়ে আওয়ামী লীগ জাতির উপর ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ায়। প্রধানত ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে আওয়ামী লীগই, হরকাতুল মার্কা অবাঞ্ছিত কিছু ধর্মধারীদের সহযোগিতায় তারা চেতনা ব্যবসা চালায়। আবার আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রয়োজনে জামাতের সাথে আঁতাত গড়ে তোলতেও ইতস্তত করে না। কিন্তু জামাতের সাথে অন্যরা গেলে বাকীদের বেলা তালাক তালাক নিচতার জপমালা। আবার কাজ হাসিল হলে যে কাউকেই এমন কি নিজ দলের লোককেও তারা দূরে ছুড়ে ফেলে দেয় টয়লেট পেপারের মত। যে কোন অপকর্ম করিয়ে নিতে তাদের আটকায় না। ভারতেও কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালিত হয় না কিন্তু এরশাদ তার আমলে বাংলাদেশে জন্মাষ্টমীর ছুটি শুরু করেন। এরশাদও ছিলেন ভারতের দেরাদুনের স্পেশাল ট্রেনিংপ্রাপ্ত। ১০০% মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশ কাশ্মীর ও তাদের মুসলিমদের উপর অপরিসীম নির্যাতন বহাল রেখেছে ভারত। সৎ সাংবাদিকরা দেশে টিকতে পারেন না, অনেকের মন্তব্য এর কারণও ভারতের ঠেলা। দেশপ্রেমিকরা দেশে থাকলে দেশদ্রোহিতা করা কষ্টকর। যাদের মাথায় সামান্যতম দেশপ্রেম আছে তারা জানেন জিয়া কতটা দেশপ্রেমিক ছিলেন। প্রতিটি দেশপ্রেমিক তাদের চোখে রাজাকার, দালাল পাকিস্তানের সুহৃদ। এতে একটি ম্যাসেজ স্পষ্ট হয়। অবশ্যই বাংলাদেশের সুহৃদ হতে হবে পাকিস্তানকে। বাংলাদেশ কারো সাথে শত্রুতায় বিশ্বাস করে না, তাহলে পাকিস্তানের সাথে শত্রুতা থাকবে কেন?

পশ্চিম পাকিস্তান কোন দিনও পূর্ব পাকিস্তানের শত্রু ছিল না। রাজনীতির ইতিহাস ঘাটলে ইতিহাসই সেটি বলে দেয়, কাউকে মুখ ফুটে বলতে হয় না। কোন কিছুই চাপা থাকে না। বর্ণভেদে জর্জরিত ভারত ইসলামের মহান মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের মুক্তির পথ ভেবে স্বজ্ঞানে ইসলামের ছায়াতলে আসে। নবী মোহাম্মদ (সঃ) এর জন্মের অতি অল্প সময়ের মাঝেই এ ধর্মের মহৎ বাণী ভারত বর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে গোটা বিশে^ আমেরিকা, অষ্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড, জাপান সর্বত্র মানুষ এ ধর্মের বাণীতে মুগ্ধ হয়ে এর মানবিকতায় মুগ্ধ হয়ে এ সত্যে আত্মাহুতি দেয়। মুর্শিদ কুলি খাঁর জন্মও বিখ্যাত ব্রাহ্মণ বংশে। সুলাইমান করনানীর সেনাপতি কালাপাহাড় সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশীয় হিন্দু ছিলেন। বাংলার বার ভূইয়াদের অগ্রণী ঈসা খাঁর বাবার নাম কালীদাস, ব্রাহ্মণ থেকে ধর্মান্তরিত মুসলিম। ভারতীয় ঐতিহাসিকরা তাদের স্বরচিত ইতিহাসে মিথ্যাচার করে এটি প্রচার করে যে মুসলিমরা তলোয়ারের জোরে ভারতবর্ষ শাসন করেছে। এভাবে মিথ্যায় ভর করে তারা তাদের প্রকৃত বর্ণবাদী স্বরুপ প্রকাশ করে। ঐতিহাসিক শ্রী দাসগুপ্ত স্বীকার করেছেন, স্থানীয় অধিবাসীদের আরব বণিকদের সদ্ভাব বিদ্যমান থাকার কারণেই তাদের কর্মচারীরা এদের সংস্পর্শে এসে ঐ নতুন শাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞাত হয় ও পরম উৎসাহে ঐ ধর্মে আত্মসমর্পণ করে। জনাব জৈনুদ্দিন লেখেন, ‘তুহফাতুল মুজাহিদিন’ গ্রন্থে হিন্দুরা মুসলিম হলে অন্যেরা তাকে আরো ঘৃণা করতো। কিন্তু একটি বিষয় মুসলিম হলে তারা সবার সাথে সমান মর্যাদা পেতো। এটা ছিল হিন্দুদের ইসলাম গ্রহণের প্রধান কারণ। (সূত্র: দাশগুপ্তের ভারতবর্ষ ও ইসলাম, পৃ: ১২৭-১২৮)। এসব কথা ডাঃ তারাচাঁদ বাবুও স্বীকার করেছেন। শ্রী দাশগুপ্ত আরো লিখেছেন, “বজ্র আটুনী ফসকা গেরো, হিন্দুরা যতই কঠোর হতে থাকে, মুসলিমরা ছিল ততোধিক বহুভাবে উদার” (ঐ পুস্তকের ৫৪ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)। ব্রাহ্মণরা বৌদ্ধদের প্রতি চরম অবিচার করতো, তারা তাদের মাথা ন্যাড়া করতো তাই তাদের ডাকা হতো নেড়ে বলে। ব্রাহ্মণদের অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে গেলে তারা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করে। পরে ঐ নেড়ে অপনামটি মুসলিমদের উপরও ম্লেচ্ছ যবনের সাথে নেড়ে ধেড়ে বহু উপনাম হিন্দুরা সেটে দেয়। ভারতবর্ষে আরেক দল ছিলেন জৈন। এরাও ঠিক ঐভাবে দলে দলে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছে আবার অনেকে মৃত্যুবরণও করেছে। শ্রী দাশগুপ্ত বলেন, একবার একদিনে আট হাজার জৈনকে শূলে হত্যা করা হয়। কথাটি তামিল পূরানে উল্লেখিত আছে।

যে সরকার দেশের স্বার্থ দেখে না, সে কিভাবে সামাল দিবে প্রিয়া সাহার নাটক, জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে মামলা নাটক, হলি আর্টিজেনের মত মঞ্চনাটক, সব কিছুর সাথেই তাল দিতে হয়েছে মেরুদন্ডহারা সরকারকে। মোদিজির পুশইন নাটক সবই একসূত্রে গাঁথা মঞ্চনাটকের অংশ মাত্র। সব কিছুর উপর একজন পরম বিধাতা নিরব দ্রষ্টা ছিলেন আছেন থাকবেন, তাকে ভুললে চলবে কেন? বিপদ হচ্ছে তাকে খোলা চোখে দেখা যায় না, অন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখতে হয়।  ভয়ে ও আতংকে সময় সময় আমছালা নিয়ে ইত্যবসরে অনেক চোর বাটপার মন্ত্রী মিনিষ্টারও বাংলাদেশ থেকে সপরিবারে পালাচ্ছে লুটাকম্বল নিয়ে। মুসলিম হয়েও যারা তাকে চেনে না, তাদের পরিচয়ও ময়দানের মানুষের কাছে স্পষ্ট করা হয়েছে। তাদের মুসলিম না বলে মোনাফিক বলা হয়েছে। সত্য সংগ্রামীদের অফুরান পাওনা জমছে, ষড়যন্ত্রীদের জন্য কাঁচকলা। ভগবানের ভগবতী আছে আল্লাহর কোন স্ত্রীলিংগ নেই। আল্লাহ নামের সেই বিধাতার কাছে সব আমের আর ছালার খবর তার হাড়িতে ছিল আছে থাকবে। সত্যসাধকদের ঐ একটি জায়গাতে একমাত্র ভরসা! বিবেকধারী মানুষ নামধারী অপকর্মী কেউ ছাড়া পাবে না, পাবার কথা নয় ঐ সত্য আদালতের ময়দানে, তবে শুধু পশু হতে পারলেই রক্ষা! গরুরা নিরাপদ, গরু মা-ই হোক আর পশুই হোক, তবে গো রক্ষকরা, গোসেবকরা নিরাপদ নন, নিজেদের জন্য নিজেরাই আপদ!

রচনাকাল: করোনার সংকট সময়ের শুরুতেই ২০ জানুয়ারী ২০২০ সাল।